মন্তব্য প্রতিবেদন ঃ ডেসটিনি ট্রাজেডিঃ সরকারী ও বিরোধী উভয় জোট ১ কোটি ভোট হারাতে যাচ্ছে!! -আবদুল্লাহ জিয়া
লিখেছেন লিখেছেন যুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ জিয়া ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:২৪:৩৬ বিকাল
মন্তব্য প্রতিবেদন ঃ
ডেসটিনি ট্রাজেডিঃ সরকারী ও বিরোধী উভয় জোট
১ কোটি ভোট হারাতে যাচ্ছে!! -আবদুল্লাহ জিয়া
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি আসন্ন ১০ম সংসদ নির্বাচন সরকার এবং ১৮ দলের উভয়ের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা হতে পারে। সরকারের ৪ বছরের শাসনামলে নানা ব্যর্থতাকে উত্তরণ করতে পারত একটি আগ্রাসনকে সহজভাবে বিবেচ্য করে বিচার করলে। তা হচ্ছে, ডেসটিনিকে নাজেহাল করা। ডেসটিনির যে সকল দূর্নীতির কথা কিছু গণমাধ্যমে প্রচার হবার মাধ্যমে জানা যায় তা একতরফা। ডেসটিনির গ্রাহকগণ এ সকল সুবিধাভোগী প্রচারিক গণমাধ্যমের কথাগুলো মানেনা এবং তারা এ সকল প্রচারের পক্ষে কোন একটি প্রতিক্রিয়াও জানায়নি। এবং একজন গ্রাহকও বলেনি যে সে ডেসটিনি দ্বারা প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একতরফাভাবে কয়েকটি মিডিয়া নানাবিধ অভিযোগ তৈরী করেছে যা পরে সরকার আমলে নিয়েছে। সরকার ১% গ্রাহকের ক্ষতিগ্রস্থ হবার অভিযোগ পেলেও ডেসটিনি গ্রুপের প্রতি আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যৌক্তিক হত।
ডেসটিনির ১৩ বছরের সুচনা থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের আমলের হিসেবে ২০০০ সাল হতে ২০০১ এর জুলাই/আগষ্ট পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর আওয়ামীলীগ তথা বর্তমান মহাজোট সরকারের র্পূবের শাসনামল। এ সময়ে ডেসটিনি রফিকুল আমীন এবং মোহাম্মাদ হোসাইনের নেতৃত্বে শিশুকালের ন্যায় হাটিহাটি পা পা করে পদচারনা শুরু করে। ঠিক এ সময়গুলিতে ডেসটিনির তেমন কিছুই হয়নি। এক্ষেত্রে মহাজোট সরকার ডেসটিনির জন্মদাতা এবং প্রায় দেড় বছর ধরে দুধ পান করিয়েছে। এবং ডেসটিনি মহাজোট সরকারের কোলে শিশুকাল অতিবাহিত করেছে।
২০০১ এর অক্টোবর হতে ২০০৬ এর ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ডেসটিনির বালক এবং কিশোর অবস্থা। ৪ দলীয় জোটের শাসনামলের এ ৫ বছর তাদের কর্মসূচীগুলো কার্যকরী করে নিয়েছে। ডেসটিনির সাকসেস ট্রেনিংয়ে শিক্ষিত/অর্ধশিক্ষিত, ছাত্র, শিক্ষক, বেকার, অর্ধবেকার, চাকুরীজীবিসহ সকল শ্রেণীপেশার লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জীবনের মূল স্বপ্ন হিসেবে ডেসটিনিকে গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে ডেসটিনির শিশুকালের কিছু সময় গ্রহণ করে পুরো ৫ বছরে লালন পালন করে বালক ও কিশোর অবস্থাকে সবল ও সূদৃঢ় করেছে যা ডেসটিনি শক্তি যুবক বয়সে উপনিত হবার অধ্যায় সূচীত হয়েছে।
২০০৬ এর ২৭ অক্টোবর হতে ২০০৯ এর ৪ জানুয়ারী পর্যন্ত তত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছর ২ মাসের শাসনামলে সকল কর্মসূচী এবং মিশনের ৬০ ভাগ সফলতা। দেশব্যাপি আলোড়িত ও সফল আত্মকর্মসংস্থানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ডেসটিনি। তত্বাবধায়ক সরকারের তত্বাবধায়নের শক্তিপ্রাপ্ত হয়ে প্রাথমিক যুব বয়সটি অতিক্রম করেছে।
২০০৯ এর ৫ জানুয়ারী হতে ২০১২ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত মহাজোট সরকারের সাড়ে তিন বছর। এসময়ে ডেসটিনি অনেকদূর পৌছে গেছে। পূর্ন যৌবন প্রাপ্ত হয়েছে এ সরকারের সাড়ে ৩ বছরে। ৫০ লক্ষ গ্রাহক, সরকারের অনুমোদিত ৩৪ টি বৈধ প্রতিষ্ঠান। একজন গ্রাহকের পরিবারের সদস্যসহ এ প্রতিষ্ঠান হতে সুবিধাভোগী লোকের সংখ্যা গড়ে ৩ জন ধরা হলে ১ কোটি ৫০ লক্ষ। দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ভাগ। দেশীয় বিচারে বৃহৎ বিষয়। বড় ধরনের শক্তি। হিসেব করলে ডেসটিনি মহাজোট সরকারের দেড় বছরের শিশুকাল এবং পরবর্তি সাড়ে তিন বছরের যুবকাল। সর্বমোট ৫ বছর। মাঝের অনির্বাচিত অগণতান্ত্রিক সরকারের ২ বছর বাদ দিলে ডেসটিনিকে লালন পালন করেছে মহাজোট এবং ১৮ দলীয় জোট সমান ৫ বছর করে ১০ বছর। অতএব ডেসটিনির সুফলতা এবং সুবিধা দুই সরকার প্রায় সমানভাবে ভোগ করেছে। রাজস্বসহ নেতাকর্মীগণ আন্ডারগ্রাউন্ড নানারকম সম্মানীও পেয়েছে।
৫০ লক্ষ গ্রাহকের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লোকের গড় হিসেব যত বাড়বে তত ভোটার হারাবে দুই বৃহৎ জোট। আমার সাথে এ পর্যন্ত ডেসটিনির বহু গ্রাহকের সংগে পৃথক পৃথকভাবে কথা হয়েছে তার শতকরা হিসেবে ৯৯ ভাগের বেশি গ্রাহক আগামী নির্বাচনে নিজের, পরিবার পরিজনের, এবং আত্মীয়বর্গের কাউকে এই দুই দলের কোন প্রার্থীকে ভোট দিবে না বলে দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে।
তাদের বক্তব্য, তারাতো সরকারী ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ন্যায় টেন্ডারবাজীতে জড়িত নয়। তারা কাজ করে খেতে চায়। অথচ এই দুই প্রধান শক্তি তাদেরকে বেকার করে তাদের মিছিলের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে চায়। সরকার এবং বিরোধীদল চায় ডেসটিনির গ্রাহকগণ দুই দলে অংশগ্রহণ করে একটুকরো রুটির বিনিময়ে পিকেটিং, গাড়ী পোড়ানো ও দাঙ্গা হাঙ্গামায় শরিক করতে। আমরা না খেয়ে মরলেও তাদের সাংঘর্ষিক কোন কাজের সাথে সম্পৃক্ত করব না।
শেয়ার বাজারের ৩০ লক্ষাধিক লোক ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সফল নেতৃত্বের অভাব এবং নিয়ন্ত্রন না থাকার জন্য সে আন্দোলন বেশি দিন এগোয়নি। কিন্তু ডেসটিনি ঠিক তার উল্টো। রফিকুল আমীনের নেতৃত্বের অতি দৃঢ়তা এবং সবলতা ডেসটিনির গ্রাহক একটি চেইন বা সুতোই বাধা। সে জন্য বড় স্পর্শকাতর এবং মানসম্পন্ন। আমরা ধরে নেই রফিকুল আমিন তার এ ৫০ লক্ষ গ্রাহককে চকলেট খাইয়ে হলেও রেখেছে। অথচ এই ব্যক্তির একটি নির্দেশনা দেশের পরো পরিবেশ এলোমেলো করে দিতে পারে সেটি সরকারের চিন্তা করা দরকার ছিল। রফিকুল আমীন তার গ্রেফতারের প্রতিবাদে কোন কর্মসূচী পালন করতে দেননি। তিনি চাইলে রাজপথসহ পুরো দেশে অনেক কিছুই হতে পারত। আজ হচ্ছে না কিন্তু ভবিষ্যতে যে হবে না তা কে বলবে? ডেসটিনি সরকার তথা দেশের আপামর সাধারণ মানুষের পাশে দাড়াবার নানা কর্ম ও মর্মসূচী হাতে নিয়েছে। যা ধর্মসূচীতে রুপান্তরিত হয়েছে যে, বান্দা যতক্ষণ তার অপর ভায়ের কল্যাণে নিয়োজিত থাকে আল্লাহ তায়ালাও ততক্ষণ তার কল্যাণে নিয়োজিত থাকেন -আল হাদিস। ডেসটিনির গ্রাহকগণ সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিপনন করে নিজ জীবনের স্বপ্ন সাধ পূরণ করার জন্য কাজ করেছে। অথচ একই পর্যায়ে সরকার তার ৫০ লক্ষ ও বিরোধীদল তার ৫০ লক্ষ নেতাকর্মীদের টেন্ডার ও চাঁদাবাজী খাইয়ে রাখেন। যার বাস্তবায়নে এ সকল নেতাকর্মীদের নিকট বিশ্বজিৎদের মত র্নিদলীয় সাধারণ লোক লাশ হয়।
ডেসটিনির মার্কেটিয়ার আমাকে নানাভাবে তাদের পণ্য কিনতে ও ডেসটিনিতে কাজ করার জন্য বলেছে আমিতো পণ্যও ক্রয়করিনি এবং গ্রাহকও হই নি। একজন মার্কেটিয়ার মার্কেটিং করবে যার পছন্দ হবে সে গ্রহণ/ বর্জন করবে তাতে তো কারও কিছু যায় আসেনা।
এবার আসি কো অপারেটিভ সোসাইটি সম্পর্কিত কিছু কথা। এ সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠানটি সরকার অনুমতি দেয়। এতে গ্রাহকগণ শেয়ার ক্রয় করে লভ্যাংশের আসায়। ২০০৫ সালে ৪ দলীয় জোটের আমলে অনুমতিপ্রাপ্ত হয়। এবং এ প্রতিষ্টানও ৪ দলীয় জোটের সরকারের দেড় বছর সময়কাল পায়। তাদের মন্ত্রী এমপিগণ ডেসটিনির নানা অনুষ্ঠানে ফিতা কেটে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেছেন।
আমার নিকট একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার আক্ষেপ করে জানালেন, যে সরকারের নানা অনুমতির কাগজপত্র দেখে, শুশীল সমাজের নানা ব্যক্তি, মন্ত্রী, এমপিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিতি দেখে ও বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হয়ে, লাখো মানুষের কাজ করা দেখে, আমি আমার অবসরকালীন ২৬ লক্ষ টাকা ডেসটিনি মাল্টিপারপাস এ বিনিয়োগ করেছি, অথচ সরকার এ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবার সকল কাজ করছে, সাধারণ গ্রাহককে তার প্রাপ্য অধিকারের বিষয়ে একটি কথাও বলছে না। ছেলেমেয়ে নিয়ে নানাভাবে কষ্টে দিনাতিপাত করছি। প্রিয় পাঠক এ তো জানলেন ১জন গ্রহকের কথা। এভাবে প্রায় ১০ লক্ষ গ্রাহক প্রতিজনে গড়ে ১লক্ষ টাকা দিয়ে শেয়ার ক্রয় করেছে যা ডেসটিনির হিসেবমতে ১৪০০ কোটি টাকা তারা ডেসটিনি মাল্টিপারপাস থেকে শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে পেয়েছে।
আজ ২০১৩ সালে সেই সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ সকল এমপি মন্ত্রীগণ ডেসটিনিকে সরকারের দূর্নীতি বলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফলাওভাবে প্রচার করে। আফসোস এই যে সময়ের সাথে সাথে বিরোধীদলও ভুলতে বসেছে যে এই বর্তমান ১৮ দলীয় জোট ৫ বছর যাবৎ ডেসটিনিকে দুধমায়ের ভূমিকায় দুধপান করিয়ে পেলে পিঠে বৃদ্ধি করিয়েছিল। অথচ আজ সেই দুধমা নিজের দুধের শক্তিকে অস্বীকার করছে।
সরকার ক্ষমতায় থেকে স্বভাবতই ক্ষমতার খেই হারিয়ে ফেলবে এবং খেই হারিয়ে ভূল করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিরোধী ১৮ দলের ১৮ দল প্রধানের মাথায় একটুও ঠাই পাচ্ছে না যে সরকার ১ কোটি ভোটারদের ক্ষতির কথা চিন্তা করছে না আমরা করি। আমাদের বলা উচিৎ রফিকুল আমীন মানিলন্ডারিং এর অপরাধ করলে তার বিচার হোক কিন্তু অর্ধ কোটি মানুষের রুটি রুজির উৎস এ অর্ধশত প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সাধারণ জনতার অধিকারের প্রশ্নে কোন ছাড় দেয়া হবে না। পাঠকগণ বলুন ১৮ দল মানবতার রাজনীতি না করলেও ভোটের রাজনীতি তো করে? তাদের কি ডেসটিনির ১ কোটি জন মানুষের জন্য কি এ সকল যৌক্তিক কথা বলা উচিৎ? কেননা এরাও তাদের পূর্বে ভোট দিয়েছিল এবং ভবিষ্যতে ভোট দিবে। ডেসটিনির সবাই মহাজোটকে ভোট দেয়নি আর সবাই ভবিষ্যতে ভোট দিবেও না।
সরকারের নির্বাচনী ইসতেহারের অন্যতম ভোট গ্রহণের দাবী ছিল ঘরে ঘরে চাকুরি। এক্ষেত্রে সরকারের পূর্ণ ব্যর্থতার সাথে আরো ব্যর্থতা যুক্ত হলো এবং খবরের শিরোনাম হলো “এক সাথে ৫০ লক্ষ লোককে বেকার করে দিল ঘরে ঘরে চাকুরীর প্রস্তাবনা দেয়া সরকার”। আর এই শিরোনামের সাথে ১৮ দল একমত না হবার দরুণ ডেসটিনি’র গ্রাহকদের নিকট নতুন শিরোনাম হয়ে দাড়ালো “৫০ লক্ষ লোককে বেকার করার কার্যকরী সরকারী কাজে সমর্থন দিল বিরোধী ১৮ দল”।
যে ডেসটিনি দীর্ঘ ১২ বছর সবার কাছে ভালো ছিল, সবার মনে আলো দিল, ক্রিকেট দলের স্পন্সর পর্যন্ত হয়ে দেশ সেবায় শরীক হলো সেই সার্বজনীন প্রিয় ডেসটিনি রাতারাতি সরকার এবং বিরোধী দলের ক্রিড়নকে পরিনত হলো তা বড়ই প্রশ্নবিদ্ধ ব্যপার সেটি যে কোন চিন্তাশীল একটু চিন্তা করলেই বুঝতে সক্ষম হবে। সৈয়দ আবদুল হাদীর গাওয়া একটি গানের কলি, “সময় থাকতে মনা হুশিয়ার”। ইতিপূর্বে সরকার এবং বিরোধীদলের কর্মসূচী যাই হোক না কেন বর্তমানে তারা তাদের কর্মসূচীতে ডেসটিনির সাধারণ মানুষদের নিদারুণ দুঃখ কষ্টের কথা বিবেচনায় রেখে দ্রুত বিচার করে একটি সঠিক সুরাহা করবেন যাতে সাধারণ গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে বলে আমরা সচেতন জনগন বিশ্বাস করি। অন্যথায় ভোটের মাঠে দুই দলের নেতৃকর্মীরা ভোট চাইতে গেলে নতুন কোন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হতে পারে বলে ধারনা করা যেতে পারে।
লেখক ঃ সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চেয়ারম্যান-বাংলাদেশ যুক্তিযোদ্ধা দল(পরিবর্তিত ন্যাশনাল লেবার পার্টি),
বিষয়: রাজনীতি
১২১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন