এবার তোরা মানুষ হ
লিখেছেন লিখেছেন জাগ্রত ২৬ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:২০:৫২ রাত
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের মত এত সুন্দর জীব পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। তাদের আছে অপরিসীম বোধশক্তি যা তাদেরকে অন্য যে কোন জীবের চেয়ে সতন্ত্র করেছে। যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এই সুন্দর জীবটিও শ্রেণী বৈষম্যের স্বীকার হয়ে সবলের নিকট হয়েছে নির্যাতিত ও নিগৃহীত। পরাধীন দেশে অত্যাচারী শোষকের হাতে প্রাণ গিয়েছে লক্ষ কোটি মানুষের। বিশ্ব-মানব সভ্যতার ইতিহাস থেকে এর বহু নমুনা আমরা দেখতে পাই। যাদের হাতে সরলপ্রাণ মানুষের জীবন নাশ হয় তারা ইতিহাসে অত্যাচারিত ও ঘৃণিত হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
সম্প্রতি আমাদের এই শ্যামল বাংলাদেশে একটি বড় ট্র্যাজেডি ঘটে গেছে। সাভার ট্র্যাজেডি। রানা প্লাজায় ঘটে যাওয়া এ ট্যাজেডিকে কেউ বলছে দূর্ঘটনা, আবার কেউ বলছেন পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এ ট্রেজেডিতে নিহত হয়েছে ৩ শতাধিক শ্রমজীবি মানুষ এবং উদ্ধার হয়েছে তিন সহস্রাধিক। তারা প্রায় সবাই ছিল গার্মেন্টস কর্মী। মানবিক মূল্যবোধের দৃষ্টিকোণ থেকে তারা মানুষ নামে সংঘায়িত হলেও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব যাদের হাতে সেই সরকার তাদেরকে মানুষ হিসেবে বিবেচনায় আনতে অনিচ্ছুক। সরকারের সর্বময় কর্তা ঘটনার দিন কমলাপুরে ডেমু ট্রেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাড়িয়ে ঘোষণা করেন সাভারে ধসে পড়া নয় তলা ভবন থেকে আগেই সব লোককে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তার এ বক্তব্যে জাতি চরম ভাবে হতাশ হয়। এ শোকাবহ দিনে তিনি খুব হাসিখুশি মনে ও অনেকটা উৎসব মূখর পরিবেশে উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।
মানুষের দুর্দিনে মানুষ সহানুভূতির হাত বাড়ায়, কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী এদেরকে মানুষ হিসেবেই গন্য করলেন না। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে লাশের মিছিল। বিশ্ব মিডিয়ায় শিরোনাম হয় এই মানবিক দুর্যোগের। চারদিক থেকে এই ঘটনার প্রকৃত দোষিদের বিরুদ্ধে সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার জোর আহবান জানানো হয়। মিডিয়ায় প্রকাশ হয় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা সাভার এলাকার সরকার দলের এম পি মুরাদ জং এর সহায়তায় পালিয়ে আছে। সে যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক। তাকে বাঁচানোর জন্য উঠেপরে লেগে গেলেন আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্থ সরকার প্রধান মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে দাড়িয়ে ঘোষনা দেন রানা যুবলীগের কেউ নয়। চোর সুযোগ পেলে চুরি করে, মিথ্যাবাদীরা সুযোগ পেলেই মিথ্যা বলে। কিন্তু মিডিয়ার সামনে বর্তমান যুগে কারো চুরি করার বা মিথ্যা বলার সুযোগ না থাকলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দিধায় এই অপকর্মটি করে চলছেন। অন্য কোন সভ্যদেশে এই কাজটি করে প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিত্ব রক্ষা করতে পারতেন কিনা সন্দেহ। উদ্ধার কাজের প্রথম থেকেই সরকারের দায়সার গোছের উদ্ধার কাজ নিয়ে চলতে থাকে সমালোচনার ঝড়। সরকার তাদের জায়গায় অটল। যে মেহনতী মানুষ মৃত্যুবরণ করল তাদের সহকর্মীরা পরদিন কাজে যোগ দিতে বাধ্য হল। তাদেরকে মানুষ বলে বিবেচনা করলে হয়তো বা নূন্যতম মানবিকতাবোধও দেখাতে পারতেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। সত্যিকার অর্থে তাদের উদ্ধারের জন্য বড় কোন প্রতিষ্ঠানকে সার্বিক তদারকির চূড়ান্ত দায়িত্ব দেয়া হয়নি। উদ্ধার কাজে অপ্রতুল যন্ত্রপাতি থাকা সত্বেও পার্শ্ববর্তী কোন দেশ হতে দূর্ঘটনার তিন দিনেও সরঞ্জাম আনার দরকার মনে করে নি। সাধারণ মানুষ অক্সিজেনের সিলিন্ডার কিনে সরবরাহ করলেও সরকারের পক্ষ থেকে নিরব থাকতে দেখা যায়। যাদের প্রচেষ্টায়, যাদের ভোটের বিনিময়ে শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী সেই মানুষগুলো তার কাছে মানুষই নয়। তার সামনে এত বড় হত্যাকান্ডটি ঘটলেও অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে তিনি রানাকে ব্যাকে রাখা টাকা তুলে সাথে নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। দুর্ভাগা জাতির সাথে এর চেয়ে আর বড় প্রতারণা কি হতে পারে। রানাকে পালাতে দিয়ে সরকার খুনি ও রক্তপিপাসু সরকারে পরিণত হয়েছে। এই কয়েক দিনে তিনি ঘটনা-পরম্পরায় যত নমনীয়তার ভাব দেখিয়েছেন তা নিতান্তই অলীক, লোকদেখানো। এটা করেছেন মিডিয়ার চাপে, সুনাগরিকদের তোপের মুখে আর ভোট ব্যাংক বাড়াবার উদ্দেশ্যে। সময় এসেছে এসব লোক দেখানো প্রতারকদের বয়কট করার এবং জাতির সাথে বেঈমানি করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার। বাংলাদেশের নিগৃহীত, নির্যাতিত জনতার মানুষ হওয়ার প্রকৃত সময় এসেছে। সকল শ্রেণী পেশার মানুষ তাদের অধিকার আদায়ে কঠোর হওয়ার এখনই সময়। তাই তাদের বলি- এবার তোরা মানুষ হ।
বিষয়: বিবিধ
১৩২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন