বাংলা নববর্ষের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও কিছু কথা

লিখেছেন লিখেছেন জাকী এহসান ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:৫৮:৩৫ রাত

ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতেহত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন।এক্ষেত্রে হিজরী ১ তারিখকে বাংলা সনের প্রথম দিন উল্লেখ করা হয়। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় ১৫৫৬ থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।ফসলি সনের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ।পরবর্তীতে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা সনের প্রথম মাস অগ্রহায়ণ এর পরিবর্তে বৈশাখ মাস করেন। সেক্ষেত্রেও হিজরী ১ তারিখকে বৈশাখের পহেলা দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রুপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে।সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত তারিখ-ই-ইলাহী-র মাসের নামগুলি প্রচলিত ছিল পারসি ভাষায়, যথা: ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিযার, আবান, আযুর, দাই, বহম এবং ইসক্নদার মিজ।

বর্তমান সময়ে এক শ্রেণীর প্রচারমাধ্যম বাংলা নববর্ষকে হিন্দুদের সংষ্কৃতি হিসেবে চালিয়ে দিতে চায়।প্রকৃ্ত পক্ষে হিন্দু ক্যালেন্ডারে ১৪ এপ্রিল বৈশাখী/বিষু উৎসব এবং পরদিন অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ পালন করা হয় কিন্তু আমরা পালন করি ১৪ এপ্রিল।তাছারা বাংলা সনের হিসাব বঙ্গাব্দে হলেও ভারতে এখনও শকাব্দের হিসাব চালু আছে। বিভ্রান্তি দূর করার জন্য হিন্দু ধর্মের ক্যালেন্ডারের লিঙ্ক দিলাম- http://www.calendarlabs.com/calendars/religious/hindu-calendar.php

বাংলা নববর্ষের একটি ঐতিহ্যবাহী সংষ্কৃতি থাকলেও বর্তমানে বিজাতীয় সংষ্কৃতির কারনে বৈশাখ তার ঐতিহ্যহারাচ্ছে। হালখাতা পদ্ধতি দেশের দুই এক জায়গায় থাকলেও আধুনীক শহুরে জীবনে বৈশাখী হালখাতা হয় বলে মনে হয়না, হলেও সেটা সংখ্যায় নগন্য।গ্রামীন মেলাও আজ আছে শুধু পাঠ্যপুস্তকে।আসছে পহেলা বৈশাখে দেশব্যপী বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় বর্ষ বরন করা হবে।পরদিন হয়তো কোন কোন পত্রিকায় খবর আসবে দেশেরকোন এক বৈশাখী অনুষ্ঠানে হিন্দি, ইংরেজী গানের কথা।ছেলে মেয়েরা বৈশাখী সাজে বেরুবে কিন্তু দেখাযাবে বিভিন্ন দেব দেবীর প্রতীকি নিয়ে প্রভাত ফেরিতে র্যা লী করতে।একটি বিষয় জানাদরকার প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়, কিন্তু পরবর্তীতে পূজার রীতিতেমন জনপ্রিয় হয় নি।

পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয়, বাংলা নববর্ষ যতটা না আনন্দের বার্তা দেয় তার চেয়ে বেশী বেদনার বার্তা দেয়।বৈশাখের কাল বৈশেখী ঝড়ে গুড়িয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে দরিদ্র পিড়িত লোকদের ঘড় বাড়ি।অনেক সময় ঝড়ের তান্ডবে লোকজনের প্রাণহানিও ঘটে। কোটি কোটি টাকার বৈশাখী অনুষ্ঠানে আনন্দ না করে আমরা যদি সেই সকল অসহায় লোকদের পাশে দাড়াতে পারি তাহলে বৈশাখী ঝড়ের রাতে হয়তো কাউকে খোলা আকাশের নিচে কাটাতে হবে না।হয়তো তাদের বাঁচানো যাবে অনাকাঙ্কিত প্রানহানি থেকে।

বিষয়: বিবিধ

১৬৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File