মন্তব্য কলাম ঃ প্রহসনে ভরপুর যুদ্ধোপরাধ ট্রাইব্যুনালঃ সরকারের আরেকটি নতুন ব্যর্থতা প্রমানিত- আবদুল্লাহ জিয়া

লিখেছেন লিখেছেন যুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ জিয়া ০১ মার্চ, ২০১৩, ০২:৫০:১৬ দুপুর

সরকার যুদ্ধোপরাধীদের বিচারের নামে নাস্তিকদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে উষ্কে দিচ্ছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে আল্লাহ ও তার রাসুল(সাঃ) কে মান্যকারী দেশের ১৬ কোটি মানুষ কি মেনে নিবেন তাদের মহানবী(সাঃ)কে মোহাম্মক (নাইযুবিল্লাহ) বলা নাস্তিকদের? ঠিক মেনে নিবেন কি এই নাস্তিকদের সহায়তাকারী সরকার ও সরকারের ১৪ গোষ্টিকে? যদি মেনে নেন তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আছে শুধুই এক হুতাশেভরা দীর্ঘস্বাস! মনে এটুকু ভেবে নেব যে, এই ১৬ কোটি মুসলিমগণ চাননা তাদের বিশ্বাস ও ভালোবাসার সত্ত্বা আল্লাহ তায়ালা এবং তারই সৃষ্ট মহামানব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বান্দা ও উম্মত হয়ে সে উম্মদের সম্মান রাখতে। আরো আফসোস করব এই ভেবে যে, এদেশের মানুষ তাদের নিজের কোন আরাধ্য ও প্রার্থনার দুর্বল জায়গায় মাত্র কিছু নাস্তিক আঘাত করবে অথচ এদেশের মানুষের কোন ক্ষতি ও কমতি হবে না। বড় আশ্চর্যের বিষয়ের মধ্যে এটিও একটি ঘটনা।

একটি প্রশ্ন করতে চাই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে, মুক্তিযুদ্ধের পরের বছর ১৯৭২ সালে আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান আপনাদের আজকের কথিত রাজাকার আবদুল কাদের মোল্লাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা নিয়োগ করেছিলেন। আপনার পিতা যাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মান করে ভালোবেসে চাকুরী দিয়েছিলেন তার এ কাজ টি কি আপনি সর্মথন করেন? আপনার উত্তর যদি হা হয় তাহলে আপনি বাবার বাধ্য কন্যা এবং বাবাকে সম্মানদাত্রী ও মর্যাদাদানকারী ভালো মেয়ে। এবং এতে আপনার বাবার সম্মান আরো একধাপ বাড়লো। আর আপনি জাতীর কাছে পিতাকে সম্মানকারী একজন মহান মানবী এবং দেশের যোগ্য প্রধানমন্ত্রী। আমরা আপনাকে হাজার বছর ধরে আমাদের মহান নেত্রী হিসেবেই দেখতে চাই।

আর আপনি যদি আপনার বাবার প্রিয় সিলেকশনকে পরাজিত রাজনীতিবিদের ভোট প্রত্যাখ্যান করার ন্যায় পুরো ভোল ও বোল পাল্টে বলবেন যে, আমার বাবা ঠিক কাজ করেন নি? আমার বাবা ভবিষ্যৎ ভেবে কাজ করেননি। আপনি স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে যাকে রাজাকার বানাবেন আপনার পিতা কেন তাকে ৪২ বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর ন্যায় গুরুত্বপূর্ন জায়গায় নিয়োগ দিলেন? আবার আপনি এও বলতে পারেন, না আমার বাবা ঠিক করেন নি। আমার বাবা দেশের মহান মানুষ হয়েও দেশ স্বাধীনের পর জানতেন না যে আবদুল কাদের মোল্লা স্বাধীনতার ৪০ বছর পর রাজাকার হবে এবং আমি আমার সরকারিত্বকে বরাবরের জন্য পাকাপোক্ত করার জন্য যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক হবার যোগ্যতা না থাকার প্রশ্নবিদ্ধ কারণটিকে মুলৎপাটন করতে তাকে রাজাকার বানিয়ে ফাঁসিতে ঝোলাবো। আপনি কি উত্তর দিবেন? আমি জানি এর উত্তর আপনি দিতে পারবেন না এবং আপনার কাছে নেই।

আপনি রাজনীতিতে ধরা খেয়ে গেছেন। আপনার পিতার নিকটস্থ ভালো লোকগুলোকে রাজাকার বানাতে গিয়ে আপনার বানানো ট্রাইব্যুনালের বিচারে আপনি তাকে রাজাকার প্রমান করতে পারেননি বিধায় তার উপর ৩৪০ জনকে হত্যার অভিযোগ আনিয়েও ফাঁসি দেবার ন্যায় কাজটি করতে পারেন নি। আবদুল কাদের মোল্লা যে সম্পূর্ণ নির্দোষ সেটি আপনাদের সৃষ্টিকৃত অভিযোগের ধরণ দেখেই বোঝা যায়। আপনি এবং আপনার সরকার যে এতো বোকা তা বলার অপেক্ষা না। আবদুল কাদের মোল্লা ১ জন লোককে হত্যা করেছে এমন যুক্তিপূর্ণ তথ্য বানালেই তো তাকে ফাঁসির দন্ড দিতে পারতেন। আর তাতেই আপনাদের সরকারের সফলতা গত চার বছরে তেমন না দেখা গেলেও শেষ বছরে তা ভালোভাবে প্রমানিত হতো। আপনি হয়ত খেয়াল করেছেন যে পুরো জাতি এখন বলছে ১ জন মানুষ কে খুন করলে এবং তা প্রমানিত হলে ফাঁসি হয় সেখানে ৩৪৪ জনকে খুন করলেও তাকে কেন ফাঁসি দেয়া হলোনা? জনতা তখন এমনিতেই দুটি বিষয় ভাবতে শুরু করেছে আর তা হচ্ছে, ১. আপনার সরকার জামাতের সাথে আঁতাত করেছে অথবা ২. আবদুল কাদের মোল্লা যুদ্ধ অপরাধী ছিলেন না এবং তিনি কাউকে হত্যা করেন নি ও কেউ তাকে কাউকে হত্যা করতে দেখেনি। তার প্রতি আপনারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। সত্য কথাটি হচ্ছে ২য় বিষয়টি। জামায়াতে ইসলামীর সহ সেক্রেটারি জেনারেল জনাব আবদুল কাদের মোল্লা ৭১ সালে সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধপোরাধি ছিলেন না।

আপনার বোধগম্যতা বাড়ানোর জন্য একটি বিষয় তুলে ধরছি, আর তা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে একজন পাকিস্থানী সৈন্যও হয়ত ৩৪০ জনকে হত্যা করতে পারেনি, সেখানে কিনা ১ গুলিতে ১ শত্রুর ট্রেনিং না থাকা ১০ গুলিতে ১ শত্রু মারা সার্মথ্যবান লোক ৩৪০ চল্লিশ জনকে হত্যা করল(১০ গুলিতে ১ শত্রু বলেছি এজন্য যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাগণ স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ছিলেন। তাদের ট্রেনিং ছিল ১জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈন্যের মানের তুলনায় ১০ঃ১ সুত্রের। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।) আর সাক্ষিগণ নানী-দাদীর কাছে গল্প শুনে সাক্ষি দিল আর আপনার স্কাইপি কেলেংকারীযুক্ত ট্রাইব্যুনাল ঠাকুমারঝুলির গল্পশুনে যাবৎজীবন রায় দিয়ে দিল। তা কি সঠিক রায় হলো?? লোকে এবার বুঝতে পেরেছে বলেই বোকা সরকারকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দেবার জন্যেই শাহবাগে হাজির হয়েছে।

বাহ! বাহ! রে শত্রুতার মহান নিদর্শন। কি অপরুপ মগের মুল্লুক হয়েছে আমাদের সোনার দেশটা? এটাই সত্য যে, আপনার যোগ্য পিতা এই যোগ্যলোককে চাকুরি দিয়েছিলেন আর আজ আপনি তাকে এতো অপমান করছেন। তিনি না আপনার পিতা তথা সমগ্র জাতীর পিতার ¯েœহধন্য ছিলেন? আপনার বাবার বন্ধু বান্ধবকে সম্মান করলে আপনি বাবাকে সম্মানদাতা মানুষ হিসেবে জাতীর কাছে সমাদরে গৃহিত হতেন। দেশ একজন ভালো বাবার ভালো মেয়ে হিসেবে আপনাকে আরো অধিক অধিক ভালোবাসতে চাইত।

আরেকটি বিষয়ে আপনি ও আপনার সরকার মহা ধরা খেয়েছে আর সেটি হচ্ছে, ইসলামের দোয়া মোনাজাত নাস্তিক্যবাদীদের ইসলামবিরোধী সকল কর্মকান্ড কি দেশের সকল মুসলিম সর্মথন করে? এদেশ তো ৮০ ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠের হিন্দুদের ভারত নয়? এদেশটা ৯০ ভাগ মুসলিমের বাংলাদেশ এবং বিশ্বের হিসেবমতে ২য় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এদেশের মানুষ ইসলামের মূল আহকাম পালন করার ব্যপারে সার্বিকভাবে কঠোর না হলেও মৌলিক বিশ্বাসে আঘাত করলে আর সহ্য করে না। আপনি ধর্মনিরপেক্ষতার ফলাও করতে গিয়ে দেশের মানুষকে ধর্মহীন করার যে কর্মসূচি দেন তা এ দেশের সরলপ্রাণ মানুষ বোঝে। আপনার ও আপনার সরকারপন্থি শাহবাগের জনগনের আন্দোলনকারীগনের মধ্যে হটাৎ উদয় হলো রাজিব নামক নাস্তিক ও মুরতাদ ব্লগার।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সিলেকশনের ২ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ ইসলামের মুল আকিদা ও বিশ্বাস নিয়ে কিভাবে যে কটুক্তি করেছে তা যদি আপনি পড়তেন তাহলে আপনার মাথা নষ্ট হয়ে যেত যে, আপনি কি মহা জুলুমময় বিচারকার্য চালাচ্ছেন। আপনার এ বিচারকাজ চালানোর ও নাটকিয়তায় ভরা শাহবাগের আন্দোলনের কারণে ইসলাম এবং ইসলামপন্থী মানুষ আজ বড় বিপাকে পড়ে গেছে। শিশুর বর্নমালা শিক্ষাও বর্তমানে কলুষিত হয়ে গেছে। একটি ঘটনার উদৃত্ত্বি দিলে বোঝা যাবে। গত ২২ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার বাংলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত একুশে বই মেলায় স্বস্ত্রীক ঘুরতে গেলাম। নানা ষ্টল ঘুরে বিউটি বুক হাউস নামক ষ্টলে এ বিভিন্ন লেখকের বই দেখছি। এ সময় লম্বা সুন্দর গঠনের একজন ব্যক্তি তার ৩-৪ বছরের এক শিশুকে নিয়ে বিভিন্ন বই সম্পর্কে ধারনা দিচ্ছিলেন। এসময় শিশুটিকে তার বাবা হজরত আবদুল কাদের জিলানী এর জীবন ও কর্ম বইটি দেখিয়ে বলছে, বাবা এইটা কি, এইটা কি, এইটা ক তে কাদের।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি ও আপনার সরকার বর্নমালাতেও নাস্তিকতার আগ্রাসন অব্যহত রেখেছেন। অচিরেই এই বর্নমালার নেতিবাচকের প্রয়োগ বন্ধ করুন, ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের বিচারের আওতায় আনুন, আবদুল কাদের মোল্লাসহ অন্যান্য ইসলামের অগ্রপথের সৈনিক বন্দীদের মুক্তি দিন, আইনের শাসন ফিরিয়ে হিংসা ও সংঘাতমুক্ত সুস্থ ও সুন্দর রাজনীতি উপহার দিন। অন্যথায় আপনার হিংসাত্বক কর্ম জিদের ফল যে কোন পরিনতি তৈরী করবে তা দেখতে হবে বড় আফসোসের ভিতে দাড়িয়ে।

লেখক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল লেবার পার্টি,

বিষয়: রাজনীতি

১২৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File