মুনাফেকের মুখে ইসলামের বাণী।

লিখেছেন লিখেছেন জুনায়েদ ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৪৯:০৬ দুপুর

পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা ১৮ হাজার মাথলুকাত সৃষ্টি করছেন, তার মধ্যে সর্বোত্তম মাখলুক হলো ইনছান তখা মানবজাতী।আর এ মানবজাতিকে সত্যের পথ দেখানোর জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাছুল প্রেরন করেছেন।হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত নবী রাছুলগনই মানুষ কে সরল সঠিক পখ দেখিয়েছেন।আর এ নবী ও রাছুলগনের ধারবাহিকতা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রেরনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেছে, অর্থাত আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) হলেন সর্বশেষ নবী ও রাছুল, যার পরে আর কোন নবী ও রাছুল আসিবেনা।তার পর মানবজাতির পখ পদর্শক হিসাবে সাহাবায়েকেরাম এ দায়িত্ব পালন করছেন,তার পর তাবেয়িন, তার পর তবেতাবেয়িন, তার পর ওলামায়ে কেরামের এ দায়িত্ব পালন করতেছেন, এবং কেয়ামত পর্যন্ত পালন করবেন।ওলামায়ে কেরাম সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন,انما يخشى الله من عباده) العلماء ) নিশ্চয় তার বান্দাসমুহের মধ্যে থেকে আলেমগনই আল্লাহ তাআলা কে ভয় করে।হাদিছ শরিফে ও আলেম সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে " (ان العلماء ورثة الانبياء الخ ) নিশ্চয় ওলামায়ে কেরাম নবীগনের ওয়ারিশ,

যার ধারবাহিকতায় ওলামায়ে কেরাম এ দায়িত্য পালন করতে গিয়ে পৃথিবীর ভিভিন্ন স্হানে অনেক নির্জাতনের শিকার হয়েছেন, এখনো হচ্ছেন।তবে কোথাও বিধর্মিদের হাতে হয়েছেন, আবার কোথাও নাম ধারি মুসলমান শাসকগোষ্ঠির হাতে নির্যাতিত হয়েছেন। বাংলাদেশের দিকে যদি তাকায় তাহলে দেখতে পায়, ৯০% মুসলমানদের দেশ, বাংলাদেশে ও ওলামায়ে কেরাম নির্যাতিত হয়েছেন, এখনো হচ্ছেন।তবে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন আওয়ামিলীগ সরকারের আমলে।প্রসঙ্গ,গত ০৫ ফেব্রুয়ারী থেকে যুদ্দঅপরাধির বিচারের নামে শুরু হওয়া গনজাগরন মন্ঞ এর কিছু নাস্তিক মুরতাদ ব্লগার মহা নবীকে নিয়ে ব্লগে আপত্তিকর লিখালিখি করলে, ৬ এপ্রিল ওলামায়ে কেরাম এর অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম লংমার্চের মাধ্যমে তাদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবী দেয় সরকার কে।এ ১৩ দফা দাবী সবগুলো হলো ইসলামিক দাবী, যা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দাবী। কিন্তু সরকার তাদের দাবীর প্রতি তোয়াক্কা না করে, নিজেদের সত্যিকারের মুসলমান পরিচয় না দিয়ে, বরং বাম রাম নাস্তিক মুরতাদদের পক্ষ নিয়ে ওলামায়ে কেরাম ও মুসলমানের ঈমানি দাবী কে নিয়ে ভিভিন্ন ষড়যন্র শুরু করে দিয়েছে।সরকারের এক মন্ত্রী বলে হেফাজতে ইসলাম এর ১৩ দফা দাবী মধ্যযোগিয়, আরেক মন্ত্রী বলে তারা নারির স্বাধিনতায় বিশ্বাসি নয়, আবার কেউ বলে হেফাজতে ইসলাম দেশকে তালেবানি রাষ্ট বানাতে চায়।কিন্ত যখন তাদের এসব সড়যন্ত্র কাজে আসতেছেনা তখন আওয়ামিলীগের সন্ত্রাসি মন্ত্রী বলতেছে, হেফাজতে ইসলাম কে দমনে সর্বাত্তক শক্তি প্রয়োগ করা হবে, অপর দিকে নাছিম বলে ১৪ দল দিয়ে প্রতিহত করা হবে।আমি আওয়ামিলিগের প্রতি প্রশ্ন করতে চাই আপনারা কাদের প্রতিহত করতে চাইছেন, নবীর ওয়ারিশদেরকে? কি অপরাধ তাদের? তারা কি খমতা চাইতেছে? না, তাহলে তারা কি চায়? তারা চাই এদেশে কিছু নাস্তিক মুরতাদ ব্লগার যারা মহা নবীকে নিয়ে ব্লগে আপত্তিকর লিখালিখি করছে, তাদের বিচার, ও কোরআন সুন্নাহ বিরোধি আইন প্রত্যাহার।সুতরং যারা এদের প্রিতহত করতে চাই, মূলত তারা ইসলামকে প্রতিহত করেত চাই,আর যারা ইসলামকে প্রতিহত করতে চায় তারা কি আসলে মুসলমান? নাকি মুসলমান নামে মুনাফিক? নিশ্চয় মুনাফিক।তাদের মুনাফেকি আরো পরিষ্কার হয়ে গেল, যখন তাদের প্রধানমন্ত্রি বলে দেশ চলেব মদিনা সনদ অনুযায়ী।তারা যে মুনাফেক তা পিবত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৪ নম্বর আয়াত দ্বারায় প্রমানিত হয়,আল্লাহ তায়ালা মুনাফেকের পরিচয় দিয়ে বলেন (আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাত করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো (মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্র।) সুরা বাকারার আয়াত ১৪

তদ্রুপ আওয়ামিলিগ সরকার ও যখন আলেম ও সরলমনা মুসলমানদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে আমাদের সরকার ইসলামের প্রতি অত্যান্ত আন্তরিক,এবং আমাদের দেশ চলবে নবীজীর দেখানো পথে,এবং মদিনা সনদ অনুযায়ি।আর অপর দিকে যখন তারা নাস্তিক মুরতাদ, বাম রাম ইসলাম বিদ্বেশিদের সাথে মিলিত হয়, তখর তারা বলে,বাংলাদেশ হলো ধর্ম নিরপক্ষ দেশ,আর হেফাজতে ইসলামের ইসলামিক দাবীগুলো সম্পর্কে বলে এগুলো মধ্যযোগিয়,তা এ দেশে বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবেনা।তাদের এ চরিত্র মুনাফেকের বহিপ্রকাশ।আর মুনাফেকের শাস্তি জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।

পাঠকের সুবিদার্থে মদিনা সনদ তুলে দেওয়া হলো।

আসুন দেখা যাক কি আছে মদিনা সনদে-

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর মদিনা নগরীতে হিজরত করেন এবং মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন। তখন সেখানে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিল গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ। কলহে লিপ্ত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি স্থাপন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৪৭ বা ৫৭ ধারার একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান ‘মদিনা সনদ’ নামে পরিচিত।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, আল্লাহর উপর ঈমান ও মহানবী (সা.) এর রিসালাতের প্রতি আস্থা সংবলিত সনদের প্রথম ১০ ধারায় বলা হয়, মুহাজির (দেশত্যাগী বা যারা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিল), বনু আউফ, বনু সাইদা, বনু হারিস, বনু জুশাম, বনু নাজ্জার, বনু আমর, বনু নবিত ও বনু আউস পূর্বহারে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত নিয়মনীতি এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পণের মাধ্যমে বন্দিদের মুক্ত করবে। এর ১১ থেকে ২০ ধারায় মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক-সংক্রান্ত আইন বিধৃত হয়। ২১ থেকে ২৬ ধারায় হত্যাকারীর শাস্তি, কোনো মুসলমান কোনো অন্যায়কারীকে আশ্রয় দিলে এর শাস্তি, কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে এর মীমাংসা পদ্ধতি, ধর্মীয় স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ক আইন সন্নিবেশিত হয়। ২৭ থেকে ৩৬ ধারায় সন্নিবেশিত হয় বিভিন্ন গোত্রের স্বরূপ সম্পর্কিত বিধান। পরবর্তী ধারাগুলোয় যুদ্ধনীতি, নাগরিকদের ক্ষতির ক্ষতিপূরণ, নিজ নিজ ব্যয় নির্বাহ, এ সনদে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধে লিপ্ত হলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা, বন্ধুর দুষ্কর্ম, যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ, নাগরিকের অধিকার, আশ্রয়দানকারী ও আশ্রিতের সম্পর্ক, নারীর আশ্রয়, সনদে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কা দেখা দিলে করণীয়, কুরাইশদের ব্যাপারে ব্যবস্থা, মদিনার ওপর অতর্কিত আক্রমণ হলে করণীয় ইত্যাদি সন্নিবেশিত হয়।

বিশ্বের ইতিহাসে এটিই প্রথম লিখিত চুক্তি ও সংবিধান। মদিনা সনদের মূল বিষয়বস্তু ছিল :

১) সনদপত্রে স্বাক্ষরকারী সম্প্র্রদায়গুলো ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।

২) হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান থাকবেন।

৩) কোনো সম্প্রদায় গোপনে কুরাইশদের সঙ্গে কোনো প্রকার সন্ধি করতে পারবে না কিংবা মদিনা বা মদিনাবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে কুরাইশদের কোনোরূপ সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারবে না।

৪) মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্মীয় কাজে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

৫) মদিনার ওপর যেকোনো বহিরাক্রমণকে রাষ্ট্রের জন্য বিপদ বলে গণ্য করতে হবে। এবং সেই আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য সব সম্প্রদায়কে একজোট হয়ে অগ্রসর হতে হবে।

৬) নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।

৭) অসহায় ও দুর্বলকে সর্বাবস্থায় সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।

৮) সব ধরনের রক্তক্ষয়, হত্যা ও বলা০কার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং মদিনাকে পবিত্র নগরী বলে ঘোষণা করা হবে।

৯) কোনো লোক ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিচার করা হবে। তজ্জন্য অপরাধীর সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না।

১০) মুসলমান, ইহুদি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পরস্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে।

১১) রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তির অধিকার থাকবে রাষ্ট্রপ্রধানের এবং তিনি হবেন সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বোচ্চ বিচারক।

১২) মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুমতি ছাড়া মদিনাবাসী কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।

১৩) মুসলমানদের কেউ যদি অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নিজ সন্তান বা আত্মীয় হলেও এ ব্যাপারে তাকে ক্ষমা করা যাবে না। (ইবনে ইসহাক, ইবনে হিশাম ও ইবনে কাছির থেকে সংক্ষেপিত)

পাঠকের নিকট আবেদন, প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সাড়ে ৪ বছেরের মাথায় এসে মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ পরিচালনার কথা বলার উদ্যেশ্য কি সত্যি মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা? নাকি মুসলমানদের ধোকা দেওয়া? মন্তোব্য দিতে ভুল করেবন না।

বিষয়: বিবিধ

২০৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File