মাহমুদুর রহমান কেন কারারুদ্ধ ???
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী যাযাবর ০৪ আগস্ট, ২০১৪, ১০:৩২:৩৭ সকাল
আর্নল্ড সোয়ার্জনেগার হলিউডের তারকা। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন নিলেন। তখন তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা দেয়া হলো। আদালত ওই নালিশ খারিজ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে বলেছে যে আর্নল্ড সোয়ার্জনেগারের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র। তাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। যে আদালতের কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ প্রধানমন্ত্রী নাকি ওই দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসারেই দেশ চালাচ্ছেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অথচ এই প্রধানমন্ত্রীর কব্জায় এ দেশের বিচার বিভাগ, এ দেশের প্রশাসন, এ দেশের সেনাবাহিনী। বিচার বিভাগ হোক, দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হোক, আর দেশের সুশীল সমাজ হোক, কেউই কথা বলতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রীর ভয়ে। যিনি কথা বলছেন তাকেই হেনস্থা হতে হচ্ছে। তাকেই অপমান করছে ক্ষমতায় থাকা তৈলচিক্কন আওয়ামী লীগ দলটি।
আর এ অবৈধ সরকারের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়ার কলমের শক্তি আছে মাহমুদুর রহমানের। তাই ভয়ে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী মাহমুদুর রহমানকে জেলে আটকে রাখতে অপকৌশলে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কারারুদ্ধ করে রেখেছে।
তিন মাস আগে গত ২৮ এপ্রিল আদালতে লিখিত আবেদনে মাহমুদুর রহমান বলেছিলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে যতটুকু আইন জানি তাতে প্রধানমন্ত্রীর মৌখিক কিংবা তার কার্যালয়ের ডিও লেটারের নির্দেশানুযায়ী দেশের কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের কোনো সুযোগ দুদক আইনে নেই। আজকের মামলার ক্ষেত্রে কমিশন আইন লঙ্ঘন ছাড়াও জালিয়াতির মতো ফৌজদারি অপরাধও সংগঠিত করেছে। অতএব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হওয়াই ছিল আইনের শাসন। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, মানবাধিকার নেই, এমনকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে কোনো জনপ্রতিনিধিত্বশীল বৈধ সরকারও নেই।
আমার বিরুদ্ধে দুদক কোনো দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি। অভিযোগ এনেছে সম্পদের হিসাব না দেয়ার। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমি যে সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে রাষ্ট্র ও জনস্বার্থে আপসহীনভাবে দায়িত্ব পালন করেছি সে ব্যাপারে দেশবাসী বিশেষভাবে অবহিত আছেন। আজকের অবৈধ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মতো আইন ও বিধি-বিধানের অপব্যাখ্যা করিনি। প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ কর্মচারী, কেবিনেট সচিব আমার জ্বালানি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকালে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ছিলেন। তার রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে আমি কখনও মাথা ঘামাইনি। তাকে কোনোদিন আইনবহির্ভূত কিংবা রাষ্ট্র বা জনস্বার্থ ক্ষুণ্নকারী নির্দেশ দেইনি। তিনি এখনও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা। আমার বক্তব্য মিথ্যা হলে তাকে সেটি খণ্ডনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
মাহমুদুর রহমানের এ বক্তব্যের পরও সরকার মাহমুদুর রহমানকে ওই আদালতে এক রমজান মাসে দুইবার শুনানির জন্য হাজিরা দিতে কাশিমপুর কারাগার থেকে আসতে হয়েছে। সরকার যদি পরিবর্তনও হয় তবুও আদালতের কাছে এই প্রশ্নটি হয়তো অমীমাংসিত থেকে যাবে—কেন মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় এতদিন ধরে কারারুদ্ধ থাকতে হয়েছিল? দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় কেন তিনি জামিন পাননি? কেন তিনি মাসের পর মাস কারারুদ্ধ থাকলেও জামিনের জন্য আদালতের কাছে যাননি? কেন মাহমুদুর রহমানের জামিন দিতে, বিরোধী দলের নেতাদের জামিন দিতে এতবার বিব্রত হতে হয় আদালতকে? বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে সরকারের নির্লজ্জ দলীয়করণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজ কোনো গণমাধ্যম কথা বলতে না পারলেও একদিন ঠিক সবই বের হয়ে আসবে। একদিন গণমাধ্যম আজকের সাহসী কলম-সৈনিক মাহমুদুর রহমানের মতো ঝলসে উঠবেই। আর এসব ফাঁস হবে বলেই আজ মাহমুদুর রহমানকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আদালত কোনো ভূমিকা রাখছে না। সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি, বার কাউন্সিলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বিশিষ্ট আইনজীবী আ্যাাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সরকার বেশিরভাগ নিয়োগ দিয়েছে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। ফলে দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ হয়নি। এ নিয়ে আমি ও আমরা অনেক আইনজীবী আপত্তি করেছিলাম। অনেক কথা বলেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের মধ্যেই অনেক দক্ষ, যোগ্য আইনজীবী রয়েছেন। তাদেরকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিলে আমাদের আপত্তি ছিল না। মামলার দীর্ঘসূত্রতার দোহাই দিয়ে অধিকাংশ দলীয় দুষ্টিকোণ থেকে নিয়োগ পাওয়া অযোগ্য বিচার অদক্ষ বিচারপতিদের জন্য বিচার কার্যক্রমের কোনো গতিশীলতা নেই। তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিচারপ্রার্থীরা সঠিক সময়ে বিচার পাচ্ছেন না। অনেকে মামলার ব্যাপারে বুঝে উঠতেই পারছেন না। সিনিযর বিচাপতিদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা রয়েছে।
সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেছেন, এখনও মানুষের এই বিচার বিভাগটির ওপর আস্থা রয়েছে। কিন্তু সরকার চায় না এই আস্থা থাকুক। তিনি বলেন, বিচার বিভাগটিকে কলুষিত, বিতর্কিত করে রেখে গেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। এখন দেশে দুঃসময়। কারণ আমরা একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে রয়েছি। গণতান্ত্রিক সরকার আসার পরে এসব ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে হাইকোর্টের একাধিক আইনজীবী জানান, দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিয়োগ পাওয়া এসব বিচারপতিদের জন্যই উচ্চ আদালতে বিব্রত হওয়ার ঘটনা বার বার ঘটছে। এবং এসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিশেষ করে রাজনৈতিক মামলাগুলো নিয়ে বিব্রত করে ঝুলিয়ে রাখছেন তারা।
আইন, সংবিধান, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্মচিন্তা এবং আরো কত যে বিষয়ে মাহমুদুর রহমানের গভীর জ্ঞান ও চিন্তা সেইসঙ্গে অনলস লেখা। বলতে বাধ্য হচ্ছি, যারা সরকারের কাছে অর্থাত্ সরকারের অর্থকড়ির কাছে বিক্রি হয়, তারা মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে নিন্দা রটিয়ে মাহমুদুর রহমানকে অপদস্থ করতে চান। কিন্তু ওইসব হেটো রাজনীতিতে বিশ্বাসী বুদ্ধিজীবীরা সরকারকে ধরে রাখতে মাহমুদুর রহমানকে কারারুদ্ধ করে রাখতে প্ররোচিত করছেন।
-মাহমুদা ডলি
লেখক : সাংবাদিক
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2014/08/04/251767
বিষয়: বিবিধ
১০৬৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন