রামাদানের গুরুত্ব, ফজিলত ও প্রস্তুতি ।
লিখেছেন লিখেছেন মুসাফির ০৩ মে, ২০১৯, ০৫:২৩:৩৬ বিকাল
বছর ঘুরে আমাদের সামনে আবার মাহে রামাদান উপস্থিত । রামাদান আসে আর যায় কিন্তু আমাদের আমল আখলাকের কোন পরিবর্তন হয় না ! এ মাসটি এলে মসজিদে মসজিদে মুসলমানদের ভিড় জমে, দিনের বেলা আমরা অনেক কষ্ট করে /১৬/১৭ ঘন্টা পানাহার না করে রোজা রাখি, তারাবীহ, কিয়ামুল্লাইল ও ফজরের জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার মত কঠিনমত কঠিন এবাদত করে আমরা রামাদান মাসকে অতিবাহিত করি কিন্তু দঃখজনক হলেও সত্য যে ঈদের চাদ দেখার পর ঐদিন ফজরের জামায়াতে আর রামাদানের মত ভিড় হয়না, না এশাতে। অথচ তারাবীহ সুন্নাত আর এশা ফরজ । তবে এমনটি হয় কেন ? তার কারন, আমরা জানিনা রামাদান কেন আসে, রোজা কেন রাখি, রোজার শিক্ষাইবা কী ?
রোজা কেন রাখি ?
মহান আল্লাহ বলেন
হে ঈমানদাগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল ৷ এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে । (আল বাকারাহ আয়াত ১৮৩)
উল্লেখিত আয়াতে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির গুন অর্জনের কথা বলা হয়েছে ।। হযরত ওমর রাঃ উবাই ইবনে কা'ব রাঃকেপ্রশ্ন করেছিলেন তাকওয়া কি ? উত্তরে তিনি বলেছিনে আপনি কি এমন কোন পথ অতিক্রম করেছেন যা খুবই ছোট, আশপাশ কাটায় ভরা, পিচ্ছিল রাস্থা । তিনি বললেন হ্যা আমি এরকম পথ অতিক্রম করেছি । তখন আপনি কী করতেন ? আমি অতিক্রম করতাম এ ভাবে যে কোন কাটা যেন আমার কাপড় আটকাতে না পারে, পড়ে না যাই এবং খুব দ্রুত আমি এ স্থান ত্যাগ করতাম । উবাই এবনে কা'ব বললেন এটাই তাকওয়া । তাকওয়া মানে হল যাবতীয় গুনাহয়ের কাজ থেকে দুরে থাকা । মহান আল্লাহ রোজা ফরজ করেছেন একজন মুমিন বান্দা রোজা রাখার মাধ্যমে এমন একটি গুন হাসিল করবে যার মাধ্যমে যাবতীয় পাপের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবে, সব সময় আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ সে মেনে চলবে ।এক জন রোযাদার বান্দা যখন রোজা রাখে তখন খাবার তার সামনে থাকার পরও সে খায়না, পানীয় পান করেনা যদিও সেখানে কেউ তাকে দেখছেনা তবুও সে পানাহার করেনা । কেন ? সে বিশ্বাস করে যে এ পৃথিবীর কেউ নাদেখলেও মহান আল্লাহর চোখকে সে ফাকি দিতে পারবেনা। যদি এটাই সত্যি হয় তাহলে মহান আল্লাহর শুধু কি একটা আদেশ যে সুবহে সাদিক থেকে সন্ধা পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার থেকে মুক্ত থাকা ? তিনিই আদেশ দিয়েছেন পাচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে প্রতি দিন পাচবার । যে আল্লাহ রোজা অবস্থায় দিনের বেলা খেলে দেখে ফেলেন সে আল্লাহ কি পাচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে কি দেখেন না ? আপনার সামনে খাবার, ইফতারের দশ মিনিট বাকী আছে খাওয়া শুরু করবেন ? না, কারন আল্লাহর নিষেধ সন্ধা হওয়া পর্যন্ত বলবত, আল্লাহ আদেশ করলেই খাব । শেষ রাতে উঠতে দেরী হয়েগেছে, সাহরী খাচ্ছেন আযান হয়ে গেল, মনে করুন আযান শুনেন নাই , ঘড়িতে দেখলেন সাহরীর সময় শেষ হয়ে গেছে, আপনি কি খাবেন ? না , কারন আল্লাহ নিষেধ করেছেন । এভাবে একটি মাস আল্লাহর আদেশ নিষেধ মানার ট্রেনিং দিলেন এবং স্বীকার করলেন যে আমি আল্লার যবতীয় আদেশ ও নিষেধ মেনে চলব আমার যতই কষ্ট হোকনাকেন ।
সুতরাং রোযার গুরুত্ব এখানেই যে আপনি এভাবে চিন্তা করে যাবতীয় ইবাদাত করবেন এবংপুজি সংগ্রহ করবেন যাতে বাকি এগারটি মাস মহান আল্লাহর যাবতীয় আদেশ নিষেধ মানতে পারেন আর এ গুনটির নাম তাকওয়া ।
রামাদানের ফজিলতঃ-
এক ) রোজা ফরজ হয়েছে এমাসে
সুরা বাকারাহ এর ১৮৩ নং আয়াত থেকে জানা যায় এমাসেই মহান আল্লাহ আমাদের জন্য রোজা ফরজ করেছেন ।
দুই) এমাসে আল কুরআন নাযিল করাহয়েছে । মহান আল্লাহ বলেন
রমযানের মাস, এ মাসেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে , যা মানব জাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত, যা সত্য –সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয় ৷ কাজেই এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাসের সাক্ষাত পাবে তার জন্য এই সম্পূর্ণ মাসটিতে রোযা রাখা অপরিহার্য এবং যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত হয় বা সফরে থাকে, সে যেন অন্য দিনগুলোয় রোযার সংখ্যা পূর্ণ করে ৷ আল্লাহ তোমাদের সাথে নরম নীতি অবলম্বন করতে চান, কঠোর নীতি অবলম্বন করতে চান না ৷ তাই তোমাদেরকে এই পদ্ধতি জানানো হচ্ছে, যাতে তোমরা রোযার সংখ্যা পূর্ণ করতে পারো এবং আল্লাহ তোমাদের যে হিদায়াত দান করেছেন সে জন্য যেন তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে ও তার স্বীকৃতি দিতে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো । (আল বাকারাহ আয়াত ১৮৪)
মানবতার মুক্তির সনদ আল কুরআন এ মাসে নাজিল করা হয়েছে তাতে রয়েছে সত্য মিথ্যার পার্থক্য বুঝার মানদন্ড। যদি মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করে কোন বিধান না দিতেন তাহলে আমরা ন্যায় অন্যায় কিছুই জানতামনা আর এ দুনিয়াটা মানুষ বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে যেত।
তিন)-হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত
মহান আল্লাহ বলেনঃ-
আমি এ কুরআন নাযিল করেছি কদরের রাতে ৷ তুমি কি জানো ,কদরের রাত কি ? কদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও বেশী ভালো ৷ সুরা ক্বাদর ১-৩
রাসুল সাঃ কথা বলছিলেন সাবাদের সাথে যে আগেকার নবী রাসুলরা এবং তাদের উম্মতেরা লম্বা হায়াত পেয়েছিলেন, শত শত বছর বেচে ছিলেন, অনেক ইবাদাত বন্দেগী তারা করেছিলেন । সাহাবারা সবাই চিন্তিত তাহলে আমরা ষাট সত্তর বছর ইবাদাত করে কেমন করে তাদের সমান হব ? রাসুল সাঃ নিজেও চিন্তিত এমন সময় সুরা কদর নাযিল হল হে নবী আপনার উম্মতকে এমন একটি রাত দিলাম যার ইবাদাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আর তাহল এমাসের শেষ দশকের একটি বেজোড় রাত। এত ফজিলত পূর্ণরাত আর কাওকে দেয়া হয়নি।
চারঃ- জান্নাতের দরজা খোলা, জাহান্নামের দরজা বন্ধ ও শয়তান শৃংখলিত ।
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত হাদিস- রাসুল সাঃ বলেন যখন রামাদান মাস শুরু হয় তখন আল্লাহ জান্নাতের দরজা সমুহ খুলে দেন , জাহান্নামের দরজা সমুহ বন্ধ করে দেন এবং শয়তানকে শিকল দিয়ে বেধে রাখেন ( মুত্তাফাকুন আলাইহি )
যার ফলে এমাসে ভাল কাজ করা স হজ হয় এবং মন্দ কাজ করা কঠিন হয় আর শয়তানকে বেধে রাখার কারনে সে মানুষকে মন্ধ কাজে ওয়াসওয়াসা দিতে পারেনা ফলে যে লোকটি সারা বছর নামাজ পড়তে মসজিদে যায়নি সে লোকটি এশা ও ফজরের সালাতে মসজিদে হাজির । যে বোনটি সারা বছর নামাজ পড়েনি সেও পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পাশাপাশি কুরআন তেলাওয়াত করছে ।সুবহানল্লাহ ।
পাচঃ- অনেক গুলো ফজিলতের কথা একটি হাদীসেঃ-
আবু হুরায়রাহ রাঃ থেকে বর্নিত হাদীস -রাসুল সাঃ বলেন, মহান আল্লাহ বলেন আদম সন্তানের প্রত্যেকটি আমল তার নিজের জন্য একমাত্র রোজা আমার জন্য তাই আমি নিজেই এর বদলা দিব । রোজা হচ্ছে ঢালের মত ( ঢাল যেমন শত্রুর আক্রমন থেকে বাচায় তেমনি রোজা শয়তানের আনুগত্য করা থেকে বান্দাকে বাচিয়ে দেয় ),তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রোজা রাখে তখন সে যেন যাবতীয় অশ্লিলতা, মন্ধ কাজ, জগড়া ফাসাদ থেকে বিরত রাখে, কেউ যদি তার সাথ গায়ে পড়ে জগড়া করতে চায় তো সে যেন বলে আমি রোজাদার আর এ কথা যেন দুবার বলে । রাসুল সাঃ বলেন সে আল্লাহর শপথ করে বলছি যার হাতে আমার প্রান-রোজাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের চেয়ে উত্তম । রোজাদাদের জন্য দুটি আনন্দ একটি হল ইফতারের সময় আরেকটি জান্নাতে মহান আল্লাহ সাক্ষাত । সহীহ আল বুখারী
ছয়ঃ- রোজাদারকে ইফতার করালে সমান সওয়াব ।
যায়েদ ইবনে খালিদ আল জুহানী রাঃ থেকে বর্নিত হাদীস তিনি বলেন রাসুল সাঃ বলেন যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে রোজাদারের মত সমান সওয়াব পাবে কিন্তু ইফতার যিনি করলেন তার সওয়াব থেকে কিছু কমবেনা ( তিরমিযি )
সুতরাং আমাদের উচিৎ রোজাদারদের ইফতার করানো, বিশেষ করে অসহায় গরীব দুঃখী মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা। কানাডা, আমেরিকা, ইউরোপ সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে যারা বসবাস করছেন এবং মহান আল্লাহ যাদেরকে স্বামর্থ দিয়েছেন তারা চাইলে বাংলাদেশের গরীব, আসহায় কমপক্ষে একটি পরিবারের পুরো রমজান মাসের খাবারের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন । পৃথিবীর আনাচে কানাচে প্রবাসী বাংলাদেশী প্রায় এক কোটির মত রয়েছেন তাদের মধ্য থেকে যদি অর্ধেক , নাহয় চার ভাগের এক ভাগ ও লোক যদি তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে শুধু রামাদান মাসেই পচিশ লক্ষ পরিবার উপকৃত হবে । আশা করি প্রবাসীরা বিষয়টা বিবেচনা করবেন ।
এ ছাড়াও সহজে আপনি অনেক সওয়াব হাসিল করতে পারেন- মসজিদে যদি বিশুদ্ধ খাবার পানি ব্যবস্থা করেন বা কিছু খেজুর কিনে দেন তাহলে ইফতারে যারাই আপনার দেওয়া পানি খাবে বা খেজুর খাবে আপনি তাদের সকলের রোজার সমান সওয়াব পেয়ে যাবেন (সুবহানাল্লাহ) ।
রামাদান মাসের প্রস্তুতিঃ-
আমরা জানি যে -বলাহয়ে থাকে যে, কাজ বাস্তবায়নের অর্ধেক হল পরিকল্পনা । যারা পরিকল্পিত কাজ করেন তারা সাফল্য লাভ করেন । প্রতি দিন আমরা ঘর থেকে বের হওয়ার আগেই একটা পরিকল্পনা নেই- যেমন কাজে যাব , কিভাবে যাব , কত সময় লাগবে ইত্যাদি । দেশে যাওয়ার কয়েক মাস আগে থেকে ই প্রস্তুতি, কোন সময় টিকিট কাটলে সস্তায় পাওয়া যাবে? কত দিন দেশে থাকব, কিকি নিতে হবে ? কখন ফিরব ইত্যাদি । একটা সুন্দর প্লান করার পরও অনেক সময় অনেক বাধা বিপত্তি আসে তখন অগ্রাধকার ভিত্তিতে আমরা কাজ করে যাই । কোন ব্যবসায়ীকে আপনি পাবেননা যে তিনি তার ব্যবসার সিজনে শশুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে এক সপ্তাহ দোকান বন্ধ করে খুশিতে খুরমা পুলাও খাচ্ছেন । এটা তো শুধু মাত্র এ ক্ষনস্থায়ী দুনিয়ার লাভ লোকসান আর রামাদান মাস হল অনন্ত অসীম পরকালের লাভ ক্ষতির ব্যাপার তাই অবশ্যই আমাদের এ মাসটিকে পরিকল্পিত ভাবে কাজে লাগানো দরকার ।
রামাদানের প্রস্তুতি
রামাদানের প্রস্তুতির ব্যাপারে অনেক কথাই লিখা যাবে , কলেবর বৃদ্ধির ভয়ে সংক্ষিপ্তকিছু কথা উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ ,বাকিটা স্থান, কাল, পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে নিজেরাই ঠিক করে নেবেন কিভাবে রামাদান পালন করবেন ।
ক) পাচ ওয়াক্ত সালাত যথা সময়ে আদায় করবেন
পাচ ওয়াক্ত সালাত যথা সময়ে আদায় করবেন ( পুরুষেরা জামায়াতের সাথে ) মহিলাদের জন্য মসজিদে যাওয়া জরুরী নয় । সুযোগ থাকলে যেতে পারেন ।
খ) বেশী করে কুরআন তেলাওয়াত করবেন
রামাদান কুরআন নাযিলের মাস তাই এমাসে বেশী করে কুরআন তেলাওয়াত করবেন এক্ষেত্রে যা তেলাওয়াত করলেন তা বুঝার চেষ্টা করবেন, অনুবাদ সহ পড়বেন এবং অনুবাদ পড়ার পাশাপাশি ঐ আয়াত গুলোর তাফসীর পড়বেন । মনে রাখবেন পুরো কুরআন এক খতম দেওয়ার চেয়ে সারা মাসে যদি অনুবাদ ও ব্যখ্যা সহ এক পারা পড়েন তবে না বুজে সারা কুরআন খতমের চেয়ে এক পারাতে সওয়াব মোটেই কম হবেনা । অনেকে আবার জানতে চায় কোন সুরা তেলাওয়াতে বেশী সওয়াব ? আজিফার কোন দোয়াতে বেশি নেকী ? আমাদের সমাজে লোকেরা সুরা ইয়াসীন, আররাহমান, ওয়াকিয়া, মুলক ইত্যাদি সুরা তেলাওয়াত করেন, পুরো কুরআনের পাতা গুলো ঝকঝকে আর উল্লেখিত সুরার পাথা গুলি তামাক পাতা শাদার মত হয়ে গেছে । কদরের রাত্রিতে ইমাম সাহেবকে বলাহয় আমার স্ত্রী ইয়াসীন শরিফ ষাট খতম আর আমার মেয়ে পূরো কুরআন শরীফ দুই খতম দিয়ে সুরা ওয়াকিয়া আর ত্রেত্রিশ বার পড়েছে আজকের দোয়ায় বকশিয়ে দিবেন আবার কাগজে স্ত্রী আর মেয়ের নাম লিখে দিতে ও ভুলেন না । আমি সকল রোজাদার ভাই বোনদেরকে অনুরুদ করবো সুরা ইয়াসী ষাট বার না পড়ে এবার তাফসীর সহ একবার পড়ুন, সুরা ওয়াকিয়া ত্রেত্রিশ বার না পড়ে একবার তাফসীর সহ পড়ুন দেখবেন অনেক উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ । প্রতিটা সুরায় কিছু আদেশ ও নিষেধ আছে তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করুন ।
গ) মিথ্যা কথা, অনায় কাজ , গীবত ইত্যাদি পরিহার করুন কারন রাসুল সাঃ বলেছেন যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করতে পারলনা তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই অর্থাৎ তার রোজা আল্লাহর দরবারে কবুল হবেনা ।
ঘ) সময়ের যথাযত ব্যবহারঃ-
মনে রাখবেন সময় আমাদের দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে । আগামী রামাদান আপনি আমি পাব এর কোন নিশ্চয়তা নেই তাই প্রতিটা নেক কাজ আন্তরিকতার সাথে আদায় করুন বিশেষ করে সালাতে সময় বেশি ব্যয় করুন । রাসুল সাঃ বলেছেন তোমরা যখন সালাত আদায় করবে তখন মনে করবে এটা তোমার জীবনের শেষ সালাত । কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে তারাবীহ এর সালাত যত দ্রুত পড়া হয় আর কোন সালাত এত দ্রুত পড়া হয়না অথচ যে হাদীস দ্বারা তারাবীহ সালাতের দলিল দেওয়া হয় সেখানে হযরত আয়েশা রাঃ বলেন রাসুল সাঃ যে আট রাকাত সালাত আদায় করতেন তোমরা আমাকে সে সালাতের সৌন্দর্য্যের কথা প্রশ্ন করনা এটার সৌন্দর্য্যের কথা বলে আমি শেষ করতে পারবনা । সে সালাতটাকে আমরা এত তাড়াতাড়ি পড়ি যে রীতিমত রুকু সেজদা করা যায়না । একবার সাতাশ রামাদান শেষে গ্রামের বাড়িতে গেলাম, মুসল্লিরা বললেন তুমি আমাদের ছেলে কিন্তু আমরা তোমার পিছনে সালাত আদায় করতে পারিনা সুতরাং আজকে পড়াতে হবে । কী আর করা ইমামতি করলাম । সালাত শেষে আমার এক মামা বললেন ভাগনা পুরো রামাদান মাসে আজকে প্রতি রাকাতে দুইটা সেজদা দিলাম ! বলেন কী মামা ? বললেন ইমাম সাহেব এত দ্রুত সালাত আদায় করেন প্রথম সেজদা তো পাইনা ২য় সেজদা কোন ভাবে ধরে সারা মাস সালাত আদায় করেছি ! ইমাম সাহেবকে বলেন নি ? বলেছিলাম কিন্তু তিনি বললেন আপনি তো একতাদাইতু বিহাজাল ইমাম বলেন তো , জী, তাহলে আর কোন চিন্তা নাই ! গ্রামের লোকজন এটার নাম দিয়ে ছিল ঝুম তেরাবী , বিশ মিনিটের মধ্যে এশা ,তারাবীহ ও হালকি নফল সহ শেষ ( আসতাগফিরুল্লাহ ) । আবার কোন কোন মসজিদে মুসল্লিরা হাফিজ সাহেবকে বলতেন তারাবীহ দ্রুত শেষ করার জন্য । আমার পরিচিত এক হাফিজ সাহেব ছিলেন,নাম হাফিজ কুদরত উল্লাহ তিনি বললেন নাটক পাগল কয়েকজন ইয়াং মুসল্লি ছিলেন তারা সালাত শুরু করার আগে রীতিমত বলেদিত যে ভাবে হোক আমাদেরকে সাড়ে আটটার নাটক ধরিয়ে দিতে হবে ! এই ছিল তারাবীহ এর অবস্থা । মহান আল্লাহ আমাদেরকে সালাতে তাড়াহুড়া থেকে হেফাজাত করুন ।
ঙ) খারাপ আভ্যাস গুলো ছেড়ে দেওয়াঃ
আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই কোননা কোন খারাপ অভ্যাস আছে । রামাদানের শুরুতে নিরিবিলি বসে খারাপ অভ্যাস গুলোর একটি তালিকা তৈরী করে এ গুলো ছেড়ে দেওয়া । যেমন কেউ যদি ধুমপায়ী হন আপনি চাইলে এটা ছেড়ে দিতে পারেন আর রামাদান চেয়ে উত্তম কোন সুযোগ পাবেন না । রেগে যান, ছেড়ে দেন রাগ করা, ধর্য্য ধারন করতে শিখুন দাম্পত্য জীবন সুখের হবে, জীবনে আর কার কাছে রাগের মাথায় কথা বলার জন্য মাপ চাইতে হবেনা ।
চ) বেশী বেশী দান খয়রাত করুনঃ-
ফরজ সাদকা ( যাকাত ) এমাসেই আদায় করুন । মনে রাখবেন যাকাত দিতে হয় চন্দ্র মাস হিসাব করে । রামাদান মাস ছাড়া অন্য মাসের হিসাব রাখা খুবই কষ্টকর । নফল সাদাকাহ এ মাসে বেশী বেশী আদায় করুন বিশেষ করে শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিতে যদি কদরের রাত হয় তাহলে প্রতিটা ইবাদাত হাজার মাস হিসাব করেই সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ ।
ছ ) বেশী বেশী দোয়া করবেনঃ-
আমাদের প্রয়োজনের শেষ নেই, দুনিয়া আখেরাত উভয় জায়গায় সাফল্য চাই । রাসুল সাঃ বলেছেন রোজাদারদের দোয়া ইফতার পর্যন্ত কবুল করাহয় । আমরা অনেকই জানি যে ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয় তাই ঐ সময় ছাড়া সাধারনত দোয়া করা হয়না কিন্তু সঠিক কথা হল ইফতারে তো কবুল হয়ই সেই সাথে সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া কবুল হয় রামাদানে । এ ছাড়া ফরজ সালাতের পর, আযানের পর, আযান ও ইকামাতের মধ্যখানে দোয়া কবুল হয় । রাসুল সাঃ বলেছেন রামাদানের প্রতি রাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এজন্য জাহান্নাম থেকে নাজাতের দোয়া করা । মহান আল্লাহ বলেন যারা জাহান্নাম থেকে নাজাত পেল এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল তারাই সফলকাম । মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন আমাদেরকে রামাদানের সকল রোজা, সকল ইবাদাত সঠিক ভাবে আদায় করার তাফিক দিন । এ মাসে যে ভাবে আল্লাহকে ভয় করে যাবতীয় আদেশ ও নিষেধ মেনে চলি , নেকীর কাজে সময় ব্যয় করি বাকী এগারটি মাস যেন তেমনি চলতে পারি । আমরা যেন তাকওয়াবান হতে পারি। যাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দওয়া হবে এবং যাদেরকে জান্নাতি বলে গ্রহন করা হবে আল্লাহ যেন তাদের মধ্যে আমাদেরকে শামিল করেন ( আমীন )
বিষয়: বিবিধ
১২৭১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন