আশা ভঙ্গ !!
লিখেছেন লিখেছেন দিগন্তে হাওয়া ০৭ জুলাই, ২০১৫, ০২:১৮:২৬ রাত
বন্ধুটির নাম আলী সালেহ। মেধাবী, শান্ত প্রকৃতির এক ছেলে। মেডিসিন পড়তে প্রায় ৩ বছর আগে পা দিয়েছিল ইরানে। বর্তমানে আমার সাথেই ইস্ফাহান বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল থেকে সেকেন্ড টার্ম শেষ করেছে। ইরানের কাজভিনে ফার্সি ভাষা কোর্স করার সময় থেকেই পরিচয় যার সাথে আমার।
যার বাসা ফিলিস্তিনের গাজায়। বাবা-মা পরিবারের সকলেই বর্তমানে গাজায় বসবাস করছেন। পরিবারে আছেন বাবা-মা, ছোট এক বোন সাথে বড় এক ভাই। তার বড় ভাইও ইরানে মেডিসিন পড়ছেন।
সামনে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রীষ্মকালীন ২ মাসের দীর্ঘ ছুটি। সবার মতই বন্ধুটির ইচ্ছা জেগেছে প্রায় ৩ বছর হতে চলেছে এইবার হয়তো পরিবারের নিকটে যেতে পারবে। ঠিক এমনই ইচ্ছা ছিল গতবছরেও কিন্তু ইহুদিবাদী ইসরাইলের হামলার কারনে গাজায় যাবার পরিবর্তে তার পরিবারকে নিয়ে ইরানে থেকেই চিন্তায় নির্ঘুম সময় পার করতে হয়েছিল।
এবার সেই হামলা নেয় তাই চলছে লাগেজ গোছানো, দেশে যাবার প্রস্তুতি। সাথে চলছে পরিবারের সদস্যদের কার জন্য কি গিফট নিয়ে যাওয়া যায় তার ভাবনা।
আমার সাথে তার দেখা হলেই তার দেশে যাবার বিষয়ে খোঁজ নিই।
আশা দিই ইনশাআল্লাহ, তুমি এবার যেতে পারবে !! কিন্তু সেটা কি এতই সহজ ??
কিছুদিন আগে দীর্ঘক্ষন সে কিভাবে দেশে যাবে সে বিষয়ে কথা হচ্ছিলো। আমি তার সেই বর্ণনা শুনে সত্যিই হতভম্ব হয়েছিলাম।
সে যা বললোঃ ইরান থেকে সে প্রথমে যাবে তুরস্ক, সেখান থেকে মিসর, তারপরে মিসরের রাফাহ ক্রসিং হবে তার গন্তব্য। রাফাহ ক্রসিং সবসময় খোলা থাকেনা কিছুদিন আগে মাহমুদ আব্বাসের সাথে আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যেক সপ্তাহে একবার করে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু তা খোলা থাকলেও হয়তোবা যে কোন কারণে সিসি সরকারের বাহিনী তাকে গাজায় ঢোকার অনুমতি নাও দিতে পারে। হতে পারে সেখান থেকে আবারো পূর্বের গন্তব্যে ফিরে আসতে। যদিও সমঝোতার সংবাদটি ছিল তার জন্য কিছুটা হলেও আশার বানী। যা শুনে আমিও অনন্দিত হয়েছিলাম।
তারপরে সে কথায় কথায় বললোঃ যেতে পারলেও কবে ফিরতে পারবো তা আমি নিজেও জানিনা !! কবে তোমার সাথে আবার দেখা হবে তাও জানিনা !!
তা শুনে আমার মুখটা শুকিয়ে গিয়েছিল !!
কি বলে সে ?
আলী জানালোঃ যাওয়া যতটা সহজ, গাজা থেকে ফিরে আসাটা তার চেয়েও অনেক অনেকগুন কঠিন !!
কেন জানো ?
যাওয়ার জন্য প্রত্যেক সপ্তাহে রাফাহ ক্রসিং একবার খোলা থাকলেও গাজা থেকে গাজাবাসীদের বের হবার জন্য মিসরের সিসি সরকার মাসে একবার অথবা শুধুমাত্র অসুস্থ রুগীদের বের হতে দেয়। এছাড়াও গাজা থেকে বের হবার জন্য অনেক আগে থেকেই আবেদন করতে হয়।
আমি বললামঃ যদি যেতেই চাও তবে গিয়েই ফিরে আসার জন্য আবেদন করবে তবে হয়তোবা খুব দ্রুতই ফিরে আসতে পারবে।
সে বললোঃ আমারও সেটাই পরিকল্পনা আছে। কিন্তু সেটা কি সম্ভব ??
সে আশা নিয়ে, কিছুদিন আগে সালেহ বিমানের টিকিটও বুকিং দিয়েছিল।
গতকাল রাতে কথা হচ্ছিলো বন্ধুটির সাথে, দুঃখভরে হতাশার সাথে সে জানালোঃ আমার আর যাওয়া হলোনা।
কেন এর জবাবে সে জানালোঃ কিছুদিন আগে সিনাই প্রদেশে আইএস এর সাথে মিসরের সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কারণে যাত্রা পথ খুবই বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই কথা শুনে আমি তাকে সান্তনা দেবার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। নিজে নিজেকেই প্রশ্ন করলাম এভাবে তার আশা ভেঙ্গ হয়ে গেল !!
হয়তোবা এর মাঝেই মহান আল্লাহ কল্যান লিখে রেখেছেন। বন্ধুটির জন্য দোয়া করবেন সাথে ফিলিস্তিনের সেই সকল বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের জন্য যারা প্রতিনিয়ত পথ চেয়ে রয়েছেন তাদের প্রিয়জনদের জন্য কিন্তু ………
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৮ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঈদে বাড়ি ফিরবে না তারা কেউ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন