সোনার বাংলার স্বর্ণালী অতিত; ইসলামি শাসন (ইতিহাসের পাতা থেকে।)
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ২৯ মে, ২০১৩, ১২:১২:২১ দুপুর
সুলতান গিয়াসুদ্দীন আযম শাহ, তিনি বাংলা শাসন করেন ১৩৯১ সাল থেকে ১৪২০ পর্যন্ত। আমাদের এই সুলতানকে আমরা একজন শাসক বলেই জানি, কিন্তু তিনি যে কত বড় উঁচুদরের আলেম ও নিষ্ঠাবান মুসলমান ছিলেন, সেটা অজানাই রয়ে গেছে। একদিন সুলতান তার প্রাত্যহিক অভ্যাসমত তীর ছোঁড়ার প্র্যাকটিস করছিলেন। হঠাৎ একটা তীর লক্ষচ্যুত হয়ে অদূরে খেলতে ব্যস্ত বিধবার এক কিশোর ছেলের গা’এ বিদ্ধ হয়। আহত ছেলেকে নিয়ে বিধবা ন্যায়বিচারের জন্য কাজীর দরবারে সুলতানের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন।
তখন বাংলার কাজী ছিলেন সিরাজুদ্দীন। তিনিও অত্যন্ত উুঁচু দরের আলেম ছিলেন। কাজী মামলা পেয়ে তার পেয়াদা দিয়ে সুলতানের কাছে ফরমান পাঠান কাজীর দরবারে হাজির হবার জন্য।
আদালতের পেয়াদা সমন নিয়ে রাজপ্রাসাদে গেলেও রক্ষীদের বাধার কারণে সহজে রাজপ্রাসাদে ঢুকতে না পেরে প্রাসাদের সন্নিকটেই উুঁচু মাটির ঢিবির উপরে দাঁড়িয়ে আজান দেয়া শুরু করে। অসময়ে আজান! প্রাসাদের ভেতর থেকে সুলতান গিয়াসউদ্দীন আযম শাহ কারণ জানতে চাইলেন। খোঁজ নিয়ে রক্ষীরা তাকে জানান যে, কাজীর পেয়াদা তার সাথে স্বাক্ষাৎপ্রার্থী ছিলেন। তাকে পরে আসতে বলা হলে সে রাজপ্রসাদের বাইরে দাঁড়িয়ে এই অসময়েই আজান দেয়া শুরু করে। সুলতানের নির্দেশে রক্ষীরা তৎক্ষণাৎ পেয়াদাকে সুলতানের কাছে নিয়ে গেলে পেয়াদা তাঁর হাতে কাজীর সমনখানা তুলে দেন।
নির্ধারিত তারিখে সুলতান বিবাদী হিসেবে কাজীর দরবারে হাজির হলে কাজী তাকে বিশেষ কোন খাতির যত্ন না করে বরং আর দশজন বিচারপ্রার্থীর মতই দেখলেন। বিচারে বাদীর আর্জি, স্বাক্ষীসাবুদের বর্ণনা এবং সুলতানের স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতি শুনে কাজী বিধবার সন্তানকে আহত করার শাস্তি হিসেবে ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেন সুলতানকে। বিনা বাক্যব্যয়ে সুলতান তা মেনে নিয়ে বিধবাকে আদালতের নির্দেশমত ক্ষতিপূরণ দেন।
বিচার কার্যটা এখানেই শেষ হলেও ঘটনা কিন্তু এখানে শেষ হলো না। এজলাস থেকে কাজী নেমে এলে সুলতান তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। সুষ্ঠু বিচারকার্য সম্পাদনের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজ গা’র উপর থেকে চাদরের এক কোণা সরিয়ে ছোট্ট একখানা খঞ্জর বের করে তা দেখিয়ে বলে উঠলেন; ‘মহামান্য কাজী, ন্যায় বিচার করে আপনি আপনার উপরে অর্পিত দায়িত্ব যেমন পালন করেছেন, তেমনি আমার রাজ্যের মৌলিক ভিত্তিটাকে অটুট রেখেছেন। আল্লাহর কসম, আপনি যদি ন্যায় বিচার না করে আমার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করতেন, তা হলে আমি আজ এই খঞ্জর দিয়েই আপনার বিচার করতাম।”
সুলতানের এমনতর মন্তব্য শুনে কাজী সিরাজউদ্দীন এক দন্ড থামলেন, তার পরে এক পা পিছিয়ে তার এজলাসের পাশে রাখা ছোট টেবিলটার উপর থেকে চাদরটা সরালেন, সেখানে রক্ষিত একটা চাবুক দেখিয়ে সুলতান গিয়াসুদ্দীন আজম শাহকে উদ্দেশ্য করে বললেন; ‘মহামান্য সুলতান, আপনি যদি আদালতের বিচার না মানতেন কিংবা আদালতের উপরে কোন রকম প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করতেন, তা হলে এই চাবুক দিয়েই আমি আপনাকে শায়েস্তা করতাম।’
এই ছিল বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা। সেখানে একজন সাধারণ নাগরিকও সুলতানের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারত। বিচারকও নির্দ্বিধায় সুলতানকে সমন পাঠাতে পারতেন। ওদিকে সুলতান একজন সাধারণ নাগরিকের ন্যায় অবলীলায় আদালতে হাজির হয়ে নিজের দোষ স্বীকার করে শস্তি মাথায় পেতে নিতেন। আর কাজীও কোন ভয়, কোন রকম পরওয়া না করেই সুলতানের বিরুদ্ধে রায় দিতে এবং রায় না মানলে বা বিচারে কোন প্রভাব খাটানার চেষ্টা করলে সুলতানকে চাবুক দিয়ে শায়েস্তা করার কথা বলতে পারতেন!!
এই ছিল আমাদের সোনার বাংলা। সেই সোনার বাংলাকেই আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। ইনশাআল্লাহ, একদিন সেই সুদিন আবার আসবে, আসবেই।
বিষয়: বিবিধ
২৭৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন