ফিলিস্তিন কি তৃতীয় ইন্তিফাদার পথে.... !!
লিখেছেন লিখেছেন দিগন্তে হাওয়া ০৭ জুলাই, ২০১৪, ০৭:৪১:২৩ সন্ধ্যা
১৯৮২ সালের এপ্রিল মাসে আল-আকসা মসজিদের ভিতরে এক ইসরাইলী সৈন্য গুলি ছুঁড়ে। এরই প্রতিবাদের ফলশ্রুতিতে ‘ইন্তিফাদা’র আবির্ভাব হয়। ‘ইন্তিফাদা’ অর্থ জাগরণ তথা দখলদার স্বৈরশক্তির বিরুদ্ধে ইসলামী উত্থান। এক কথায় গনঅভুথ্যান বলা যেতে পারে। ইন্তিফাদার ডাক সারা ফিলিস্তিনে এক যোগে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ইজরাইলি প্রশাসনের ফিলিস্তিন নীতি এবং তাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে গাজা ও পশ্চিম তীর ভূখন্ডে দুইবার দীর্ঘমেয়াদি সহিংস বিক্ষোভ তথা ইন্তিফাদা সংঘটিত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বা ভূমি বিন্যাসে দুই ইন্তিফাদা তেমন পরিবর্তন আনতে না পারলেও ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা ও পৃথক রাষ্ট্রের দাবি পুনরুজ্জীবিত করতে সেগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।
ইজরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রথম ইন্তিফাদা পরিচালিত হয় ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত। সে সময় গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিরা ইজরাইলি প্রশাসনের বিরুদ্ধে ধর্মঘট ও তাদের বয়কটের ডাক দেয়। আর বিক্ষোভ দমনে ইজরাইল তখন 'ফিলিস্তিনের পাঁজর ভাঙা' নীতি গ্রহণ করে। সেইসঙ্গে মোতায়েন করে ৮০ হাজার সেনা।
ইজরাইলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ ফিলিস্তিনিরাও পাল্টা পাথর, মোলোটভ ককটেল (পেট্রোল বোমা) ব্যবহার করে। ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির মাধ্যমে সংঘর্ষ বন্ধের আগে ওই সংঘর্ষে ১৬০ ইজরাইলি নিহিত হয় সাথে দুই হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শাহাদাতবরন করেন।
প্রথম ইন্তিফাদা শেষ হওয়ার সাত বছর পর ২০০০ সালে শুরু হয় ইজরাইলবিরোধী ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় ইন্তিফাদা। এই ইন্তিফাদার মূল কারণ ছিল ইজরাইলি দখলদারিত্ব থেকে গাজা ও পশ্চিম তীর মুক্ত করার উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ডেভিডে ২০০০ সালের জুনে আলোচনা ভেস্তে যাওয়া। উত্তেজনাকর সেই পরিস্থিতির মধ্যে ইজরাইলি ডানপন্থী লিকুদ পার্টির নেতা অ্যারিয়েল শ্যারন ব্যাপক বিরোধিতা সত্ত্বেও এক হাজার রায়ট পুলিশ নিয়ে আল-আকসা মসজিদ এলাকা পরিদর্শনে যান। পরের দিন রায়ট পুলিশের গুলিতে বহু ফিলিস্তিনি হতাহত হলে বিক্ষোভ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রথম ইন্তিফাদা থেকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। ২০০৫ সালে শেষ হওয়া এ বিক্ষোভে তিন হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে প্রান দিতে হয় ও হাজার খানেক ইজরাইলি নিহত হয়।
ফিলিস্তিন-ইজরাইল অসলো চুক্তির ব্যর্থতা বর্তমান শান্তি আলোচনাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ১৯৯৩ সালের অসলো-১ চুক্তি অনুসারে পরের বছরই ফিলিস্তিনি ভূ-খন্ডে থেকে ইজরাইলি সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল। ১৯৯৫ সালের অসলো-২ চুক্তি অনুসারে ইজরাইলি দখলকৃত অংশের মধ্যে বেশিরভাগ জায়গায় ফিলিস্তিনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা থাকলেও তেল আবিব সামরিক ও প্রশাসনিকভাবে সবচেয়ে বড় ভূ-খন্ডে 'এরিয়া-সি' নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
এছাড়া অসলো চুক্তিতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে দ্বিপাক্ষিক অনেক সহযোগিতার কথা উল্লেখ থাকলেও দমন-পীড়ন ছাড়া কিছুই পায়নি ফিলিস্তিনিরা।
গত তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা ইজরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা গত মাস থেকে আমেরিকার অধীনে নতুন করে শুরু হয়েছে। তবে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইজরাইলি নতুন বসতি নির্মাণ ও ফিলিস্তিনি নাগরিক হত্যা থেমে নেই। সাধারণ ফিলিস্তিনিরাও নিজ অবস্থান থেকে চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবাদ। তবে গত সপ্তাহ থেকে ইজরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের সংঘর্ষ প্রাত্যহিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গতরাতে ইজরাইলি হামলায় প্রায় ৭ জন শাহাদাতরবরন করেছেন। তাদের মাঝে আল কাসসাম ব্রিগ্রেডের সদস্যও রয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয় ইন্তিফাদার ডাক দিয়েছে কিছু ফিলিস্তিনি সংগঠন। গতরাতে হামাসের মুখপাত্র ফাউজি বারহুম ফিলিস্তিনের সকলকে একত্রিত হয়ে তৃতীয় ইন্তেফাদার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সাথে সাথে প্রতিটি জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।
আর আজ রাতে তারাবির নামাজের পরে ডাক দেয়া হয়েছে সর্বত্র বিক্ষোভ। আল্লাহ ফিলিস্তিনিদের বিজয় দান করুন, আমিন...
(সংযোজিত)
তথ্যসূত্র : জেরুজালেম পোস্ট, আল-মনিটর, উইকিপিডিয়া
বিষয়: বিবিধ
৩৬০৭ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ যেন ফিলিস্তিনি সহ বিশ্বের সকম মুসলিম দেশকে হেফাজত করেন ,,আমিন
মন্তব্য করতে লগইন করুন