আল্লাহর সাহায্য পেতে চাইলে যা করতে হবে
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী যাযাবর ৩০ নভেম্বর, ২০১৪, ০২:৫৪:১৯ দুপুর
সূরা কাহাফে আল্লাহ বলেন-
১৭ – তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলে যায়, অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষকে ভালো-মন্দ এবং সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারার ক্ষমতা দিয়েছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ প্রদত্ত এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাঁরই নাযিল করা পথের ওপর চলতে চাইবে তার জন্য আল্লাহ সেই পথকে সহজ করে দেবেন। যে ব্যক্তি সেই পথে চলতে গিয়ে যাবতীয় ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকবে তার জন্য আল্লাহ সেই ত্যাগকে সহজ করে দেবেন এবং আপাতদৃষ্টিতে প্রতীয়মান সব অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেবেন। অন্যদিকে যে ব্যক্তি নিজের খেয়াল-খুশি বা প্রবৃত্তির দাস তাকে সাধারণত আল্লাহ তাঁর নাযিল করা সৎ পথের সন্ধান দেন না। তাই আল্লাহকে পেতে হলে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে প্রথমে তাঁর দিকে ঝুকতে হবে, তাঁকে পেতে উদগ্রীব থাকতে হবে, তবেই না আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দেবেন এবং সেই পথের ওপর টিকে থাকার শক্তি ও মনোবল দেবেন।
১৮ – তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে। তাদের কুকুর ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংক গ্রস্ত হয়ে পড়তে।
যদি কেউ আল্লাহর রাস্তায় চলতে গিয়ে চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকে তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রয়োজনে ‘প্রকৃতির নিয়মকেও’ তার জন্য অনুকূল করে দেন। উদাহরণস্বরূপ, বদরের যুদ্ধের আগের রাতে যে বৃষ্টি হয় তার ফলে মুসলিম শিবিরের দিককার মাটি চলাচলের ও যুদ্ধের জন্য অনুকূল হয়ে যায়, কিন্তু কাফির শিবিরের দিককার মাটি চলাচলের জন্য প্রতিকূল হয়ে যায়। এখানে আল্লাহ বৃষ্টিকে মুসলিমদের জন্য সহায়ক করে তাদেরকে সাহায্য করেছেন। আহযাবের যুদ্ধে (যা খন্দকের যুদ্ধ নামেও পরিচিত) মুসলিমদের অবস্থা অনেক শোচনীয় ছিলো, যখন সারা আরবের মুশরিকেরা প্রায় দশ হাজার সৈন্য নিয়ে মদিনা আক্রমণ করতে এসেছিল। সাহাবীরা মদিনাকে রক্ষার জন্য প্রতিরক্ষাব্যুহ হিসেবে দীর্ঘ পরিখা খনন করেন যেন শত্রুপক্ষ মদিনাতে ঢুকতে না পারে। এর মধ্যেই মদিনার এক ইহুদি গোত্র বনু কুরাইযা মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বসে। মুসলিমদের এই চরম বিপদের সময়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ পাঠিয়ে মুশরিক বাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে দেন, ফলে জান বাঁচাতে বিনা যুদ্ধেই তাদেরকে ফিরে যেতে হয়।
এই উদাহরণগুলো থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে শুধুমাত্র আল্লাহর রাস্তায় ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতাই আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়, বরং একই সঙ্গে আমাদের নিজেদের দিক থেকেও সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। সাহাবীরা তাঁদের সাধ্যের সবটুকু ঢেলে দেওয়ার পরেই কেবল বদর বা আহযাবের যুদ্ধে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এসেছে। সূরা কাহফ-এর এই আয়াত থেকেও আমরা দেখতে পাই যে গুহাবাসী যুবকেরা তাদের নিরাপত্তার জন্য সাথে করে প্রহরী কুকুর নিয়ে গিয়েছিল। যখন তারা তাদের সাধ্যের মধ্যে সবটুকু দিয়ে দিলো তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদেরকে আপাতদৃষ্টিতে প্রতীয়মান অসম্ভব সব উপায়ে সাহায্য করলেন।
আমাদের নিজেদের জীবনেও আল্লাহর রাস্তায় কোনো ত্যাগ স্বীকারের প্রয়োজন হলে ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতার পাশাপাশি সাধ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি নিতে হবে যেন আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য পাওয়ার জন্য যোগ্য হতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-তে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তি যদি এমন পেশা থেকে জীবিকা নির্বাহ করে যা তার জন্য কোনোভাবেই শোভনীয় নয় তবে তার উচিৎ হবে সেই পেশা পরিবর্তনের জন্য সর্বাত্নক চেষ্টা করে যাওয়া। আগের আপত্তিকর চাকরিতে যদি সে মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতন পেত এবং অনেক চেষ্টার পরে খুজে পাওয়া শতভাগ হালাল চাকরিতে যদি সে মাসে দশ হাজার টাকা বেতন পায় তবে তার উচিৎ হবে দশ হাজার টাকা বেতনের নতুন এই চাকরিতেই খুশি থাকা। সে যদি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই এই নতুন চাকরিটি নিয়ে থাকে তবে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে এই অল্প টাকাতেই সে সুন্দরভাবে পরিতৃপ্তির সাথে তার জীবনকে চালিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু সে যদি বিকল্প কোনো কিছুর জন্য চেষ্টা না করে মনে করে যে আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন তবে খুব সম্ভবত সে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য পাবে না, কারণ সে তার সাধ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেনি।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে আমাদের সাধ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়ে তাঁর রাস্তায় চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করার তৌফিক দিন এবং আমাদেরকে তাঁর সাহায্যের জন্য মনোনীত করে নিন এই কামনা রইল।
সূরা কাহফ থেকে পাওয়া কিছু দিকনির্দেশনার ওপর ধারাবাহিক আলোচনার ষষ্ঠ কিস্তি
লিংক:https://amarspondon.wordpress.com/2013/07/26/surah-kahf-17-18/
বিষয়: বিবিধ
১৩০০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নাসরুম্মিনাল্লাহি ও ফাত্বহুন ক্বারীব...ইনশাআল্লাহ।
অনেক ভাল লাগল । জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
"সাধ্যের সবটুকু ঢেলে দেওয়ার পরেই কেবল বদর বা আহযাবের যুদ্ধে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এসেছে।" -এ সহজ দর্শনটুকু আপনি অনেককেই বুঝানো যায়না। আল্লাহ বলেছেন,
"নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি।" (আল-কুরআন, সূরা-৯০, আয়াত-৪)
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন