তাজমহল নয়, ভারতীয় সাহাবী তাজউদ্দীন রা: ই ভারতের গৌরব।

লিখেছেন লিখেছেন হককথা ২৫ মে, ২০১৩, ০১:১৩:১৮ দুপুর



ভারতীয় সাহাবী তাজউদ্দীন রা: এর কবর

চেরামান রামাভার্মা পেরুমল, দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য ’Kodungaloor ‘কোডুঙ্গোলর’ (বর্তমান কেরালা) রাজ্যের রাজা। ‘পেরুমল’ রাজবংশের মোট ২৬ জন রাজারা মধ্যে তিনিই সর্বশেষ রাজা এবং একাধারে ২৬টি বৎসর তিনি রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পুরো দক্ষীণ ভারতের ২৫০০ মাইলেরও বেশী এলাকা জুড়ে উপকুলীয় এ রাজ্যের সীমানা ছিল বিশাল।

মক্কার কাফেরদের দাবীর মুখে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা হাতের ইশারায় চাঁদকে দিখন্ডিত করে দেখান। চাঁদের একটা অংশ আকাশের পূর্বাংশে আর অপরাংশ পশ্চিম দিকে সরে যায় কিছুক্ষণের জন্য। উপস্থিত অনেকেই সে রাতে এ দৃশ্য দেখেছিল। কাফেরদের কেউ কেউ এটা বিশ্বাস করলেও নিজের চোখে দেখা সত্তেও কেউ কেউ তা যাদু হিসেবে অভিহিত করে।

জোৎস্নারাতে রাজা চেরুমল রাজপ্রসাদের ছাদে বসে ছিলেন রাণী সাথে করে। হঠাৎ চাঁদকে দ্বিখন্ডিত হতে দেখে রাণীসহ তিনি ও তার সভাসদরা যারপরনাই বিষ্মত হন। এ বিষয়ে তিনি রাজজ্যোতিষীদের কাছে জানতে চান। মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই মালাবার উপকুলে আগত আরব বণীকদের মাধ্যমে স্থানীয় আরব বণীক ও তাদের ভারতীয় দোসররা জানতে পারেন যে, আরবে এক নবী আত্বপ্রকাশ করেছেন, তিনি একত্ববাদ প্রচার করেন, তিনিই নিজ হাতের ইশারায় চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করেছিলেন। এ কথা শুনে অভিভূত রাজা চেরামান পেরুমল আরবের সেই নবীর সাথে স্বাক্ষাতের জন্য মরীয়া হয়ে উঠেন, শেষ পর্যন্ত তিনি মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন একদল আরব বণীকদের সাথে।

হিজরতের পূর্বে সম্ভবত ৬১৯-৬২০ খৃষ্টাব্দে, ২৭ শে শাওয়াল সকাল নয়টার দিকে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: এর সাথে তাঁর দেখা হয়। সেখানেই তিনি স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সা: এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু বক্কর রা: সহ আরও কয়েকজন সাহাবীর উপস্থিতিতে স্বয়ং আল্লাহর হাবীব সা: তার নাম রাখে তাজউদ্দীন। রাজা চেরামান পেরুমল রাসুলুল্লাহ সা: এর জন্য উপঢৌকন হিসেবে দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত আচার নিয়ে গিয়েছিলেন। ভারতীয় এক বাদশাহ কর্তৃক আদার সংমিশ্রণে তৈরী সেই আচার সংক্রান্ত একটা হাদিসও আমরা দেখতে পাই, প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাইদ খুদরী রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে হাদিসটি।

প্রখ্যাত সাহাবী হযরত মালিক ইবনে দীনারের বোন রাজিয়া’র সাথে রাজা পেরুমল তথা সাহাবী তাজউদ্দীন রা: এর বিয়ে হয়। তিনি সেখানে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ বৎসর অবস্থান করে রাসুলুল্লাহ সা: এর নির্দেশে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তার সাথে মালিক ইবনে দীনারসহ আরও ক’জন সাহাবী ছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে দক্ষিণপূর্ব আরবের এক বন্দরে (বর্তমান ওমানের সালালা শহর) অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যু বরণ করেন। আজও তার কবর রয়েছে ওমানের সালালা শহরে, মর্যাদাবান এক সাহাবী হিসেবে বিশ্বের মুসলমানদের কাছে সেটি এক অনবদ্য আকর্ষণ।

ওদিকে মালিক ইবনে দিনার রা: এবং তার বোন রাজিয়া রা:সহ অন্যান্য মুসলমানগণ ঠিকই কেরালাতে আসেন, মৃত্যু আসন্ন বুঝতে পেরে চেরুমান পেরুমল তথা তাজউদ্দীন রা: তার আত্বীয়স্বজনদের কাছে চিঠি লিখে পাঠান সাহাবী মালিক ইবনে দিনারের হাতে।

সাহাবী মালিক ইবনে দিনার, তার বোন রাজিয়া দলবল সহ কেরালায় আসেন এবং এখানেই তারা বসতী স্থাপন করেন। এর আগে থেকেই সেখানে এক বিরাট আরব বণীকদের বসতী গড়ে উঠেছিল। সাহাবী মালিক ইবনে দিনার সেখানে ভারতের প্রথম মসজিদ স্থাপন করেন। সেখানেই এই মহান সাহাবী ও তার বোন হযরত রাজিয়া রা: এর কবল আজও বিদ্যমান রয়েছে।

সুধী পাঠক, একজন মুসলমান হিসেবে বলুন, ভারতের গর্বের বিষয় কোনটা হওয়া উচিৎ, তাজমহল? না, ভারতীয় সাহাবী তাজউদ্দীন!! (লেখাটা একটা চলমান গবেষণা কর্মের ক্ষুদ্রাংশ)

বিষয়: বিবিধ

২৭৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File