সক্রেটিসের জীবন থেকে আল কুরআনের শিক্ষা
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ২৩ মে, ২০১৩, ০৮:৫৩:৫১ রাত
সক্রেটিসের কথা আমরা সবাই কম বেশী জানি, বা তার নামটা অন্তত শুনেছি। সেই সক্রেটিস একদিন পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এমন সময় তার এক পরিচিত লোক ছুটে এসে তাকে থামিয়ে বলতে থাকল ‘সক্রেটিস, একটু দাঁড়াও, তোমার এক ছাত্রের বিষয়ে আমি একটা খবর শুনেছি, তুমি কি তা শুনেছ?
-‘এক দন্ড থাম’ বলে আগন্তককে থামালেন সক্রেটিস, তার পরে আবার তার দিকে চেয়ে বলে উঠলেন ‘আগে তুমি আমার একটা পরীক্ষায় পাশ কর, তারপরে শুনব তোমার কথা। পরীক্ষাটার নাম হলো ‘ত্রিধাপ সুত্র’
‘ত্রিধাপ সুত্র?’ আগন্তক সীমাহীন কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল।
‘হ্যাঁ, তিন ধাপের পরীক্ষা’ বলে শুরু করলেন সক্রেটিস। বললেন; ‘তুমি আমাকে আমার ছাত্রের ব্যাপারে কিছু বলতে চাও? এসো দেখি তুমি কি বলতে চাও?’
আগন্তক বেচারা অবাক হয়ে ভাবতে থাকল, সে এসেছিল একটা খবর জানাতে, আর এখন কি’ই না বিপদে পড়ে গেল!
সক্রেটিসের সেদিকে খেয়াল নেই। তিনি তার পরীক্ষা শুরু করে দিয়েছেন ততক্ষণে! আগন্তুকের দিকে ফিরে বললেন; প্রথমটা হলো ‘সত্যাসত্য’। তুমি কি নিশ্চিত যে, যে বিষয়টি তুমি আমাকে জানাতে চাচ্ছ, তা একশতভাগ খাঁটি সত্য?
আগন্তক মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলে উঠল; না, না, আমি একশতভাগ নিশ্চিত নই যে ব্যাপারটা সত্য, লোকমুখে শুনেছি মাত্র।
তা হলে তুমি নিজেই জানো না যে, তোমার খবরটা সত্য, না, মিথ্যা।
‘এবারে এসো দ্বিতীয় পরীক্ষাটা হয়ে যাক’ বললেন সক্রেটিস। ‘তুমি যে খবরটা আমাকে জানাতে এসেছ, তা কি কোন ভাল খবর’?
‘না, খবরটা আসলে ভাল কোন খবর নয়’ আগন্তুকের জবাব।
তা হলে তুমি আমাকে আমার ছাত্রের ব্যাপারে একটা খারাপ খবর জানাতে এসেছো, যে খবরটার ব্যাপারে তুমি নিজেই নিশ্চিত নও যে, তা সত্য।
মহা ফাঁপড়ে পড়ে আগন্তক এবারে পালাতে পারলে বাঁচে যেন! কিন্তু সক্রেটিসও নাছোড় বান্দা। তার যে তৃতিয় পরীক্ষা তখনও বাঁকি! তিনি এবারে আগন্তককে তার তৃতিয় পরীক্ষার মুখোমুখি করলেন, বললেন; তুমি যে খবরটা আমাকে জানাতে এসেছে, তা কি আমার জানা খুবই প্রয়োজনীয়?
আগন্তুক ততক্ষণে ঘামতে শুরু করেছে। এবারে একটু ভেবে নিয়ে সে তৃতিয় প্রশ্নের উত্তরে বলে উঠল; না, এটা আপনার জন্য এমন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কোন খবরও নয়। আমি শুনেছি, আর এখানে যাবার পথে আপনার সাথে দেখা হয়ে গেল দেখে ভাবলাম, আপনাকেও খবরটা একটু শুনিয়ে দেই। এই আর কি!
এবারে সক্রেটিস আগন্তককে জিজ্ঞেস করলেন; তুমি আমাকে এমন একটা খবর দিতে চাও, যা সত্য না মিথ্যা, তুমি নিজেই জানো না, সেটা কোন সুসংবাদও নয়, আবার আমার জন্য তা প্রয়োজনীয়ও নয়! তা হলে এমন একটা খবর আমাকে কেনই বা দিতে এসেছো?
আগন্তক বিব্রত ও লজ্জিত হয়ে কোনমতে ক্ষমা চাইতে চাইতে পালিয়ে গেল।
সুধী পাঠক, সক্রেটিসের এই আচরণের মাধ্যমে আমরা যে শিক্ষাটা পাই, তা কিন্তু আল কুরআনেরই শিক্ষা। আল কুরআনের সুরা বণী ইসরাইলের ৩৬ নম্বর আয়াত (১৭: ৩৬), সুরা আন নুর এর ১২ থেকে ১৫ নম্বর আয়াত (২৪: ১২-১৫), এবং সুরা হুজুরাতের ৬, ১১ ও ১২ নম্বর আয়াতগুলো (৪৯: ৬, ১১-১২) দেখে নিলেই বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যাবে।
বিষয়: বিবিধ
১৬৫৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন