মানব সেবায় ইসলামের অবদান
লিখেছেন লিখেছেন মুসাফির ২১ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:২৬:৫৫ রাত
মানব সেবায় ইসলামের অবদান
ফারুক আহমদ
আমরা সাধারণত মনে করি ইবাদাত বলতে নামায, রোযা, হাজ্জ, যাকাত, সাদাকাহ, তাহাজ্জুদ, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবীহ তাহলীলকে বুঝায় এবং এতেই শুধু সাওয়াব নিহিত আছে । পক্ষান্তরে কোন মানুষের বিপদ আপদে সাহায্য করা , কারো বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া ,রোগীর সেবা করা ,মাজলুম ব্যক্তিকে সাহায্য করা, জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা, এগুলোকে আমরা দুনিয়াধারী কাজ মনে করি । একারণে আমরা নফল ইবাদাত বন্দেগীতে আমাদের যতটুকু আগ্রহ দেখা যায় ততটা মানব সেবা মুলক কাজে দেখা যায়না ।
দুনিয়াধারী কাজ মনে করার কারণ :-সমাজের যারা মানব সেবার কাজে জড়িত তাদের অধিকাংশ লোক আল্লাহর দেওয়া ফরজ ইবাদাতে গাফেল, এমনকি ফরজ নামাজটা আদায় করার সময় টুকু তাদের কাছে নেই ।আবার অন্য দিকে যারা ধার্মিক তারা সমাজ সেবার কাজে উদাসিন হওয়ার কারনে মানুষের মনে এ ধারনা জন্ম নিয়েছে যে সমাজ সেবার কাজ ধার্মিকদের কাজ নয় এটা রাজনীতি বিদদের কাজ ।অথচ মানব সেবার কাজকে কুরআন হাদীসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হিসাবে উল্লেখ করাহয়েছে ।
বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া :- এমন কোন লোক হয়ত পাওয়া যাবেনা যিনি কোন দিন বিবাদে জড়িয়ে পড়েন নাই ।পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে অনেক বিবাদ সংগঠিত হচ্ছে ।পরিবার ,সমাজ ও রাষ্ট্রে যত খুন খারাবী হচ্ছে তা যে এ ঝগড়া বিবাদ থেকে হচ্ছে এটা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা ।ইসলাম চায় জগড়া বিবাদ হলে তা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা । এ ক্ষেত্র যারাই এগিয়ে আসবেন তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান ।
রাসুল সাঃ বলেছেন "দুই ব্যক্তির মধ্যে সৃষ্ট কোন বিবাদের ফয়সালা করে ইনসাফ প্রতিষ্টা করা সাদকাহ দানের মত সওয়াব "।বোখারী
বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া আল্লাহর রহমাত লাভের উপায় :-
আল্লাহ সুবহানাহু ও তা'য়ালা বলেন "মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, তোমাদের ভাইদের মধ্যে উত্তম ফায়সালা করে দাও ,আশা করা যায় তোমাদের প্রতি রহম করা হবে" । (হুজরাত আয়াত ১০) এ থেকে বুঝা যায় বিবাদ মিটিয়ে দেওয়ার কাজটা শুধু সাওয়াবের কাজ নয় এটা আল্লাহর রাহমাত পাওয়ার একটি উপায় ।
কারো প্রয়োজন পুরণ করে দেওয়া :- মানুষ সামাজিক জীব, অন্যের সাহায্য ছাড়া তার চলেনা ।এমন কাউকে পাওয়া যাবেনা যে সে নিজেই সব কিছু করতে পারে অন্যের সাহায্য ছাড়া ।বিশেষ করে অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা । রাসুল সাঃ বলেছেন" মুসলমানরা পরস্পর ভাই ভাই ,সে তার প্রতি জুলুম করেনা এবং তাকে শত্রুর হাতে তুলে দেয়না , কেউ যদি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পুরনে এগিয়ে আসে আল্লাহ তার প্রয়োজন পুরণ করে দেন"। (বোখার ও মুসলিম)রাসুল সাঃ আরো বলেছেন :-"যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের কোন কষ্ট দুর করে দেবে আল্লাহ কিয়ামাতের দিন তার কষ্ট দুর করে দেবেন এবং যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের দোষ ঢেকে রাখে ,আল্লাহ কিয়ামাতের দিন তার দোষ ত্রুটি ঢেকে রাখবেন" (বোখারী ও মুসলিম) সুবহানাল্লাহ । রাসুল সাঃ আর বলেছেন-" আল্লাহর বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত তার ভাইয়ের সাহায্যে লেগে থাকবে স্বয়ং আল্লাহ পাক ততক্ষণ তার সাহায্যে লেগে থাকেন"(বোখারী ও মুসলিম)
অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা:-
আমাদের জন্ম ভূমি বাংলাদেশের এক বিরাট জন গোষ্টির বাস দারিদ্র সীমার নেচে, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা ।এ সমাজে রয়েছে পিতার স্নেহ থেকে বন্চিত অনেক এতিম শিশু । এদের সাহায্যে যারা এগিয়ে আসবেন তাদের ব্যাপারে রাসুল সাঃ বলেছেন :-"আমি এবং এতিমের লালন পালন কারী ব্যক্তি জান্নাতে এভাবে পাশাপাশি থাকব " এ কথা বলে তিনি তার শাহাদাত ও মধ্যমা আংগুলি একত্রিত করে দেখান ।আমাদের সম্পদশালী ও প্রবাসী ভাইয়েরা যদি একটি এতিম শিশুকে নিজের পরিবারের একজন সদস্য হিসাবে গ্রহন করেন তাহলে এটা শুধু সাওয়াবের কাজ হবেনা এটা দারিদ্র বিমোচনে ও বিরাট ভুমিকা রাখবে । আর এসব কাজে যত গোপনীয়তা রক্ষা করা যায় ততই কল্যাণ ।
রাসুল সাঃ বলেছেন "গোপনীয় দান আল্লাহর ক্রোধকে নির্বাপিত করে এবং আত্বীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় মানুষের হায়াতকে দীর্ঘ করে" (সহীহ আত তারগীব) ।
বিধবা ও মিসকিনকে সাহায্য করা :-
রাসুল সাঃ বলেছেন " বিধবা ও মিসকিনকে সাহায্যকারী ব্যক্তি ঐ লোকের ন্যায় যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনের জন্য জিহাদ করছে, বিরতিহীন ভাবে নামায পড়ছে ও রোযা রাখছে" (বোখারী ও মুসলিম) । প্রতি দিন তাহাজ্জুদ পড়া আর প্রতি দিন রোযা রাখা খুব সহজ নয় অথচ এ কাজটি করলে আমরা সে সাওয়াব পেয়ে যাচ্ছি সুবহানাল্লাহ ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে মানবতার সেবায় এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন (আমীন)
বিষয়: বিবিধ
১৬৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন