আব্বু, আপনি কি খুব কষ্ট পাচ্ছেন?

লিখেছেন লিখেছেন নাজমী ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:৫৫:৩১ রাত

যারা আব্বুকে চেনেন তারা জানেন আব্বু কতটা আহ্লাদী টাইপের ছিলেন। দিন-রাত, যখন তখন আবদার জুড়ে দিতেন। কখনো খিচুরি-ইলিশ খাওয়াতে হবে, কখনো গান শোনাতে হবে এমনকি কখনো কখনো কোন কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকতে হবে। যতই বাহানা বানাতাম আব্বু কিছুতেই মানতে চাইতোনা। আবদার পূরণে একটু এদিক সেদিক হলেই অভিমানের রাজ্যে বাদশাহ বনে যেতেন যেন।

আব্বুর এই আবদার পূরণের দায়িত্ব শুধু আমাদের ওপরই ছিলনা। আমাদের চাইতে বরং আব্বুর গড়া সাহিত্য সংস্কৃতি গোষ্ঠীর ছেলেদেরই তার সমস্ত দাবী দাওয়া মেটানোর কষ্ট সহ্য করতে হত। হঠাৎ মাঝরাতে কোন এক শিল্পীকে কাঁচা ঘুম থেকে তুলে আব্বুর জরুরী কল রিসিভ করতে হত তারপর যথাযত আব্বুর আবদার, “আচ্ছা সেদিন যে গানটা সুর করেছিলে তার সঞ্চারীটা একটু গেয়ে শোনাবে?” অথবা কাক-ডাকা ভোরে আব্বু উদাস গলায় ফোন করে শিল্পীগোষ্ঠীর পরিচালককেবলবে, “তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে যে খুব, এখুনি কি একটু আসতে পারবে?”

আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করতাম যে এই ছেলেরা আব্বুর কোন আবদারই মাটিতে পড়তে দিতোনা। তারা আব্বুকে অসম্ভব ভালোবাসতো। আমি কিছুতেই হিসেব মেলাতে পারতামনা কেন তাদের এত ভালবাসা। আব্বু না ছিলেন একজন অনেক বড় মাপের রাজনৈতিক নেতা, না ছিলেন বিরাট টাকা ওয়ালা- চাকরী পাইয়ে দেয়া কোন রুই কাতলা গোছের কেউ, না ছিলেন কোন নামকরা পত্রিকার বা টিভি চ্যানেলের মালিক। আব্বুতো ছিলেন একজন সাধারণ কবি, একজন অতি সাধারণ মানুষ।

তবে হ্যাঁ, আব্বু মানবতার জন্য কবিতা লিখতেন। গান গাইতেন মানুষের মুক্তির জন্য। রসুল (সাঃ) এর দেখানো সেই শ্রেষ্ঠ পথে হেঁটে যাবার আনন্দ স্পষ্ট ফুটে উঠতো তার প্রতিটি লেখায়। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনকে কাছে পাবার আকাঙ্ক্ষায় মুখরিত থাকতো তার প্রতিটি শব্দ। এখন বুঝি, এ কারণেই এই ভীষণ ইসলাম প্রিয় ছেলেগুলো আব্বুর প্রতি তীব্র মমতাবোধে আচ্ছন্ন হয়ে থাকতো। তাই আব্বুর সৃষ্টিগুলোকে তারা পেরেছে আসমুদ্র ভালবাসায় জড়িয়ে নিতে। জীবন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরতে একটুও ভয় পায়না এই সূর্য সন্তানরা। বিরুদ্ধ শক্তিকে মোকাবেলা করতে এরা গেয়ে ওঠে, জীবনের মানে হল তাঁর কাটার বেড়া ভেঙে ফেলা/ জীবনের মানে হল প্রতিটি ফারাক্কা প্রচন্ড ধাক্কা/ শত্রুর বুকে কড়া বুমেরাং/ আন্দোলন সে তো জীবনের অন্য নাম/ জীবন মানে সংগ্রাম...।

এই ছেলেগুলো শুধু তাদেরকেই ভালবাসে, তাদের আবদারেরই শুধু আমল দেয় যারা এ দেশের মাটিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। এরা শুধু তাদেরকেই আপন ভাবে যারা রসুলুল্লাহ (সাঃ) কে নিজেদের জীবনের থেকেও বেশি আপন করে নিতে পেরেছেন। রসুলই (সাঃ) এদের একমাত্র নেতা, পরম ধ্যানের, পরম কামনার। এদের অশ্রু সজল স্বীকারোক্তি, “মহানবী বলে তাকে কেউ বা ডাকে/ আমি ডাকি প্রিয়তম/ সে আমার ধ্যান/ ভালবাসা প্রেম/ মধুময় মনোহর স্বপ্নসম...।” দেশের জন্য, দেশের মানুষের কল্যানের জন্য এরা দিনরাত উদ্দাম উৎসাহে ছুটে চলছে। কারণ, দেশকে ভালবাসাতো ঈমানেরই অংশ।

আফসোস! এই অতি বিনয়ী, মিষ্টভাষী আর মেধাবী ছেলেগুলোকে এখন ধরে ধরে জেলে ঢোকানো হচ্ছে। মিথ্যা, নোংরা আর বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে এদের ধংসের খেলায় মেতেছে ইসলাম বিদ্বেষীরা। আমাদের সবচাইতে নরম জায়গা, আমাদের সীমাহীন শ্রদ্ধার মানুষ, মুহাম্মাদ (সাঃ) কে নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছে যারা তাদেরকেই উল্টো আদর দিয়ে মাথায় তোলা হচ্ছে। পুলিশের ছায়াতলে নির্ভয়ে এই সব ঘৃণিত পাপীরদল সরলমনা তরুণ- তরুণীদের চেতনার গল্পে মত্ত রেখে ইসলামকে মুছে ফেলার নকশা আঁকছে। আর মামলায় মামলায় জর্জরিত হচ্ছে ইসলাম প্রিয় ছেলেগুলো।

আমি জানিনা আব্বু এই অন্যায় আর প্রচন্ড জুলুমের খবর পাচ্ছে কিনা। পৃথিবীর অপারে কতটুকু খবর যায় ধারণা নেই। ঝর ঝর কাঁদছে বোধহয় খুব। তার আদরের-সন্তানসম ছেলেগুলোর ওপর এই অমানবিক নির্যাতন কিভাবে সহ্য করার মত না। কেন যেন মনে হচ্ছে এই জালেমদের বিচারের ভার আল্লাহ্‌র ওপর ছেড়ে দিয়ে আব্বু অবিরাম গেয়ে চলছেন, ফাগুন কেড়ে নেয়া চৈত্র আষাড় করে দাও/ গাছগাছালির শীতল ছায়ায় জীবন ভরে দাও/ ধর্য ধারণ করার শক্তি দাওগো মেহেরবান/ বুকের ভেতর ব্যাথার নদী বইছে অবিরাম...।

বিষয়: সাহিত্য

১৪৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File