হযরত খালেদ সাইফুল্লাহ'র জীবন আর আমাদের আত্বপ্রবঞ্চণা

লিখেছেন লিখেছেন হককথা ২২ মে, ২০১৩, ০৫:০৬:২৩ বিকাল



একুশ হিজরি তথা ৬৪১ সালের কোন এক সময় মহাবীর হযরত খালেদ সাইফুল্লাহ অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তার স্বস্থ্যের দ্রুত অবনতি হতে থাকল। ‘সাইফুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহ তরবারী’ আখ্যায়িত এই মহাবীর জীবনে কত হাজারবার যুদ্ধের ময়দানে শত্রু সেনার মধ্যে ঢুকে পড়েছেন খোলা তরবারী হাতে, শাহাদতের তামান্না বুকে নিয়ে, তার শত শত সাথীরা শাহাদাত পেয়েছেন, কিন্তু তিনি শহীদ হতে পারেননি। আজ বিছানায় শুয়ে শুয়ে তাঁকে মৃত্যুর প্রহর গুণতে হচ্ছে দেখে তিনি খুবই মনকষ্টে ছিলেন। ঠিক এমনাবস্থায় এক পুরোনো বন্ধু তাঁকে দেখতে এলেন।

হযরত খালেদের বিছানার পাশে তিনি বসলে খালেদ নিজের পা’র উপর থেকে কাপড় সরিয়ে তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বুন্ধর নিকট জানতে চাইলেন, তুমি কি এ পায়ে এক মুষ্ঠি পরিমাণ এমন জায়গা দেখতে পাও? যেখানে অস্ত্রের কোন আঘাত চিহ্ন নেই! বন্ধুটি সেদিকে ভাল করে দেখার পর মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলেন; ‘না’।

এর পরে খালেদ রা: তার বাম পা বের করে তা দেখিয়ে একই প্রশ্ন করলেন, বন্ধুটি ভাল করে দেখার পরে এবারেও বলে উঠলেন; ‘না, এক মুষ্ঠি পরিমাণর জয়গা এমন নেই, যেখানে কোন তলোয়ার বা বর্শা কিংবা তীরের আঘাত চিহ্ন নেই’।

খালেদ রা: এ ভাবে এর পরে তার ডান হাত, বাম হাত এক এক করে দেখিয়ে একই প্রশ্ন করলে বন্ধুটিও সেই একই উত্তর দিলেন। এবারে তিনি বুকের উপর থেকে চাদর সরিয়ে বন্ধুকে দেখালেন, বন্ধুটি অবাক বিষ্ময়ে দেখলেন সেখানে বল্লম, তলোয়ার আর তীরের অসংখ আঘাত চিহ্ন।

এবারে খালেদ রা: তার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, তুমি কি বুঝতে পারছ না যে, আমি কী মরীয়া হয়ে শাহাদাত পাবার চেষ্টা করেছি! কিন্তু আমার কপালে শাহাদাত জুটল না!!

‘তুমি যুদ্ধের ময়দানে শত্রু র আঘাতে মরতে পারো না। তেমনটা হওয়া সম্ভপর ছিল না।’ বন্ধুটির জবাব।

‘কেন নয়? আমার পাশেই তো কত সাথীকে লুটিয়ে পড়তে দেখেছি, দেখেছি হাসতে হাসতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে জান্নাতের কাফেলায় শামীল হতে, তা হলে আমার বেলায় কেন নয়!’ হযরত খালেদ স্বখেদে অনুযোগ করে উঠলেন।

‘হে আবু সুলাইমান, বন্ধুটি শান্ত ও ধীর গলায় বলে উঠলেন; ‘আপনি বোঝার চেষ্টা করুন, আপনার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে সেই দিনই, যে দিন প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: আপনাকে সাইফুল্লাহ (আল্লাহ তরবারী) খেতাব দিয়েছিলেন। যুদ্ধের ময়দানে কোন কাফেরের হাতে এ তরবারীর যবনিকাপাত হতে পারে না, সেটা অসম্ভব, কারণ তার মানে দাঁড়াতো, আল্লাহর দুশমন কোন কাফেরের হাতেই স্বয়ং আল্লাহর তরবারীর যবনিকাপাত! এটা কখনই সম্ভবপর নয়।

খালিদ রা: কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। বোঝার চেষ্টা করলেন যুক্তিটুকু। কিন্তু তার মন থেকে শাহাদাতের তামান্নাটুকু গেলই না।

এর দিন কয়েক পরের কথা। সেদিনটাই ছিল হযরত খালেদ রা: এর জীবনের শেষ দিন। তিনি বিছানায় শায়িত আর তার পাশে আছেন তারই অনেক দিনের বিশ্বস্থ খাদেম হযরত হুমাম রা:। হযরত খালেদ রা: এর রোগ যন্ত্রণা বেড়ে উঠছে, নি:শ্বাস ক্রমশই ভারী হয়ে উঠছে। তিনি বুঝতে পারছেন, শেষ মহুর্তটি খুব সন্নিকটে, এখন আর সময় বেশী বাঁকি নেই। তিনি আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকলেন, কিন্তু এই মহুর্তেও যুদ্ধের ময়দানে শাহাদাত না পাবার দু:খটুকু তার গেল না, তিনি বলে উঠলেন;

‘শাহাদাতের জন্য কত চেষ্টা করেছি, আর আজ বিছানায় শুয়ে শুয়ে মরছি, একটা বুড়ো উঁট যেমন তার আস্তানায় পড়ে মরে, ঠিক তেমনি!’

তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দু’ফোটা অশ্র“। এ অবস্থা দেখে স্ত্রী উম্ম সুলাইমান এগিয়ে এলেন, বললেন; হে আবু সুলাইমান, আল্লাহর তারবারী কোন কাফেরের আঘাতে মরতে পারেন না, এটাই আল্লাহর ফয়সালা, আপনার জন্য এটাই আল্লাহর ত্বাক্বদির’

এর কিছুক্ষণ পরে এই অনন্য বীর, সারা জীবনের সঞ্চয় হিসেবে একটা বর্ম, একটা তরবারী, একটা ঘোড়া আর বহুদিনের বিশ্বস্থ খাদেম হামাম’কে রেখে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।

আজ আমরা আমাদের দূর্গতী থেকে মুক্তির জন্য একজন খালেদের অপেক্ষায় থাকি। অপরকে ‌'খালেদ' হবার জন্য বলি, কিন্তু নিজেরা সে চেষ্টা করি না!

আমাদের চেষ্টা হলো; ত্বরিৎ গতিতে বড় বড় কোম্পানী আর রিয়েল এষ্টেট বিজনেসের ডাইরেক্টর হওয়া, যদিও মনে মনে 'খালেদ' হবার স্বপ্ন দেখি বটে! আমরা দুনিয়াকে আঁকড়ে ধরেই ইসলামের বিজয় প্রত্যাশা করি! আত্বপ্রবঞ্চণা আর কাকে বলে!!

বিষয়: বিবিধ

১৫০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File