আসুন একটু ভেবে দেখি -১

লিখেছেন লিখেছেন হককথা ১৫ মে, ২০১৩, ০৩:৪৩:২৪ দুপুর

আমি এক আরব শেখকে জানি যিনি ইংল্যন্ডের এক ছোট্ট শহরে এরকম একটি গীর্জা প্রায় সাত লক্ষ পাউন্ডে একাই কিনে দিয়েছেন। সেখানে ইসলামিক সেন্টার নির্মিয়মাণ। আমরা সেখানে বিনিয়োগ করছি কোটি কোটি টাকা। আমরা মসজিদে, খানকায়, ওরসে বিনিয়োগ করছি! আর তারা বিনিয়োগ করছে মানুষের পেছনে। দু:স্থ ও বিপন্ন মানুষের পেছনে। তাদের নিজেদের দেশের মানুষ আর ছাত্র ছাত্রীদের, তাদের জ্ঞানী আর বিজ্ঞানীদের পেছনে। আচ্ছা বলুন তো, এই পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে মুল্যবান কোন বস্তু বা প্রাণী কি আছে?

মানুষ হলো সরাসরি আল্লাহর প্রতিনিধি! মানুষকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ এই বিশ্ব, এই বিশ্বের কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না! সেই মহামুল্যবান মানুষের পেছনে বিনিয়োগের চেয়ে আর কোন উত্তম বিনিয়োগ কি হতে পারে? আপনি দয়া করে আমাকে প্রিয় নবীজি (সHappy এবং তাঁর প্রথম চার সাহাবী (রাHappy এর সমগ্র জীবন থেকে একটি, দয়া করে মাত্র একটি উদাহারণ দেখাবেন, যার দ্বারা একথা প্রমাণ করতে পারেন যে, মানুষ নয়, অন্য কিছুর পেছনে তাঁরা তাদের শ্রম, মেধা আর সময়কে কাজে লাগিয়েছেন। আমি আপনাকে এই নিশ্চয়তা আগাম দিয়ে রাখছি যে, আপনি কখনই সে কাজে সফল হবেন না।

আমাকে দয়া করে ভূল বুঝবেন না। এইসব মসজিদ এবং ইসলামিক সেন্টার গড়ার বিরোধি আমি নই বরং আমিও চাই সেগুলো গড়ে উঠুক। তবে আমার চাওয়ার ব্যাপ্তি আরও বেশী। আমি চাই, আমরা যেন বুঝতে পারি আমাদের শ্রম, মেধা, আর অর্থ কাদের প্রতি অগ্রধিকার ভিত্তিতে কাজে লাগানোর দরকার। আমরা যেন সুদান, নাইজার, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের বিপন্ন মানুষের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে পারি। আমরা যেন আমাদের সকল সমস্যার পেছনে যে প্রধান কার্যকরণ, সেই জ্ঞান আর গবেষণাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পিছপা না হই। আমরা যেন আফ্রিকার মহামারী এই্ড্সের অনিবার্য সামাজিক দায়, কোটি কোটি এতিম, অনাথ শিশুকে অবজ্ঞা না করি। তাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনটাকে যেন অগ্রাধিকার দিতে পারি।

জানেন কি আফিকা মহাদেশ জুড়ে এইসব এতিম আর নাইজারের এসব মানুষের পাশে কারা গিয়ে দাঁড়িয়েছে? তারা প্রায় সবগুলোই খৃষ্টান এনজিও। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার হাতে নিয়ে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। হ্যাঁ, তাদের এই সাহায্য নিয়ে অনেক কথা আছে, তারা এনজিও নামে সংগৃহিত অর্থ নিয়ে কোন কোন অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করে, তা নিয়েও বিস্তর কথা আছে এবং সেগুলোর অনেকগুলোই সত্য। তারা সাহায্যের নামে সাম্রাজ্যবাদীদের দোসর হিসেবে কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রেই তাও সত্য। তাদের অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুপ্তচরবৃত্তি আর স্থানীয় রাজনৈতিক সহিংসতা, অস্থিরতা তৈরীতে ভুমিকা রাখে, তাও সত্য। কিন্তু তার পরেও সবার উপরে বাস্তব সত্য হলো এই যে, এরা ঐসব ক্ষুধার্তদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়! তাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন যে জিনিসটি, মুখের খাবার, তা নিয়ে। তাদের জীবন বাঁচাতে সবচেয়ে বড় যে প্রয়োজন, সেই ঔষধ পথ্য নিয়ে।

বলুন তো ক’জন মুসলমান চিকিৎসক নিজের খেয়ে ঐসব দু:স্থদের মাঝে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন? কিন্তু স্বীকার করুন আর না করুন, খোঁজ নিলে দেখতে পাবেন, শত শত নয়, হাজার হাজার আস্তিক বা নাস্তিক, খৃস্টান, নাসারা বা ইহুদী বলে যাদের আমরা নাক সিটকায়, তারা গিয়ে ঐ সব বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। উন্নত বিশ্বের সকল সুযোগ সুবিধা ছেড়ে দিয়ে অজপাড়া গাঁ’এ গিয়ে পড়ে আছেন তাদের সেবায়! এদেরই প্রচেষ্টায় সকলের না হলেও অনেক মানুষেরই জীবন বেঁচে যাচ্ছে শেয়াল কুকুরের ক্ষুন্নীবৃত্তির উপকরণ হবার হাত থেকে!

এবার বলুন, ঐসব বিপন্ন মানুষের কাছে কার মুল্য বেশী? আপনার, আমার? না সেই নাসারা-ইহুদীদের যারা বিপদের সময় তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাদের? এবার বলুন, ওদের কাছে কারা বেশী মানবিক বলে বিবেচিত হবে? এই আমি, আপনি বা আমাদের ধনাঢ্য শেখ যারা সুদৃশ্য ইমারত, মসজিদ, খানকাহ করে দিয়েছে অথচ তাদের মুখের খাদ্য কিংবা রোগের পথ্য নিয়ে কোন মাথা ঘামায়নি তারা ? না, যারা দু:সময়ে তাদের শরীর থেকে মাছি সরিয়েছে, মরনাপন্ন অবস্থায় তাদের মুখে এক মুঠো খাবার তুলে দিয়েছে, চিকিৎসায় জুগিয়েছে ঔষধ আর পথ্য, তারা?

কেন তারা দাঁড়াতে পেরেছে তা জানেন? দাঁড়াতে পেরেছে কারণ তাদের হাতে জ্ঞান আছে, প্রযুক্তি আছে, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা আছে। এই বিশ্বে যাদের হাতে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা থাকবে তাদের হাতে অবশ্যই থাকবে গবেষণা আর প্রযুক্তি। আর যাদের হাতে থাকবে গবেষণা আর প্রযুক্তি তাদের হাতেই থাকবে শিল্প-বানিজ্য আর সম্পদ। আর যাদের হাতে থাকল জ্ঞান-গবেষণা, অভিজ্ঞতা-প্রযুক্তি, শিল্প-বানিজ্য আর সম্পদ, তাদের হাতেই তো থাকবে বিশ্বের নেতৃত্ব। আর এই নেতৃত্ব এই বিশ্বে ভালো বা মন্দ যা খুশী করতে পারে, করবে এটাই স্বাভাবিক। তারা বিশ্বের কোণায় কোণায় ধ্বংস আর সন্ত্রাস ছড়িয়েছে তা ঠিক, কিন্তু এর পাশাপাশি এ্টাও তো ঠিক যে, আজকের বিশ্বে জ্বরা, খরা মহামারী যাই বলুন না কেন, ঐ তারাই সেগুলোকে জয় করেছে। অন্তত জয় করার মত উপাদান বের করেছে। আর সেই সব উপাদান নিয়ে যথাসময়ে যথাস্থানে তারা হাজির হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। এভাবেই তারা তাদের রাজত্ব প্রভাব প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখবে। তাদের ভূমিকার কথা সব জানার পরেও তারাই সমাদৃত হবে বিশ্বের মানুৃষের কাছে।

কেন তারা দাঁড়াতে পেরেছে তা জানেন? দাঁড়াতে পেরেছে কারণ তাদের হাতে জ্ঞান আছে, প্রযুক্তি আছে, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা আছে। এই বিশ্বে যাদের হাতে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা থাকবে তাদের হাতে অবশ্যই থাকবে গবেষণা আর প্রযুক্তি। আর যাদের হাতে থাকবে গবেষণা আর প্রযুক্তি তাদের হাতেই থাকবে শিল্প-বানিজ্য আর সম্পদ। আর যাদের হাতে থাকল জ্ঞান-গবেষণা, অভিজ্ঞতা-প্রযুক্তি, শিল্প-বানিজ্য আর সম্পদ, তাদের হাতেই তো থাকবে বিশ্বের নেতৃত্ব। আর এই নেতৃত্ব এই বিশ্বে ভালো বা মন্দ যা খুশী করতে পারে, করবে এটাই স্বাভাবিক। তারা বিশ্বের কোণায় কোণায় ধ্বংস আর সন্ত্রাস ছড়িয়েছে তা ঠিক, কিন্তু এর পাশাপাশি এ্টাও তো ঠিক যে, আজকের বিশ্বে জ্বরা, খরা মহামারী যাই বলুন না কেন, ঐ তারাই সেগুলোকে জয় করেছে। অন্তত জয় করার মত উপাদান বের করেছে। আর সেই সব উপাদান নিয়ে যথাসময়ে যথাস্থানে তারা হাজির হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। এভাবেই তারা তাদের রাজত্ব প্রভাব প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখবে। তাদের ভূমিকার কথা সব জানার পরেও তারাই সমাদৃত হবে বিশ্বের মানুষের কাছে।

{আমার লেখা 'অন্তর মম বিকশীত করো' বই এর ৭১-৭৩ পৃষ্ঠা থেকে।}

বিষয়: বিবিধ

১০৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File