যে কুরআন তাকে একদিন দূরে ঠেলেছিল, সেই কুরআনই তাকে আবার কাছে টেনে নিল, পথেরও দিশা দিল! পড়ুন সে ঘটনা।
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ১২ জুলাই, ২০১৩, ১০:৪৯:০৩ রাত
ইংল্যন্ডের নওমুসলিম দাউদ মুসা বর্তমান বিশ্বের ইসলাম বিরোধী কোন অপ্রচারেরই বাইরে ছিলেন না, তিনি সেসব বিশ্বাসও করতেন। দাউদ একবার তার এক বন্ধুর মাধ্যমে কুরআনের একটি কপি পেয়ে বাড়িতে নিয়ে তা আলস্যভরে মেলে ধরেন নিজের সামনে। ঘটনাচক্রে সুরা ক্বামারের পাতাটা সামনে ভেঁসে উঠল্, তিনি স্বাভাবিক কৌতুহলবশত প্রথম আয়াতটির ইংরেজি অনুবাদ পড়লেন। ‘সময় ঘনিয়ে এসেছে, চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়েছে---- !’
ব্যাস এতটুকুই! অনুবাদটুকু পড়েই তার চোখ চড়ক গাছ! বলে কি? চাঁদ দিখন্ডিত হয়েছে? এটাও বিশ্বাস করতে হবে? এরপরে একটা তাচ্ছিল্যভাব নিয়ে তিনি সেই যে কুরআনখানা রেখে দিলেন, তারপরে কয়েক বৎসরের মধ্যে তা ধরেনও নি! চোখ তুলেও তাকান নি তার পানে!!
কয়েক বৎসর পরের ঘটনা। একদিন তিনি ড্রইং রুমে বসে টিভিতে বিবিসি টু’তে একটা ডকুমেন্টারি দেখছিলেন। ডকুমেন্টারিটি ছিল আমেরিকার মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণা এবং সে খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ নিয়ে। চাঁদে মনুষ্যযান পাঠাতে আমেরিকা বৎসরের পর বৎসর চেষ্টা ও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। শেষ পর্যন্ত সে চাঁদে মুনষ্যবাহী রকেটই কেবল নয়, মানুষও পাঠিয়েছে, চাঁদের বুকে উড়িয়েছে আমেরিকার পতাকা। সেখান থেকে মাটি তুলে এনে তা নিয়ে গবেষণাও হয়েছে। মোদ্দা কথা মানুষ চাঁদকে জয় করেছে।
এখন আবার মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠাতে চাইছে। চাঁদের বুকে মহাকাশ যাত্রীদের জন্য পার্মানেন্ট ষ্টেশন বানানোর সম্ভাব্যতা যাচাই এবং গবেষণাও হচ্ছে। এসবের পেছনে আমেরিকা শত শত বিলিয়ন ডলার খরচ করছে, এমন একটা সময়ে, যখন বিশ্বের আনাচে কানাচে কোটি কোাটি মানুষ ক্ষুধা ও রোগে-শোকে, মারা যাচ্ছে। এমনকি, খোদ আমেরিকাতেই লক্ষ লক্ষ লোক গৃহহীন হয়ে দিনের পর দিন অনাহারে- অর্ধাহারে থাকছে। এসব সত্তেও মহাকাশ খাতে বিশাল অর্থ খরচ করা কি ্য অপচয় নয়?
অনুষ্ঠান উপস্থাপকের এরকম প্রশ্নের জবাবে আলোচকরা বললেন; ‘না, এটা অপচয় নয়। আমাদের গ্রহকে জানতে হলে, তাকে আরও বেশী করে বুঝতে হলে গবেষণা করতেই হবে, এ ছাড়া কোন পথ নেই বিশ্বটাকে জানার।
এসময়েই টিভির পর্দায় ভেঁসে উঠল চাঁদের বুকের ছবি, যা নাসা’র ক্যমেরায় ধারণ করা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে লম্বালম্বি রেখা চলে গেছে চাঁদের পুরো বুকটা জুড়ে। দেখে মনে হয় যেন, একটা নদী শুকিয়ে মরা খালের মত হয়ে রয়ে গেছে। আলোচকরা উক্ত ছবির বর্ণনা দিতে গিয়ে বললেন, বিজ্ঞানীদের কাছে চাঁদের পুরোটা বুক জুড়ে উপস্থিত এই ফাটল একটা বিরাট বিষ্ময়। নভোচারীরা এই ফাটল থেকে মাটি তুলে এনে পৃথিবীর ভূ-বিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানীদের দিয়ে গবেষণা করিয়ে দেখেছেন যে, চাঁদের এই ফাটলটা কেবল যে তার বহির্ভাগ জুড়েই বিদ্যমান, তা নয়, বরং চাঁদের গভীরতম প্রদেশ অর্থাৎ এর অন্তভাগ জুড়েই এই ফাটল।
আলোচকদের এই আলোচনা এতক্ষণ দাউদ মুসা খুব মন দিয়ে শুনছিলেন আর চিপ্স চিবুচ্ছিলেন। কিন্তু এবারে তার মুখ হা হয়ে আছে,্ তিনি মুখের চিপস চিবুতে ভুলে গেছেন! মন দিয়ে শুনছেন আলোচকদের কথা আর চোখ দিয়ে যেন গিলে খাচ্ছেন টিভির মনিটরে ভেঁসে থাকা চাঁদের বুকে ফাটলের ছবিটা! দৌড়ে উঠে গিয়ে শেলফ থেকে কয়েক বৎসর আগে বন্ধুর দেয়া আল কুরআনের কপিটা আবার হাতে নিয়ে এসে বসলেন।
ততক্ষণে টিভির পর্দা থেকে ছবিটা দুর হয়ে গেছে, সেখানে আলোচক বিজ্ঞানী ও উপস্থাপকের ছবি। তারা এখনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপস্থাপক বড় কৌতুহল নিয়ে বিজ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করলেন, চাঁদের বুকে এমন একটা ফাটল হবার কারণ কি? বিজ্ঞানীরা উত্তর দিলেন, তাদের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছেন যে, কোন এক কালে চাঁদ যে কোন কারণেই হোক না কেন, দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল এবং তা আবার পূনরায় জোড়া লেগে যায়। এই ফাটল সেই ভাগ হয়ে যাবার কারণেই সৃষ্ট।
দাউদ মুসা নিজের অজান্তেই চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। হাতে তার কুরআনে সেই পাতাটি, যার প্রথম লাইনটির অনুবাদ পড়েই সন্দেহ আর অবিশ্বাস নিয়ে এই কুরআনকে এতদিনে অযত্নে, অবহেলায় ফেলে রেখেছিলেন! ছুঁয়েও দেখেননি!! আর আজ কিনা বিজ্ঞানীরা এই কুরআনের বাণীটিকেই যথার্থ বলে প্রমাণ দিচ্ছেন নিজেদের অজান্তেই! এত বিলিয়ন বিলয়ন ডলার খরচ করার পরে?
আচ্ছা, আজ হতে চৌদ্দশত বৎসর পুর্বে যখন কোন রকেট ছিল না, চাঁদে যাবার মত কিংবা ছবি ধারন করার মত জ্ঞান, প্রযুক্তি ছিল না, ছিল না কোন টিভি, সেদিন আরবের এক উম্মী নবী মুহাম্মদ স: কিভাবে জানলেন? আর কিভাবে তা কুরআনে এলো? কুরআন যদি সত্যিই মনুষ্য রচিতই হবে, তাহলে সেই গ্রন্থে চৌদ্দশত বৎসর আগেই আজকের এই বিজ্ঞান নির্ভর জ্ঞান কেন? এর একটা মাত্র উত্তর যা হতে পারে, তা হলো এই যে, আল কুরআন সত্যিকার অর্থেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, যাঁর কাছে এই বিশ্ব মুখলুকাতের সকল জ্ঞান আছে, তাঁর পক্ষ থেকে এসেছে।
দাউদ মুসা’র চেতনায় এই উপলব্ধিই তাকে সত্যের দিকে ধাবিত করে দিল। যে কুরআন একদিন তাকে সত্য থেকে দুরে ঠেলে দিয়েছিল, সেই কুরআনই আজ তাকে এক পলকে সত্যের দিশা দিল!
এটাই হয়। চেতনার জগতে যখন সত্য ধরা দেয়, তখন এমনটাই হয়। আজ কুরআন নাজিলের মাস রামাদ্বান হাজির। বিজ্ঞানও সামনেই আছে। দিন রাত টিভি দেখি। বিজ্ঞানও পড়ি। পড়ি কুরআনও, তারপরেও আমাদের চেতনায় বিপ্লব ঘটে না?
প্রশ্নটাই একবার ধীর স্থীরভাবে ভেবে নিলে কেমন হয়? রামাদ্বানের আগে এই ভাবনাটা যদি সত্যিই সত্যিই আমাদের মনকে ভাবিয়ে তোলে, যদি সত্যিই আন্তরিকতার সাথে এর উত্তরটা খুজে দেখি, তা নিয়ে ভাবি, আর কুরআনকে বোঝার চেষ্টা করি, তা হলে হয়ত আশা করা যেতে পারে, আমরাও সেভাবেই আল্লাহকে চিনব, যে ভাবে চিনেছিলেন ভাই দাউদ মুসা। রামাদ্বান আমাদের সকলের জীবনে এরকম একটা ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসুক, এই প্রতাশ্যা রইল। প্রত্যাশা পূরণে প্রচেষ্টাও দরকার বটে। আসুন, সে প্রচেষ্টাটুকুও করি।
বিষয়: বিবিধ
২৭১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন