প্রবাসে আমার প্রথম মাহে রমজান...
লিখেছেন লিখেছেন দিগন্তে হাওয়া ০৫ জুন, ২০১৪, ১১:২৯:৪৪ রাত
গত বছরের জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকে ইরানে পাড়ি জমিয়েছিলাম। দেখতে দেখতে দেড় বছরের কাছাকাছি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর কিছুদিন পরেই প্রতি বছরের মত আবারও আগমন ঘটবে আত্নশুদ্ধির মাস মাহে রমজানের। আল্লাহ চাইলে দ্বিতীয়বারের মত ইরানেই মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতর পালন করবো।
প্রিয় স্বদেশে মাহে রমজান পালন আর বিদেশের মাটিতে বিশেষ করে ইরানে রমজান মাস পালন অনেকটাই পার্থক্য। আমার কাছে এ বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে ইরানের মাটিতে গত মাহে রমজান পালনের মাধ্যমে।
আপনাদের সামনে গত মাহে রমজানের শুরু থেকে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত দিনগুলি আমি যেভাবে অতিবাহিত করেছিলাম তা কিঞ্চিৎ তুলে ধরার চেষ্টা করবো ...
জীবনের প্রথম বাবা-মা, পরিবার ছাড়া রমজান মাস পালন করতে হবে। তাই অনুভুতি ছিল একটু আলাদা!! আর তা হওয়ায় স্বাভাবিক!!
সারা জীবন একসাথে কিন্তু এবার অনেক দূরে প্রবাসে।
মাহে রমজান শুরু হবে কাল, শেষরাতে সেহরী খেতে হবে। বাসায় থাকলে প্রথম সেহরীতে একটু ব্যতিক্রমী খাবার রান্না করতেন আমার মা।
প্রায় বাসায় তাই হয়ে থাকে হয়তোবা কিন্তু দেশের বাইরে তা কি আর সম্ভব !!
আমাদের ডরমেটরিতে সপ্তাহে শুক্রবার ও সরকারী ছুটির দিন বাদে প্রায় প্রত্যেকদিনই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খাবার দেয়া হয়। কিন্তু গত রমজান মাসের প্রথম দিন ছুটির মধ্যে পড়ে যাওয়ায় বুঝতেই পারছেন !!
রুমে আমার সাথে বাংলাদেশী আরেক ভাই এবং ইয়ামেনের একজন ছিলেন। শেষরাতে উঠে নিজেরাই ডিম ভাজলাম, ইয়ামেনী ছেলেটি কাস্পিয়ান সাগরের টুনা মাছ পিয়াজ দিয়ে রেডি করলো। তারপরে সবাই মিলে রুটি দিয়ে মাছ আর ডিম দিয়ে কোনমতে প্রবাসের প্রথম সেহরীটা পার করে দিলাম।
কিছুদিন পরেই আমাদের দুইজনের সাথে যোগ দিলেন আরেকজন বাংলাদেশী ভাই। তিনজন মিলে মাঝে মাঝেই চলে যেতাম আমাদের ডরমেটরির বিশাল খেলার মাঠে ইফতার করতে। সবুজ ঘাসের উপরে, ঠান্ডা বাতাসে ভালই লাগতো।
আর কোন কোন দিন মাঠে খেলা করতে আসা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাচ্চাদের পেতাম আমাদের সাথে, তারাও ইফতারে আমাদের সাথে শরীক হত।
ইফতারে আমাদের দেশের মত মুড়ির সাথে বুট, তেলে ভাজা পিয়াজি, বেগুনী, চপ, নিমকি ইত্যাদি হরেক রকমের জনপ্রিয় সব আইটেম খুব মিস করতাম। এবারও মিস করতে হবে হইতো !!
একদিন বোধ হয় বাজার থেকে ইফতারের জন্য জিলাপি কিনে এনেছিলাম তবে দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় পরবর্তীতে তা আর হয়ে উঠেনি ... !!
ইফতারে বেশিরভাগ দিনই থাকতো অবশ্যই খেজুর, আপেল, কমলা, আঙ্গুর, কেক, শরবত ইত্যাদি।
ইরানিরা ডরমেটরির ভেতরের মাঠে সবাই একসাথে নামাজ ও ইফতারের আয়োজন করতো। কয়েকদিন তাদের সাথে ইফতারে শরীক হয়েছিলাম। তারা খেজুর, রুটির সাথে পনির, শাক আর চা দিয়েই ইফতার শেষ করে দিত।
শেষরাতে রোজাদারদের সেহরীতে জাগানোর জন্য প্রিয় স্বদেশের মত কেউ ঢোল নিয়ে আসতোনা যদিও দেশে থাকা অবস্থায় প্রায় দিনই মা অথবা বাবার ডাকেই ঘুম থেকে জেগে উঠতাম। কিন্তু এখন নিজেকে জাগানোর একমাত্র মাধ্যম মোবাইলের এলার্ম।
আর সুরালা কন্ঠে মসজিদ থেকে ইসলামী গানও ভেসে আসতোনা।
আলহামদুলিল্লাহ,
মাহে রমজানের গুরুত্বপুর্ন একটা বিষয় তারাবীর নামাজ। প্রায় প্রত্যেকদিনই বিদেশী ভাইয়েরা সকলে মিলে আদায় করেছিলাম। সবচেয়ে ভাল লাগার বিষয় হল, আমাদের মাঝে ছিলোনা কোন ভেদাভেদ !!
এক পাশে ফিলিস্তিনী, আরেক পাশে সোমালিয়া-নাইজেরিয়া, কিংবা পিছে চীনের উইঘুর ভাইয়েরা। সামনের কাতারে তাজিকিস্তান-কাজাখস্তান এর ভাইয়েরা অথবা আফগানিস্তানের ভাইয়েরা ।
কেউ ২০ রাকায়াত কেউবা ৮ রাকায়াত, কারো পায়ের টাখনুর নিচে কাপড়। কেউবা সেন্ডু গেঞ্জি পড়ে কেউবা আবার উচ্চস্বরে আমিন বলে কেউবা নিম্নস্বরে। কারো সাথে কারো পা মিলিত অবস্থায় কারো বা কিছুটা দূরত্বে এইতো !!
এই ভাবেই জীবনের প্রথম মাহে রমজান এবং রমজান শেষে ঈদুল ফিতর পরিবার ছাড়া পালন করতে হয়েছে। আল্লাহ চাইলে এবারও সেই ভাবেই কাটিয়ে দিব, ইনশাআল্লাহ।
সবাইকে মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরের আগাম শুভেচ্ছা। আর মাহে রমজানে সকলের সাথে অবশ্যই আমার জন্য দোয়া করতে ভুলবেন না...
বিষয়: বিবিধ
১৬৮১ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
বিশেষ করে নামাজ এর কথাটি খুবই ভাল লাগল। অথচ এই সামান্য ব্যাপারে আমাদের দেশের হুজুররা বিভিন্ন রকম আপত্তি তুলেন। যা ফরজ বা ওয়াজিব নয় তা নিয়ে কেন এত সমস্যা।
০ আমরা বাংলাদেশীরা তো সেহরী খাওয়ার শেষ সময় হিসেব করি ফযরের আযান শুরু হবার ঠিক আগ মূহুর্তকে ।
মানে যখন সেহরী করি তখন ফযরের ওয়াক্ত শুরুই হয় নাই ।
আর ফযরের আজানের শুরু থেকে মাগরিবের আজানের শুরু - মূলত এই সময়টাতেই না খেয়ে থাকতে হয় ।
দেশে থাকতে তো এভাবেই রোজা রেখেছেন , নাকি ?
ইরানে রমজানের সময়ে যে '' ফযরে উঠতে হবে '' '' ফযরে সেহরী খেতে হবে'' - বলছেন - আপনারা কি ফযর আযান দেওয়া হয়ে গেলে পড়ে কি সেহরী শুরু করেন ?
বাংলাদেশ ও ইরানের সেহরী খাওয়ার সময় , নিয়ম কি ভিন্ন ভিন্ন রকম ?
ফযরের ওয়াক্ত শুরু হবার আগেই যদি সময়টাকে ফযর বলা হয় তাহলে ঐ সময়ে ফযর নামাজ পড়ে ফেলা যাবে কি ?
****************************************************************
খাবারে যেসব ছবি দিয়েছেন দেখেই মনে হচ্ছে বাইরের খাবার , তবে ফ্রেশ ।
আমরা বাংলাদেশে যে স্টাইলে ইফতার করি তাতে বোঝাই যায় যে সারাদিনের উপোস থাকার শোধ নিচ্ছি । ফলে ইফতার করেই আর নড়াচড়া করা যায় না , খুব টায়ার্ড লাগে ।
বাংলাদেশে তো ব্যবসায়ীরা রমজান মাসকেই টার্গেট করে তাদের লাভের জন্য । ইরানীরা ব্যবসায়ীরা কি ব্যবসা বোঝে আমাদের ব্যবসায়ীদের মত ?
পোস্ট ভাল লেগেছে ।
ভাই কি বলবেন ফজরের শব্দের জায়গায় অন্য কোন শব্দ ইউজ করলে ভাল হতো?
হুম সেখানে শেষরাত শব্দটি ইউজ করলে ভাল হতো। আপনার ভুল ধরিয়ে দেবার ভাষা দেখে কষ্ট পেলাম।
আর মনে হল ইরানের বিষয়ে আপনার কিঞ্চিৎ চুলকানী আছে।
আর রমজানকে নিয়ে ব্যবসায়ীরা টার্গেট করেন বাংলাদেশ বাদে অন্য কোন দেশ আছে কিনা তা আমার জানা নেই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন