হাসিনার চালে চ্যালেঞ্জের মুখে বিরোধী জোটের রাজনীতি - অলিউল্লাহ নোমান
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী যাযাবর ২৭ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:০৫:১২ রাত
বাংলাদেশে এই মূহুর্তে সবচেয়ে সুখি ও সফল মানুষ হলেন শেখ হাসিনা। দৃঢ়ভাবে দেশ পরিচালনা আর তাঁর চলমান রাজনীতি এমনটাই প্রমান করছে। আমার এই কথার সাথে সবাই হয়ত: একমত হতে পারবেন না। রাজনীতিকে প্রত্যেকেই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশ্লেষণ করেন। অনেকে বিশ্লেষণ করেন নিজের সুবিধা চিন্তা করে। তবে ক্ষমতায় গিয়ে নিজের চিন্তা, দর্শন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করা, চিজের চিন্তা দর্শন বাস্তবায়নে বিচার বিভাগ ব্যবহার করা, নিজের চিন্তা দর্শন বাস্তবায়নে প্রশানকে কাজে লাগানো, সেনা বাহিনীকে নিজের অনুগত রাখা, গণমাধ্যমকে নিজের মত করে প্রচার কাজে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল একজন রাজনীতিক তিনি। নিজের চিন্তা, দর্শন ও রাজনৈতিক ইচ্ছা পূরনে বাঁধা হতে পারে এমন বিষয় গুলোকে দূরদর্শিতার সাথে চিহ্নিত করতে পেরেছেন শুরুতেই। যেসব বিষয় তাঁর ভবিষ্যত ইচ্ছা পূরনে বাঁধা হতে পারে সেই গুলো দূর করেছেন অত্যন্ত সফলতার সাথে। শেখ হাসিনার সফলতায় চ্যালেঞ্জের মুখে বিরোধী জোটের রাজনৈতিক অস্থিত্ব।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল বিরোধী জোট। তখন বিরোধী জোটের শীর্ষ রাজনীতিকের অনেকেই মনে করতেন শেখ হাসিনার এক্সিট পয়েন্ট খুজছেন। বিরোধী জোটের অনেক শীর্ষ রাজনীতিকের মুখে শোনা গেছে শেখ হাসিনার উপর থেকে ইন্ডিয়ান সমর্থন প্রত্যাহার হয়ে গেছে। ইন্ডিয়া এখন নিরপেক্ষ ভুমিকায়। শেখ হাসিনা সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এরকম একটা ধারণা দেখা গেছে অনেকের মনোভাবে। ক্ষমতা ত্যাগ করার জন্য সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেননি শেখ হাসিনা। এটা বিরোধী জোটের ধারনায়ই ছিল না। এই ধারনা থাকলে তখনই সংবিধান সংশোধনীর বিরুদ্ধে প্রবল জনমত তৈরির চেস্টা চালাতো বিরোধী জোট। বরং বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব তখন বলতেন শেখ হাসিনা যত বেশি এসব করবে তত পঁচবে। শেখ হাসিনাকে পচনের জন্যই আরো সময় দেয়া দরকার। এখন প্রমান হচ্ছে পচন থিওরি কোন কাজে লাগছে না। বরং যত দিন যাচ্ছে শেখ হাসিনা ততই আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হচ্ছেন।
একটি মহাপরিকল্পনা নিয়েই তিনি ক্ষমতায় এসেছেন ২০০৯ সালে। তখন শ্লোগান ছিল ভিশন টুয়েন্টি-টুয়েন্টিওয়ান বা রুপকল্প ২০২১। এখন বলা হচ্ছে ভিশন টুয়েন্টি ফোরটি বা রুপকল্প ২০৪০। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে প্রণীত মহাপরিকল্পনা একে একে বাস্তবাযন করা হচ্ছে। মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না তাঁকে। বেঁচে থাকলে তিনি যে আরো বহুদূর যাবেন, যত দিন যাচ্ছে সেটা ততই স্পস্ট হয়ে উঠছে। এর সর্বশেষ নিদর্শন হচ্ছে দুই নেতার এক সাথে ফাঁসি কার্যকর।
বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম হচ্ছে জাতীয় স্থায়ী কমিটি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ফাঁসি কার্যকর হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদের। দুইটি বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ দুই নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে একসাথে। ট্রাইব্যুনালে দুই নেতার ফাঁসির রায় হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেয়। একই বছরের ১৭ জুলাই ফঁসির আদেশ হয় আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের। চলতি বছরের ১৬ জুন সুপ্রিমকোর্টের আপীল বিভাগ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং ২৯ জুলাই মুজাহিদের সাজা বহাল রেখে রায় দেয়। কিন্তু দুই জনেরই আপিল বিভাগের রায় প্রকাশ করা হয় একসঙ্গে। রিভিউ আবেদনের শুনানী করা হয় একদিনের ব্যবধানে। আবার রিভিউয়ের রায় দেয়া হয় একসঙ্গে। সরকার ও সুপ্রিমকোর্টের যৌথ পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই জনের লিখিত রায় একদিনে প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে দুই নেতার রিভিউ শুনানী এক সাথে করা যায় এবং এক সাথে ফাঁসিতে ঝুলানো সম্ভব হয়। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে রায় ঘোষনা হলে এক সাথে ফাঁসি কার্যকরের ইচ্ছায় ব্যঘাত ঘটতে পারে। একসাথে ফাঁসি কার্যকর করতে শেখ হাসিনার ইচ্ছা অনুযায়ী একই দিনে আপিলের রায় প্রকাশ করে সুপ্রিমকোর্ট। শেখ হাসিনার ইচ্ছ পূরনেই দুই নেতাকে একই সাথে পাশাপাশি দাড়িয়ে একই সময়ে ফাঁসিতে কার্যকর করা হয়। শেখ হাসিনার মনোবল কতটা তুঙ্গে থাকলে দুই নেতাকে একসাথে ফাঁসিতে ঝুলানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সেটা মনোবিজ্ঞানীরাই ভাল বলতে পারবেন। তবে বাজ্যিক দৃষ্টিতে বলা যায় শেখ হাসিনা শতভাগ ফুরফুরা মেজাজে আছেন বলেই দুই নেতার এক সাথে ফাঁসির আয়োজন সম্পন্ন করার সাহস পেয়েছেন। অত্যন্ত সফলতার সাথে সেটা করেছেন তিনি। কোন রকমের দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকলে এমনটা করা সম্ভব হতো না কারো পক্ষে। দ্বিধা ও শঙ্কাহীন নেতৃত্বের দ্বারাই এমনটা সম্ভব।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার শেখ হাসিনার নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল। তবে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল মঈন উদ্দিনের জরুরী শাসন আমলে। তখন ক্যান্টনমেন্টে ইন্ডিয়াপন্থি সেনা অফিসারদের একটি অংশ এই সিদ্ধান্ত নেয়। এর আলোকেই জনসমর্থন তৈরি করতে গঠন করা হয় সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম। সেক্টরস্ কমান্ডারস্ ফোরামের দাবী অনুযায়ী শেখ হাসিনা বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করে। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বিচারের উদ্যোগ নেয় শেখ হাসিনা। তবে বিচারের প্রক্রিয়া মানদন্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। দেশে বিদেশে রয়েছে নানা সমালোচনা। এর মাঝে ট্রাইব্যুনালের প্রথম চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ স্ক্যান্ডাল প্রকাশিত হলে বিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতাদের ফাঁসির আয়োজন সব খোলাসা হয়ে যায়। স্কাইপ স্ক্যান্ডাল প্রকাশিত হলে কিছুটা হোচট খায় সরকার। তবে অত্যন্ত সফলতা ও দক্ষতার সাথে সব সমালোচনাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে বিরোধী জোটের ৪ নেতার ফাঁসিও কার্যকর করেছেন অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে। সারা দুনিয়া থেকে সমালোচনা শুনতে হয়েছে। অনুরোধ গেছে জাতিসংঘ এবং আমেরিকা থেকে। কাউকে পাত্তা দেননি তিনি। বিরোধী জোটও এই বিচারের নামে ষড়যন্ত্রের আয়োজনের বিষয়ে তেমন একটা জনমত গড়তে সক্ষম হয়নি। স্কাইপ স্ক্যান্ডাল, সেইফ হাউজের নানা কাহিনী, মাওলানা নিজামীর মামলা প্রধান সাক্ষীর একটি বিবরনি প্রকাশের পরও বিরোধী জোট সে গুলো বাজ্যিক কোন কাজে লাগাতে সক্ষম হয়নি। এতেই শেখ হাসিনা আরো বেশি আত্মবিশ্বস অর্জন করে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা ততটা সফল হতে পারেননি। তখন তাঁর পিতা হত্যার বিচার শুরু করেছিলেন। তবে রায় বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। এর আগেই তাঁর ক্ষমতার মেয়াদ শেষ যায়। তখন সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ছিল। তিনি মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হয়। তখনো তিনি নির্বাচন কমিশন সাজিয়েছিলেন তাঁর মত করে। ১৯৯৬ সালের মার্চে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আমলা বিদ্রোহে নেতৃত্বদানকারী সচিব শফিউর রহমানকে নির্বাচন কমিশনার পর্যন্ত বানিয়েছিলেন। শফিউর রহমানের বিরুদ্ধে যদিও বিএনপি পরবর্তিতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছিল। তবে এই মামলা করা পর্যন্তই ছিল বিএনপির নেতৃত্বে চার দলীয় জোটের কর্মসূচির অগ্রগতি। শেখ হাসিনা তখন প্রধান নির্বাচন বানিয়েছিলেন গোপালগঞ্জের আবু সাঈদকে। কিন্তু শেষ রক্ষা তাঁর হয়নি তখন। জনগনের ভোটে পরাজয় মেনে নিতেই হয়েছে। এ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই তাঁর আন্দোলনের ফসল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিলের আগে তিনি বুদ্ধিমত্ত্বার পরিচয় দিয়েছেন। অনুগত বিচারপতিদের দিয়ে আপিল বিভাগ থেকে একটি রায় নিয়েছেন তিনি। যাতে কারো কোন রকমের প্রশ্ন না থাকে। তারপরও সংবিধান সংশোধণ সংক্রান্ত কমিটি ও তাঁর দলের অনেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে ছিলেন। সংবিধান সংশোধনীর লক্ষ্যে গটিত কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান রাখার সুপারিশও করেছিল। কিন্তু একক সিদ্ধান্তে শেখ হাসিনা এটা বাতিল করেছেন। কারন তিনি জানেন লক্ষ্যে পৌছাতে হলে কোন রকমের ঝুকি রাখা যাবে না। যেমন ঝুকিতে পড়েছিলেন ২০০১ সালের নির্বাচনে। বিএনপি’র নেতৃত্বে চার দলীয় জোট তখন ভুমিধ্বস বিজয় পেয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকলে আবারো এরকম ঝুকিতে পড়তে হবে। তাই সেই চিন্তা তিনি দূর করেছেন অত্যন্ত সফলতার সাথে।
২০০৮ সালে শেখ হাসিনা মহাপরিকল্পনা নিয়ে আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরেন। সামনে রাখা হয় ২০০১ সালে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়ে আর ফিরে না আসার অভিজ্ঞতা। ২০০১ সালের শিক্ষা মাথায় রেখেই পরবর্তি করণীয় নির্ধারণ করা হয়। এই বিজয়কে তিনি আর বিফলে দিতে চান না। তাঁর সকল পরিকল্পনা একে একে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। সাংবিধানিক যেসব বিষয় তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাঁধা হতে পারে সে গুলো তিনি একে একে দূর করেছেন দক্ষতার সাথে। কেউ চাইলেই এখন আর দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরীষ্ঠতার জোরে সংবিধানে শেখ হাসিনার সংযোজিত মূলনীতি পরিবর্তন করতে পারবে না।
২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহনের দেড় মাসের মাথায় ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে সেনা হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এই সেনা হত্যাকান্ড নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। রয়েছে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন। কেন কিছু চৌকস কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলী করে হত্যাকান্ডের এক সপ্তাহ আগে পিলখানায় আনা হয়েছিল এনিয়েও প্রশ্নের শেষ নেই। কেন সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহন না করে কালক্ষেপন করা হল! আক্রান্ত সেনা অফিসাররা ফোনে সাহাজ্যের অনুরোধ জানানোর পরও কেন সেনা বাহিনী এগিয়ে গেল না। সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমদ এবং শেখ হাসিনা কেনই বা দীর্ঘ সময় জুড়ে শুধু বৈঠক করলেন! ততক্ষনে ৫৭ জন সেনা অফিসারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারো লাশ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, কারো লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে ময়লার ড্রেনে। অনেক সেনা অফিসারের স্ত্রী সন্তানরা লাঞ্চিত হয়েছেন পিলখানার ভেতরে। বিডিআর মহাপরিচালকের স্ত্রীকেও খুন করা হয় সেদিন। পিলখানার হত্যাকান্ডও একটি মহাপরিকল্পনারই অংশ। এই মহাপরিকল্পনা কারা সাজিয়েছিলেন সেই প্রশ্নের শেষ এখনো হয়নি। এত কিছুর পরও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ঘটনা সামাল দিয়েছেন শেখ হাসিনা। স্পর্শকাতর এই ঘটনার পরপরই তিনি সেনা সদরে দরবার হলে গিয়েছেন। সেনা সদস্যদের অনেক প্রশ্ন নিজে মোকাবেলা করেছেন।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতা গ্রহনের এক বছরের মাথায় পিতা শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার আসামীদের আপিল নিষ্পত্তি করা হয়। এই কাজটিও করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। সুপ্রিমকোর্টে বিচারকের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন। নতুন আইন করে ১১জন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয় তখন আপিল বিভাগে। এই বিচারের পর আপিল বিভাগে আর ১১জন বিচারক নেই। অন্য মামলার স্বাভাবিক গতি বজায় রেখে একটি পৃথক বেঞ্চে যাতে নিয়মিত শুনানী করে আপিল নিষ্পত্তি করা যায় সেই চিন্তা থেকেই এটা করা হয়। পিতা হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০১০ সালের ২৯ জানুয়ারী।
২০০১ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে তিনি সংবিধান পরিবর্তনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোযোগী হন ২০১১ সালে। এর আগে চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে দায়ের করা দুইটি আপিল নিষাপত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়। চার দলীয় জোট সরকার আপিল গুলো নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ফেলে রেখেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা এই সুযোগ কাজে লাগাতে সামান্য কসুর করেননি। কড়ায় গন্ডায় সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন।
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এবং দ্বাদশ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দীর্ঘদিন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। পঞ্চম সংশোধনীর বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল চার দলীয় জোট সরকার। আর তত্ত্বাধায়ক সরকারের বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়ার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল একজন আইনজীবী। পুরাতন ঢাকার মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে দায়ের করা মামলায় পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয় বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এবং বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর। এই রায়ের বিরুদ্ধে চার দলীয় জোট সরকার আপিল করেছিল। এই আপিল আর নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়নি। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা আপিল প্রত্যাহার করে নেয়। তবে দুইজন নাগরিকের পক্ষে দায়ের করা আপিলের শুনানী হয়েছিল। সেই শুনানী শেষে অনুগত বিচারপতিরা শেখ হাসিনার পক্ষে রায় দেয়।
একই অবস্থায় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত হাইকোর্ট বিভাগের রায়টিও। হাইকোর্ট বিভাগ চার দলীয় জোট সরকারের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বৈধ বলে রায় দেয়। রায়ে এটাও বলা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান হচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য অহঙ্কার। সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদের সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সাংঘর্ষিক নয়। এটা হচ্ছে হাইকোর্ট বিভাগের রায়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল বাদী পক্ষের আইনজীবী। কিন্তু আপিলটি আর নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়নি। চার দলীয় জোট সরকারের সময় এটি আপিল বিভাগের নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থেকে যায় দুই বছরেরও বেশি সময় জুড়ে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় সুযোগ হাতছাড়া করতে চানতি। এই আপিল নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়। অনুগত বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৭ বিচারপতি বিভক্তি রায় দিলেন। ৩জন হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের পক্ষে এবং ৪জন দিলেন হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের বিপক্ষে। অর্থাৎ ৪জন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিলের পক্ষে অভিমত দিলেন। এতেই কাজের কাজ হয়ে গেছে। যা চেয়েছেন তা পেয়েছেন শেখ হাসিনা। এখন যে যা বলে বলুক। হাতে সুপ্রিমকোর্টের রায় আছে। এতো গেল সাংবিধানিক বিষয়ে শেখ হাসিনার উগ্যোগ।
রাজপথে যাতে কোন বিষয়ে আন্দোলন দানা বাঁধতে না পারে সেই লক্ষ্যেও তিনি নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কঠোর সিদ্ধান্ত গুলো বাস্তবায়ন করেছেন অত্যন্ত সফলতার সাথে। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম থেকে শুরু করে অনেক মাঠ পর্যায়ের বিরোধী নেতাকে গুম করা হয়েছে। অনেকেই ক্রসফায়ারের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন। এখন আর রাজপথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার মত মাঠ পর্যায়ে বিরোধী জোটের তেমন কোন সাহসী নেতৃত্ব নেই। কাউকে ভয় দেখিয়ে, কাউকে মামলায় জড়িয়ে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। বিরোধী জোট ২০১৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় বড় সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। একটি লোকও যাতে সমাবেশ স্থলে আসতে পারবে না। এই ঘোষনা দেয়া হল সরকার পক্ষ থেকে। যেই ঘোষণা সেই কাজ। একটা লোকও আসতে পারল না সমাবেশ স্থলে। স্পর্শকাতর সময়ে ইট, বালু আর ময়লার ট্রাক দিয়ে বিরোধী জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
ক্ষমতায় এসেই শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান উচ্ছেদ অভিযান। প্রথমই এয়ারপোর্টের নাম পরিবর্তন করেন। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম সহজেই পরিবর্তন করতে সক্ষম হন কোন বাঁধা ছাড়াই। জিয়া উচ্ছেদের দ্বিতীয় পদক্ষেপ ছিল বেগম জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করা। বাড়িটি গুড়িয়ে ধুলায় মিশিয়ে দেয়া। সেটাও সম্ভব হয়েছে বিনা বাঁধায়। শুরুর দিকে হাইকোর্ট বিভাগ থেকে কিছুটা বাঁধার সম্মুখিন হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। পরবর্তিতে এই বাঁধা দূর হয়েছে আবার সহজেই। শেখ হাসিনার কৌশল আর দক্ষতার কাছে হার মানেন এই বাঁধা। বাড়িটির এখন আর নিশানাও নেই। এখানে ইতোমধ্যে নির্মান করা হয়েছে বহুতল ভবন। জিয়া উচ্ছেদ প্রকল্পের সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে শেরেবাংলা নগর থেকে মাজার সরিয়ে নেয়। এই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। একদিন ঘুম থেকে উঠে মানুষ যদি দেখেন জিয়াউর রহমানের মাজার এখানে আর নেই। তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ঢাকায় বেগম খালেদা জিয়ার নামে প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল নির্মানাধীন ছাত্রী হলের নাম বহু আগেই পরিবর্তন করা হয়।
শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল প্রতিষ্ঠার সময় বাংলাদেশের সকল সংবাদপত্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। মাত্র ৪টি পত্রিকা রাখা হয়েছিল সরকারি নিয়ন্ত্রণে। অর্থাাৎ সরকারের গুনকীর্তন করার নিমিত্বে চারটি পত্রিকা সরকারি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হতো। সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে। কিন্তু শেখ হাসিনা অত্যন্ত সফলতার সাথে সকল গণমাধ্যম নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। সরকারের সমালোচনা করে দুর্নীতির দু:শাসনের চিত্র প্রকাশ করে এরকম কোন গণমাধ্যম বাংলাদেশে এখন আর অবশিষ্ট নেই। দৈনিক আমার দেশ সরকারের দুর্নীতি দু:শাসনের চিত্র প্রকাশ করত। বিচারের নামে অবিচারের তথ্য হাজির করত জাতির সামনে। আমার দেশকে বন্ধ করতে ২০১০ সালেই উদ্যোগী হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তখন কিছুটা হোচট খেয়েছিলেন আমার বন্ধ করতে গিয়ে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে অত্যন্ত সফলতার সাথে আমার দেশ পত্রিকাটি বন্ধ করে রেখেছেন। সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বন্দি রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশন বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে চ্যানেল ওয়ান। যদিও এ গুলো সরকারের তেমন কোন সমালোচনা করত না। তারপরও ঝুকি রাখেননি শেখ হাসিনা। পথের কাঁট হতে পারে যে কোন সময়। তাই সরিয়ে দিয়ে আগে থেকেই মসৃণ রাখা ভাল মনে করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে আওয়ামী পন্থিরা বিজয়ী হতে পারত না। তাই গায়ের জোরে প্রেসক্লব দখলে নিয়েছেন আওয়ামী সাংবাদিকরা। এই দখলদাররা প্রেসক্লাবে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি স্থাপন করেছে। যা স্বাধীনতার পর থেকে চেস্টা করেও পারেননি কেউ। শেখ হাসিনা প্রমান করেছেন সকল পত্রপত্রিকা বন্ধ নয়, চালু রেখেই নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বাধ্য করা যায় সরকারি গুনকীর্তন প্রচারে। শেখ হাসিনা আরো প্রমান করে দিয়েছেন সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করেও বাকশাল প্রতিষ্ঠা সম্ভব। রাজনৈতিক দল থাকবে। কিন্তু, সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলার সহাস থাকবে না। কোমর সোজা করে দাড়াতে পারবে না দল গুলো। রাজনৈতিক দল রেখেও নিজের ইচ্ছামত দেশ পরিচালনা করা যায়, ইচ্ছামত বিচার বিভাগ পরিচালনা করা নয়, গণমাধ্যমে গুণকীর্তন করানো যায় এটা তিনি দক্ষতার সাথে প্রমান করেছেন।
আগে শোনা যেত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশ ইন্ডিয়া হয়ে যাবে। তবে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর অত্যন্ত সফলতার সাথে বাংলাদেশকে ইন্ডিয়ান স্বার্থে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। দখল না করলেও এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এখণ ইন্ডিয়ার ইচ্ছার বাইরে সহজে কেউ কিছু করতে পারবে এমনটা ভাবা যায় না। ট্রানজিটের নামে করিডোর, চট্রগ্রাম বন্দর ব্যবহারের দাবী ছিল পাকিস্তান আমল থেকে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে ইন্ডিয়া চেস্টা চালিয়ে আসছিল সেই সুযোগ গুলো পাওয়ার নিমিত্তে। শেখ হাসিনার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে সেই সুযোগ সহজেই পেয়েছে ইন্ডিয়া। আগে ছিটেফোটা বাঁধা আসত। জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে বলত বিরোধী জোট। এখন আর সেটাও কেউ বলে না। এতেই অনুমন করা যায় ইন্ডিয়ার কলোনী না হলেও বাংলাদেশ ছায়া কলোনী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটাও শেখ হাসিনার রাজনীতিরই সফলতা। সবকিছু মিলিয়ে শেখ হাসিনার রাজনীতি এখন চ্যালেঞ্জহীন অবস্থায় বিরাজমান। বরং তাঁর রাজনৈতিক চালে চ্যালেঞ্জের মুখে বিরোধী জোটের রাজনৈতিক অস্থিত্ব।
সূত্র: http://rbn24.co.uk/archives/4641
বিষয়: বিবিধ
১৮৮৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
Other one is Russia,communist China, pagan India and Islamic country rule by tyranny power like Bashar in Sam, Jason a in Bangladesh
Wait and see
The hidden element of Zionist entity - who controls the current world through its proxies placed its ultimate slave US led NATO in one side to pursue and blackmail Russia led Ruso-China alliance in the nuclear battle-field in order to eliminate North America, Europe, Russia and China and any other forces that would be considered a future threat to Israel.
We Muslim would be the final fry of beast Israel until we decide to take them on with the support from Khorasan.
মন্তব্য করতে লগইন করুন