আওয়ামীলীগের পাতানো খেলা

লিখেছেন লিখেছেন বাশেঁর থেকে কোঞ্চি মোটা ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৭:৪১:২১ সন্ধ্যা

Cheer Give Up





ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন বুধবার ঢাকা নগরীতে উচ্ছ্বাস ছিল না। খোঁপায় হলুদ গাঁদা ফুল আর বাসন্তি রঙের শাড়ি পরে যে তরুণীরা নগরী মাতিয়ে তুলতেন, এবার সে দৃশ্যও তেমন চোখে পড়েনি। বৃহস্পতিবার ভালোবাসা দিবসটিও ছিল অনেকটা বিবর্ণ। দু’দিন ধরে রমনা পার্ক বন্ধ। হাজার হাজার নাগরিকের প্রাত ও বৈকালিক ভ্রমণেও ছেদ পড়েছে। কারণ উদ্ভট উঠের পিঠে চলেছে স্বদেশ। মানুষের মনে অজানা শংকা। তারা কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। কেন এই অস্থিরতা? এজন্য কে দায়ী? অনেকেই মনে করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মতলবী কর্মকাণ্ডের ফলেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা গোটা দেশকেই সন্ত্রস্ত করে ফেলেছে।

আসলেই আওয়ামী লীগ এমন এক রাজনৈতিক দল, সবকিছুই নিজের স্বার্থে তারা করে থাকে। ক্ষমতায় যাওয়া, ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা এবং লুটপাট-দুর্নীতি ও দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদ তাদের হাতিয়ার। মুখে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ালেও ফ্যাসিবাদ দিয়েই তারা সবকিছু বিচার করে। প্রতিষ্ঠা থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ৬৫ বছরের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, দেশের ও জনগণের স্বার্থের চেয়ে দলের স্বার্থকেই তারা বড় করে দেখেছে। ক্ষমতার জন্য কী করেনি আওয়ামী লীগ? স্বৈরাচারের সঙ্গে আঁতাত করেছে। সামরিক শাসন জারিতে ইন্ধন জুগিয়েছে, ক্যুদেতায় মদত দিয়েছে। আন্দোলনের নামে হরতাল-অবরোধ-অসহযোগ, জ্বালাও-পোড়াও করেছে, বোমা মেরে, পিটিয়ে, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ খুন করেছে। আমলা বিদ্রোহ ঘটিয়ে প্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। জনতার মঞ্চসহ নানা মঞ্চ তৈরি করেছে। ক্ষমতার স্বার্থে রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে, আবার মুক্তিযোদ্ধাকে বানিয়েছে রাজাকার। একইভাবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এক টেবিলে বসে একজোট হয়ে আন্দোলন করেছে। আবার নিজের স্বার্থে জামায়াতকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের চতুর্থ জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে দলটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম আওয়ামী লীগের এই চরিত্রই উন্মোচন করেছেন। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। সেখানে থাকতে পারেননি। তিনি শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনা করে দলের কাউন্সিলে বলেন, মন্ত্রিসভায় রাজাকার রেখে রাজাকারদের বিচার করা যায় না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে ’৭১-এর চিহ্নিত রাজাকার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিন, তার বিচার করুন—কেউ সাক্ষ্য না দিলে আদালতে গিয়ে আমি সাক্ষ্য দেব। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ বলে রাজাকার আশিকুর রহমানের বিচার করবেন না, তা হবে না। আওয়ামী লীগ করলে রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাবে এবং আওয়ামী লীগ না করলে মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বানিয়ে ফেলবেন—তা হবে না। তিনি যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে আওয়ামী লীগ পাতানো খেলা খেলছে বলেও উল্লেখ করেন।

১৯৯৬-২০০১ সালে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে আওয়ামী লীগের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মাওলানা নূরুল ইসলাম। তিনি একজন চিহ্নিত রাজকার। রাজাকার নূরু মাওলানা হিসেবেই তার পরিচিতি। সেই নূরু রাজাকারও বুধবার জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চে বক্তৃতা ও নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী করার প্রতিবাদে ওই সময়ও শেখ হাসিনার কড়া সমালোচনা করেছিলেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি নূরু মাওলানার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। মহাজোট সরকারের বর্তমান মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনার আপন বেয়াই কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও একজন রাজাকার হিসেবে পরিচিত। তার বাবা নূরু মিয়া রাজাকার তো ফরিদপুরের একজন নামকরা রাজাকার। অবশ্য কাদের সিদ্দিকী তাদের সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি।

কাউন্সিলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এক চুলও ভুল বলেননি। আওয়ামী লীগ করলে রাজাকারও মুক্তিযোদ্ধা। নিজের স্বার্থে সব সময়ই তারা পাতানো খেলা খেলে থাকে। যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়েও আওয়ামী লীগ পাতানো খেলা খেলেছে। আওয়ামী লীগের কারণেই প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের ওপর যে নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ করেছে; নিঃসন্দেহে তা যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৯০ হাজার সদস্যের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে। যুদ্ধবন্দী হিসেবে তাদের ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ১৯৭২ সালে যাচাই-বাছাই করে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা, ধর্ষণ, লুট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে চিহ্নিত করা হয়। তাদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন করা হয়। কিন্তু শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন তত্কালীন আওয়ামী লীগ সরকার চিহ্নিত এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান ত্রিদেশীয় চুক্তির আওতায় তাদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠায়। বিচার না করে তাদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়ায় সেদিন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠেছিল। কিন্তু মুজিব সরকার তা আমলে নেয়নি। এরপর দালাল আইন করে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের কারা সহযোগিতা করেছে তাদের একটি তালিকা করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান সরকার দেশের তত্কালীন পরিস্থিতি বিবেচনা করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কথা বলে দালাল আইনে অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা করে দেন। দালালদের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা ঘোষণার আগে ১৯৭৩ সালে সংসদ নির্বাচনের সময়ও পাকিস্তানপন্থীদের ভোট টানার জন্য গ্রেফতারকৃত অনেক দালালকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। এ সময় দৈনিক গণকণ্ঠের একটি শিরোনাম ছিল—‘ভোটের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন কীর্তি : বিনা বিচারে বহু দালালের মুক্তি’। এতে বলা হয়, ‘দালাল আর যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার হম্বিতম্বির ফাঁক দিয়ে সুড়সুড় করে বেরিয়ে পড়েছে অনেক দালাল। নামগুলো মশহুর। সাবেক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর দবির সিদ্দিকী, রেডিও পাকিস্তানের তত্কালীন আঞ্চলিক অধিকর্তা জিল্লুর রহমান, বিচারপতি একেএম নূরুল ইসলাম, সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান আতিকুজ্জামান খান, ডব্লিউ রিজভী, রশিদুল হাসান প্রমুখ।’

১৯৮২ সালে বন্দুকের নলের মুখে প্রেসিডেন্ট সাত্তারের কাছ থেকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তত্কালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ। তার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু চতুর এরশাদ নির্বাচন খেলা খেলে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা চালান। ১৯৮৬ সালে এরশাদ একটি পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করে। এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন যে, যারা নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান। কিন্তু দেখা গেল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেখ হানিসা নিজেই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সহযোগী হয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। তখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী। নির্বাচনে জিততে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর তত্কালীন আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের দোয়া নিতে অক্টোবরে তার বাসায় গিয়েছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। এই সংগঠনের উদ্যোগে গঠিত হয় গণআদালত। এই গণআদালত থেকে কৌশলে দূরে থেকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে আওয়ামী লীগ। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কনসেপ্ট জামায়াতে ইসলামীই প্রথম তুলে ধরে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা লুফে নেয় আওয়ামী লীগ। জামায়াতে ইসলামী ও এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐক্য গড়ে ওঠে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে ১৯৯৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সংসদে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও এনডিপির বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় ২৬ এপ্রিল ’৯৪ থেকে হরতাল, অবরোধ, মশাল মিছিল, পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করতে থাকে। ১৯৯৪ সালের ২৭ জুন আওয়ামী লীগ, জাপা, জামায়াতে ইসলামী ও এনডিপিসহ পাঁচটি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিন্ন রূপরেখা ঘোষণা করে। সংসদ ভবনে বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সম্মেলন কক্ষে যৌথ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে এক টেবিলে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর তত্কালীন সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এনডিপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গণতন্ত্রী পার্টির সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তখন জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন অধ্যাপক গোলাম আযম। এরপর ২৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও এনডিপির ১৪৭ জন এমপি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। তখন বর্তমান মহাজোটের শরিক রাশেদ খান মেনন এ আঁতাতের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। মেনন বলেছিলেন, ‘জামায়াত চায় মধ্যযুগীয় ব্লাসফেমি আইন। জাতীয় পার্টি চায় এরশাদের মুক্তি। আর আওয়ামী লীগ চায় যে কোনোভাবে ক্ষমতায় যেতে।’ অর্থাত্ ক্ষমতায় যেতে জামায়াতে ইসলামীকে মুক্তিযোদ্ধাদের আসনে বসাতে সেদিন আওয়ামী লীগের কোনো সমস্যা হয়নি।

বর্তমানে আওয়ামী লীগ নতুন খেলায় নেমেছে। তাদের এখন জামায়াতে ইসলামীকে মোটেই পছন্দ নয়। কারণ জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে ১৮ দলীয় ঐক্যজোটে রয়েছে। এই ঐক্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য সুখকর নয়। একথা স্মরণে রেখে আওয়ামী লীগ তাদেরই ব্রেন চাইল্ড তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সংবিধান থেকে আগেই উড়িয়ে দিয়েছে। তাতেও ভরসা পাচ্ছে না। জামায়াতে ইসলামীকে শায়েস্তা করে কিছু করা যায় কিনা, তারই পরীক্ষা চলছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের পাইকারি হারে বন্দী করা হয়েছে। জুলুম-নির্যাতন চলছে নির্বিচারে। জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার এক সময়ের মিত্র সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও বন্দী করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তারও বিচার চলছে।

সংসদে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী শেখ হাসিনাকে পরিচয় দিতেন তার বোন বলে। এই বোনের জন্য বড় বড় রুই, কাতলা ও পাঙ্গাশ মাছ পাঠানোর গল্পও তিনি বলেছেন। কিন্তু ক্ষমতার অংকে এখন ভাইকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ ভাইয়ের আর দরকার নেই। কারণ শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতার অংকটাই সবচেয়ে বড়।

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার কয়েক দিনের মধ্যেই জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। এরশাদের সামরিক শাসন জারির পর আওয়ামী লীগের মুখপত্র বাংলার বাণী স্বাগত জানিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিল। শেখ হাসিনা বিবিসিকে সাক্ষাত্কার দিয়ে বলেছিলেন— ‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি’। অর্থাত্ সামরিক শাসন জারিতে আমি অখুশি নই। ১৯৯৬ সালে জেনারেল নাসিমের ব্যর্থ ক্যু’তেও সায় ছিল আওয়ামী লীগের। সেদিন জেনারেল নাসিমের অন্যতম সহযোগী ক্যাপ্টেন তাজ এখন মহাজোট সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী।

ক্ষমতার জন্য ২০০৬ সালে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার উন্মত্ত আন্দোলন কীভাবে গড়ে তুলেছিল আওয়ামী লীগ, সেটা দেশের মানুষের ভালো করেই জানা । আওয়ামী লীগের অরাজকতার কারণেই ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি সরকার ক্ষমতায় আসে। সেদিন মইন-ফখরুদ্দীনের জরুরি সরকারকে শেখ হাসিনা তাদের আন্দোলনের ফসল বলে ঘোষণা করেছিলেন। পরে তাদের বৈধতা দিয়ে আঁতাত গড়ে তুলে ক্ষমতার মসনদও পাকাপাকি করে ফেলেন। সেই ক্ষমতা যাতে আর হাতছাড়া না হয়, এখন সেটাই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অগ্রাধিকার। প্রয়োজনে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকবেন। এজন্য যা যা করা দরকার, সবই করার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত চার বছরে দেশ ধ্বংসে পাহাড়সম অপকর্ম করলেও সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই আওয়ামী লীগের। শেখ হাসিনা জানেন, স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন হলে সে নির্বাচনে তার কোনো আশা-ভরসা নেই। কারণ জনগণ লাগামহীন দুর্নীতির হিসাব চাইবে। গুম-গুপ্তহত্যার হিসাব চাইবে। পদ্মা সেতু কেলেংকারি, শেয়ারবাজার লুট, সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেংকারি, ডেসটিনির জালিয়াতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে যারা লাখ লাখ মানুষকে সর্বস্বান্ত করেছে, তাদের বিচার চাইবে। স্বাভাবিক ভোটে কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই ভেবে আওয়ামী লীগ এখন নানা খেলায় মেতে উঠেছে। একদিকে চলছে একতরফা নির্বাচন করার প্রস্তুতি, অন্যদিকে চার বছরের অপকর্ম দৃষ্টি থেকে আড়াল করার জন্য নিত্যনতুন প্রচেষ্টা। শাহবাগে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এ কারণেই। এভাবেই পাতানো খেলা আর নানা কৌশল করে, দেশকে জিম্মি করে, জনগণকে জিম্মি করে, টেররাইজ করে তারা ক্ষমতায় থেকে যেতে চায়।

বিষয়: রাজনীতি

১৩২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File