ইসলাম গ্রহণকারী ব্রিটিশ নারীরা

লিখেছেন লিখেছেন কিছু জানাতে চাই ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:৫০:১৭ রাত

২০০১ সালের ব্রিটিশ সরকারের আদম শুমারী অনুযায়ী ইংল্যান্ড এবং ওয়ালস এ মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৮০% বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ২.৭ মিলিয়ন লোক এই ধর্মের অনুসারী। এদের মধ্যে ৪০% শতাংশের বাস লন্ডনে। ধারনা করা হয় খ্রিষ্ট ধর্মের পর ইসলামই ইংল্যান্ড এর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। অভিবাসনের হিসাব ছাড়াও ধর্মান্তর এর দিক থেকেও ইসলাম যুক্তরাজ্যের সর্বাধিক বর্ধনশীল একটি ধর্ম। মসজিদের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১ লক্ষের উপর মানুষ ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন। শুধুমাত্র ২০১২ সালে ৫০০০ লোক ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন যাদের ৩ ভাগের ১ ভাগই নারী। কি তাদের এই ধর্মান্তরনের প্রবনতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে তা-ই বিবেচ্য বিষয়।

অতি সম্প্রতি BBC World এ “Make Me Muslim” নামে একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে দেখানো হয় প্রচুর পরিমানে ব্রিটিশ সাদা নারীরা ইসলাম গ্রহণ করছেন এবং ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। এখন প্রশ্ন হলো কেন তারা পশ্চিমা সমাজ ব্যবস্থায় প্রদত্ত স্বাধীনতা ত্যাগ করতে চাইছেন? আর তাদের নতুন রক্ষনশীল ধর্ম বিশ্বাস ও তার কর্মপদ্ধতি পশ্চিমা উদার সমাজ ব্যবস্থা ও মুক্ত জীবনধারায় কি ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় তা-ই আমাদের দেখার বিষয়।

অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা সাহানা বুখারী মুসলিম বংশোদ্ভূত একজন সফল মডেল। যিনি সাবেক মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার একজন প্রতিযোগী আর ঘোষণা দিয়েছেন যে, “আমি একজন আধুনিক মুসলিম এবং সবসময় তা-ই থাকব”। উপস্থাপিকা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছেন সেই সাথে ৫ জন নও মুসলিমার সাক্ষাতকারও নিয়েছেন। যারা তাকে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় তার (উপস্থাপিকা) মনোভাব ইসলামের আলোকে পুনঃর্মূল্যায়ন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। সাধারনত বংশানুক্রমিক ভাবে মুসলিমদের চেয়ে নবদীক্ষিত মুসলিমগণ একটু বেশিমাত্রায় রক্ষনশীল হয়ে থাকেন। এটা সাধারনত ইসলামের প্রতি উৎসাহ বোধের কারনে হয়। আর যেহেতু বুখারী (উপস্থাপিকা) একজন বংশানুক্রমিক মুসলিম তাই তার ইসলামী অনুশাসন (হিজাব পরা, মসজিদে যাওয়া) মানা না মানার মাধ্যমে মুসলিম হিসাবে পরিচিত হওয়ার ব্যাপারটা তার কাছে তেমন গুরুত্ব পেত না। বুখারীকে (উপস্থাপিকা) যখন বলা হত যে তিনি সব সময় সুন্দরী থাকবেন না তখন তিনি বেশ বিরক্ত বোধ করতেন।

ব্রিটেন এর যুব মহিলারা কেন ইসলাম পছন্দ করছেন তার অনেক কারণ রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় তারা তাদের মুসলিম বাগদত্ত বা স্বামীকে সুখি দেখতে চায় অথবা একজন মুসলিমা হিসাবে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করতে চায়। এদের মধ্যে আবার অনেকে মনেকরে তাদের সন্তানদের একটি নির্দিষ্ট ধর্ম বিশ্বাসের অধীনে পরিচালিত হওয়া উচিত। বিবিসির এই অনুষ্ঠানে ইসলামকে একটি সুরক্ষিত শান্তির ধর্ম হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে ইসলাম একজন নারীকে পেপার পত্রিকা বা ম্যগাজিনে নিজেকে উন্মুক্তভাবে প্রদর্শন করা, মদ-মাস্তির দুনিয়ায় পুরুষ সঙ্গী নিয়ে লাগাম ছাড়া জীবন উপভোগ করতে নিষেধ করে যা কিনা গতানুগতিক জীবন থেকে আলাদা।

পশ্চিমা সমাজ ব্যবস্থায় যেখানে একজন নারীকে তার শারীরিক বৈশিষ্টের উপর নির্ভর করে মূল্যায়ন করা হয় এবং যেখানে সামান্য আচার আচরনের কারনে সংসার ভেঙ্গে যায় সেখানে ইসলাম সে সব নারীদের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাথে বাস্তব ভিত্তিক একাত্মতার অনুভূতি তৈরি করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। ইসলাম তাদেরকে জীবনের কাঠামো প্রদান করে। বেঁচে থাকার নকশা প্রনয়ন করে দেয়, তার মর্যাদা উন্নিত করে। ইসলাম তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বোধগম্য ও মানবিক মূল্য বুঝতে অনুপ্রাণিত করে। অনেকক্ষেত্রে দেখাযায় কোন কোন নারী জীবনের একটি কঠিন সময় পার করছেন এ সময় তারা জীবনের সকল গ্লানী মুছে দিয়ে ইসলামে দীক্ষিত হয়ে নব জীবন লাভ করেন। অনেকটা ইরেজার দিয়ে সব লেখা মুছে পরিস্কার করার মত।

মানসিক ভাবে যারা প্রস্তুত তাদের জন্য ইসলাম গ্রহণ করা কোন কঠিন কাজ নয়, শাহাদতের মৌখিক স্বীকৃতই যথেষ্ট। কিন্তু সমস্যা হল একজন নারী হয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিজের আদর্শ সম্পর্কে বোঝানো এবং উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলা করা। উদাহরন হিসাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, অনেকের বাবা-মায়ের বন্ধু বান্ধব আছেন যারা উপহাস করে বলেন “তোমার মেয়ে কি এখনো মাথায় ঐ কাপড়টা পরে?”। অনেকের আবার দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্বেও ভাটা পড়ে। এটা একজন নবদীক্ষিত মুসলিমার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন বিশ্ব পরিস্থিতির কারনে হয়ে থাকে। এর আর একটি কারণ হল তিনি আর আগের মত বন্ধুদের সাথে বিনোদনের জগতে অংশগ্রহণ করেন না।

এটা খুবই কম ঘটে থাকে যে, একজন সুন্দরী, সুকেশী, সুনয়না নওমুসলিমা পথচারীর হাতে নাজেহাল না হয়েছেন, বা তাকে নিয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠী সমস্যায় না পড়েছে। আর নওমুসলিমা যদি অবিবাহিত হয় তাহলে তো সমস্যার শেষ নাই। তার জন্য পাত্র খুজে পাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য একটি কাজ এর কারণ হল সামাজিক ব্যবস্থা বরাবরই মুসলিম বিদ্বেষী হওয়া। আবার অনেক মুসলিম পরিবার তাদের ছেলের জন্য নওমুসলিমাকে পছন্দ করতে পারেন না। তারা তাদের নিজেদের পারিবারিক পরিচিতদের মধ্য হতে কাউকে বাছাই করার চেষ্টা করেন। কারন তারা ভয়ে থাকেন এই ভেবে যে হয়ত নওমুসলিমা সংসার ভেঙ্গে দিয়ে তার পূর্বের ধর্মে ফিরে যেতে পারেন অথবা তার পূর্বের অভ্যাস ও আচার আচরন শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে নওমুলিমা গণ সাধারনত অন্য কোন নওমুসলিমকে জীবন সঙ্গী হিসাবে খুজে নেবার চেষ্টা করেন। আর এ কাজের জন্য তারা ইন্টারনেটের সহায়তা নিয়ে থাকেন। muzmatch.com এ রকম একটি সাইট যা নওমুসলিমাদের এ কাজে সহায়তা দিয়ে থাকেন। এ সাইটটি নওমুসলিমাদের মুসলিম জীবন সঙ্গী পেতে তাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করিয়ে দেয়।

মোদ্দাকথা হল হাজারো প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে একজন নওমুসলিমা তার জীবন পরিচালিত করার পরও ইসলামের সৌন্দর্যের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন। তারা তাদের অতীতের ভুল গুলো বুঝতে পারছেন। ইসলামের মধ্যে নিজেকে সঁপে দিয়ে নিজের জীবনের আমূল পরিবর্তন আনছেন। যে সব নারী একসময় পার্থিবতা, মাদক ও যৌনতাকে নিজের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য মনে করতেন তারা এখন সালাতের মধ্যে জীবনের পরম শান্তি খুজে নিয়েছেন।

মূলঃ লিনডা এস. হারড

ভাষান্তরঃ ফখরুল ইসলাম মোহাম্মদ ফরহাদ।

(প্রবন্ধটি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ মঙ্গলবার, আরব নিউজ এ প্রকাশিত)

বিষয়: সাহিত্য

১৩৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File