সেই আশায় দিন গুনে যায়....
লিখেছেন লিখেছেন দিগন্তে হাওয়া ২৬ জুন, ২০১৪, ০৮:৫৪:০০ রাত
ছোট থেকেই যা ইচ্ছা হতো তাই করে ফেলতাম দেশে থাকা পর্যন্ত। ইচ্ছা হয়েছে দোকানে গেছি পছন্দের জিনিসটা কিনে এনেছি। মাঝে মাঝে আম্মার বোকা খেয়েছি তবুও করেছি। ভুল করে ফেললে মনে হতো হায়রে আম্মার কথা শোনা উচিত ছিল।
আর মাস শেষ হলেই আম্মার কাছে গিয়ে বলতাম প্রাইভেটের টাকা লাগবে। বলতো ঠিক আছে !! আব্বাকে বলতাম খুব কম সময়। ব্যস্ত মানুষ বাসায় থাকতেন খুব কম সময়ই। আর এখন অসুস্থতার কারণে ওনাকে বাধ্য হয়েই সারাদিন বাসার ভেতরেই থাকতে হয়। আম্মায় সব ম্যানেজ করে দিতেন।
সেই দিনগুলি আজ স্মৃতির পাতায় আবদ্ধ। এখন আর টাকা চাওয়া হয়না। নিজের হাতেই যথেষ্ট টাকা আছে কিন্তু আগের মত খরচ করার ইচ্ছা আর জাগেনা !! কেন যেন মনে হয়, এই বুঝি আব্বার টাকার অপচয় করে ফেলছি !!
ইদানিং বাসায় কথা বলা কিছুটা কম-ই দিয়েছি। প্রায় সব দেশেই শুরু হয়েছে গ্রীষ্মের ছুটি। অনেকই পাড়ি দিচ্ছে নিজ স্বদেশের দিকে কিন্তু আমি ... অপেক্ষায় আছি কবে পৌছাতে পারবো আমার সেই লক্ষ্যে।
দেখতে দেখতে পরিবার ছাড়া দেড় বছর পার করে দিয়েছি। মনে হচ্ছে এইতো সেদিন ইরানের মাটিতে পা দিলাম কিন্তু দেড় বছর যে কিভাবে পার হয়ে গেল। আল্লাহই ভাল জানেন !!
কিছুক্ষন আগে ফেবুতে চ্যাটে এক সিরিয় বন্ধু সালাম দিল। আমি সালামের জবাব দিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কবে যাচ্ছ দেশে ? সে বললো প্রায় দুই সপ্তাহ আগে চলে এসেছি। সময় যেন উকি দিয়ে চলে যাচ্ছে। হায়রে সবাই ঘুরে আসবে আর আমি পথ চেয়ে থাকি...
দিনের কিছু সময় ফেসবুকে দিয়ে থাকি কিছু ভাইয়ের সাথে কথা হয়। সবাই কত ব্যাস্ত !! দিনের যে কোন সময় স্কাইপি ওপেন করলেই পরিবারের কেউ না কেউ থাকে কিন্তু এখন আর নিজের মাঝ থেকে কথা বলার ইচ্ছা জাগেনা। শুধুমাত্র কেউ কল দিলে জবাব দিয়ে থাকি।
আর কিছু সময় একাডেমিক বইয়ের পেজে চোখ বুলায়, মাঝে মাঝে মনে হয় এত পড়াশুনা করে কি হবে !!
পাকিস্তানে থাকা এক ভাই কিছুদিন আগে স্কাইপিতে বললেনঃ নাবিল তুমি তো এখন অনেক বড় হয়ে গেছ। সেই ছোটতে চাচীর সাথে দেখেছি। তোমার ওপর অবশ্যই তোমার পরিবার অনেক আশা করে।
তারা আর আমার কাছ থেকে কি আশা করবেন। একজন সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠি সেটাই তো তাদের আশা !!
পক্ষান্তরে আমি ভাবি, তারা আমাকে কত কষ্ট করে বড় করেছেন। আমি তাদের কি দিতে পারবো।
যখন ল্যাপটপের স্ক্রিনে দেখি সন্তানের হাতে মা আহত বা বাড়ি ছাড়া তখন খুব কষ্ট লাগে সাথে লজ্জাও লাগে। তারা কি ভুলে গেছে ছোট কালের সেই দিনগুলির কথা। হায়রে অভাগা সন্তানেরা !!
আল্লাহ তাদের সঠিকভাবে সেবা করার তাওফিক দিন আর সাথে সাথে তাদের আশার মত বড় হবার তাওফিক দিন, আমিন।
আবার হয়তোবা ফিরবো স্মৃতি বিজড়িত সেই বাসায়, ইনশাআল্লাহ। আবারো হয়তোবা আব্বা, আম্মা ভাইবোনদের অংশগ্রহনে মুখরিত হবে সেই বাসা। বাচ্চাদের চেচামেচিতে প্রান ফিরে পাবে সবাই।
সেই আশায় দিন গুনে যায়.........
সবাই দোয়া করবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন