যে দেশে জ্ঞানীর মযাদা হয়না সে দেশে জ্ঞানী জনমায়না

লিখেছেন লিখেছেন গালিব ০১ মার্চ, ২০১৩, ০৮:২৪:১০ সকাল

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পরপরই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান বিচারকেরা। এ সময় কাঠগড়ায় অপেক্ষমাণ মাওলানা সাঈদী দাঁড়ান কিছু বলার জন্য। তিনি বলেন, মাননীয় আদালত আপনারা আপনাদের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে বিচার করতে পারেননি। আপনারা শাহবাগের নাস্তিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ রায় দিয়েছেন। এ পর্যন্ত বলার সাথে সাথে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত বিপুল সরকার পক্ষের আইনজীবী এবং অন্যান্য লোকজন সমম্বরে তীব্র চিৎকার শুরু করেন। এ সময় কেউ কেউ মাওলানা সাঈদীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি এবং ধমক দেন। এরপর মাওলানা সাঈদী আর কোনো কথা বলেননি।

গতকাল রায় ঘোষণা উপলক্ষে ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের বিপুলসংখ্যক আইনজীবী, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের আইন কর্মকর্তা ছাড়াও হাইকোর্টের সরকার সমর্থক অনেক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিরও অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। অন্য দিকে হরতালের কারণে আসামি পক্ষের কোনো সিনিয়র আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। কয়েকজন জুনিয়র আইনজীবী হাজির ছিলেন। ফলে সরকার পক্ষের আইনজীবীদের বাধার কাছে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।

এর আগে বারবার মাওলানা সাঈদী অভিযোগের বিপরীতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল তা অনুমোদন করেননি। মাঝে মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছে অনুরোধ করে কিছু কথা বলেছেন ট্রাইব্যুনালে।

গত ৬ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শেষে রায়ের তারিখ ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি মর্মস্পর্শী বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে ২০টি অভিযোগ আনা হয়েছে তার একটিও যদি সত্য হয় তাহলে আমি যেন ঈমান নিয়ে মরতে না পারি। কিয়ামতের দিন যেন রাসূল সা:- এর শাফায়াত আমি না পাই। আর যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছে তারা যদি তওবা না করে এবং তওবা যদি তাদের নসিব না হয় তাহলে গত দুইটি বছর আমি এবং আমার সন্তানেরা যে যন্ত্রণা ভোগ করেছি, আমার যে পরিমাণ চোখের পানি ঝরেছে, আমার সন্তানদের যে চোখের পানি ঝরেছে, তার প্রতিটি ফোঁটা অভিশাপের বহ্নিশিখা হয়ে আমার থেকে শতগুণ যন্ত্রণা এবং কষ্ট ভোগের আগে যেন তাদের মৃত্যু না হয়। আর জাহান্নাম হয় যেন তাদের চির ঠিকানা।’

অপর দিকে স্কাইপ কেলেঙ্কারির কারণে আবার যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ২৯ জানুয়ারি আবার রায়ের তারিখ ঘোষণার আগে মাওলানা সাঈদী বলেছিলেন, আমি হাজার বার ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াতে প্রস্তুত আছি। আমি মৃত্যুকে পরোয়া করি না। মৃত্যু নিয়ে কোনো ভয়ভীতি আমার নেই। আমি আমার যৌবনকাল থেকে শুরু করে আজ ৭৩ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষকে পবিত্র কুরআনের দাওয়াত দিয়েছি। কুরআনের একজন খাদেম হিসেবে গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কুরআনের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছি। লাখ লাখ মানুষ আমার মাহফিলে যোগ দেন। অসংখ্য মানুষ এসব মাহফিল থেকে সঠিক পথের দিশা পেয়েছেন। দেশ-বিদেশের লাখো কোটি মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। আমি সাঈদী লাখো কোটি মানুষের চোখের পানি মিশ্রিত দোয়া ও ভালোবাসায় সিক্ত। এটাই কি আমার অপরাধ? আমি কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। এটাই কি আমার অপরাধ? এটা যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে এ অপরাধে অপরাধী হয়ে হাজার বার ফাঁসির মঞ্চে যেতে আমি রাজি আছি।

মাওলানা সাঈদী বলেন, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও একত্ববাদ এবং কুরআনের বিপ্লবী দাওয়াত প্রচারে আমি অকুণ্ঠ চিত্ত। এ কারণে সরকার তাদের ইসলামবিদ্বেষী মিশন বাস্তবায়নে আমাকে অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করে আমাকে বিতর্কিত ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং নিশ্চিহ্ন করার জন্যই আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উত্থাপন করেছে। আমি রাজাধিরাজ, সম্রাটের সম্রাট, সব বিচারপতির মহাবিচারপতি আকাশ ও জমিনের সার্বভৌমত্বের একচ্ছত্র অধিপতি, মহান আরশের মালিক, সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নামে শপথ করে বলছি, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ আমি করিনি।

বন্দী থাকা অবস্থায় মাওলানা সাঈদীর বড় ছেলে রাফীক বিন সাঈদী মারা যান গত বছর। তার নামাজে জানাজা উপলক্ষে ১৪ জুন প্যারোলে কয়েক ঘণ্টার জন্য মুক্তি পান মাওলানা সাঈদী। নামাজে জানাজার ইমামতি শেষে তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহ আমি মজলুম। আল্লাহ আমি তোমার কাছে বিচার চাই। আমি গত ৫০ বছর ধরে সারা দেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তোমার কুরআনের কথা প্রচার করেছি। আজ আমাকে বলা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী। ও আল্লাহ তোমার ইজ্জতের কসম, তোমার জাতের কসম, তুমি সাক্ষী ১৯৭১ সালের কোনো কাদা এবং কাদার এক ফোঁটা পানিও আমার গায়ে লাগেনি।

এ ছাড়া বিভিন্ন সময় মাওলানা সাঈদী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে শতাব্দীর জঘন্যতম মিথ্যাচার বলে আখ্যায়িত করেন।

বিষয়: বিবিধ

১৩০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File