‘ব্লাসফেমি চায় না হেফাজত’

লিখেছেন লিখেছেন জুনায়েদ ১১ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:০৫:০৬ সকাল

হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির মধ্যে কোথাও ব্লাসফেমি আইনের কথা উল্লেখ নেই। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে দাবি করেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোথায় পেলেন এই দাবি, কারা তার কাছে এই দাবি জানিয়েছে আমরা জানি না। তিনি বলেন, নাস্তিক মুরতাদদের শাস্তি দেয়ার জন্য ব্লাসফেমি আইনের প্রয়োজন নেই। শরীয়তের বিধান মতেই মহান আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া যাবে। তবে সেক্ষেত্রে আইনটি কার্যকর করার জন্য জাতীয় সংসদে আইন পাসের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে

ইসলাম। মুফতি ফয়জুল্লাহ গতকাল মানবজমিন-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। ব্লাসফেমি আইন নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের একাধিক বাণীতে নাস্তিক মুরতাদদের ন্যায্য শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের কথা আছে। এ শাস্তি কার্যক্রম করার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র কিংবা শাসন ব্যবস্থার দরকার নেই। শরিয়তের যেসব বিধান মতে মুসলিম সমাজে বিয়ে হয়, তালাক হয় সেসব প্রচলিত ধারায় এই আইন বাস্তবায়ন করা যায়। তবে প্রয়োজন শুধু সরকারের সদিচ্ছা। তিনি বলেন, মরহুম প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের অবমাননাকারীদের শাস্তি হবে অথচ আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের কটূক্তিকারীরা নিরাপদ থাকবে এটা হতে পারে না। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এজন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে কেন? সরকার স্বপ্রণোদিতভাবে এ আইন বাস্তবায়ন করে ঈমানী দায়িত্ব পালন করতে পারে।

দেশের চলমান সঙ্কটকালে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির চার নম্বরে আছে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করা। এ নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বলা হচ্ছে, এর মাধ্যমে নারীর স্বাধীনতা উন্নতি অগ্রগতির পথ রুদ্ধ কারার অপপ্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিরোধী পক্ষের এই বক্তব্যকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় খণ্ডন করেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহ। তিনি বলেন, অবাধ মেলামেশা বলতে লিভ টুগেদার বা নারী-পুরুষের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ককে বোঝানো হয়েছে। যার ভূরি ভূরি নজির শাহবাগের কথিত জাগরণ মঞ্চে দেখা গেছে। সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েরা দিনরাত যেভাবে অবস্থান করেছে, যেসব অশালীন অশ্লীল কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তা শরিয়ত এবং মুসলিম সমাজ ব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়। যে কোন নারীর জন্য অবমাননাকর অমর্যাদাকর এ ধরনের বেহায়াপনা বেলেল্লাপনা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি আমরা। কিন্তু বিরোধী পক্ষ এটাকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করছে। তারা বলছে এর মাধ্যমে আমরা নারীকে গৃহে বন্দি করার প্রস্তাব করছি। নারীকে পরাধীন কর্মহীন করার চেষ্টা করছি। মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান-মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত একথা বলেছে ইসলাম। আমরা হাটে ঘাটে মার্কেটে রাস্তায় চলার পথে কর্মক্ষেত্রে পার্কে নারীর পবিত্রতা শালীনতা সংরক্ষণের কথা বলছি। আমরা ইভটিজিং, ধর্ষণের সেঞ্চুরি বন্ধের কথা বলছি। তিনি বলেন, নারী কাজ করবে, লেখাপড়া করবে তার ইজ্জত আব্রু ও স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রেখে। গড্ডলিকা প্রবাহে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে নয়। অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে এক শ্রেণীর লোক দেশে অবৈধ সন্তানে ভরে দিতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাশ্চাত্যের দেশে যেমনটি করা হয় আমাদের সমাজে তা কখনও সম্ভব নয়। তা হলে ওইসব দেশের মতো আমাদের দেশেও সন্তানরা আসল পিতৃপরিচয় থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি বলেন, নারী-পুরুষের দৃষ্টিকটু অবাধ মেলামেশা বন্ধ করার দাবির অর্থ এই নয় যে, নারীরা শিক্ষার্জন করতে, কর্মক্ষেত্রে যেতে বা ঘর থেকে বের হতে পারবে না। আমাদের উদ্দেশ্য হলো নগ্নতা ও বেহায়াপনা বন্ধ করা। আমরা তো নারীর পক্ষেই বলছি। ইসলাম নারীর নিরাপত্তা এবং শান্তির জন্য হিজাব প্রথা বাধ্যতামূলক করেছে। কাজেই পর্দাসহকারে নারীরা নিরাপদ কর্মক্ষেত্রে বা ঘর থেকে বের হতে তো কোন বাধা নেই। ইসলাম নারীর নিরাপত্তার দিকটা কঠোরভাবে দেখে। কেবল সুযোগ-সন্ধানীরাই এটাকে নারী অবদমন বলে অপপ্রচার চালায়। ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মে তো নারীর ন্যায্য অধিকারই নেই। শাহবাগে যেভাবে নারী-পুরুষের একসঙ্গে রাত্রিযাপন, অবস্থান এবং বেহায়াপনা হয়েছে, তা জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। কাজেই আমাদের কথা পরিষ্কার, হিজাব বা শালীনতার সঙ্গে নারীদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্রে যেতে কোন বাধা নেই। নারী-নীতির কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী ধারাগুলোই আমরা সংশোধনের কথা বলেছি। তাছাড়া দেশে ভাস্কর্যের নামে আবক্ষ মানব বা জীবজন্তুর মূর্তি তৈরী ও ফুল দিয়ে সেসবকে সম্মান প্রদর্শনের রেওয়াজ যে হারে শুরু হয়েছে, তা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কখনও কাম্য হতে পারে না। ইসলামে স্পষ্টভাবে মূর্তি তৈরী ও সম্মান প্রদর্শনকে শিরক ও হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আমরা কখনও প্রাণহীন শিল্পকর্মের বিরোধী নই। তিনি বলেন, মোমবাতি প্রজ্বলন অগ্নিপূজার মতো পশ্চিমা সংস্কৃতি কথিত গণজাগরণ মঞ্চ থেকে এদেশে নতুন করে প্রচলনের জোর চেষ্টা চলছে। কাজেই আমাদের দাবি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো বা বিরোধিতার সুযোগ নেই।

বিষয়: বিবিধ

১০৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File