আমার বন্ধু মজিবর
লিখেছেন লিখেছেন টাংসু ফকীর ২৯ মার্চ, ২০১৩, ০৭:২৫:৪০ সকাল
এক.
মজিবর। আমার বন্ধু, ক্লাশমেট কলেজে এক সাথে পড়েছি, উচ্চ মাধ্যমিক । পরীক্ষা দিয়েছি এক সাথে।আল্লাহর রহমতে পাশ করেছি এক সাথে। ছাত্র হিসেবে খুবই ভাল। থাকত কলেজ পুকুর পাড়ে একটি মেসে। সেই মেসের ছিলনা কোন দরজা।একটি ইটের দেয়াল দিয়ে কোন মতে ঘেরা। তার ছিলনা কোন প্লাষ্টার। দরজাই নাই আবার প্লাষ্টার? ছয় জন একই মেসে থাকত। কলেজের কাহিনী আর একদিন বলব। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর- আমরা একসাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এক সাথে যাব বলে সিদ্ধান্ত হল। মজিবরের বাড়ী ছিল শহর থেকে একটু দূরে গোদাশিমলা গ্রামে। রাতের বেলায় আমার বাসায় এসে থেকে, পরে রাত বার টার চট্টগ্রামগামী ট্রেন চিটাগাং মেইলে চাপব। তখন যাতায়াত ছিল খুবই খারাপ। চট্টগ্রামের সঙগে একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এই চিটাগাং মেইল। যাতে মোটামুটি ২৭ ঘন্টা লাগত। সকাল 12 টায় গাদাগাদি করে চড়লে পরের দিন আল্লাহর রহমতে বিকাল অথবা সন্ধ্যা 7 টায় চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছানো যেত জামালপুর স্টেশনে চড়ে জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে উল্টো যেয়ে সীট নিয়ে আসতাম যাই হোক ঘটনা তা না ঘটনা হলো মজিবর এক সাথে আমরা 9 জন মেলা করলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ফরম তুলতে চট্টগ্রাম পৌঁছে সন্ধ্যায় নাজিরহাটের ট্রেনে চেপে ক্যাম্পাসে আমাদের এক বড় ভাইয়ের কাছে উঠার কথা থাকলেও, ওনাকে না পেয়ে আরেক ভাইয়ের সাথে হলে, পরিচয় হয়ে পরে ওই রাত তার রুমেই থাকি পরের দিন ক্যাম্পাসে যেয়ে ফরম তুলে ভর্তি ফরম তুলে পূরণ করে জমা দিয়ে একই ভাবে ট্রেনে ফিরে আসি পরে যখন ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাব, তখনও একই সাথে সবাই চট্টগ্রাম পৌঁছলাম তবে এইবার মজিবর আর আমাদের সাথে হলে গেল না সে তার এক গাইরাত খালার বাসায় উঠল তার খালার বাসা ছিল স্টেশনের পাশেই তার খালু রেলওয়ের গার্ড তাই বেশিরভাগ সময় থাকত বাসার বাইরে মজিবর সেখানেই উঠল তার ছিল তিন খালাত বোন আর সবার ছোট ছিল এক খালাত ভাই বড় বোনের নাম ঝিনুক,পড়ে ক্লাশ নাইনে, আর মেঝো বোনের নাম মনি পড়ে অষ্টম শ্রেণী আর ছোট বোনের নাম মুক্তা, পড়ত ক্লাশ সেভেনে ফরম তুলার সময় সে অবশ্যই এক বার দরিশন দিয়ে এসেছিল তাই এবার সরাসরি যেয়ে সেই বাসায়
আমরা বাকি 8 জন হলে যেয়ে ফারুক ভাইয়ের কাছে গিয়ে উঠলাম যথারীতি পরের দিন সকালে প্রস্তুতি নিয়ে ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসে গিয়ে সাইন্স ফ্যাকাল্টিতে পরীক্ষা দিলাম কিন্তু মজিবরের সাথে দেখা হল না সবাই এক জন আরেক জনকে জিজ্ঞাসা করল মজিবর কই? কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারল না যাই হোক ক্যাম্পাসের সেই জান্নাতী পরিবেশে সারা দিন মুখরিত থেকে একেবারে রাতে হলে ফিরে কোনমতে রাত শেষ হল বিকাল 3টায় আমাদের ট্রেন সকালে আমরা নিজেদের মাল সামানা গুছিয়ে নিচ্ছি এমন সময় মজিবর এসে জানালা দিয়ে ডাক দিল এই তোদের সীট কোথায় পড়েছে? আমি হকচকিয়ে গেলাম বললাম মজিবর! কোথায় ছিলি কাল? কেন? প্রশ্ন মজিবরের পরীক্ষা দিতে আসলি না কেন? মানে? মানে কি কাল পরীক্ষা দিতে আসিসনি কেন? মজিবরের মাথা চড়ক গাছ পরীক্ষা কি কালকে ছিল? ভাবলাম সে বুঝি দুষ্টুমি করছে না সত্যি সত্যি সে পরীক্ষা দিতে আসেনি কি আর করা বিফল মনোরথে আমাদের সাথে আবার জামালপুর প্রস্থান মাস খানেক পর ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে আমরা সবাই আল্লাহর রহমতে ভর্তির সুযোগ পেলাম সে অনুযায়ী আমরা আবার চট্টগ্রামে গিয়ে নিজ নিজ বিভাগে ভর্তি হলাম মজিবরও কিন্তু আমাদের সাথে চট্টগ্রাম গেল এবং আমার সাথেই হলে উঠল আর আমার সাথেই থাকা শুরু করল বাড়ীতে ওর আব্বাকে বলল যে, সে গণিত বিভাগে ভর্তি হয়েছে এভাবে এক বছর পর আবার সে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সত্যিই গণিত বিভাগে ভর্তি হল আমরা তখন প্রথম বর্ষ পরীক্ষার্থী যেই না ভর্তি হল আবার সে তার খালার বাসায় চলে গেল তার খালাত বোনদের পড়ায়, আর সেই বাসায় থাকে আর ক্লাশ করে সেই বাসায় থেকে যখন তার পরীক্ষার সময় এল এবং পরীক্ষার প্রথম দিন আমি আমার রুমে বসে একটা প্রশ্ন দেখছিলামে দেখি মজিবর জানালার পাশে এসে দাড়িয়ে আছে খুবই চিন্তিত মনে আমি তাকিয়ে ডাক দিতেই ভেতরে এসে বসল আমি বললাম মজিবর তোর আজ পরীক্ষা? মজিবর মাথা নীচু করে বলল প্রস্তুতি ভাল ছিল না রে ড্রপ দিয়ে দিলাম আমি বললাম একি করলি এক পত্র ভাল না হলে আরেক পত্র দিয়ে সেটা কভার করে নিতিস জুতা মোজা সহ সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল
আবার দিন যায়, মাস যায় ক্লাশ হয় টিউটরিয়াল হয় বছর ঘুরে আবার প্রথম বর্ষের পরীক্ষা এল যথারীতি মজিবর পরীক্ষা দিতে গেল পরীক্ষা কমিটির চ্যায়ারম্যান ফজলে হোসেন স্যার প্রশ্ন পত্র এমন কঠিন হয়েছে যে, পরীক্ষার হলেই সব ছাত্র-ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে এক পর্যায়ে খাতা পত্র ছিড়ে ফেলে হলরুম ভাংচুর করে পরীক্ষা ভন্ডুল করে দেয় পরীক্ষা আর কেউ দেয়নি ফজলে হোসেন স্যার ছিলেন খুবই কড়া শিক্ষক ভাংচুরের প্রতিদান হিসেবে চেয়ারম্যান স্যার পুরো ব্যাচটিকে বহিস্কার করে দিলেন ঐ বছরের জন্য কেল্লা ফতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পর পর দুই বছর পরীক্ষায় অনুপস্থিত কিংবা, অনুত্তীর্ণ হলে আপনাপনি ভর্তি বাতিল হয়ে যায় কিন্তু স্যার এই টুকু দয়া করলেন যে যারা পর পর দুইবারের পাপী আছে তাদের বিশেষ বিবেচনায় আরেকবার পরীক্ষা দিতে দিবে মহান আল্লাহর রহমতে মজিবর বেচে গেল চতুর্থবারের মত যখন প্রথম বর্ষের পরীক্ষা সম্পন্ন করে তখন আমরা তৃতীয় বর্ষে চার বছরে সম্পন্ন করা প্রথম বর্ষের ইতিহাসে মজিবর নম্বর পেয়েছিল গণিত বিভাগের বিগত 26 বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রথম পত্রে 82 এবং দ্বিতীয় পত্রে 94 নাসিরাবাদ ট্রেনে বসে বসে মজিবর বলছিল দেখ প্রথম বছর যখন ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসি তখন, সবার বড় বোন ঝিনুকের সাথে লটর পটর, ভর্তি পরীক্ষার তারিখই ভুলে গেলাম দ্বিতীয় বছর ওদের বাসায় থাকি, আর একেক জনকে, একেক স্কুলে দিয়ে আসি, তাতে দ্বিতীয় বোন মুক্তার সাথে কঠিন প্রেম হয়ে যায়, ঝিুনক বাদ, প্রস্তুতি নেয়ারই সময় পাইনি তাই দিলাম ড্রপ দুইজনের সাথে প্রেম করে দুই বছর লোকসান দেখ এইবার মনি’র সাথে চলছে সর্বশেষ প্রেম আর যদি এর জন্য এক বছর লোকসান না দেই তাহলে বে-ইনসাফি হয়ে যাবে না?
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন