বঙ্গবন্ধু মানেই "বাংলাদেশ" !!

লিখেছেন লিখেছেন মোনের কোঠা ০৮ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৪২:১৫ রাত

বঙ্গবন্ধু মানেই "বাংলাদেশ" !!

"বেশ ভালই আছি ! সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে ঘুরে বেড়াচ্ছি সারা বিশ্ব জুড়ে , লাল সবুজ পতাকায় আচ্ছাদিত হয়ে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছি স্বাধীন সত্ত্বা নিয়ে ! তাই চিরকৃতজ্ঞ মোরা সেই মহান নেতার চরনতলে যার দূরদর্শিতা আর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব টেনে নিয়েছে মোদের অন্ধকার থেকে আলোর ভুবনে" ৷

বছর ঘুরে আবার এসেছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী সেই মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী, শোকাহত ১৫ আগস্ট , জাতির ইতিহাসের সব চেয়ে কলংকজনক দিন ! শত শত বছর ধরে বাঙালী জাতি ছিলো পরাধীনতার জালে বন্দী , শোষণ নিপিরণে ছিলো জর্জরিত ! সেই ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত অনেক নেতাই বাঙালী জাতিকে একটি স্বাধীন আবাসভূমি উপহার দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন , সংগ্রাম করেছিলেন কিন্তু কেউ সফল হন নি ! পাকিস্তান হওয়ার পর ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে বাঙালী জাতি কিছুটা সফলতা অর্জন করেছিলো বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে কিন্তু বাঙালিদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ , বঞ্চনা থেমে থাকেনি এতে, বরং তা বেড়ে গিয়েছিলো বহুগুনে ! বাঙালির "সোনালী আশের " পয়সায় পশ্চিম পাকিস্তানিরা করাচি , লাহোর , পিন্ডি আর ইসলামাবাদকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিনত করেছিলো ! সরকারী চাকুরী থেকে শুরু করে ব্যবসা-বানিজ্য সব কিছুতেই ছিলো পশ্চিমাদের একচেটিয়া আধিপত্য ! সেই সময় অনেক বাঙালি নেতা ছিলেন রাজনীতিতে সক্রিয় কিন্তু কেউ পশ্চিমাদের এই শোষণ নিপিড়নের বিরুদ্ধে জোড়ালো আন্দোলন করতে পারেন নি ! স্বৈরসাশক আইউব খানের রক্ত চক্ষুর ভয়ে অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্তেও সাহস হয়নি আন্দোলন করতে ! অনেকে আবার মোনায়েম খানের মতো আইউব খানের চাটুকারিতেই ছিলেন ব্যস্ত ! কিন্তু একজন ছিলেন ব্যতিক্রম , তিনি হলেন তখনকার টগবগে তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান ৷ পশ্চিম পাকিস্তানী বিশেষ করে পাঞ্জাবীদের শাসন আর শোষণ থেকে বাঙ্গালীদের বাঁচাতে এই তরুণ নেতা ১৯৬৬ সালে খোদ লাহোর যেয়ে বাঙালীর মুক্তি সনদ ৬ দফা পেশ করলেন ! পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা তা প্রত্যাখান করে শেখ মুজিবকে "রাষ্ট্রদ্রোহী" বলে আখ্যায়িত করলেন ৷ শেখ মুজিব ঢাকায় ফিরে এসে পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের সামনে বাঁচার দাবি ছয় দফা তুলে ধরলেন ৷ কিন্তু দু:খের বিষয় শেখ মুজিব কোন নেতারই সমর্থন পান নি সেদিন ! কেউ কেউ শেখ মুজিবকে ভয় দেখালেন "বিচ্ছিন্নতাবাদী " হিসাবে সরকারের কঠিন শাস্তির ব্যপারে ! কিন্তু মুজিব দমবার পাত্র নয় , আইউব শাহির রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে উল্কার গতিতে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত ছয় দফার প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ৷ বাংলার মানুষ ও লুফে নিলো ছয় দফাকে তাদের বাঁচার সনদ হিসাবে ! ছয় দফার অনুকূলে চারিদিকে পরে গেলো সাজ সাজ রব ! লৌহমানব আইউবশাহী প্রমাদ গুনলেন ! অনবরত জেল-জুলুম দিয়েও যখন শেখ মুজিবকে ছয় দফা আন্দোলন থেকে নিবৃত করা গেলো না , তখন চিরতরে তাকে শেষ করার জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাসিয়ে দেওয়া হলো ! কিন্তু বাংলার মানুষ বিশেষ করে তরুণ ছাত্র সমাজ চুপ করে বসে রইলো না , তারা দল বেধে রাস্তায় নেমে আসলো এই মিথ্যা মামলা থেকে শেখ মুজিব আর তার সঙ্গীদের মুক্ত করতে ৷ ক্রমে সেই আন্দোলন গণ আন্দোলনে রূপ নিলো এবং স্বৈরাচারী আইউব শাহির পতন ঘটিয়ে ছাত্র-জনতা তাদের প্রাণ-প্রিয় নেতাকে জেল থেকে মুক্ত করে আনলো আর মুজিব ও হয়ে গেলেন "বঙ্গবন্ধু" নামে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা ! '৬৯ এর সেই ঐতিহাসিক গণ-আন্দোলনের সূচনায় ভাসানী সহ পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য নেতারা পর্দার আড়ালে ছিলেন কিন্তু গণ আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন এই সব সুবিধাবাদী নেতারা বিশেষ করে মৌলানা ভাসানী রাজনীতির মাঠে নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করার জন্য "মুজিব মুক্তির" আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পরেন ! তার পরের ইতিহাসত সবারই জানা , মুক্তি সনদ ছয় দফার আলোকে '৭০ এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষকে উপহার দিলেন এক অবিস্যরণীয় বিজয় ! আজ একথা নির্দিধায় বলা যায় ওই স্বরনীয় বিজয় ছিলো আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল চাবিকাঠি ! আজ স্বাধীনতার ইতিহাস পর্যালোচনা করতে গেলে একটি সার্থান্নেশী মহল '৫২ থেকে এক লাফে '৬৯ এ চলে আসে , ইচ্ছে করেই '৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলনকে তারা পাশ কাটিয়ে যায় ! যেহেতু ছয় দফার কথা বললে শুধু বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগকে বাহবা দিতে হয় , সেই হেতু এইসব ঈর্ষাপরায়ণ , পরশ্রীকাতর , আওয়ামী বিরোধীরা স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে ৬ দফাকে আড়াল করতে চায় ! বঙ্গবন্ধু তার "সাহস এবং প্রত্যয়" দিয়ে বাঙালী জাতিকে এমনভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন যে নিরস্ত্র বাঙালী সহসাই সশস্ত্র বাঙ্গালিতে রুপান্তরিত হয়ে যায় , যার ফল স্বরূপ আমরা মাত্র নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে শক্তিশালী পাক বাহিনীকে পরাজিত করে দেশকে শত্রুমুক্ত করি ! বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে স্বাধীন বাংলা বেতারের সেই কালজয়ী "বজ্রকন্ঠ" ছিলো বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে শক্তিশালী অনুপ্রেরণা ! তা ছাড়া ১৬ ডিসেম্বর দেশ হানাদারমুক্ত হলেও বঙ্গবন্ধুর অভাবে সবার ভিতরে হচ্ছিলো রক্তক্ষরণ , আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে ছিলেন কবে ফিরে আসবে তাদের প্রানপ্রিয় নেতা , জাতির জনক ! অবশেষে '৭২ এর ১০ জানুয়ারী বীরের বেশে বঙ্গবন্ধুর দেশে ফিরে আসার পরই আমাদের রক্তস্নাত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় ! তাই এই কথা নির্ধিধায় বলা যায় "বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ , বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু" !!

বিষয়: রাজনীতি

১১২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File