একজন ইরানি মহিলা সাংবাদিক
লিখেছেন লিখেছেন দিগন্তে হাওয়া ১৩ জুন, ২০১৪, ০৭:২১:৫৫ সন্ধ্যা
গতরাতে আমাদের ডরমেটরিতে একটি অনুষ্ঠান ছিল। সকাল থেকেই চলছিল সেই অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি। আর বিকাল থেকেই কানে ভেসে আসছিল ফার্সি গান। অনুষ্ঠানটি শুরু হয় মাগরিবের নামাজের পরেই কিন্তু অনলাইনে বাসায় কথা বলার কারণে অনুষ্ঠান স্থলে যেতে কিছুটা বিলম্ব হয়।
কথা বলা শেষ হলে রেডি হয়ে বের হলাম, উদ্দেশ্য অনুষ্ঠান দেখা, সাথে বাইরে দোকান থেকে প্রয়োজনীয় কিছু ক্রয় করা।
গেট থেকে বের হতেই চোখে পড়লো একজন মহিলা সাংবাদিক মাইক হাতে অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে একজন বিদেশি দর্শকের সাক্ষাত নিচ্ছেন। দেখতে দেখতেই মেইন গেটের দিকে পা বাড়াতে থাকলাম।
অনুষ্ঠান চলছে !! জাকজমকভাবে সাজানো হয়েছে মঞ্চ।
আমাদের ডরমেটরির মেইন গেট রাত ১১ টায় বন্ধ হয়ে যায় তাই চিন্তা করলাম দোকানের কাজটা সেরেই অনুষ্ঠানটি দেখবো। দোকান থেকে দরকারি জিনিসপত্র কেনা হলে ফিরে আসলাম অনুষ্ঠান স্থলে।
একপাশে বিদেশী ছাত্ররা আরেকপাশে বিদেশী ছাত্রীরা বসে আছে কেউবা দাড়িয়েই উপভোগ করছে অনুষ্ঠান। বিদেশী শিক্ষার্থীদের সাথে আছে আমাদের ইমাম খোমেনী আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানি শিক্ষার্থীরাও।
মাঝে মাঝে ইরানের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন বাসিজের কর্মীরা কেক, বিস্কুট, পানীয় ইত্যাদি খাবার দর্শকদের সামনে নিয়ে হাজির হচ্ছেন। আর কিছুক্ষন পর পর আতসবাজিতে আলোকিত হচ্ছে আমাদের ডরমেটরির আকাশ।
একটি কথা বলে রাখি আপনাদের সুবিধার্তে ইরানের প্রায় সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানই বাসিজ নামক সংগঠনটির তত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ইরানের বিপ্লবে যাদের ভুমিকা ছিল অনুস্বীকার্য।
মুল মঞ্চের পাশেই আরেকটা ছোটখাটো মঞ্চ করা হয়েছিল যেখানে বাসিজের সদ্য বিবাহিত হওয়া ছাত্ররা বসেছিলেন। মুল অনুষ্ঠানের সাথে সাথে একটি পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ্য থেকে সেই সব ছাত্রদের অভিনন্দন দেওয়া হয়।
যাই হোক মুল টপিকের দিকে ফিরে যেতে চাই, অনুষ্ঠানের এক মুহূর্তে সেই মহিলা সাংবাদিককে দেখলাম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে। তখন ঘড়ির কাটায় রাত ১১,৩০ ছুইছুই।
সেখান থেকে চোখ না ফিরাতেই দেখি তার পাশে এক বাচ্চা। দেখে মনে হল বাচ্চাটা সেই মহিলার।
সেটা পরিস্কার হয়েছিল কিছুক্ষন পরে। যখন ঘড়ির কাটায় প্রায় রাত ১২ টা তখন মহিলা সহ তাদের টিভি টিমকে দেখলাম কাজ শেষে একটি কারে করে রওনা দিতে। তখন তার সাথে সেই বাচ্চাটিও ছিল।
এত রাতে একজন মহিলা সাংবাদিক দায়িত্ব পালন করছেন।
অবাক হবারই কথা !!
এটা ইরান ছাড়া অন্য কোন দেশে সম্ভব কিনা তা আমার এখন পর্যন্ত জানা নেই।
ইরানের প্রায় প্রত্যেক শহরেই আলাদা আলাদা টিভি চ্যানেল আছে সেখানে পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে মহিলা সাংবাদিকও যুক্ত আছেন অসংখ্য। এটা তো শুধু সাংবাদিক জগতের কথা এছাড়াও বিভিন্ন স্তরে ইরানি মহিলাদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মত।
আমাদের ভাষা শিক্ষা কেন্দ্রে যদি দেখি তবে ৩০ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রায় ২৫ জনই মহিলা।
আমি মনে করি মহিলাদের অংশগ্রহনের ক্ষেত্রে ইরানে সবচেয়ে মুল যে বিষয় ভুমিকা রেখেছে বা রাখছে তা হচ্ছে নিরাপত্তা এবং পরিবেশ।
আমি চাই, ইসলামের বিধানের মধ্যে থেকে আল্লাহ মহিলাদের যতটুকু সুযোগ দিয়েছেন তা কাজে লাগিয়ে আমাদের বাংলাদেশও এগিয়ে যাক।
তবে তার পুর্বশর্ত হচ্ছে অবশ্যই সে রকম পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন