''মিসর ও মুসলিম ব্রাদারহুড'' পঞ্চম পর্বঃ
লিখেছেন লিখেছেন দিগন্তে হাওয়া ২৫ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:৩৪:৩১ রাত
লাশের গন্ধে আকাশ ভারি হয়ে গিয়েছিল। এ যেন এক মৃত্যুপরী। রক্তে রঞ্জিত রাজপথে সারি-সারি লাশ দেখে যেন মনে হয়েছিল কোন এক বধ্যভূমি। সেই বধ্যভূমির নাম রাবেয়া স্কয়ার। যেই স্কয়ারে ঘটেছে কয়েক হাজার মুরসি সমর্থকের শাহাদাতবরন। তবু থেমে থাকেনি আন্দোলন, বিজয়ের লক্ষে এখনও এগিয়ে যাচ্ছে মুরসি সমর্থকেরা। তারা সপ্তাহের শুক্রবার, শনিবার ও মঙ্গলবার কায়রোসহ সারা দেশে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সেই রাবেয়া স্কয়ারে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁবু জ্বালিয়ে দিতে তাদের অন্তরে কিঞ্চিৎ দ্বিধাবোধের সৃষ্টি হয়নি, বিমান থেকে তারা চালিয়েছে গুলি, চলেছে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, ট্যাঙ্ক দিয়ে তছনছ করা হয়েছে রাবেয়া স্কয়ারের তাবুগুলো, বুলেটের আঘাতে পাখির মতো গুলি করে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে নিরীহ ইসলাম প্রিয় মানুষদের। রেহায় পাইনি হাসপাতালে পড়ে থাকা আহত অথবা নিহিতদের নিথর দেহ, হাসপাতালও জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।
টেয়ারশেলের গন্ধ, ট্যাঙ্ক ও বুলেটের আঘাত থেকে বাঁচতে রাবেয়া আল আদাউইয়ার মসজিদে আশ্রয় নিলে সেখানেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সেই নির্মম চিত্রগুলো এখনও চোখের সামনে ভেসে উঠলে বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠে। যা বিভিন্ন মিডিয়ার সুবাদে সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে।
কয়েক মাস আগে মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন নেতার দেয়া তথ্য মতে, রাবেয়া স্কয়ারের গণহত্যায় তিন হাজার ৪১৫ জন, আন-নাহাদা স্কয়ারের গণহত্যায় ২১৯ জন, রামসিস স্কয়ারের গণহত্যায় ১১৩ জন, জাতীয় নিরাপত্তা কার্যালয়ে ফজরের নামাজরত অবস্থায় ১৭২ জন ও আবু জাবিল নামক কারাগারে ৫২ জন সহ সারাদেশে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারের অধিক মুরসি সমর্থক নারী-পুরুষ ও ছাত্র-ছাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রায় ২৬০ জন মানুষকে পুড়িয়ে কয়লা করে দেওয়া হয়েছে। আধুনিক এই যুগে এসব ভাবতেই অবাক লাগে। শিশুরাও বাঁচতে পারেনি তাদের বুলেটের নিশানা থেকে। এছাড়াও অন্তত ২০ হাজারের অধিক নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করেছে সেনারা।
উল্ল্যেখ যে, আন্দোলন করতে গিয়ে ৩৫ জন স্কলারসহ নামকরা প্রাচীন আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড় হাজারের অধিক ছাত্র শাহাদতবরণ করেন।
আরেক রিপোর্টে কয়েকদিন আগে মিসরের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে একাডেমিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছেঃ সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ২০১৪ সালের এই পর্যন্ত
শিক্ষার্থী গ্রেপ্তারঃ ১৩৪৭ জন, শিক্ষার্থী নিহতঃ ১৭৬ জন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলার সময় নিহত হয়েছেন ১৬ জন শিক্ষার্থী, আটক করার সময় ৫ জন ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
জেলের ভেতরে বিচারাধীন অবস্থায় আছেনঃ ৫৯৪ জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিহিত হয়েছেনঃ ৭ জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আটকঃ ১৬০ জন।
অতীত ইতিহাসের পথ ধরে মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্ব সর্বোচ্চ ত্যাগ-কুরবান স্বীকারের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সেনাবিরোধী আন্দোলনে দলটির কারাবন্দী আধ্যাত্মিক নেতা মোহাম্মদ বদিইর ছেলে আম্মার বদিই, ভাইস প্রেসিডেন্ট খাইরাত আল সাতিরের মেয়ে ও জামাই সেনা অভিযানে নিহত হন।
যারা সেই সময় মিসরের নিউজ মাধ্যম গুলোতে কিছু সময়ের জন্য হলেও চোখ রাখতেন তাদের ভুলে যাবার কথা নয় আসমা বেলতাগি নামটি। ১৭ বছরের আসমা বেলতাগি ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডের সেক্রেটারি মুহাম্মদ বেলতাগির মেয়ে। সে ১৪ আগস্ট সকাল বেলা সেই রাবেয়া স্কয়ারে সেনাদের বুলেটের আঘাতে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে।
অবাক করার বিষয় এই যে, যখন মুহাম্মদ বেলতাগি জালিমের কারাগারে, বোন চলে গেছে না ফেরার দেশে তখন মুহাম্মদ বেলতাগির ছেলে হিশামকে দেখা গেছে রাজপথে সিসির বিরুদ্ধে দেয়াল লিখনে ব্যস্ত সময় পার করতে।
এভাবে সেনা বিরোধী আন্দোলনের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতারা আন্দোলনে শুধুমাত্র নিজেরা সম্পৃক্ত না থেকে আল্লাহর পথে পরিবারের সকলকে অন্তর্ভুক্ত রাখার চেষ্টা করেছেন। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এই আত্মত্যাগের প্রভাব চলমান সেনা বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করেছে বা করছে। এবং আন্দোলনে জোগিয়েছে বা জোগাচ্ছে নৈতিক শক্তি।
শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারেনা।
ইনশাআল্লাহ, সেই দিন বেশী দূরে নেই...
যেদিন মিসর সহ সারাবিশ্বে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়বে ...
চলবে...
আগের পর্ব পড়তে ঘুরে আসতে পারেনঃ http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/2875/knabilbd/43270
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১৫৭২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সেদিন বেশী দূরে নয় যেদিন মিশর সহ আল্লাহর পুরা দুনিয়া পদনত হবে ইসলাম পন্থীদের পদভারে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন