যে খ্যাতনামা মানবহিতৈষীকে অনেকেই চেনেন না ?

লিখেছেন লিখেছেন দিগন্তে হাওয়া ১০ জুলাই, ২০১৬, ০৭:০৮:৪৮ সন্ধ্যা



‘ক্ষত বিক্ষত, ছিন্ন বিচ্ছিন্ন দেহগুলো দেখে আমার হৃদয় কঠিন হয়ে যায় সেদিন। মানবতার কাছে এবং ধর্মের কাছে সেদিন থেকেই আমি আমার জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিলাম।’

 মানবহিতৈষী আবদুল সাত্তার ইধি

১৯২৮ সালে ভারতের গুজরাটে জন্ম ইধির। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর গুজরাটের বান্তভা গ্রাম থেকে পাকিস্তানে চলে এসেছিল ইদির পরিবার। তার বাবা একজন স্বনামধন্য কাপড়ের ব্যবসায়ি ছিলেন। বাবার ধারণা ছিল ইধিও আমার কাজেই হাত দিবে কিন্তু কে জানতো ইধি নিজেকে মানবতার সেবায় বিলিয়ে দিবে।

পাকিস্তানে এসে একটি ছোট্ট ঘর ভাড়া নেন করাচির জোদিয়া বাজারের কাছে। সেই স্থানেই আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইধি সেন্টার। ধীরে ধীরে এই সেন্টার হয়ে উঠে গরীব অনাথ শিশুদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থাসহ পড়ালেখার বন্দোবস্ত।



যে বিষয়টি না বললেই নয়, পাকিস্তানে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে খুব কড়াকড়ি। এর মধ্যেও যেসব সন্তান তাদের পিতা-মাতা না থাকায় নাগরিকত্ব কার্ড তৈরি করতে পারে না, তাদের পিতা হয়ে নাগরিকত্ব পাওয়ারও বন্দোবস্ত করতেন এই ইধি।







১৯৫১ সালে প্রথম ইধি বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য একটি ডিসপেনসারি খোলেন। ক্রমশ করাচির সেই ডিসপেনসারির সংখ্যা বাড়তে বাড়তে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে পৌঁছে যায়। বর্তমানে ইধি ফাউন্ডেশন কয়েক ডজন হাসপাতাল, ডিসপেনসারি, প্রায় ৫০ হাজার শিশু তাদের অনাথ আশ্রমে স্থান পায়।



৪০ হাজার যোগ্যতাসম্পন্ন নার্সদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এই ফাউন্ডেশনের অধীনে, আশ্রয়কেন্দ্র, মাদক নিরাময় কেন্ত্র চালায় পাকিস্তানজুড়ে।

১৯৬৬ সালে ইধির মানব সেবার সাথী হন বিলকিস বেগম। দু’জনে মিলে নতুন উদ্যমে ইধি অন্যের সেবাই নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতে থাকেন।

পাকিস্তানের যে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হলে সে সকল স্থানে সর্বপ্রথম যে অ্যাম্বুলেন্স সাহায্যে এগিয়ে আসে সেটা হলো ইধি ফাউন্ডেশনের। বিশ্বের সর্ববৃহৎ অ্যাম্বুলেন্স সেবা দানে নিজেদের সাফল্য ধরে রেখেছে এই ইধি ফাউন্ডেশন।

সন্ত্রাসী হামলা থেকে শুরু করে দাঙা পরিস্থিতির ভেতরেও ইধির সদস্যরা বুদ্ধিমত্তা এবং সাহসিকতার সঙ্গে মানুষের লাশ সংগ্রহ করে থাকেন।

২০১৩ সালের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন ইধি। কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে তিনি সিন্ধুর ইনস্টিটিউট অব ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টেশনে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর থেকেই মূলত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন।

মৃত্যুর আগে আব্দুল সাত্তার ইধিকে বিদেশে চিকিৎসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। কিন্তু ইধি জানিয়েছিলেন,

তিনি কেবল পাকিস্তানের সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা নেবেন, অন্য কোথাও নয়।

গত ৮ তারিখ শুক্রবার খ্যাতনামা মানবহিতৈষী আব্দুল সাত্তার ইধি পাকিস্তানে নিজ শহরে মারা যান, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

আল্লাহ ওনাকে জান্নাতবাসি করুন, আমিন...

বিষয়: বিবিধ

২১৯৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

374316
১০ জুলাই ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫২
শেখের পোলা লিখেছেন : এ জন্যই এনাকে পািস্তানের মাদার তেরেসা বলা হয়। কানাডেতেও ওনার ফাউণ্ডেশনের জন্য টিভিতে এ্যড দেওয়া হয়। উনি উনার ভাল কাজের বদলা অবশ্যই পাবেন ইন শা আল্লাহ।ধন্যবাদ আপনাকে।
374341
১১ জুলাই ২০১৬ রাত ১২:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমিন।
উনার সম্পর্কে প্রথম জেনেছিলাম ১৫-১৬ বছর আগে।এত বড় কাজ অথচ কোন প্রচারনা নাই। শুধু মানব সেবাই তিনি করেছেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File