জিয়ার ষড়যন্ত্র এইদিন বাস্তবায়িত হয় !!
লিখেছেন লিখেছেন মোনের কোঠা ১৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:৪৭:০১ রাত
জিয়ার ষড়যন্ত্র এইদিন বাস্তবায়িত হয় !!
১৯৭১ এ ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পর পাকিস্তানি জান্তা বুঝে যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র ! তাই পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্হা "আই এস আই " তখন থেকেই ষড়যন্ত্র করতে থাকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলেও যেনো সহসাই পাকিস্তানি পন্থীরা বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে ! সেই জন্য তারা কট্টর ভারতবিরোধী বাঙালী অফিসারদের সেই ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে আর তত্কালীন মেজর জিয়া ছিলেন তাদেরই একজন ! এখানে উল্লেখযোগ্য যে জিয়াউর রহমান এর শৈশবকাল কাটে করাচিতে এবং সেখান থেকে তিনি আর্মিতে যোগ দেন ৷ পরে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে বীরত্বের জন্য খেতাব পান , বাংলার চেয়ে উর্দুতে কথাবার্তা বলতে তিনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন ! তার বাবা-মার কবরও পাকিস্তানে ! এবার আসা যাক স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভুমিকা প্রসঙ্গে ৷ মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে পাবাহিনী বাঙ্গালীদের উপর ক্র্যাক ডাউনের জন্য গোপনে লোকবল আর সমরাস্ত্র আনতে থাকে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে ! আর বাঙালী অফিসারদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় অন্যত্র ! শুধু ব্যতিক্রম ছিলেন মেজর জিয়া , তিনি এতই আস্থাবান ছিলেন যে ২৫শে মার্চ রাতে তাকে পাঠানো হয় "সোয়াত" থেকে অস্ত্র ডাউন লোড করতে ! পরে জনতার প্রতিরোধের মুখে তিনি সেখান থেকে পিছু হটেন , পরে বিদ্রোহী সেনাবাহিনী , ইপিআর আর পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে যুদ্ধ না করে কালুর ঘাটে যেয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকেন ! এই সময় চট্টগ্রাম সেনানিবাসে লে:ক: এম আর চৌধুরীর নেতৃত্তাধীন বাঙালি রেজিমেন্টকে উদ্ধার করতে তার বাহিনী নিয়ে যান নি , যদিও এম আর চৌধুরী তাকে বার বার বার্তা পাঠাচ্ছিলেন সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য ! এদিকে কালুরঘাটে অস্থায়ী বেতারকেন্দ্র থেকে জিয়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন এবং তা তিনি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন পাকবাহিনীর নাকের ডগায় বসে করতে থাকেন তিন দিন পর্যন্ত ! যেখানে বেতার কেন্দ্রের অবস্থান অতি সহজেই সনাক্ত করে তা কয়েক ঘন্টার মধ্যে ধংশ করতে পারতো শক্তিশালি পাকবাহিনী , সেখানে তা না করে তিনদিন পর্যন্ত ইচ্ছে করেই সময় নেয় জিয়াকে হিরো বানাতে এবং এব্যাপারে তারা সফলও হয় ! জিয়া যে পাকিস্তানি এজেন্ট হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন তা পরিষ্কার হয়ে যায় '৭৫ এর ১৫ আগস্ট এবং পরবর্তী সময়ে তার কর্মকান্ডের উপর !
এবার আসা যাক কালো রাত্রি ১৫ আগস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারী আর্মি অফিসারদের ব্যাপারে ৷ ডালিম এবং নূর মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময় পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে "জেড " ফোর্সে যোগ দিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহন করে আর ফারুক , রশিদ সহ অন্যান্য খুনিরাও মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে যুদ্ধে অংশগ্রহন করে "জেড " ফোর্সের হয়ে ৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় যেখানে বেসামরিক লোকদের পাকিস্তানের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে আসা ছিলো দুরহ ব্যাপার , সেখানে বাঙালি সামরিক অফিসারদের পালিয়ে আসাটা ছিলো প্রশ্নবোধক ! বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকান্ডের পর এটাও পরিস্কার হয়ে যায় যে ফারুক -ডালিম গ্যাং এর পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা ছিলো পাতানো এবং পাকিস্তানের এজেন্ট হিসাবেই তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলো ! আর তাই ডালিম বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই পাকিস্তানি স্টাইলে বাংলাদেশ বেতারকে "রেডিও বাংলাদেশ" এবং জয় বাংলার বদলে "বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" ঘোষণা দেন বেতারে ! আর জিয়াও ছক অনুযায়ী ক্ষমতা দখল করে শাহ আজিজ আর আলিমের মত কুখ্যাত স্বাধিনতাবিরধিদের মন্ত্রীসভায় স্থান দেন ! সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা এ ধরনের কাজ করতে পারে না !
উপরের বিশ্লেষণ থেকে বুঝা যায় কালুরঘাট বেতার থেকে "জিয়ার পাঠ " তিনদিন ধরে প্রচার করে জিয়াকে হিরো বানানো আর মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান থেকে "পালানোর নাটক" করে অন্যান্য ফোর্সে বাদ দিয়ে জিয়ার ফোর্সে অংশগ্রহন এবং শেষ মেষ সেই ফোর্সের লোকদের ১৫ আগস্টের কালো রাত্রিতে সদলবলে অংশগ্রহন -- সবই একই সুত্রে গাঁথা ! মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ থেকে আই এস আই যেই ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল তা বাস্তবে রূপ পায় ১৫ আগস্ট এর কালো রাত্রিতে !
জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু ,
বিষয়: রাজনীতি
১৫২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন