অভাব কেবল পকেটেই নয়, মনে এবং মননেও।
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ২৪ জুলাই, ২০১৩, ০২:০৫:১১ রাত
Exposition of thoughts বা চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটার কারণে একটি জাতির পুরো অবস্থানই বদলে যায় সমূলে। একটা উদাহারণ দেই অতি সংক্ষেপে। ইংরেজি ভাষা-ভাষীদের কথাই ধরুন। বিশ্বে মাতৃভাষা ইংরেজি, এমন জনগোষ্ঠির সংখ্যা হলো ৪২ কোটি ৪১ লক্ষ ৩৫ হাজারের কিছু বেশী। বিশ্বের ইংরেজিভাষী ছয়টি দেশ, আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইংল্যন্ড ও আয়ারল্যন্ড, এই ছয়টি দেশের সম্মিলিত জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যা (৬৫৭,৯৪,৫০,৩৯৪)’র মাত্র ৬.৪৪ ভাগ, শতকরা হিসেবে। আর দেখুন এই তারাই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে তালিকা একটু আগেই আমরা আলোচনা করেছি, উক্ত তালিকার শতকরা ৭০ ভাগ দখল করে আছে।
তা হলে বলুন, ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা হবে না কেন? কেন সেই ভাষা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রধান ভাষায় পরিণত হবে না? এ তথ্যটি মাথায় রাখুন, আর একবার খেয়াল করে দেখুন, আমাদের দেশে কোন এক স্বৈরশাসক সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য যখন ইংরেজি চর্চাকে নিরুৎসাহিত করেন, তখন তিনি কতটা ক্ষতি যে করেন এই দেশটার, তা কি তিনি নিজেই জানেন?
আমেরিকার একক জনসংখ্যা মোট বৈশ্বিক জনসংখ্যার মাত্র ৪.৫৫ ভাগ কিন্তু বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একশ’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শতকরা ৫৩ ভাগই তাদের দখলে। কেবল তাই নয় বরং উক্ত তালিকার শীর্ষটি সহ শীর্ষ কুড়িটির ১৭টিই তাদের! আমেরিকা ও কানাডার যৌথ জনসংখ্যা হলো ৩৩ কোটির সামান্য কিছু বেশী অর্থাৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫.০১ ভাগ মাত্র। আর সেই তারাই কি না বিশ্বের মোট একশ’টি শ্রেষ্ঠ বিশ্ব বিদ্যালয়ের শতকরা ৫৭ ভাগ নিতে পেরেছে নিজেদের আয়ত্বে! ভিন্নভাবে বললে, আটলান্টিকের ওপারে বিশ্বের মোট জনসংখার মাত্র ৫ ভাগ লোকের বাস কিন্তু শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫৭ ভাগই রয়েছে ওপারে!
এটা সম্ভব হয়েছে বিশ্বের যে গোলার্ধেই থাকুক না কেন, ইংরেজি ভাষা-ভাষী জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটেছে। আর এর অন্যতম কারণ হলো, সেইসব দেশে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকার সমাজ ও জনগণ সেগুলোকে সময়মত প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা (Adequate and timely Patronization) দিয়েছে
আর এর অনিবার্য ফল হিসেবে জ্ঞান-বিজ্ঞানেই যে কেবল তারা এগিয়ে গেছে তাই নয়, বরং শিল্প প্রযুক্তিতেও তারা অবিশ্বাস্যভাবে এগিয়েছে। জানেন, আমেরিকায় প্রতি দশলক্ষ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪০০০ বিজ্ঞানী বিজ্ঞান গবেষণায় নিয়োজিত। আমেরিকার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকরা আশি জন আন্ডারগ্র্যাজুয়েটই বিজ্ঞান গবেষণায় নিয়োজিত। কল্পনা করা যায় বিষয়টি? এই কারণেই সম্ভবত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে এ পর্যন্ত বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ৩১টি নোবেল পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছে। পুবের দেশ জাপানে একই সংখ্যক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই হার হলো ৫০০০ জন। আর এর বিপরিতে মুসলিম বিশ্বে এই হার হলো প্রতি দশ লক্ষ জনের মধ্যে ২৩০ জন মাত্র।
এই জন্যই আশ্চর্য হবার কিছুই থাকে না যখন দেখি পুরো বিশ্বে মুসলিম বিজ্ঞানীর সংখ্যা মাত্র ৪৫,১৩৬ জন! অর্থাৎ প্রতি ৩৩২৩২ জন মুসলমানের মধ্যে মাত্র একজন বিজ্ঞানী, আর লক্ষ্য করুন প্রতি ১৬৪ জন ইহুদী’র মধ্য থেকে একজন বিজ্ঞানী রয়েছেন!
এতেই প্রমাণিত হয় যে, মুসলিম বিশ্বে এবং সেই সাথে অতি অবশ্যই বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে Exposition of thoughts বা চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটেনি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আর যাই করুক বা করতে পারুক না কেন, আমাদের মনের মধ্যে, আমাদের চিন্তা চেতনায় নতুন কিছু ভাবতে শেখায় নি। যা শিখিয়েছে তা হলো অন্ধ অনুকরণ মাত্র। এটা সত্যিই আমাদের জন্য খুবই দু:খজনক। আমরা কেবল বিত্তেই দরিদ্র নই, চিত্তেও বটে! আমাদের অভাব কেবল পকেটেই নয়, মনে এবং মননেও।
(সুত্র: ‘অন্তর মম বিকশীত করো’ বইয়ের ১৪৬/১৪৭ পৃষ্ঠা থেকে)
বিষয়: বিবিধ
২২৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন