তবুও অপু উকিল

লিখেছেন লিখেছেন টাংসু ফকীর ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:৩৬:১৭ রাত

শেষ যে দিন, আমার সাথে দেখা হয়েছিল, মনে আছে সে দিন ছিল প্রচন্ড বৃষ্টি৤ বাতাসের মূহুর্মূহু ঝাপটা গাছের পাতাগুলোকে মনে হচ্ছে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে৤ দোকানের আধভেজা ঝাপের নিচে অনেকটা উবু হয়ে দায়িয়ে আছে৤ আমার সাথে পরিচয়টাও একটা নাটক, কিন্তু হয়ে গেছে কি আর করা?

স্যার আপিনত কাউয়া ভিজা হইছেন, হি-হি-হি৤

আমি অনেকটা বিরক্ত হয়ে বললাম , তাতে তোমার কি?

আমার কিচু না ৤ হি-হি-হি৤ তয় আমার কাছে তোয়ালা আছে ইচ্ছে করলে মাথা মুছে নিতে পারেন৤ দরকার নেই৤ আমি পাশ কেটে যেতে চাইলে একেবারে সামনে এসে দাড়ায়৤স্যার আমাকে কি এভাবে ফেলে চলে যেতে পারবেন? এই যে অন্ধকার হয়ে আসছে পৃথিবী৤ মেঘে-বৃষ্টিতে চারদিক একাকার হয়ে আসছে এর মধ্যে আমাকে একা ফেলে চলে যাবেন? চলেন আমাদের বৈঠক খানায় বসি৤

আরে পাগল নাকি? বৃষ্টি হচ্ছে দেখছ না?

আচ্ছা আপনার সাথে কথা বলে লাভ নাই৤

মেয়েটাকে মনে হচ্ছে দেখতে এখন বিলাসীর মত লাগছে৤ যেন সদ্য ঝড়ে পড়ে যাওয়া একটি গোলাপ৤

আচ্ছা তোমার নাম জানি কি?

অপু উকিল৤

খুব সুন্দর নাম৤

খালি নামই সুন্দর আমি সুন্দর না? হি-হি-হি৤

তুমি শুধু হাস কেন?

জানিনা, হি-হি-হি৤ স্যার জানেন এই নামেরও একটা ইতিহাস আছে? শুনবেন?

আরেক দিন শুনব৤

না৤ আজকেই শুনতে হবে৤ বলেই একেবারে বিপজ্জনক কাছে এসে দাড়াল৤ বৃষ্টির কারণে বেশি নড়াচড়াও করতে পারছিনা৤ দোকানের কোণে, গাছের আড়ালে অনেকটা গুটি সুটি হয়ে দাড়িয়ে আছি৤ কম দামি প্রসাধনীর হালকা গন্ধ আর বৃষ্টির পানির ছিটে ফোটা একাকার করে ফেলছে অপুর বুকের কাপড়৤ আঁচলের এক কোণা তুলে মাথায় দিতেই বুকের এক পাশের উপর থেকে আচল সড়ে গেলে, সুন্দর সুডৌল স্তনটা একেবারে আমার বুকের কাছে চলে এলে, আচমকা একটা শিহরণ খেলে যায় আমার অস্তিত্ত্বে৤ খানিকটা লজ্জায় একটু দূরে যেতে যাওয়ার চেষ্টা করলেই খপ করে হাত ধরে ফেলল অপু৤ চোখে মুখে আহ্বান৤ স্যার---৤ ????

আমার নামের ইতিহাসটা বলি৤ আমার নাম আসলে ছিল অপু ঘোষ৤ বিয়ে হয়েছিল নালিতাবাড়ী পৌরসাভার চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম উকিলের সঙ্গে৤ আমি যখন মুতিয়া আপার সাথে থাকতাম, তখন থেকেই আপা বলতেন, তরে একটা বিয়ে দিয়া দিমু৤ পরে একদিন তার সঙ্গে নালিতাবাড়ী নিয়ে গেল৤ উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম অধ্যক্ষ আবু তাহের স্যার, হালিম উকিলে সঙ্গে বিয়ার ব্যবস্থা করল৤ তখন থেকে আমার নাম হয়ে গেল অপু উকিল৤ সুন্দর হতিহাস না?

হু, খুবই সুন্দর!

তা এই লাইনে আর কত দিন?

স্যার যে কি বলেন না? এই লাইন কবে ছাইড়া দিছি৤এখন আমি রাজনীতি করি৤ মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করি৤

কিসের উন্নতি?

এই যে, ধরেন আগে মানুষে কল দিয়া নিয়া যাইত৤ এখন আমার এসিস্ট্যান্ট আছে৤ অফিস আছে৤ আমার লগে কথা কইতে হইলে এ্যাপারম্যান্ট (এপয়ন্টম্যান্ট) দিতে হয়৤ সবই মুতিয়া আপার অবদান৤ সামনের ইলেকশনে নির্বাচন করমু৤ খালি যদি একবার এমপি হইতে পারি?

তাহলে?

তাইলে দেখতে পারবেন৤

থাকতাম কোথায় জানেন? গৌরিপুর হর্টিকালচার সেন্টারের সঙ্গে কিন্তু একটা থাকার জায়গা ছিল৤ ঐ খানেই থাকতাম৤ একদিন সব মানুষ আইসা দিল জ্বালাইয়া৤ যাই কোথায়? সবুজ অপেরার অধিকারী, তার আমার ঘরে যাতায়াত ছিল৤ তার কাছে গিয়া আশ্রয় চাইলাম, সে বলল আমার যাত্রায় থেকে যাও৤ তুমি দেখতে সুন্দর৤ নাচ গান শিখায়া ফালামু৤ থেকে গেলাম তার কাছে৤ এর মধ্যে আউমি লীগের এমপি নজরুল স্যার গেলেন মইরা৤ আবার ইলেকশন৤ বাংলার মানুষ! আমিত জানি এরা কেমন? হাসিনা আপা নজরুল স্যারের বউকে দিল নমীনেশন৤

ইলেকশনের আগে সব এমপি -মন্ত্রী-মিনিষ্টার গৌরিপুরে বিছানা পাতল৤ এর মধ্যে মুতিয়া আপা আইসা রওশনা বেগমকে মনে করেন কোলে তুলে ঘুইরা বেড়ায়৤মানুষের কাছে ভোট চায়? আমার অধিকারীও আউমি লীগের ইলেকশন করে, সঙ্গে আমিও৤ এরই ফাকে মুতিয়া আপার লগে পরিচয়৤ আপা কইল তুমিত সুন্দর৤ রাজনীতিতে তুমাকে আমার দরকার৤ এইত এসে পড়লাম রাজনীতিতে৤

মুতিয়া আপা মনে করেন বিরাট নেতা, অগ্নিকণ্যা৤ তবে একবার এক বাড়ীতে গেলাম ভোট চাইতে ৤ ঐ বাড়ীর মহিলা কয় কি জানেন?

কি কয়?

কয় যে, আল্লাহ এই বেডির ঠোট মইষের বীচির মত কালা কেরে? আমিত হাসতে হাসতে মরি৤ আবার আপায় কিন্তু বিরাট বিজ্ঞানিক৤ বিভিন্ন সূত্র আবিস্কার করে থাকেন৤ এই যেমন ধরেন কিছু দিন আগে নালিতাবাড়ীর নয়াবিলে এক জন সভায় বললেন, নারী নেতৃত্ব হারাম-পাশে বসলে আরাম৤” কারণ আপায় ত কাউরে ডয়ায় না৤ নালিতাবাড়ীতে ইলেকশনে গেছি আপার সঙ্গে৤ আপায় আমারে থইয়া করল কি, আমারে থইয়া উকিল সাইবের মোটর সাইকেলের পিছনে চইরা গেল চইলা৤ আমিত হাটতে হাটতে আধামরা৤ এর মধ্যে ভোগাই গাঙ্গের পাড়ে বইসা বুড়া মিয়ারা গপ করতাছে৤ এক জনে কয় কি জানেন?

কি কয়?

কয় যে, আইচ্ছা মুতিয়া চৌধুরী যে উকিলের মোটর সাইকেলের পাছে চইরা গেল দুধ দুইটা কি বাড়ীত থইয়া গেছিল? ঐ দুইটা দুধ যদি আশি বছরের বুড়ার শইল্যে লাগায় তাইলেত---৤ আর ত আব্দুল হলিম উকিল? এই কথা শুইন্যাত আমার মাথা খারাপ৤ বাসাত যাইয়া উকিলের সঙ্গে হেই ঝগড়া এর পরে থাইকা হের মত হে আমার মত আমি৤

মানুষে আরো কি কয় জানেন?

কি কয়?

কয় যে, তাহের স্যারকে মানুষ জিজ্ঞাসা করত, মুতিয়া চৌধুরীর নালিতাবাড়ীতে ত কোন বাড়ী বা থাকার জায়গা নাই , তাইলে এখানে আইসা থাকে কই?

স্যারে কি কয় জানেন?

কি কয়?

কয় যে, অর্ধেক রাইত আমার লগে আর অর্ধেক রাইত উকিলের লগে৤ হি-হি-হি৤

মুতিয়া আপা পুলিশের বিশেষ সুবিধা নেয় না৤ কেন জানেন?

কেন?

শুনেন তাইলে একটা কিসসা কই৤

কও৤

কিসসাডা অইল৤ এক বুড়ি পিছলা খাইয়া পইরা গেছে৤ শরমের কথা ৤ পইরা গেছে আর লগে লগে কয়, আগের দিন নাই দেইক্যা৤ এর পরে পেকের মধ্যে বইসা চারদিকে তাকায়া দেখে যে, কেউ নাই৤ তখন কয়, আগেই আছিল কি ঘোড়ার ডিম এহনই আছে কি ঘোড়ার ডিম৤ মুতিয়া আপার আগেই জানি আছিল কি ? এহনই বা আছে কি? যে সুন্দর বাংলার পাচ চেহারা হের দিকে তাকায় কে?

আচ্ছা তুমার কি অবস্থা এখন?

আর অবস্থা ? বিষন্ন বদনে মলিন চেহারা আর শত কষ্ট বুকে নিয়ে বলল- এমপি হোষ্টেলে মাল নিয়া এমপিরা ধরা পড়ছিল শুনেন নাই৤ এখন মির্জা আজম ভাই আর বিম্পির ফারুক ভাই যাই বলেন না কেন, সবাই এক নাইয়ের বাইছা৤ আমরা আছি মনে করেন, বাইরের মালের আর দরকার হয় না৤ নিজেরা নিজেরাই কাম সারতে পারি৤ কেউ আর সন্দে করে না৤

আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্বে ৤ নইলে কি আর রাজার সাথে মিলবে কি সত্ত্বে?

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File