নো প্রবলেম, ক্যারি অন......
লিখেছেন লিখেছেন টাংসু ফকীর ১৪ মে, ২০১৪, ০৭:৩৮:৪৭ সকাল
শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে ৩১শে ডিসেম্বর, ১৯৯৬ইং তারিখে ১৯৯৭ সালের জানুয়ারীর ১-২ তারিখে আমাদের বিভাগ থেকে গেলাম কক্সবাজার ছোটখাটো একটি পিকনিকে ঠিক জানুয়ারীর তিন তারিখেই হল ছেড়ে পাড়ি দিলাম পিতার হোটেলের দিকে কয়েক দিন পিতার হোটেলে থাকার পর ভাবলাম ঢাকায় গিয়ে কয়েক দিন বন্ধুদের সঙ্গে থাকি তাই রওনা হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান মেহেদী আমার স্কুলের বন্ধু, তাই ওর ওখানেই থাকব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম যেয়ে দেখি দুনিয়ার যত বখাটে আর গাঞ্জারুদের আড্ডা হল মেহেদীর রুমকষ্ট করে থাকি যাকে বলে ডাবলিং, ট্রিপলিং, ফ্লোরিং মাশাল্লাহ ১০জন সব সময়ই থাকে কার খাবার কে খায় আর কার কাপড় কে পড়ে ধুলায় অন্ধকার যাই হোক ঘটনা হল শুধু শুধু ঘুরে ফিরে খেয়ে কি আর দিন যায়?
বললাম বন্ধু একটা টিউশনী দরকার
ওকে হয়ে যাবে এই কথা বলে আর দশ দিন খোঁজ নাই, রাজনীতিবিদদের কথা যে রকম হয় আর কি
কলা ভবন, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান , শাহবাগে সারাদিন টো টো করে ঘুরি আর দালান কোটা দেখি আর বিকেল বেলায় টিএসসিতে যাই , সবাই এক সাথে সন্ধ্যায় দেখি কলা ভবনের সামনে, জোড়ায় জোড়ায় কার্তিক মাসের কুকুরের মত জড়াজড়ি করে বসে হাতের কাজ আর মুখের কাজ করছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের যত সব কথিত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা রিক্সওয়ালা ভাইয়েরা রিক্সা থামিয়ে লাইভ শো দেখছেকি চমৎকার দেখা যাচ্ছে? আমি এ রকম দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত নই কারণ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা এ রকম নয় তারা তাদের সমস্ত কাজ দিনের বেলায় সেরে সূর্য ডুবার আগেই হলে ফিলে যায় ওখানে সূর্যাস্ত আইন বলবৎ আছে আর রাস্তার মোড়ে মোড়ে এরকম জড়াজড়ি করে বসে থাকেনা একটা সুস্থ্য ও সুন্দর পরিবেশ সব সময় বিদ্যমান
যাই হোক ঘটনা হইল, আমার বন্ধু মেহেদী একদিন তিনজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল, আর বলল এরাই তোর প্রথম ছাত্রী, আমার আল্লাহর রহমতে মাথা ভাইঙ্গা আসমানে পড়ল মেহেদীর প্রেমিকা সুগন্ধ্যা আর তার দুই বান্ধবী শেলী ও জাফিএই তিন জনকে পড়াতে হবে তিন জনই সমাজ কল্যাণে পড়ে, তৃতীয় বর্ষে পড়াতে হবে পরিসংখ্যান আচ্ছা! ওকে, নো প্রবলেম শামসুন্নাহার হলের অতিথি কক্ষে বসে পড়বে আমি গেলাম এক দিন কিছু ক্ষন বসে পড়ার পর,
জাফি বলল, চলেন লাইব্রেরীতে চলে যাই
আমি বললাম ওকে
তিন জন বের হয়ে একটি রিক্সা ডেকে উঠে পড়ল, দুই জন সিটে আর এক জন মাঝখানের এক পাশে আমি দাড়িয়ে আছি অনেকটা হাবার মত হঠাৎ করেই হেচকা টান অনুভব করলাম , আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি, জাফি আমার হাত ধরে টান দিয়ে একবারে দুই জনের মাঝখান দিয়ে তার পাশে বসিয়ে দিল
হা করে তাকিয়ে ছিলেন কেন?
আমি তিনজনের মাঝখানে মোটামুটি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে আছি
- ও আপনি ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হইতে তাই না?
- হু
- ওটাত একটা মাদ্রাসা ঠিক কি না?
- হু
- এই জন্যইত এখনো আধুনিক হইতে পারেন নাই
- হু
- তিন জনের মাঝখানে কেমন লাগছে?
- রিক্সা থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলে জাফি শক্ত করে হাতে ধরে রাখল
- কাপড় চোপড় আমার ঠিক আছে কিনা আল্লাহই ভাল জানেন
- লাইব্রেরীতে বসে স্বাভাবিক হতে আমার কিছুক্ষণ সময় লাগল
- অংক কষতে বললাম তিন জনই হাসে আর এক জন আরেক জনকে খোঁচা মারে আর হাসে আচ্ছা আপনারা পড়বেন না হাসবেন?
- জাফি বলল আমরা বগুড়ার মেয়ে মজা বুঝতে পারবেন
- আচ্ছা ঠিক আছে মজা পরে বুঝব এখন অংক কষেন বই টা ঘুরিয়ে নিয়ে জাফি বলল ভাইয়া ১৪ নম্বর অংকটা কষতে হবে আচ্ছা ঠিক আছেএর মধ্যে সুগন্ধ্যা নিজের দিকে বইটা নিল আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে হো হো করে হেসে উঠল, উকি দিয়ে শেলী দেখল ঘটনা কি? আর সেও হো হো করে হাসতে থাকল, পাশে একটু হেলে জাফি দেখল হাসে কি জন্যে? আর সঙ্গে সঙ্গে সেও শব্দ করে হাসতে থাকল তিন জনের হাসি আর থামেনা টেবিলের আরেক পাশ থেকে আমি বললাম,
- এ্যানিথিং রং?
- নো
- এ্যানি প্রবলেম?
- নো প্রবলেম? ক্যারি অন
প্রায় ঘন্টা দুয়েক হাসির পর, মাথা নিচু করে অংক কষতে থাকল কিছুক্ষণ পর আমাকে বলল ভাইয়া এই খানে কি হবে?
- কোন খানে?
- বই টা ঘুরিয়ে নিলাম আমার দিকে সম্পূর্ণ বই কিন্তু ফটোকপি করা, কারণ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এর ছাত্ররা বইয়ের পাতা ছিড়ে নিয়ে যায় অথবা কেটে নিয়ে যায়বই ফটো কপি করা এক পাতা করে বইটা হাতে নিয়ে দেখতেই আমার মাথা চড়ক গাছ বুঝতে পারলাম কেন ওরা হাসছে
দেখি পাতার এক পৃষ্ঠায় লেখা আছে, ‘‘যে বইয়ের পাতা ছিড়ে ওর মায়েরে ইংলিশে----------------------- আমি হেসে উঠলাম ওরা জিজ্ঞেস করল,
- এ্যানিথিং রং?
- নো
- এ্যানি প্রবলেম?
- নো প্রবলেম ক্যারি অন প্লিজ
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন