মাদরাসা ছাত্র হওয়ার জন্যই কি এত হয়রানি????

লিখেছেন লিখেছেন দিগন্তে হাওয়া ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:১৮:২৪ বিকাল

ছোট কালে বাবা বলতেন, তোকে মাদরাসায় পড়ে মানুষের মত মানুষ হতে হবে ।

তার কথার পথ ধরেই কিনা জানিনা যখন পাঠশালাই ভর্তি হওয়ার বয়স হলো তখন আমি অতটা বুঝিনা, তাই মেজ ভাইয়ের পথ ধরে বাবার ইচ্ছায় আমি মাদরাসায় ভর্তি হলাম। যখন বুঝতে শিখলাম তখন আমার মনে হলো আলেম যে হতেই হবে এর কোন মানে নেই নিজেকে পরিচালনা করার জন্য যতটুকু ইসলামের বিধি-বিধান জানা দরকার তাই জানলেই হবে। তাই পরবর্তীতে আমার ইচ্ছা জাগে ডাক্তার হওয়ার।

তাই দাখিলে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ -৫ পায়। তারপর আলিমে পড়বো না কলেজে পড়বো তা নিয়ে কিছুদিন দিধাদন্ধে ভুগছিলাম, কিন্তু বড়দের সাথে আলোচনা করে আবারও মাদরাসায় পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আল্লাহর রহমতে আলিম পরীক্ষায় আবার জিপিএ -৫ পায়।

এবার মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন পুরনের জন্য মেডিকেল কোচিং এ ভর্তি হয়। প্রথমবার চান্স হয়না , সবাই বলে দ্বিতীয়বার নাকি চান্স পাবার সম্ভাবনা বেশী তাই দ্বিতীয়বারও মেডিকেল কোচিং করি, দ্বিতীয়বারও চান্স হয়না।

কিন্তু কি করার দৃঢ় আকাংখা ডাক্তার হতেই হবে, সেটা যেখানেই হোক। তাই দেশে না হওয়ায় দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ট্রাই করা শুরু করি ,

পরিশেষে ইরান সরকার আমার স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেবার সুযোগ করে দেয়। তাই দেরি না করে দূতাবাসের কাজ শেষ করে ইরানের বিমান টিকিট বুকিং দেয়। ফ্লাইটের তারিখ ছিল গত জানুয়ারীর ৬ তারিখ। তার ২ দিন আগে শুনলাম সেদিন নাকি হরতাল। হরতাল উপেক্ষা করে আমার মামার ক্লিনিকের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সকাল-সকাল নারায়নগন্জ থেকে রওনা দিলাম। আল্লাহর রহমতে কোন সমস্যা ছাড়াই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌছালাম।

অতঃপর ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাড়ালাম , এক ব্যাক্তি এসে বললেন, আপনি কোথায়, কেন যাবেন?? আমাদের বড় স্যারের সাথে কথা বলতে হবে। তাদের বড় স্যারকে আমি দীপ্ত কন্ঠে বললাম, আমি ইরানে এম ডি পড়তে যাব। তিনি সব কাগজ দেখে ছেড়ে দিলেন। আমি কিছুটা চিন্তা মুক্ত হলাম।

আবার লাইনে দাড়ালাম, পার্সপোট ভিসা চেকের জন্য, আমার সময় এলো, চেয়ারে বসা ব্যাক্তি সব দেখে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি মাদরাসায় পড়েছেন তাইনা ? আপনাকে বড় বড় স্যারের সাথে কথা বলতে হবে, এবং ব্যাগও চেক করতে হবে, আমি বললাম চলুন আমি প্রস্তুত, গেলাম তার ঘরে। তিনি বললেন, আপনিতো মাদরাসায় পড়েছেন আপনার সার্টিফিকেট গুলো চেক করতে হবে ঠিক আছে করুন, তারা ওয়েবসাইটে দেখে কিছুক্ষন পর বলল ঠিক আছে ।আমি কিছুটা প্রশান্তি পেলাম এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম।। প্রায় ৩০ মিনিট পর তারা আমাকে ছাড়লো তাদের দাখে মনে হলো আমাকে ছাড়তে তাদের কষ্টই হলো, কিন্তু সব ঠিক থাকার কারনে তারা আমাকে ছাড়তে বাধ্য হলেন।।

এই হয়রানিটা কেবলমাত্র আমি মাদরাসায় পড়তাম সেই কারনে নয় কি??

কবে সেই দিন আসবে যেদিন সবাই মাদরাসা শিক্ষাকে তাচ্ছিল্ল্যভরে দেখবেনা, কেউ কি বলতে পারেন??

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File