শাহবাগের গণজাগরণ!!!
লিখেছেন লিখেছেন মোনের কোঠা ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৭:৫৮:৪৬ সন্ধ্যা
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে ধর্মকে জড়িয়ে জামায়াতী চক্রান্তকে কঠোর হাতে প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছে তরুণ প্রজন্ম। বৃহস্পতিবার গণজাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশ থেকে এই আন্দোলনের সমন্বয়ক ডা. মোঃ ইমরান এইচ সরকার বলেন, আমাদের এই আন্দোলন ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। ধর্মের নামে রাজনীতি করা ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে। তাই সব ধর্মপ্রাণ মানুষকে এই আন্দোলনে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সব ধরনের অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এসএম শুভ বলেন, ধর্মকে পুঁজি করে বিশাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে জঙ্গী নেটওয়ার্ক চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। বক্তৃতাকালে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তমাল বলেন, শাহবাগের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের জন্য ধর্মের অপব্যবহার করতে চাইছে তারা। এমনকি তারা প্রশ্ন তুলছে এখানে নাকি ধর্মের অবমাননা করা হচ্ছে। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই আমরা ধর্মে বিশ্বাসী। আমরা তাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকব। তমাল আরও বলেন, গোলাম আযম, নিজামী তাঁদের কোন সন্তানকেই মাদ্রাসায় পড়াননি। এরা প্রকৃত অর্থে ধার্মিক নয়। এরা ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি আরও বলেন, এরা তাঁদের সন্তানদের বিদেশে পড়ায়। আর ফতোয়া দেয় ছেলেমেয়েদের আরবী শিক্ষা দেয়ার জন্য। এরা স্বাধীনতাযুদ্ধকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের জন্য ফতোয়া দিয়েছিল যে, পাকিস্তান ভাগ হলে ইসলাম থাকবে না। আজ কিন্তু ঠিকই ইসলাম রয়েছে।
মহাসমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, জামায়াত-শিবির অতীতের মতো আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ধর্মকে জড়ানো চেষ্টা করছে। কিন্তু জনগণের প্রাণের দাবির এই আন্দোলনে কোনভাবেই ধর্মসংশ্লিষ্ট নয়। জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচার চাওয়া মানে কোন ধর্মের নামে অপপ্রচার নয়। জামায়াতী ইসলামীই ধর্মকে ব্যবহার করে বার বার বাঙালীর প্রাণের দাবিকে অবমাননা করেছে। বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
জাগরণ মঞ্চের এক বক্তা বলেন, বাংলার হিন্দু, মুসলিম, আদিবাসী, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সবার দাবি একটাই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই এবং জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। মহাসমাবেশ থেকে জামায়াতের অর্থায়নে পরিচালিত গণমাধ্যম এবং জামায়াতের প্রতিষ্ঠানসমূহের অর্থ বাজেয়াফত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেয়ারও আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে আমার দেশ, দৈনিক নয়া দিগন্ত, ইনকিলাব এবং দিগন্ত টেলিভিশন বর্জনও করতে হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবারে শাহবাগে আন্দোলনরত তরুণ প্রজন্মের মহাসমাবেশ শুরু হয় পবিত্র চার ধর্মগ্রন্থ কোরান, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক থেকে পাঠ করার মধ্য দিয়ে। এর আগে কখনই শাহবাগের কোন সমাবেশে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়নি। প্রথম মহাসমাবেশ শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত পাঠের মধ্য দিয়ে।
নির্ভরশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের মানুষের ধর্মানুভূতি কাজে লাগিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের অভিযোগে অভিযুক্ত দলটি অতীতের মতো নিজেদের সব অপকর্ম ঢাকতে চাচ্ছে। অতীতের মতো এই কাজে তাদের হাতেগোনা কয়েকটি গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছে। সেই সঙ্গে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ছবিকে বিকৃত করে, ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ভুয়া এ্যাকাউন্ট খুলে ধর্মকে উস্কানি দিয়ে নানা অপপ্রচারও চালাচ্ছে। একই সঙ্গে জাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের অগ্রণী ভূমিকা রাখা শহীদ স্থপতি রাজীব হায়দারকে জড়িয়ে জামায়াতী গণমাধ্যমগুলো নানা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবি আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য রাজীব হায়দার নিহত হওয়ার মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যে জামায়াতী চক্রটি নানা অপপ্রচার চালানো শুরু করে। এ ছাড়া নিজেদের রাজনৈতিক গণমাধ্যমে রাজীবের ব্লকে ঠিকানা ব্যবহার করে উস্কানিমূলক প্রচারণাও বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার ও প্রকাশ করা হচ্ছে। এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সারাদেশে আলেম সমাবেশের নামে নিজেদের জমায়েতের চেষ্টাও সংগঠনটি চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত হয়েছে, ধর্মকেই অতীতের মতো কাজে লাগিয়ে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে চায় জামায়াত।
শাহবাগের আন্দোলনকে ঘিরে ধর্মীয় অপপ্রচার বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জোর গলায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ধর্মকে ব্যবহার করে কোন ধরনের উস্কানিমূলক প্রচার ও প্রকাশনা সহ্য করা হবে না। মন্ত্রী বলেন, ধর্মকে জড়িয়ে এই ধরনের অপপ্রচার অব্যাহত থাকলে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না সরকার।
কয়েকদিন ধরে শাহবাগে আন্দোলন করছে এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির পর থেকেই কৌশলে নিজেদের পক্ষে মানুষকে রাখতে এবং রাজনীতিক ফায়দা হাসিল করতে একটি গোষ্ঠী ধর্মকে ব্যবহার করে আসছে। ওই সময়ে দৈনিক আজাদী পত্রিকা আন্দোলনকে প্রভাবিত করতে ধর্মকে ব্যবহার করেছিল। একইভাবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতের প্রভাবিত করতে ধর্ম গেল গেল বলে ধুয়া তুলেছে। এই চক্রটি ১৯৬৯ এবং ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী ধর্মের নামে সাধারণ মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ধর্মের নামে এই চক্রটি লাখ লাখ মানুষকে খুন করেছে, মা বোনদের গণধর্ষণ করেছে। একই সঙ্গে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে তুলে দিয়েছে। সবই করেছে ধর্মের নামে। একই সঙ্গে জামায়াতী গণমাধ্যমগুলোও তাদের অপকর্ম ফলাও করে প্রচার করেছে। তারা স্বাধীনতা পক্ষের আন্দোলনকারীদের ধর্মের অবমাননাকারী বলে আখ্যায়িত করেছিল। এই জামায়াত চক্রটি এখনও টিকে রয়েছে। একই সঙ্গে তাদের গণমাধ্যমগুলোরও বিস্তার ঘটেছে। তাই কঠোর হাতে তাদের মোকাবেলার বিকল্প নেই।
গত ১৭ দিনে গণজারগণ মঞ্চ থেকে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির দাবি ওঠায় দলটির নেতারা নিজেদের অবস্থান নিয়ে আবারও শঙ্কিত হয়ে পড়ে। শেষমেশ কোন উপায় না পেয়ে শাহবাগের আন্দোলনকে ধর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে শহীদ রাজীবের ব্লগের কিছু লেখাকে বিকৃত আকারে এবং শাহবাগের ছবিকে ফটোশপের মাধ্যমে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সবকিছুই পরিকল্পিতভাবে জামায়াত উপস্থাপন করছে। লক্ষ্য একটাইÑ তরুণদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করা। কারণ জামায়াত অতিমাত্রায় এই আন্দোলন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৩, ১০ ফাল্গুন ১৪১৯
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2013-02-22&ni=126454
গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বানধর্মকে পুঁজি করে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না নিজস্ব প্রতিবেদক
http://www.kalerkantho.com/index.php?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1161&cat_id=1&menu_id=0&news_type_id=3&news_id=326896#.USbunh2u8vw
22 Feb 2013 06:19:52 AM Friday BdST
নির্ঘুম ১৮ রাতের ইতিহাসে প্রজন্ম চত্বর
http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=997d1a2b5fd043c81cb5eb151d1974b5&nttl=22022013176086
নতুন কর্মসূচি কবে কোথায় নিজস্ব প্রতিবেদকhttp://www.kalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1161&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=1নতুন প্রত্যয়ে
বিষয়: বিবিধ
৯৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন