আলিমরাই মুসলিম সমাজের অভিভাবক ও কাণ্ডারি

লিখেছেন লিখেছেন জুনায়েদ ১৫ জুন, ২০১৩, ১১:২৫:০৭ সকাল

দ্বীনদার আলিমদের মর্যাদা ও অবস্থান ইসলাম স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে। মুসলিম সমাজে সবার উপরেই তাদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। তাদেরকেই রসুলুল্ললাহ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ওয়ারিশ বলে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। একই সাথে তিনি বদদ্বীন আলিমদের ব্যপারে আমাদের সতর্ক করে গেছেন। এদেরকেই তিনি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলেছেন। রসুলুল্লাহ(সঃ)-এর অবর্তমানে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে দ্বীনদার আলিমদেরই দায়িত্ব মুসলিম সমাজের অভিভাবক ও কাণ্ডারি হিসেবে কাজ করা। কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুসলিম সমাজের জন্য এটাই ইসলামের ব্যবস্থা।

এদেশের অসংখ্য মানুষ বিশ্বাস করে যে হেফাজতে ইসলাম এদেশে দ্বীনদার আলিমদেরই একটি সংগঠন এবং এদেশের মুসলিম সমাজের একটা চরম দুর্দিনে মুসলিম সমাজের প্রতি তাদের যে গুরু দায়িত্ব তা পালনের জন্যই তারা সামনে এগিয়ে আসেন। হেফাজতে ইসলামকে এভাবে সামনে দেখতে পেয়ে দু’চোখে অন্ধকার দেখা অগনিত মুসলিম জনগনের মনে বিপুল আশা ও উৎসাহ জেগে উঠে। একারনেই এতো অজস্র মানুষ তাদের আহ্বানে অকুণ্ঠভাবে সাড়া দেয়, তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা করে। মনে হচ্ছিল মানুষ যেন এতোদিন এমন কারো আসার অপেক্ষায় ছিল।

গত ৫ই মে দিবাগত রাতে এবং ৬ তারিখ ভোরের আগ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের উপর দিয়ে একটা প্রচণ্ড সরকারি ঝড় বয়ে গেছে। জঘন্য কুচক্র ও অবিশ্বাস্য নৃশংসতার শিকার হয়েছে তারা। যে দুর্যোগ বয়ে গেছে তাদের উপর দিয়ে তা ঘুনাক্ষরেও তাদের কল্পনায় জাগেনি। তারা তাই প্রস্তুতও ছিলনা এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য। এই প্রচণ্ড ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি সামলে উঠা সহজ হবেনা তাদের পক্ষে। তাছাড়া দুর্যোগ তো এখনো কাটেনি। বরং অন্য রুপে হাজির হয়েছে। বিচিত্র রকম হয়রানি, হামলা ও মামলা দিয়ে তাদেরকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়া হচ্ছে। তাদেরকে এক মুহূর্তের জন্যও সুস্থির হবার অবকাশ দেওয়া হচ্ছেনা। এমন নাজুক অবস্থায় এখন কি করবে তারা? ৫ই মে থেকে শুরু হওয়া অব্যাহত রাষ্ট্রীয় তাণ্ডব কি তাদের থামিয়ে দেবে? তারা কি তাদের দায়িত্ব পরিত্যাগ করবে? না কি তারা তা পালনে অটল থাকবে? এই প্রশ্ন আজ এদেশের অসংখ্য বেদনাহত মানুষের মনে।

পরিস্থিতি খুবই প্রতিকূল হেফাজতে ইসলামের জন্য সন্দেহ নেই। কিন্তু তাই বলে আল্লাহতা’আলা ও তার রসুল(সঃ) দ্বীনদার আলেম সমাজের কাধে যে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন তা তারা কোণ অবস্থাতেই কাধ থেকে নামিয়ে রাখতে পারেন না। বর্তমান বিপর্যয় থেকে তাদের সামলে উঠতেই হবে। দ্বীনের দাবিতে তাদের আবার সর্বশক্তিতে ঘুরে দাড়াতেই হবে। অনেক দেরিতে হলেও একবার যখন তারা জেগে উঠেছেন তখন আর পিছনে ফেরার অবকাশ নেই তাদের। তবে খুব সুচিন্তিতভাবে তাদের সামনে অগ্রসর হতে হবে।

বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে হেফাজতের প্রথম কাজ তাদের ঐক্য বজায় রাখা। সরকার সরকম চেষ্টা করবে তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার। সরকারের বহু সুযোগ আছে তা করার। অর্থ, শক্তি, আইনি কুটকৌশল, রাজনৈতিক ফন্দিফিকির ও একজনকে আরেকজনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা সহ অনেক হাতিয়ারই ব্যবহার করতে পারে সরকার। বিভেদ সৃষ্টির সরকারি ফাদে কোনরকমেই যাতে তাদের পা না পড়ে সে ব্যপারে তাদের একান্তভাবে সতর্ক থাকতে হবে। আল্লাহতা’আলা না করুন, তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড়ো পরাজয় তাদের। ৫ই মে দিবাগত রাতের পরাজয় ম্লান হয়ে যাবে এর কাছে। মানুষের অন্তরে তাদের প্রতি যে ভক্তি, ভালবাসা ও সহানুভুতি রয়েছে তা একেবারে উবে যাবে। তাদেরকে ঘিরে এদেশের মানুষের মনে যে এখনও যে আশা আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। অতএব যে কোণ মুল্যে তাদের ঐক্য বজায় রাখাটাই এখন সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য।

দুই, তাদের হতাশ হওয়া চলবে না। বিপর্যয় সহজেই হতাশা ডেকে আনে মানুষের মনে। কিন্তু এই দুর্বলতাকে তারা প্রস্রয় দিতে পারেন না। কারন ইসলামের ইতিহাসেও অনেক বিপর্যয় আছে। একথা অন্য যে কারো চেয়ে তাদের অনেক ভালো জানা আছে। মুমিনদের জন্য আল্লাহতা’আলার প্রতিশ্রুতির কথাও তারা সবচেয়ে ভালো জানেন। অতএব এই একটা বিপর্যয় থেকেই তারা হতাশ হতে পারেন না। ৫ই ও ৬ই মের দুর্যোগই তদের আন্দোলনের শেষ ও চূড়ান্ত নয়। সংগ্রামের একটা পর্যায় মাত্র। হতাশার কোণ স্থান নেই মুমিনের অন্তরে। তাদের দায়িত্ব সহীহ কাজটা সহীহ পন্থায় ইখলাসের সাথে করে যাওয়া এবং সর্বান্তকরণে আল্লাহতা’আলার সাহায্য কামনা করা।

তিন, তাদের আন্দোলনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত তাদের সমস্ত কার্যক্রমের ও অভিজ্ঞতার খুব গভীরভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। বিশেষ করে গত ৫ই ও ৬ই মে এবং তার পরবর্তিতে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। তাদেরও নিশ্চয় কিছু ভুলত্রুটি, অসাবধানতা ও অজ্ঞতা ঘটেছে। এসব চিহ্নিত করে তাদের নিজেদের সংশোধন করে নিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে সেসব এড়ানো যায়। ৫ই ও ৬ই মের বিপর্যয় থেকে অবশ্যই অনেক কিছু শেখার আছে। সেসব শিক্ষা তাদের গ্রহন করতে হবে। যেমন, বেলা দেড়টা দুটোর মধ্যেই ধারনা করা যাচ্ছিল সরকার কি চায়, পরিস্কার হয়ে উঠছিল সরকার কোণ পথে এগুচ্ছে। হাংগামা, সন্ত্রাস ও জ্বালাও পোড়াও-এর মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকার তাদের অনুকুলে একটা পরস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছিল। সেটা তারা যথেষ্ট চতুরতার সাথে করেও। হেফাজত এই পরিস্থিতির যথাযথ মুল্যায়ন করতে পারে নি এবং তার মর্মান্তিক পরিনতি তাদের ভোগ করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগকে চিনতে মারাত্মক ভুল করেছিল হেফাজত। ক্ষীণ হলেও সরকারের সুবিবেচনার উপর হেফাজতের যে আস্থা ছিল তা মোটেই বাস্তবসম্মত ছিলনা। আওয়ামী লীগ যে কতো কুচক্রী ও নৃশংস হতে পারে সে সম্মন্ধে তাদের মারাত্মক ভ্রান্তি ছিল। আওয়ামী লীগের চরিত্র ভাল করে না বুঝে এদেশে কেউ কিছু করতে গেলে তার পরিনতিতে বিপর্যয় ঘটতে বাধ্য।

তবে একটা কথা এখানে অবশ্যই মনে রাখতে হবে। পর্যালোচনা ও আত্মসমালোচনা যেন কখনও নিজেদের মধ্যে একে অপরের প্রতি দোষারোপে পরিনত না হয়। এটা খুবই সহজ এবং কোণ একটা বিপর্যয়ের পর মানুষ এই আত্মঘাতী কাজটাই সবচেয়ে বেশি করে থাকে। অতএব এই মহা বিপদ থেকে তাদের সাবধান থাকতে হবে।

চার, হেফাজতের নেতারা নিশ্চয়ই জানেন তাদের মূল শক্তি কোথায়। তাদের মুল শক্তি তাদের ইমান ও আল্লাহতা’আলার উপর আস্থা। আর এই সাথে আছে সাধারন মানুষের তাদের প্রতি ভক্তি ও ভালবাসা। তাদের উপর আল্লাহতা’আলার রহমাত এটা। এই দুটি জিনিষ তাদের শুধু ধরে রাখলেই হবে না, তা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। সাধারন মানুষের সাথে তাদের সুসম্পর্ক আরো মজবুত ও তাদের সাথে যোগাযোগ আরো ঘনিষ্ঠ করে তুলতে হবে। সাধারন মানুষের সাথে তাদের আচরনের মাধ্যমেই তা করা সম্ভব। বড়ো থেকে ছোট তাদের সবাইকেই এদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। সাধারন মানুষের দুঃখ ও দুর্দশার সময় তাদের সমব্যথী হতে হবে এবং তাদের প্রতি যখন অন্যায় ও অবিচার হয় তখন তাদের পাশে এসে দাড়াতে হবে। দুঃখ, বেদনা, অন্যায় ও অত্যাচার জর্জরিত আমাদের এই সমাজে মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবার সুযোগের কোণ অভাব নেই।

পাচ, দেশের মুসলিম নারী সমাজকে অবশ্যই হেফাজতে ইসলামকে কাছে টানতে হবে। নারী সমাজের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া কোণ সমাজেই দ্বীন ইসলামের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। রসুলুল্লাহ(সঃ )-এর নবুয়তি জীবনের ইতিহাস হেফাজতের আলিমদের সামনে আছে। তারা জানেন সেসময় নারীরা কি আন্তরিকতা ও আগ্রহের সাথে রসুলুল্লাহ(সঃ)-এর দাওয়াতে সাড়া দিয়েছিল এবং কি নিষ্ঠার সাথে ও কি বিপুল ত্যাগ স্বীকার করে তাকে সাহায্য করেছিল।

নারীদের ব্যপারে আলিম সমাজকে একটা বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক বাস্তব সত্য স্বীকার করতেই হবে। এদেশে নারীরা নানাভাবে উপেক্ষা, বঞ্চনা, অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের শিকার। ইসলাম তাদের যেসব অধিকার ও সুযোগ দিয়েছে তার খুব কমই তারা বুঝে পেয়েছে। আর এ জন্য দায়ি এদেশের পুরুষ সমাজ। আলিম সমাজের চোখের সামনেই এসব হয়ে চলেছে। কিন্তু আলিম সমাজ এদিকে যেভাবে তাদের নজর দেওয়া দরকার ছিল তা দেয়নি। দীর্ঘদিন থেকেই এই অবাঞ্ছিত অবস্থা চলছে।

বহু নারী যে আজ ইসলামের কথা শুনলে অস্বস্তি বোধ করে বা ইসলামের বিরোধিতা করে তার মুলে রয়েছে দুটি কারন। এক, তাদের উপর যখন অন্যায় ও অবিচার হয়েছে তখন আলিম সমাজকে তারা তাদের পাশে পায়নি। দুই, অনেক ক্ষেত্রে ইসলামের দোহাই দিয়েও নারীদের উপর অন্যায় ও অবিচার হয়েছে। বহু ব্যপারেই পুরুষেরা নারীদের উপর অন্যায় সুযোগ নিয়েছে ইসলামের কথা বলে। একদিন দু’দিন নয়, দীর্ঘদিন ধরেই এমন চলছে। নারীরা অসহায় হয়ে দেখতে পেয়েছে তাদের অবমাননা, দুঃখ ও দুর্দশা লাঘবে একদিকে ইসলামের সাহায্য পাচ্ছেনা এবং অন্যদিকে অনেক অসহনীয় জিনিষই তাদের মেনে নিতে হচ্ছে ইসলামের নামে। তাদের সাহায্যের জন্য বরং ইসলাম বিরোধীদেরই এগিয়ে আসতে দেখছে।

ইসলামের খিদমাত করতে হলে নারীদের ব্যপারে এই দুটি জলজ্যান্ত তিক্ত সত্য আলিম সমাজকে স্বীকার করে নিতে হবে এবং এক্ষেত্রে তাদের হক ও ইনসাফের পক্ষে দাড়াতে হবে। আলিম সমাজের জন্য এখন জরুরি হয়ে পড়েছে অতীতে নারীদের সমস্যা ও দুঃখকষ্ট যেভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে তা পুষিয়ে দেবার। ইসলাম নারীদের যা দিয়েছে তা যাতে তারা নির্বিঘ্নে ও মর্যাদার সাথে বুঝে পেতে পারে সেজন্য উদ্যোগ নেবার।

নারী সমাজকে কাছে পেতে হলে তাদের অন্তরকে স্পর্শ করতে হবে। এটা সম্ভব হবে যদি নারীরা আলিম সমাজকে তাদের সমব্যথী হিসেবে দেখতে পায় ও ইসলামের দেওয়া তাদের ন্যায্য প্রাপ্য বুঝে পেতে আলিম সমাজকে সবার আগে এগিয়ে আসতে দেখতে পায়। আলিম সমাজের উচিৎ হবে পুরুষ সমাজ নারীদের উপর এতোকাল যে প্রতারনা ও বেইনসাফি করছে সে জন্য পুরুষদের তিরস্কার করা ও তাদের আল্লাহতা’আলার ভয় দেখানো।

ছয়, ওয়াজ ও নসিহত-এর মাধ্যমে দুটি জিনিষ সাধারন মানুষের অন্তরে গেথে দিতে হবে। প্রথমত, মিথ্যার সাথে একজন মুসলিমের কোণ সম্পর্ক থাকতে পারেনা। ইমান এবং মিথ্যা একসাথে চলতে পারেনা। ইমানের দাবী হচ্ছে মিথ্যার তার সাথে সম্পর্ক রাখা চলবে না। যেখানেই মিথ্যা দেখা যাবে সেখান থেকেই সরে আসতে হবে। যার মধ্যেই মিথ্যা পাওয়া যাবে তাকেই ছাড়তে হবে। দ্বিতীয়ত, সাধারন মুসলিমদের ভাল করে বোঝাতে হবে যে কোণ মুসলিম অন্যায় কাজের সাথী হতে পারে না। যেখানেই অন্যায় কাজ দেখা যাবে সেখান থেকেই একজন মুসলিমকে সরে আসতে হবে। যারই মধ্যে অন্যায় কাজ দেখা যাবে তাকেই ছাড়তে হবে। মিথ্যা ও অন্যায়ের ব্যপারে আপন, পর, লাভ, লোকসান বা দলের স্বার্থ এসব কোণ বিবেচনারই বিষয় নয় কোণ মুসলিমের জন্য। একজন মুসলিমের উপর ইসলামের এই দুটি মৌলিক দাবি হেফাজতকে খুব গুরুত্বের সাথে তুলে ধরতে হবে।

এদেশের মুসলিম জনগণের অন্তরে যদি মিথ্যা ও অন্যায় কাজের প্রতি ঘৃণা জন্মানো যায় এবং তাদের মিথ্যা থেকে দূরে সরিয়ে আনা ও অন্যায় কাজের সাথী হওয়া থেকে বিরত করা যায় তবে ইসলামের দুশমনদের কোমর ভেঙ্গে যেতে বাধ্য। হিসাবটার মধ্যে কোণই জটিলতা নেই। মিথ্যার ও অন্যায় কাজের সাথী না হলে তার জন্য হেফাজতে ইসলাম ছাড়া আর কোণ জায়গা থাকবে?

সাত, আরো একটি জিনিষ হেফাজতে ইসলামকে বিশেষভাবে ভাবতে হবে। কওমি মাদরাসা শিক্ষার মধ্যে ঈমান ও আমলের চর্চার সাথে সাথে সমাজের ও রাষ্ট্রের নেতৃত্ব গ্রহন করার উপযুক্ত গুন ও বৈশিষ্ট যাতে সৃষ্টি হতে পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। দ্বীনদার আলিমদের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে মুসলিম সমাজে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পুরন না করতে পারলে মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্র সবসময়ই বিপন্ন হয়ে থাকতে বাধ্য। দ্বীনদার আলিমদের সার্বিক নেতৃত্ব ছাড়া মুসলিমদের জীবনে যা কিছু মুল্যবান তা সংরক্ষণ করা যাবেনা এবং কোণ অর্জনকেই ধরে রাখা যাবেনা। আমাদের সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা এখনেই। এই দুর্বলতা দূর করার যথার্থ উদ্যোগ নেওয়া হেফাজতে ইসলামের জন্য একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে আজ।

হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন। এর কারন তারা রাজনৈতিক দলের মতো নিজেরা রাষ্ট্র ক্ষমতা পেতে আগ্রহী নন। তার অর্থ এ নয় যে রাজনীতিতে তারা জড়াতে চায়না বলে রাষ্ট্র কি করে না করে তা নিয়ে তাদের কোণ চিন্তা থাকবেনা। এমন তো হতে পারেনা যে রাষ্ট্র যা ইচ্ছা তাই করবে, মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে, মানুষের জন্য ইসলামের উপর চলা কঠিন বা অসম্ভব করে তুলবে, ইসলামকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে এবং ইসলামের ঠিক উল্টো জিনিষকে মাথায় তুলে নেবে আর হেফাজত তা চুপ করে বসে বসে দেখবে। ঈমানের দাবি সেটা নয়। ইমানের দাবি এসবের বিরোধিতা করা এবং ইসলামের জন্য এমন প্রতিকুল অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। ঈমানের আরো দাবি এদেশে মুসলিম জনগণের যাতে ইসলামের উপর চলা সহজ হয় এবং ইসলাম থেকে বিচ্যুত হওয়ার পথ রুদ্ধ হয় সে জন্যও চেষ্টা করা। ঈমানের এসব দাবি হেফাজতে ইসলাম উপেক্ষা করতে পারেনা। কোণ ঈমানদারই পারেনা। একজন মুসলিমের জন্য ইসলামের উপর চলা কঠিন বা অসম্ভব করে ফেলবে রাষ্ট্র এটা কোণ ঈমানদার মেনে নিতে পারে না। আর একারনেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা কি হবে বা রাষ্ট্র কোনদিকে মানুষকে নিয়ে যাবে সে ব্যপারে হেফাজতে ইসলাম উদাসীন থাকতে পারেনা। তারা কথা বলে ঈমানের তাগিদে এবং ইসলামের ও এদেশের সকল মুসলিমের পক্ষ হয়ে। তাদের ১৩ দফা দাবির মুলে রয়েছে নিজেদের ও অন্য সব মুসলিমদের ঈমান বাঁচানোরই তাগিদ।

হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রে ও সমাজে ইসলামের যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভুমিকা প্রতিষ্ঠিত করারই আন্দোলন। শতকরা নব্বুই ভাগ মুসলিমদের দেশে এটা একটা একেবারেই ন্যায্য আকাংখা। মুসলিম জনগণের অন্তর থেকে এ আকাংখা কোনদিনই মুছে ফেলা যাবেনা। অতএব হেফাজতে ইসলামের এ আন্দোলন কখনো কোণ অবস্থাতেই শেষ হতে পারেনা। দ্বীনদার আলিম যারা আজ এ সংগ্রামের সামনের কাতারে আছেন তারা যখন থাকবেন না তখন যারা দ্বীনদার আলিম থাকবেন তারা মুসলিম সমাজের অভিভাবক ও কাণ্ডারি হিসেবে সাধারন মুসলিম জনগণকে সাথে নিয়ে অবশ্যই এগিয়ে আসবেন। যাদেরই অন্তরে ইমানের আলো জ্বলবে, যারাই আল্লাহতা’আলাকে তাদের ‘রব’, মুহাম্মাদ(সঃ)-কে তাদের নবী ও রসূল এবং ইসলামকে ‘দ্বীন’ হিসেবে পেয়ে খুশি তাদের পক্ষে কোনদিন ঈমানের দাবি উপেক্ষা করার প্রশ্নই উঠেনা।

( লেখক, এ, কে, এম, মহীউদ্দীন

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক,)

বিষয়: বিবিধ

১৫৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File