ওদের কি রোখা যাবে?
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ০২ জুন, ২০১৩, ০১:৫৩:৩৪ দুপুর
এখন বাংলাদেশে মহা দু:সময় চলছে ইসলামপন্থী ও ইসলামি আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের জন্য রাষ্ট্রিয় এবং সামাজিকভাবেও। ইসলামচর্চা কঠিন হয়ে উঠেছে। আলেম ওলামার নিগৃহিত হচ্ছেন পথে ঘাটে।
জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে একেবারে তৃণমূল নেতাদেরও সরকার গারদে পুরেছে।হেফাজতের হাজার হাজার আলেম ওলামাদেরও একই অবস্থা। যাঁরা এখনও ধরা পড়েননি, তাঁরা সরকারের বিশেষ বাহিনীর হাতে ‘নিখোঁজ’ হবার ভয়ে আত্বগোপনে।
ইসলামপন্থী দু’জনের একত্রে বসার সুযোগও নেই, সরকারের বিশেষ বাহিনী ধরে নেবে ‘সরকার বিরোধি ষড়যন্ত্র’র অপরাধে! একত্রে বসে কুরআন হাদিস, ইসলামি বই পড়লেও জেলে যেতে হচ্ছে! কারণ, ওগুলো ‘জিহাদি বই’! ইসলামি বই পড়া এখন দেশদ্রোহীতার লক্ষণ!! কাছেও রাখা যাবে না, রাখলে ঠ্যাঙ্গারে বাহিনী দিয়ে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে জেলখানায় ভরবে!!
এছাড়াও রয়েছে ছাত্রলীগ গুন্ডাদের সন্ত্রাস। এরা জামাত শিবির বলে কাউকে সন্দেহ হলেই মেরে, হাত-পা ভেঙ্গে পুলিশকে নির্দেশ (!) দেয় গ্রেফতারে! আর ‘পুলিশ লীগ’ও তা পালন করে নিজেদের আনূগত্যের প্রমাণ দিচ্ছে!
এভাবে জামাত, হেফাজত দমানো যাবে কী? কক্ষণই না। কারণ, এরা সরকারের ইসলাম ও দেশবিরোধি কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন তাঁদের ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে। কেউ এটাকে বলছেন ‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি’। কেউবা বলছেন ‘ধর্মব্যবসা’। সচেতন মুসলমানরা খুব ভালো করেই জানেন, এটাই ইসলামি রাজনীতি। এটাই ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’।
আজ যাঁরা এ পথে নেমেছেন, তাঁরা কেউ ঝোঁকের বশে নয়, বরং বুঝে শুনে, ঝুঁকির কথা জেনেই পথে নেমেছেন। তাঁদের সামনে সহজেই কোটিপতি হবার, ‘সূখ আর শান্তি’তে ‘নিরুপদ্রব’ জীবন কাটাবার, কিংবা গৃহকোণে ‘তসবীহ তাহলীল’ করার এবং মাঝে মধ্যে ঘরে বসেই ‘ভাগ বাটোয়ারা’ কিংবা ‘নজর নেওয়াজ’ পাবার সুযোগ থাকতেও স্বেচ্ছায় সেগুলো পা’এ ঠেলে বেছে নিয়েছেন সবচেয়ে বিপদসংকুল ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’র পথ।
সরকার যদি আশা করে যে, এরা নির্যাতন-নিপীড়নের ভয়ে এ পথ থেকে সরে যাবেন, তা হলে ভূল করবেন! আজ তাঁদের জীবনের ভয় দেখানো হচ্ছে, চাকুরি-ব্যবসা-বাণিজ্য, রুটি-রুজীর পথ রুদ্ধ করা হচ্ছে, অথচ তাঁরাতো তাঁদের জান-মাল, ধন-সম্পদ, সবই বিক্রি করে দিয়েছেন মহান আল্লাহর কাছে!!
’নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের জান ও মাল খরীদ করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে’ (আত তাওবাহ ১১১)
ঐ আয়াতের মর্মার্থ উপলব্ধী করে জেনে বুঝেই তারা কেনা-বেচাটা সেরেছেন। তাঁরা যে সওদারগরীতে সিরিয়াস, সে প্রমাণই এখন দিচ্ছেন, আর কিছু নয়! আল্লাহ বলেছেন;
মানুষেরা কি মনে করেছে যে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে কোন পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তীদেরকে পরীক্ষা করেছি। ঈমানের দাবীতে কারা সত্যবাদী ও কারা মিথ্যাবাদী আল্লাহ অবশ্যই তা জেনে নেবেন।’ (আল আনকাবুত ২-৩)
পরীক্ষার আয়োজনটাও অবশ্য সরকারই করছে জেল, জুলুম নির্যাতন, হত্যা, গুম আর নিপীড়নের মাধ্যমে। এসব এ পথে যুগে যুগে আসে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠি তাগুতের পক্ষ থেকে। দূ:খ হয়, নিজেদেরকে খাঁটি মুসলমান, মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ স: এঁর উম্মত দাবীদার আমাদের সরকারই সেই তাগুতে ভূমিকায় নামলো দেখে।
সরকার প্রাণান্ত চেষ্টা করেও ইসলামি আন্দোলনের নেতা কর্মীদের ধ্বংসাত্বক পথে নামাতে পারেনি, কারণ, আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীই জানে, সন্ত্রাস দিয়ে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ নয়, জাহান্নামের পথটাই সুগম হয় মাত্র!
বর্তমান পরিস্থিতিটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা পরীক্ষা সরকারসহ প্রতিটি মুসলমানের জন্য। কে এ ব্যাপারে সচেতন, আর কে নয়, সেটা ভাবার সময় তাঁদের নেই। তাঁরা তো কেবল নিজেদের আখেরাত নিয়েই চিন্তিত। তাঁরা আল্লাহর কাছ থেকে জীবনের সকল কিছুুর বিনিময়েও যে জান্নাতটুকু কিনেছে, সেটা পেতে সবরের প্রমাণ দিতেই ব্যস্ত:
‘তোমরা কি ভেবেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি, তোমাদের মধ্যে কারা চেষ্টা সাধনায় আত্বনিয়োগ করে এ পথে সবর অবলম্বন করে।’ (আলে ইমরান ১৪২)
তাঁদের চেতনায় মহান আল্লাহর সতর্কবাণী;
‘হে নবী বলে দিন, যদি তোমাদের পিতা-ভাই-বোন-স্ত্রীরা ও তোমাদের আত্বীয়-স্বজন, তোমাদের ধন-সম্পদ যা তোমরা উপার্জন করেছ, সেই ব্যবসা, যাতে মন্দা আসাকে তোমরা ভয় করো। আর তোমাদের সেই ঘর-বাড়ী যা তোমরা খুবই পছন্দ করো, তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করা থেকে বেশী প্রিয় হয়, তা হলে অপেক্ষা করতে থাক যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর চুড়ান্ত ফয়সালা তোমাদের সামনে উপস্থাপন করেন, আর আল্লাহ তো ফাছেক লোকদের কখনও হেদায়েত করেন না।’ (আত তাওবাহ -২৪)
অতএব সরকার যতই দমন নিপীড়ন চালাক, এইসব ইসলামপ্রিয় জনগণকে দামানো যাবে না। বিশ্ব ইতিহাস তার স্বাক্ষী। সরকার সে ইতিহাস থেকে কী শিক্ষা নেবে ?
যাঁরা এই সমাজটাকে সত্য-সুন্দরের পথে বদলাতে নেমে নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন, তাঁদের বলি, জুলুমের বিপরিতে তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তুলুন, তাদের হেদায়েত চান। এই সরকারও তো আমাদেরই ভাই, তাদের অকল্যাণ আমরা চাইতে পারি না, ইসলাম তেমনটা শেখায় না। আল্লাহরই উপরে ভরসা করুন, মনে রাখবেন আল কুরআনের আয়াত;
‘আমরা কেন আল্লাহর উপরে ভরসা করব না? অথচ তিনি আমাদের জন্য চলার পথ খুলে দিয়েছেন। আর তোমরা আমাদের উপরে যে অত্যাচার করবে আমার তার বিপরিতে ধৈর্য ধারণ করব। আর যারা ভরসা করে, তাদেরতো কেবল আল্লাহরই উপর ভরসা করা উচিৎ। (সূরা ইব্্রাহিম ১২)
অতএব দ্বিধা কিসের? ভয়ই বা কিসে? বর্তমান পেক্ষাপটে এই আয়াতটি থেকে সকলকেই শিক্ষা নেবার অনুরোধ রইল।
বিষয়: বিবিধ
১৮২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন