বিএনপি ভাঙতে বিশাল বাজেট নিয়ে গোয়েন্দারা মাঠে
লিখেছেন লিখেছেন আমার দাদা ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৬:৪৩:৪৯ সন্ধ্যা
গত সপ্তাহের শুক্রবার, গভীর রাত্রি। তীব্র শীতের রাত্রিতে ঢাকা শহর ঝিমিয়ে পড়েছে। অধিকাংশ শহরবাসী যার যার নিজের ঘরে ঘুমে অচেতন। ঠিক এমনই এক সময়ে একটি দামী সাদা টয়েটো গাড়ী বিশাল উচু দেওয়াল ঘেরা একটি দুর্গ-সদৃশ বাড়ির সামনে এসে থাকলো। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের প্রধান ফটক থেকে বাড়ির দূরত্ব মাত্র কয়েক গজ।
গাড়ি থেকে নেমে এলেন তিনজন ভিআইপি। এদের দুজন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দু’জন শীর্ষস্থানীয় নেতা। অন্যজন তাদের পথ প্রদর্শক, গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে কাজ করছেন। এক সময় তিনি মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত হক কথা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তাদের সবারই উদ্দেশ্যই এক। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধীদল ভেঙ্গে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ব্যরিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্ট (বিএনএফ)-কে কিভাবে আরো শক্তিশালী করে নির্বাচনের মাঠে নামানো যায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও সে নির্বাচনে যেন একটি জাতীয় নির্বাচনের রূপ পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিএনএফ মাত্র গঠিত হয়েছ্ ে। তবে এর অগ্রযাত্রা এখন পর্যন্ত সন্তোষজনকই বলা যায়। ইতিমধ্যেই বিএনপি সরকারের এক সাবেক ক্যাবিনেট মন্ত্রী জাহানারা বেগম এই দলে যোগ দিয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরেক বিএনপি নেতা মইনুদ্দিন আরিফসহ বিএনপির মধ্যমসারির অনেক নেতাই এখন এই দলে। বিএনপি থেকে যারা এই দলে যোগ দিচ্ছেন বা দিতে চান, বিএনপির বিদ্রোহী নেতা - সবারই এখন প্রধান লক্ষ্য এই বাড়িটি। বাড়িটিতে বাস করছেন খুবই উচ্চ পর্যায়ের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র নেতা জানান, বিএনপিকে ভেঙ্গে একটি শক্তিশালী বিরোধী রাজনৈতিক দল গঠন এবং ঐ দলকে নিয়ে একটি বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য এই পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উচ্চপদস্থ ঐ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। গোয়েন্দা সংস্থার এই কর্মকর্তা এই বাজেট দিয়ে এখন মাঠে নামিয়ে সক্রিয়। এই প্রকল্পের একটিই উদ্দেশ্য, যে কোনো ভাবে হোক আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপিকে ভেঙে দুর্বল করার এই কাজটি এখন বেশ ভালোভাবেই এগুচ্ছে। বেশ কয়েকজন সিনিয়র বিএনপি নেতা ইতিমধ্যেই এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়েছেন। এমনকি বিএনপি সদ্য জেল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়েও এ ব্যাপারে কথা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছেন। তার ঘনিষ্ঠ জনেরা জানান, জেলে থাকাকালীন মীর্জা ফখরুলের দলত্যাগে বাধ্য করার জন্য তার উপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। তাকে বলা হয়েছে দল ভেঙ্গে আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ক্ষেত্র প্রস্তুতের। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্যোগও চলছে। মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন এই প্রকল্পের অন্যতম টার্গেট। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি শুধু একটি সাধারণ কথাই বলেছেন, সরকার চেষ্টা করছে বিএনপিকে ভেঙ্গে দুর্বল করে দিতে।
একইভাবে জামায়াতে ইসলামের নেতাদের টার্গেট করে এগুনো হচ্ছে। এমন অভিযোগও উঠেছে জামায়াতে ইসলামী নেতা যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি তাদেরকে প্রানদন্ডে দন্ডিত না করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। এই ঘুষের অংশ হিসাবেই জামায়াতে ইসলামের অন্যতম প্রধান নেতা কাদেও মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার উদ্দেশ্য জামায়াত যাতে বিএনপির সাথে জোট ভেঙ্গে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয় ।
তবে পর্যবেক্ষকদের মতে সরকার হয়তো ভুল পথে হাঁটছে। এ ধরনের খেলা অতীতেও অনেক হয়েছে। কিন্তু তেমন একটা সফল হয়নি। পরিস্থিতির যদি দিন দিন অবনতিই হয়, তবে বিএনপি ছাড়াও আরো অনেক দলই যে নির্বাচনে অংশ নেবে না সেটাও স্পষ্ট।
এক্ষত্রে প্রধান বিষয় হলো আওয়ামী লীগ বাম ঘেঁষা দলগুলোকে নিয়ে ২০০৮ সালে সরকার গঠন করার পর জাতীয়তাবাদী ও ইসলামিক শক্তিগুলো আগের চেয়ে কাছাকাছি চলে আসে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের আঁতাত বাম দলগুলো সহজভাবে নেবেনা।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও সেক্যুলার ও মধ্যপন্থী ইসলামী দলগুলোর মধ্যকার বিরোধ ছড়িয়ে পড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেই সেটি দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপন্থী ইসলামী দলগুলোর সমর্থনেই এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। এরই প্রতিফলন ঘটেছে সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দূরত্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে।
তবে পরিকল্পিতভাবেই হোক আর স্বাভাবিক ধারায় হোক বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর রাজনৈতিক ধারার মতোই ক্রমান্বয়ে দুটি ধারা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এর একটি হলো সেক্যুলার, অন্যটি মধ্যপন্থী ইসলামী ধারা। এই অবস্থায় জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ধারক বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি উভয়ই বড় ধরনের সংকটের মুখে রয়েছে। বাংলাদেশেও আগামীদিনের রাজনৈতিক যুদ্ধের লাইন ইতিমধ্যেই টানা হয়েছে। পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে বিএনপিকে দুর্বল করে ফেলা ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে কানামাছি খেলা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়তো এগুলো আর হালে পানি পাবে না। কিন্তু তাহলেও পরিস্থিতি যেখানে দাঁড়াচ্ছে সেটা হালো, রাজনীতির এই নাগরদোলায়, বাংলাদেশ সম্ভবত আরেকটি অসাংবিধানিক শাসনের দিকেই এগুনোর পথ তরান্বিত করছে।
-সাপ্তাহিক হলিডে থেকে অনুবাদ
বিষয়: বিবিধ
১১২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন