মাহে রমজানের ফেলে আসা সেই স্মৃতিগুলো !!

লিখেছেন লিখেছেন দিগন্তে হাওয়া ১৯ জুন, ২০১৫, ০৪:১৯:১৯ বিকাল



মাহে রমজান পবিত্র এক মাস। একটি বছর পর-পর আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়। এক সময় পরিবারের সকলে মিলে অন্য রকম এক পরিবেশে মাহে রমজানকে স্বাগত ও পালন করার সুযোগ পেতাম, আলহামদুলিল্লাহ…

মাহে রমজানের আগমনের আগে থেকেই আমাদের বাসায় উঁকি দিত রমজানের আমেজ। রমজানের আগের সাধারনত সর্বশেষ শুক্রবারে আব্বার পরিচালনায় পারিবারিক বৈঠকের মাধ্যমে শুরু হতো মাহে রমজানের প্রস্তুতি পর্ব। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হতো পরিবারের সকলে মিলে কিভাবে মাহে রমজানকে সুন্দরভাবে পালন করতে পারি। পরিবারের সকলের কাছ থেকে জানা হতো, কে, কি ভাবছে পবিত্র এই মাসকে নিয়ে? তারপরে যে যার মতো প্রস্তুতি নিতো …

এলাকার মসজিদের মাইকে রমজানের আগমন বার্তা শোনার সাথে সাথে প্রস্তুতি চলতো তারাবীহর নামাজের। কয়েক বছর আগে যখন আমাদের বাসার কাছাকাছি কোন মসজিদ ছিলনা তখন আব্বার ইমামতিতে বাসার সকলেই একসাথে জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করতাম। ভাইয়েরা সামনের কাতারে এবং আম্মা ও বোনেরা পেছনের কাতারে।

পরবর্তীতে বাসার পাশে মসজিদ হবার সুবাদে সেখানেই আব্বা ও আমরা ভাইয়েরা এবং আম্মা ও বোনেরা বাসায় তারাবীহর নামাজ আদায় করতেন।

মাঝে মাঝেই যে ঘটনাটি মনে পড়ে, ছোটকালে যখন রোজা রাখতে কষ্ট হতো তখন মাঝে মাঝে দোকান থেকে বিস্কুট বা অন্য কিছু কিনে এনে আম্মাকে বলতাম আম্মা আজ বোধহয় রোজা রাখতে পারবোনা, পেট ব্যাথা করছে। আম্মা বলতেন আর তো কয়েক ঘন্টা। আমি তখন ভাবতাম তাইতো …

মাহে রমজানের গুরুত্বপুর্ন যে চিত্র আমাদের বাসায় দেখা মিলতো তা হলোঃ সবার মাঝে কোরআন খতমের প্রতিযোগিতা। আব্বা প্রায় বছরই অর্থ সহকারে কোরআন খতমের চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। আম্মা রান্নাসহ পারিবারিক আনুসাঙ্গিক কাজে ব্যস্ত থাকায় অর্থ সহকারে সেভাবে শেষ করার সুযোগ পেতেন না।

আমি প্রতিদিন আব্বার কাছে একবার, আম্মার কাছে একবার গিয়ে আপডেট নিতাম কে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অপরদিকে মাদ্রাসায় পড়ার সুবাদে সেভাবে আমার কোরআন পড়ায় সমস্যা না থাকায় (আলহামদুলিল্লাহ) আমিও চালিয়ে যেতাম ধীরে-ধীরে ব্যক্তিগত কোরআন খতম।

আমার স্বভাব ছিল উচ্চস্বরে কোরআন তেলাওয়াত করা। এখনও সেই সময়ের স্মৃতিগুলো মনে হলে, মাঝে মাঝে আমার তেলাওয়াতের মাঝে আম্মা অন্য রুম থেকে বলতেন নাবিল যের হবে, যবর পড়লি ইত্যাদি …

এইভাবে পুরো বাসায় এক কোরাআনিক পরিবেশের দেখা মেলতো। এক ঘরে আব্বা আরেক ঘরে আম্মা, আরেক পাশে বোন, অন্যপ্রান্তে ভাই …

আরেকটি গুরুত্বপুর্ন অংশ ছিল বাসার আশে-পাশের প্রতিবেশীদের দাওয়াত দিয়ে ইফতার করানো। এভাবে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিতো রহমত ও মাগফিরাতের দশক।

শেষ দশক মাগফিরাতের দশক আসলেই পরিবারের সকলে কদরের রাত্রির সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে যেতেন। বেশীরভাগ দিনই পরিবারের সকলে একসাথে শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিগুলো মহান রবের ইবাদতে মগ্ন থাকার চেষ্টা চালিয়ে যেতেন।

তারপরে চাঁদ দেখার মাধ্যমে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিতো পবিত্র মাহে রমজান।

রমজান আসে আর যায় !!

আমরা তা থেকে কি অর্জন করতে পারলাম সেটাই আলোচ্য বিষয়। আবারো আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে পবিত্র সেই মাস।

মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের মাহে রমজানকে সঠিকভবে পালন করে তার একনিষ্ঠ বান্দাতে পরিনত হবার তাওফিক দিন, আমিন…

বিষয়: বিবিধ

১৯১৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

326733
১৯ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৭
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : রমজান আসে রমজান যায় কিন্তু নিজেকে বদলাতে পারি না। আল্লাহ হেদায়েত দিচ্ছে না হয়তো। Sad

মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের মাহে রমজানকে সঠিকভবে পালন করে তার একনিষ্ঠ বান্দাতে পরিনত হবার তাওফিক দিন, আমিন…
০৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৩:৩৩
271176
দিগন্তে হাওয়া লিখেছেন : আমিন !!
326753
১৯ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৩:৩৪
271177
দিগন্তে হাওয়া লিখেছেন : Good Luck Good Luck
326757
১৯ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৬
শেখের পোলা লিখেছেন : সেই দেশেই এখন কোরআন হাদীশের আলোচনা জঙ্গীদের মন্ত্রনা হয়ে দঁড়িয়েছে৷ কোরআন হাদীশ কে জঙ্গী বই বলে মডিয়ায় প্রচার হচ্ছে৷
০৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৩:৪১
271182
দিগন্তে হাওয়া লিখেছেন : হুম Good Luck
326765
১৯ জুন ২০১৫ রাত ০৯:৫৩
কথার_খই লিখেছেন : আপনার লেখাটি পড়ে ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ।
০৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৩:৩৫
271178
দিগন্তে হাওয়া লিখেছেন : ভাল লাগায় আপনাকেও ধন্যবাদ Good Luck
326776
১৯ জুন ২০১৫ রাত ১১:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
আমরা এখন রমাদান এর প্রকৃত শিক্ষা নিতে ভুলে গিয়েছি।
০৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৩:৩৬
271179
দিগন্তে হাওয়া লিখেছেন : সহমত Good Luck
326805
২০ জুন ২০১৫ রাত ০১:৫০
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : খুবই উদ্দীপনামূলক পোস্ট। ধন্যবাদ।
০৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৩:৩৯
271180
দিগন্তে হাওয়া লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ Good Luck
326866
২০ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:১২
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সত্যিই আপনাদের পরিবারের কথাগুলো আমার বিবেককে নাড়াদিয়ে গেল। বর্তমানে যেখানে সময় কাটাতে হিন্দি ফিল্ম নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে আপনাদের পরিবারের কুরআন চর্চার প্রতিযোগীতা দেখে সত্যিই আমি আপ্লুত।
ছোট শিশুদের যেখানে রোজা ভাঙ্গানের প্রতিযোগীতা চলে, সেখানে আপনার মায়ের ভরসা ও উৎসাহ দেওয়া সত্যিই এক মহানুভবতার পরিচয়।
এমন পরিবার আজ সমাজে বড়ই প্রয়োজন। জাযাকুমুল্লাহ খাইর
০৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৩:৪০
271181
দিগন্তে হাওয়া লিখেছেন : দোয়া করবেন আমাদের পরিবারের জন্য Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File