২১৬০ ঘন্টার গণজাগরণমঞ্চ বনাম ২১ ঘন্টার শাপলামঞ্চ ও সরকারের ইসলামপ্রেম (রিপোষ্ট)
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ০৭ মে, ২০১৩, ১২:০৪:২৭ দুপুর
চলতি ২০১৩ সালের ৫ই ফেব্র“য়ারী, থেকে ৫ই মে, তিনটা মাস, মোটামুটি নব্বইটা দিন। ঘন্টার হিসেবে প্রায় ২১৬০ ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেল। এই নব্বই দিনের শুরুতে, ৫ই ফেব্র“য়ারী শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ’ নামের আড়ালে একটা সমাবেশ গড়ে উঠে। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত তা চলতেও থাকে। আদালতে বিচারাধীন মামলার রায় কি হবে, তা নিয়ে সেখানে দাবী জানানো হতে থাক। সাধারণ জনগণের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে, দিনের পর দিন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে সে সমাবেশ চলতে থাকে। আর সরকারও তাদের নিরাপত্তা দিতে থাকেন পূর্ণোদ্যমে।
দিন রাত চব্বিশঘন্টা পুলিশ প্রহরা থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সহায়তা দেয়া হয় । আকাশ থেকে মান্না সালওয়া নাজিল না হলেও গায়েবী মদদে পোলাও বিরিয়ানী ঠিকই সরবরাহ হতে থাকে। পাশাপাশি আশে পাশের বাতাসে যেমন গঞ্জিকার গন্ধ ছড়ায় তেমনি গণীকাদেরর আনাগোণা জমে উঠে। আর পুরো মিডিয়া জগততো এই সমাবেশটাকে সারাক্ষণ লাইভ দেখিয়ে জাতিকে দারুণভাবে আমোদিত করে চলেছিল।
গণজাগরণ মঞ্চের আয়োজক ও পরিচালকদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্নভাবে তাদের বক্তৃতা বিবৃতিতে, লেখা-লেখনীতে আল্লাহ পাককে তো ব্যংগ বিদ্রুপ করেছেই, তদুপরি প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা:, তার পরিবার পরীজনকেও যে ভাবে ব্যংগ বিদ্রুপ করেছে, তা কল্পনাতীত! বিশ্বব্যাপী গণধিকৃত সালমান রুশদীও তেমনটা করেনি।
সরকার সেই তাদেরকেই পুরো প্রশাসনযন্ত্র দিয়ে সহযোগীতা করে গেছে। আর এই ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে, প্রিয় রাসুল সা: এর অবমাননার প্রতিবাদে, সংবিধানে দেশের ৮৫ ভাগ জনগোষ্ঠির বিশ্বাস আর আক্বিদানুযায়ী বিসমিল্লাহ ও আল্লাহর উপরে আস্থা প্রতিস্থাপন করার দাবীতে আলেম ওলামারা মাঠে নামেন। এর আগে তারা মহাসমাবেশ করে সরকারকে পুরো একটা মাস সময়ও বেঁধে দিয়েছিলেন। তারপরেও সরকার সে দাবীর প্রতি কর্ণপাত করেনি, বরং সরকারের রাঘব বোয়ালরা ‘হেফাজত লেজ তুলে পালিয়েছে’ বলে ব্যংগ বিদ্রুপও করেছে।
হেফাজতের নেতা কর্মীরা বার বার নিশ্চিত করে তাদের দাবী তুলে ধরেছে। তারা পরিষ্কার করে বলেছে, রাষ্ট্রক্ষমতা তারা চায় না। তাদের দাবী একটাই, ইসলামের নবীকে অবমাননা করা যাবে না, অবমাননাকারীদের বিচার করতে হবে।
এ দাবী নিয়ে আলোচনা হতে পারত, সরকার চাইলেই। কিন্তু সরকার বাহাদুর তা চাননি। হেফাজত পূর্বঘোষণা অনুযায়ী অবরোধ করেছে। তারা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বসে পড়েছে, দাবী না মানা পর্যন্ত নড়বেন না, ঘোষণা দিয়ে।
এই একই ঘোষণা কি শাহবাগীরা দেয় নি? তারা কি এমন ঘোষণা দিয়ে বিগত তিনটি মাস, নব্বইটা দিন ২১৬০টি ঘন্টা শাহবাগে বসে নেই?
হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা ফজরের নামাজ শেষে সকাল ৬টার দিক থেকে ঢাকা আসতে শুরু করে। আর রাত তিনটা, অর্থাৎ ঢাকায় ঢোকার ঠিক একুশ ঘন্টা পরে সরকার নিরস্ত্র এই সব আলেম-ওলামার উপরে এভাবে অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে, কেউ কি ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবতে পেরেছিলেন? কেউকি একটাবারের জন্যও কল্পনা করেছিলেন যে, সরকার নিজ দেশের হাজার দুয়েক আলেম ওলামাকে মাত্র আধাঘন্টার অভিযানে এভাবে হত্যা করবে?
যে সরকার শাহবাগীদের একুশশত ঘন্টার সমাবেশ সইতে পারে, সেই একই সরকার কেন আলেমদের মাত্র একুশ ঘন্টা অবস্থানেই এতটা হিংস্র হয়ে উঠে?
উত্তর একটাই, ইসলাম। ইসলামই হলো সরকারের চক্ষশূল।
বিষয়: বিবিধ
১৩০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন