জালিম শাসকের পরিণতি

লিখেছেন লিখেছেন টাংসু ফকীর ১৭ মার্চ, ২০১৩, ০৬:৩৮:১২ সকাল

সম্মানীত তৌহিদী জনতা আপনাদের একটি সহীহ হাদীস শুনাব, যেখানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন খোদাদ্রোহী নাস্তিকদের কিভাবে শাস্তি দেন তা বর্ণনা আছে ৤

আবদুর রহমান ইবনে আবী লাইলা (রহ) হযরত সুহাইব আর রুমী (রা.) বরাতে বলেন- নবী করিম (সা.) বলেছেন ঃ তোমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এক জন রাজা ছিল যার দরবারে ছিল এক যাদুকর।যাদুকর বার্ধেক্যে উপনীত হলে সে রাজাকে বলল , আমি বৃদ্ধ হয়েছি, মৃত্যু আমার দারপ্রান্তে। সুতরাং আমাকে একটি (চতুর) বালক দিলে আমি তাকে যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিতাম। সে মতে তাকে একটি বালকে দেয়া হল। বালকটির যাদুকরের নিকট আসা-যাওয়ার পথে বাস করত একজন ঈসায়ী ধর্ম যাজক (পাদ্রী)। বালকটি প্রায়ই তার কাছে বসত এবং তার কথা শুনত। ফলে সে শীঘ্রই পাদ্রীর কথায় প্রভাবান্বিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে (তখন খৃষ্ট ধর্মই ছিল আল্লাহ মনোনীত সত্য ধর্ম)। পাদ্রীর কাছে দীক্ষা গ্রহণকালে সময় ব্যয় হওয়ার ফলে যাদুকরের কাছে পৌঁছতে তার বিলম্ব হত। এ কারণে যাদুকর তাকে প্রহার করত।সে জিজ্ঞাসা করল-কে তাকে আটকে রেখেছিল? বালকটি ঘটনা পাদ্রীকে জানালে, পাদ্রী বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে উপদেশ দিল ঃ যদি যাদুকর তোমাকে মারতে চায় তাহলে বলবে-আমার পরিবার আমাকে আটকে রেখেছিল।আর যদি অভিভাবক তোমাকে মারতে চায়, তাহলে বলবে-যাদুকরে আমাকে আটকে রেখেছিল।

একদিন বালকটি দেখল, এক বিশালকায় হিংস্র জন্তু(সিংহ) লোক চলাচলের পথ আগলে রেখেছে, ফলে মানুষের চলাচল সম্ভব হচ্ছে না।বালকটি মনে মনে ভাবল, আজ একটি পরীক্ষা করার সুযোগ এসেছে। পাদ্রীই আল্লাহর প্রিয়জন না যাদুকর? বর্ণনা কারী বলেন ঃ তখন বালকটি পাথর নিয়ে বললঃ আল্লাহম্মা! যদি এ পাদ্রীই আপনার নিকট অধিক প্রিয়পাত্র হয় এবং যাদুকরের চেয়ে তার কাজ আপনি অধিক পছন্দ করে থাকেন, তাহলে জন্তুটি যেন এই প্রস্তরাঘাতেই মারা যায়( আর যদি যাদুকর আপনার প্রিয় পাত্র হয়ে থাকে, তাহলে যেন জন্তুটি না মরে।) অতঃপর সে পাথরটি নিক্ষেপ করতেই তার আঘাতে জন্তুটি মারা গেল এবং লোক চলাচল সম্ভব হল। তখন বালকটি এ ঘটনা পাদ্রীকে জানালে সে বললঃ ‘‘ হে আমার সন্তান ! তুমি আমা হতে উত্তম। নিঃসন্দেহে তুমি শীঘ্রই কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে।সাবধান! কঠিন মুসীবতে পড়লেও আমর বিষয়টি কাউকে জানাবে না।

পাদ্রীর নিকট শিক্ষা-দীক্ষার ফলে আল্লাহর অনুগ্রহে বালকটি নানা প্রকার কারামতের অধিকারী হল। সে অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান করতে লাগল। সে সময় রাজ-দরবারের এক সভাসদ অন্ধ হয়ে যায়। খবরটি অন্ধের কাছে পৌঁছলে সে বহু মূল্যবান উপঢৌকন সহ বালকের নিকট উপস্থিত হয়ে বলে- আমাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পারলে তোমাকে এসব উপহার দেব। বালকটি বলল ঃ আমি কাউকেও আরোগ্য দান করতে পারিনা। মহা মহিমান্বিত আল্লাহই কেবল সকলকে রোগমুক্তি দান করেন।যদি তুমি তাঁর প্রতি ঈমান আন, তা হলে আমি তাঁর সমীপে দোয়া করলে হয়তো তিনি তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। তখন অন্ধ লোকটি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল। বালকটি আল্লাহর নিকট দোয়া করলে লোকটি তার দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেল।সে যখন রাজ দরবারে তার নির্দিষ্ট আসন গ্রহণ করল, তখন রাজা তাকে জিজ্ঞেস করল ঃ কে তোমাকে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিল? সে বলল আমার রব।রাজা বলল আমিই তো তোমার রব। লোকটি বলল, আমার ও তোমার রব হচ্ছেন আল্লাহ। রাজা বলল আমি ছাড়াও কি তোমার রব আছে? লোকটি পূর্ববৎ উত্তর দিল এবং এ বিশ্বাসের উপর অটল রইল। শুরু হল তার উপর অকথ্য নির্যাতন। এক পর্যায়ে লোকটি ঐ বালকের ঘটনা রাজাকে সবিস্তারে জানাল। তৎক্ষণাৎ বালকটিকে রাজার সমীপে হাযির করা হল। রাজা প্রশ্ন করল “হে বালক কে তোমাকে এমন যাদু শিখিয়েছে যে, যার ফলে তুমি অন্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য দান করে থাক? উত্তরে বালকটি বলল আমি কাউকেও আরোগ্য দান করতে পারিনা।বরং সকলকেই আরোগ্য দান করেন মহামহিমান্বিত আল্লাহ। রাজা বলল আমি কি সেই আল্লাহ নই ? বালকটি বলল না। রাজা বলল আমি ছাড়া কোথায় সেই রব? উত্তরে বালকিটি বলল আল্লাহই হচ্ছেন তোমার আমার রব।তখন তার উপর কঠিন নির্যাতন শুরু হল। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বালকটি ঐ পাদ্রীর খবর রাজাকে জানাল।সংগে সংগে পাদ্রীকে রাজার সামানে হাজির করা হল।রাজা পাদ্রীকে হুকুম দিল ঃ তোমার ধর্ম পরিত্যাগ কর।পাদ্রী তার ধর্ম পরিত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায়।তখন তার মাথায় ঠিক মাঝখান দিয়ে করাত চালিয়ে দ্বিখন্ডিত করা হয়। এরপর অন্ধ লোকটিকেও তার ধর্ম ত্যাগ করতে নির্দেশ দিলে সেও ধর্ম ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকেও করাত দিয়ে দ্বিখন্ডিত করে যমীনে ফেলে রাখে। এরপর বালকটিকেও তার দ্বীন ত্যাগ করতে নির্দেশ দিলে সে অস্বীকৃতি জানায়।

তখন তাকে কতিপয় লোকের হাওলা করে এক পর্বতে পাঠানো হয়। দলপতিকে নির্দেশ দেয়া হয় যখন সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহণ করবে তখন তাকে শেষবারের মত তার দ্বীন ত্যাগের আহবান জানাবে। যদি অস্বীকার করে তাহলে তাকে সেখান থেকে নীচে ফেলে দিবে। বালকটিকে নিয়ে লোকগুলি পর্বতের শৃঙ্গে পৌছলে সে দোয়া করল ঃ আল্লাহুম্মা! আপনি যে কোন পন্থায় এদর ক্ষতি থেকে আমাকে রক্ষা করুন। সঙগে সঙগে পর্বতে প্রচন্ড কম্পন শুরু হল। ফলে সবাই নীচে পড়ে গেল।আর বালকটি নিরাপদে ফিরে এল।রাজা তাকে জিজ্ঞেস করল তোর সহগামীরা তোর বিষয়ে কি করল? বালকটি বলল আল্লাহ পাক আমাকে তাদের ক্ষতি থেকে হেফাযত করেছেন।

এরপর তাকে কতকগুলি লোকের সাথে ছোট জাহাজে উঠিয়ে দিয়ে গভীর সমুদ্রে পাঠান হল। এই নির্দেশ দেয়া হল গভীর সমুদ্রে পৌছে তার ধর্ম ত্যাহ করার নির্দেশ দিবে অমান্য করলে গভীর সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে।সে মতে ব্যবস্থা গ্রহণ কালে বালকটি দোয়া করল আল্লাহুম্মা! আপনি যে ভাবে ইচ্ছা আমাকে এদের ক্ষতি থেকে হেফাযত করুন। তখন সবাই আল্লাহর রহমতে সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হল আর বালকটি নিরাপদে ফিরে এল।রাজ জিজ্ঞেস করল তোর সহযোগীরা তোর বিষয়ে কি ব্যবস্থা নিল? সে বলল আল্লাহ আমাকে তাদের ক্ষতি থেকে আমাকে হেফাযত করেছেন।

অতঃপর সে রাজাকে বলল ঃ আমাকে কতল করার যে পন্থা আমি বাতলিয়ে দেই সেই পন্থা অবলম্বন না করলে আমাকে কতল করা তোমার পক্ষে সম্ভব হবে না।রাজ বলল কি পন্থা? বালকটি বলল একটি উন্মুক্ত ময়দানে সর্বসাধারণকে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দাও।অতঃপর আমাকে একটি খেজুর গাছের কান্ডের সাথে লটকিয়ে দাও। তারপর আমার তূণীর থেকে একটি তীর নিয়ে এই বলে নিক্ষেপ কর বিসমিল্লাহি রাব্বিল গোলাম।এরূপ পন্থা অবলম্বন করলে তবেই আমাকে হত্যা করতে পারবে।

অতঃপর তার নির্দেশ মতে একটি তীর ধনুকে জুড়ে নিক্ষেপকালে বলা হল ‘বিসমিল্লাহি রাব্বিল গোলাম’। তীরটি বালকের কোমরে বিদ্ধ হলে সে তার হাত তীর বিদ্ধ স্থানে চেপে ধরল এবং মৃত্যু বরণ করল। এ দৃশ্য অবলোকন করে সমবেত জনতা সমস্বরে ঘোষণা দিল ঃ আমরা ঈমান ।আনলাম ‘রাব্বুল গোলাম’ এর প্রতি। রাজাকে বলা হল, যে মহা বিপদের ভয় তুমি করতে , আল্লাহ তাই ঘটিয়ে দিলেন।জনসাধারণ এক যোগে ঈমানদার হয়ে গেল।অবস্থাদৃষ্টে রাজা প্রধান রাজপথের পার্শ্বে গর্ত খনন করার হুকুম দিল।পথিপার্শ্বে বড় বড় গর্ত খনন করা হল এবং সেগুলিতে আগুন জ্বালানো হল।তারা অমূল্য ধন ঈমান ত্যাগ করতে অস্বীকার করল এবং স্বেচ্ছায় অগ্নি গহ্বরে ঝাপিয়ে পড়ল। তাদের মধ্য হতে দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ একটি নিজেকে আগুনে নিক্ষেপ করতে ইতস্ততঃ করছিল।দুগ্ধপোষ্য শিশুটি (আল্লাহ প্রদত্ত বাকশক্তি লাভ করতঃ) বলল হে আমার মাতা সবর এখতিয়ার করুন এবং আগুনে ঝাপিয়ে পড়ুন।নিঃসন্দেহে আপনি হকের উপর প্রতিষ্ঠিত। ( আহমদ, মুসলিম, নাসাঈী ও তিরমিযী সামান্য শাব্দিক পার্থক্যসহ অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। খুব সম্ভব রাজার নাম ছিল ইউসুফ জুনওয়াস আর কারামত প্রাপ্ত বালকটির নাম ছিল আবদুল্লাহ ইবনে তামের। ঘটনাটি ঘটেছিল ইয়েমেনে।

মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের বরাতে ইবনে কাসীর লিখেছিলেন দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.)এর শাসনামলে বিশেষ কোন প্রয়োজনে ভূমি খনন কালে ঐ বালকের লাশ সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।

তীরটি যে স্থানে বিদ্ধ হয়েছিল, কোমরের ঠিক সেই স্থানে হাত রাখা অবস্থায় তাকে উপবিষ্ট দেখা যায়। হাতটি সরিয়ে দিলে দেখা যায়, সে ক্ষত স্থান থেকে টাটকা রক্ত ঝরছে। হাতটি পুনরায় রাখলে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়।তার আংটিতে লিখা ছিল ‘আল্লাহু রাব্বি’। খলিফার নির্দেশে তাকে আবার পূর্বের অবস্থায় দাফন করা হয়।

সম্মানীত পাঠক, এখন চিন্তা করুন, আজ ইসলামের শত্রুরা, নাস্তিক আর খোদাদ্রোহীরা ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার দ্বীনকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট।ইসলামের ইতিহাসে যেই, ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্থ করার চেষ্টা করেছে সেই আল্লাহর গজবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফেরাউন, নমরুদ, কারুন, আব্রাহা, আদ জাতি, সামুদ জাতির কাহিনী তার প্রমাণ।

আজ ইসলামপন্থীদেরকে নাস্তিক , মুরতাদেরা যে ভয় করছেন, মহান আল্লাহ তালা তাকে সেই ভয়ের মধ্যেই ফেলবেন৤

সম্মানীত তৌহিদী জনতা এখন চিন্তা করুন ইসলামের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আজ সেই পরিবেশ বাংলাদেশে বিরাজমান। কিন্তু আল্লাহর দ্বীনের দায়ীরাও সমান ভাবে নিজের জীবন আল্লাহ রাহে উৎসর্গের জন্য ব্যাকুল।ঈমানের পরীক্ষায় যেন আমরা সবাই আল্লাহর রহমতে নিজেদেরকে উত্তীর্ণ করতে পারি।

তথ্যসূত্র ঃ তফসীর ফাতহুল মাজীদ।মুহাম্মদ শরফুল ইসলাম।পৃষ্ঠা-143.

বিষয়: বিবিধ

১৮১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File