হেফাজতের আমিরের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা !!

লিখেছেন লিখেছেন মোনের কোঠা ১৫ জুলাই, ২০১৩, ১২:৩৫:৪৯ রাত

অনির্ধারিত বিতর্কে অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী হেফাজতের আমিরের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, নারী সমাজের অপমানের প্রতিবাদ করা একজন নারী হিসেবে আমার নৈতিক দায়িত্ব। আল্লামা শফী ধর্ম সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী। কিন্তু আল্লামা মানে আল্লাহ নয়, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি ধর্মের নামে নারীদের সম্পর্কে অবমাননাকর কথা বলেছেন। তিনি (আহমদ শফী) নিশ্চয় একজন মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছেন, তাঁরও স্ত্রী ও মেয়ে রয়েছে। সেই নারী সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে জাতির ঘৃণা জন্মেছে। উনি গা ঘিন ঘিন করা বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, বেশিক্ষণ নারীদের দিকে তাকিয়ে থাকলে আহমদ শফীর কী হয়, তা আমি অনুমান করতে চাই না। তাঁর বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে, কেউ আমার গায়ে বমি করে দিয়েছে।

কোরানের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগে যখন কন্যা সন্তানকে পুঁতে ফেলা হতো, তখন আল্লাহ নারীদের রক্ষা করার জন্য কোরানে একাধিক আয়াত নাজিল করেন। অথচ আল্লামা শফী ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের আবারও পেছনের দিকে ঠেলে দিতে চাইছেন। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বিরোধী দল আল্লামা শফীকে এখন ব্যবহার করতে চাইছেন। কিন্তু আহমদ শফীর বক্তব্য অনুযায়ী, বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁদের মহিলা সংসদ সদস্যদের আজ জাতীয় সংসদে নয়, ঘরে বসে থাকার কথা।

গত ৫ মে হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞ ও তা-বের কথা উল্লেখ করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, পবিত্র কোরান শরীফে আগুন দিয়ে তারা কী ইসলাম রক্ষা করতে চান? ওইদিন শাপলা চত্বরে হেফাজতের বিকেল ৫টা পর্যন্ত থাকার কথা। কিন্তু দুপুরের পর থেকে পুরো ঢাকা শহরকে ল-ভ- করে দেয়া হলো, নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা হলো। তিনি বলেন, প্রতিটি গাছের পাতা ‘আল্লাহ আল্লাহ’ জিকির করে। কিন্তু হেফাজতীরা নির্বিচারে গাছ কেটে সেই জিকির বন্ধ করে দিল। ইতোমধ্যে কেটে ফেলা গাছ থেকে নতুন করে পাতা গজাচ্ছে। আল্লাহ আমাদের নতুন করে আবার বাঁচার তাগিদ দিয়েছেন। আল্লামা শফী আল্লাহ’র এই ইশারা অন্ধ হয়ে না থাকলে উপলব্ধি করতে পারবেন। হেফাজতীরা সেদিন যেভাবে সংহারে নেমেছিলেন, কোরান শরীফ-জায়নামাজে আগুন দিয়েছেনÑ আল্লাহ তা সহ্য করবে না।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, একজনের উপার্জনে সংসার চলে না। সন্তান না খেয়ে থাকলেও মা চাকরি করতে পারবেন না। সন্তানের মুখে বিষ ঢেলে মা আত্মহত্যা করবেনÑ এটাই কী চান শফী সাহেবরা। তিনি বলেন, ’৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের সময় রংপুরে শুধু পেটের দায়ে যখন বিপুল সংখ্যক নারী এফিডেফিড করে দেহব্যবসা শুরু করলেন, তখন আল্লামা শফী কোথায় ছিলেন? জেনারেল জিয়া যখন প্রিন্সেস লাকী ও জরিনা খানদের নাচালেন, মদ-জুয়ার লাইসেন্স দিলেনÑ তখন কেন নিশ্চুপ ছিলেন? বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ কেন করেননি? তখন কেন শফী সাহেবরা প্রতিবাদ জানিয়ে একটাও বিবৃতি দিলেন না? মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নেয়া হয়েছে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে। অনেক নারী অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। ক্যাম্পে মেয়েদের আটকে রেখে সম্ভ্রমহানি করা হতো। তখন গোলাম আযমরা ফতোয়া দিয়েছিলেনÑ যুদ্ধের সময় জেনা করা জায়েজ। বলেছিল মেয়েরা গণিমতের মাল। একই ধরনের কথা আজ বলা হচ্ছে।

নারীদের অপমান করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, জেনে শুনে অন্যায় করার জন্য নিশ্চয় আল্লামা শফীদের একদিন নারী সমাজের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লামা শফীর যে কুরুচিপূর্ণ-অশ্লীল বক্তব্য দিয়েছেন, তা নারী সমাজ প্রত্যাখ্যান করবে। নারী সমাজের পাশে আমরা ভাইদেরও (পুরুষ) চাই। নারী-পুরুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লামা শফীদের ধিক্কার ও ছিঃ ছিঃ জানাবে।

বিষয়: রাজনীতি

১০২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File