হাসান বিন সাবাহর সেই দূর্গম দূর্গের পথে !!
লিখেছেন লিখেছেন দিগন্তে হাওয়া ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৯:০১:৫৮ রাত
গত ১১ তারিখ ঘুরে আসলাম হাসান বিন সাবাহর দূর্গম দূর্গে, যা ইরানের কাজভিন শহর থেকে প্রায় ১০২ কিমি দুরে আলামুত নামক এলাকায় অবস্থিত। যে এলাকার মাঝ দিয়ে আলবুর্জ পর্বতশ্রেণীর বিভিন্ন শাখা চলে গেছে। ইরানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দামোভান্দও এই পর্বতশ্রেণীতেই অবস্থিত। আলবুর্জের এই পর্বতশ্রেণীর এক পাশেই পৃথিবীর বৃহত্তম হ্রদ কাস্পিয়ান সাগর।
* ১০ সেপ্টেম্বর রাত ৯.০০টা...
কাজভিন শহরের বাজার থেকে ফিরছি আমাদের ডরমেটরির পথে। পথিমধ্যে আমাদের মাঝ থেকে একজন ভাই ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলেন হাসান বিন সাবাহর দূর্গ কিভাবে আমরা যেতে পারি? তিনি জানালেন খুব সহজেই চাইলে আপনারা যেতে পারেন সাথে তিনি কিছু পরামর্শ দিলেন।
তখনই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম কাল ১১ তারিখ সকাল সকালই আমরা রওনা দিব সেই দূর্গম দূর্গের পথে। খুব সকালে যাবার পরিকল্পনা থাকায় রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লাম।
* ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৭.৩০ মিনিট ...
ঘুম থেকে দ্রুত উঠে (দ্বিতীয় দফায়) ফ্রেস হয়ে প্রস্তুত হয়ে নিলাম। রাতে রান্না করে রাখা দেশীয় সেমাই আর রুটি দিয়ে সকালের নাস্তা সেরে ফেললাম। তারপরে দুপুরের জন্য কিছু খাবার নিয়ে ডরমেটরির মেইন গেট ত্যাগ করলাম। বাসের অপেক্ষায় থাকার মাঝে পাশের দোকান থেকে চিপস, চুইনগাম, চকলেট, বিস্কুট ইত্যাদি কেনা হলো।
কিছুক্ষন পরে বাস আসলে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। আমাদের প্রথম গন্তব্য কাজভিনের মেইন ট্যাক্সি স্টেশন।
ট্যাক্সি ভাড়া করে মুল গন্তব্যের দিকে রওনা দিলাম সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটের দিকে। হালকা রোদ্র আর ঠান্ডা বাতাসের সাথে সাথে এগিয়ে চলছে আমাদের বহনকারী সেই ট্যাক্সি।
পাহাড় কেটে কেটে তৈরী করা আঁকাবাঁকা ছোট রাস্তা হওয়ায় ড্রাইভার ধীরে ধীরে গন্তব্যের দিকে ছুটে চলছেন। কিছুপথ পার হতেই ছোট্ট একটি গ্রাম চোখে পড়ে। গ্রামটির নাম রেজায়ী দাসত। পাহাড়ের মাঝে সমতল জায়গায় গড়ে উঠেছে যেই গ্রামটি।
ড্রাইভার খুব সাবধানতার সাথে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেছেন। হঠাৎ-ই তিনি গাড়ির ব্রেকে পা দিলেন। পাশেই দুইটি গাছে ধরে আছে কিছু ফল, তিনি জানালেন ফলটির নাম ‘’জলজলাক’’ আমি স্বাদ নিতে ভুল করলাম না !! ফলটি খুব সুস্বাদু না হলেও খারাপ ছিলোনা।
কিছুদূর পরেই দেখা মিললো রাস্তার দুপাশ ঘিরে চেরি ফলের বাগান। আর পাশেই চলছে মধু সংগ্রহের কাজ।
ক্লান্তি আসার আগেই নতুন নতুন সব কিছু দু চোখের সামনে কে যেন মেলে ধরছে। এতো মহান রবের সেই অপরুপ সৃষ্টি !!
রাস্তার পাশেই গ্রাম্য এক বয়স্ক চাচা বিক্রি করছিলেন তার নিজের আঙ্গুর বাগান থেকে সদ্য তুলে নিয়ে আসা তাজা আঙ্গুর। পর্বতের ঢালুতে আঙ্গুর বাগান আর বাগানের পাশে বসেই তা বিক্রি করছেন। বাংলাদেশী টাকায় কেজি ৫০ টাকা। যদিও টাকাটা মুল বিষয় নয়। মুল কথা; গাছ থেকে সরাসরি সুস্বাদু আর ভেজালমুক্ত আঙ্গুর। আমরা আঙ্গুরের চেহারা দেখে লোভ সামলাতে পারিনি !!
কিছুদুর পার হবার পরে চোখে পড়লো সেই গ্রামের হরেক-রকমের একটি রুটির দোকানের দিকে। নিচে নেমে তাদের সাথে কিছু কথা বলার মাঝেই দোকানদার একটি রুটি খেয়ে টেস্ট করতে বললেন।
ধীরে ধীরে আঁকা-বাঁকা রাস্তার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে, ড্রাইভার সাবধানতার সহিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। গাড়ি একটু এদিক-ওদিক হলেই যেন সব শেষ !!
চলতে চলতে রাস্তার পাশ ঘেঁসে ছোট নদীর দেখা মিললো আর তার দুপাশে সবুজ ধান আর গমের ক্ষেত। ঠিক যেন বাংলাদেশের কোন গ্রামের সবুজ প্রান্তরে পাশ দিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা।
প্রবাসে আসার পরে এই প্রথম দেখলাম সবুজ ধান আর গমের ক্ষেত। মনে পড়ে গেল ফেলে আসা দিনগুলির কথা !!
দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম হাসান বিন সাবাহর ভয়ংকর সেই দূর্গের খুব নিকটে। গাড়ি থেকে নেমে টিকিট কেটে দূর্গের চূড়ায় উঠার লক্ষে এগিয়ে চললাম ধীরে ধীরে। মনে বারবার সেই একই প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছিলো কখন সেই দূর্গের মাথায় পৌছাতে পারবো !!
প্রায় আধাঘন্টা পায়ে হেঁটে পাহাড় বেয়ে দূর্গের চূড়ায় পৌছালাম।
তারপরে দূর্গের চুড়ায় উড়তে থাকে প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশের পতাকা।
ছবিতে ডান দিক থেকে সাজিদ করিম, ঢাবির ফার্সি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুমিত আল রশিদ স্যার, উমাইর চৌধূরি এবং আমি।
দূর্গের চূড়ায় তোলা আরো কিছু ছবি...
দেখতে দেখতে দুপুরের খাবার ও জোহরের নামাজের সময় হয়ে যায়।
নামাজ ও খাবারের বিরতি শেষে আবারো যাত্রা শুরু হয়। আমাদের দ্বিতীয় গন্তব্য হচ্ছে সেখান থেকে কিছুদূরে অবস্থিত প্রাকৃতিক ওভান লেক। লেকটি ছোট হলেও সৌন্দর্যের কোন কমতি-ই ছিলোনা।
ফিরে আসার সময় পাহাড়ের উপর থেকে ওভান লেকের ছবি।
* সন্ধ্যা ৮.০০ টা..
সূর্যের আলো নিভু নিভু করতে থাকে আমরাও আমাদের চিরচেনা ডরমেটরী (হোস্টেলে) ফিরে আসি।
আলহামদুলিল্লাহ , জীবনের সাথে নতুন একটা ভ্রমণ কাহিনি যুক্ত হলো। মহান রাব্বুল আলামীন তার নিপুন তুলিতে এই পৃথিবীকে যে কত সুন্দরভাবে সৃষ্টি করেছেন তা এই ভ্রমণে আমার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠেছে ...
বিষয়: বিবিধ
২৬৮৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুলতান সালাহউদ্দিন এর ইতিহাস পড়ার সময় পড়েছিলাম এই আলামুত দুর্গের কথা। যে দুর্গে হাসান বিন সাবাহ নাকি তৈরি করেছিলেন কৃত্রিম বেহেশত!! কবি ওমর খৈয়াম জিনি ছিলেন প্রধানত জেীতির্বিজ্ঞানি তাকে নাকি এই দুর্গে তারকামন্ডলি দেখিয়েছিলেন তারই সহপাঠি হাসান।যাকে অনেকে আধুনিক প্ল্যানেটারিয়াম এর মত বলে মনে করা হয়। মুসলিম বিশ্বের মুনাফিক গুপ্তঘাতক এই হাশশাশিন দের দুর্গটি পরিদর্শন আমাদের জন্য শেয়ার করায় আবারও অভিনন্দন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন