মামা বাড়ীর আবদাঃ বিচার নয় ফাঁসি চাই

লিখেছেন লিখেছেন কিছু জানাতে চাই ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:১৫:২৫ রাত

পুরনো একটি কথা দিয়ে শুরু করতে চাই। যদিও কথাটি এর আগে একাধিকবার লিখেছি; তারপরও আজ সে কথাটি দিয়েই লেখাটি শুরু করছি। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের উক্তি ‘ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স’। একইসঙ্গে বলা হলো, ‘আমরা সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য এখানে বসিনি।’ ‘চেম্বার মানেই রাষ্ট্রপক্ষে স্টে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন লেখা ও প্রকাশের দায়ে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও আমাকে দণ্ড এবং জরিমানা করার আগে শুনানির সময় আপিল বিভাগ এই মন্তব্য করেছিলেন। আমাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনের পক্ষে যখন দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়, তখনই আদালত এই উক্তিগুলো করেন। শুধু তা-ই নয়, প্রকৌশল শিক্ষায় প্রধান বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সংক্ষেপে বুয়েট থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনকারী এবং বাংলাদেশের আরেক সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ (ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জনকারী মাহমুদুর রহমানকে তখন অনেক তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হলো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যারা এই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেন, ছাত্রজীবনে তারা এসব বিদ্যাপীঠে ভর্তিতে অংশ নেয়ার আবেদন করারও যোগ্যতাও অর্জন করেননি। দেশের সেরা ছাত্রছাত্রীরাই কেবল বুয়েট এবং আইবিএতে ভর্তিপরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায়। প্রথমে ভর্তিপরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ, তারপর ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য আবেদন। ভর্তিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল ভর্তির প্রশ্ন আসতে পারে। শিক্ষাজীবনের একাধিক পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণী বা বিভাগপ্রাপ্তির পরও বিচারকের আসনে বসার সুযোগ পাওয়ার বিষয় বা নেপথ্য কারণ নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। মামলার আইনজীবী, বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কোর্টের স্টাফদের সঙ্গে ব্যবহারের বিষয়ে বিচারপতিদের আচরণবিধিতে কী উল্লেখ রয়েছে সেটাও বলতে চাই না।

আমাদের বিচারব্যবস্থার একটি রেওয়াজ রয়েছে। উপরের আদালতের সিদ্ধান্ত বা অভিমতগুলো অধস্তন আদালত মানতে বাধ্য। বিচারকরা অনেক সময় নিজের বিবেক-বিবেচনা থেকে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হন, তা পরবর্তীতে একই ন্যাচারের বিচারের ক্ষেত্রে নজির হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া সব দেশের উচ্চ আদালত থেকে পুরো জাতি লেসন নেয়। যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রকাশ্যে বলেন সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য বসেননি বা ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স, যে দেশের উচ্চ আদালতে একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষের সঙ্গে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয় সে দেশের অধস্তন আদালত ও জাতি কী লেসন নেয়, সেই বিচারের ভার দেশের নাগরিকদের আদালতে রাখলাম।

আমি এখানে আরও বলতে চাই, পৈতৃক সূত্রে ঢাকায় বহুতল বাড়ি, স্ত্রীর পিতার অঢেল সম্পদ থাকার পরও যে দেশের বিচারপতি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা নেন, সেই দেশের বিচারপতির কাছ থেকে অন্তত আর যা-ই হোক, ন্যায়বিচার আশা করা যায় না। তখন আর নীতি-নৈতিকতা আছে সেটা বলা চলে না। নিজের বাড়ি-সরকারি গাড়ি, অঢেল সম্পদ থাকার পরও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে খয়রাতির টাকা যিনি নেন, তাঁর নীতি-নৈতিকতা কতটা রয়েছে সেটাও আশা করি পাঠক বিবেক দিয়ে বিচার করবেন।

এ কথাগুলো এ কারণেই বললাম, আমাদের বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা কেন কমছে, রায় ঘোষণার পর কেন মানুষ অনাস্থা প্রকাশ করে রাস্তায় নেমে আসছে, কেন রায়ের প্রতিবাদে আন্দোলন হচ্ছে তা অনুধাবন করা সহজ হবে। আমার বিশ্বাস, এই উদাহরণগুলো সামনে থাকলে বর্তমান হালহকিকতের কারণ অনুসন্ধানে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যাবে।

বিচার বিভাগ হচ্ছে দেশের এমন একটি অঙ্গ, যার প্রতি আস্থা না থাকলে একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না। এজন্যই বলা হয়ে থাকে, বিচারক শুধু ন্যায়বিচার করলেই চলবে না, মানুষের মনে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে ন্যায়বিচার হয়েছে। ন্যায়বিচার করার পরও যদি মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি হয় ন্যায়বিচার হয়নি, সেই বিচারব্যবস্থার প্রতি কারও আস্থা থাকে না। সেই দেশে তখন নৈরাজ্য অনিবার্য হয়ে দেখা দেয়। বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে মানুষ তখন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। বিচার নয়, ফাঁসি চাই বলে যে স্লোগান উঠেছে সেটা কি বিচারব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার কারণেই হয়েছে, নাকি রাজনৈতিক বিষয়—সেটা বিশ্লেষণের সময় এখনও আসেনি। তবে রায়কে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটা অনেকটা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মতোই। অথবা তাদের কথামত আইন তৈরি করে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া আর নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আইন তৈরি করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। একটা হচ্ছে, সোজা রাস্তায় যাওয়া, আরেকটা হচ্ছে একটু ঘুরে যাওয়া।

বর্তমান জাতীয় সংসদে আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর একটি বক্তব্য আমার ইদানীং খুবই মনে পড়ছে। চারদলীয় জোট সরকারের সময় হরদম তিনি বলতেন বিচারব্যবস্থা, বিশেষ করে উচ্চ আদালতের প্রতি আস্থা না থাকলে দেশ টিকে না। বিচারের প্রতি আস্থা না থাকলে দেশে নৈরাজ্য দেখা দেয়। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে যখনই বিচারপতি নিয়োগ করা হতো, তখনই তারা দলীয়করণের অভিযোগে আন্দোলন করতেন। তাদের এই প্রতিবাদ আন্দোলনে উপস্থিত থেকে দরাজ গলায় উচ্চারিত এ বক্তব্যগুলো লেখা এবং পত্রিকায় প্রকাশের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আমি তখন দৈনিক ইনকিলাবে কাজ করি। প্রথম যেদিন তার সঙ্গে দেখা করে একটি বিষয়ে প্রতিক্রিয়া চেয়েছিলাম, তখন আবদুল মতিন খসরু বলেছিলেন যা বলি লিখতে হবে। আমি তাঁর বক্তব্যগুলো হুবহু পত্রিকায় লিখলাম। সেদিনও তিনি একই কথা জোর দিয়ে উচ্চারণ করেন। বলেছিলেন, বিচারব্যবস্থার ওপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে গেলে দেশে নৈরাজ্য দেখা দেবে। তিনি সেদিন আরও বলেছিলেন, বিচার শুধু করলেই চলে না, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে—মানুষের মনে এই ধারণা তৈরি হতে হবে। এখন তিনি সরকারের কোনো দায়িত্বে নেই। তবে এ কথাগুলো তাঁর মনে আছে কি-না এবং সরকারের কাছে তিনি এ কথাগুলো এখন বলেন কি-না সেটাই আমার প্রশ্ন।

কোনো আদালতের চেয়ারম্যান যখন বলেন সরকার রায়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে বা কোনো আদালতের চেয়ারম্যানকে যখন বলা হয় তিনটি রায় দিয়ে দেন, আপনাকে আমরা এখানে নিয়ে আসব, তখন কি শুধু চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দিলেই বলা যাবে সেই আদালতে ন্যায়বিচার হয়েছে? কোনো আদালতের বিচার নিয়ে যখন ওই আদালতের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ড্রামা ভালোই হচ্ছে, আমরা হলাম সেই ড্রামার অভিনেতা।’ তখন তাঁকে সরিয়ে দিলে বা পদত্যাগ করে চলে গেলেই কি মানুষের মনে ধারণা তৈরি হবে যে, এখানে ন্যায়বিচার হয়েছে? সেটা কি জোর দিয়ে বলা যাবে এই আদালতে বিচারের নামে কোনো ড্রামা হয়নি? সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী আদেশ বা রায় দিতে রাজি না হলে যখন ওই আদালতের বিচারককে মন্ত্রী ডেকে নিয়ে পদত্যাগপত্র রেখে দেন, তখন কি বলা যাবে সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে ওই আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারছে? মানুষের মনে কি তখন এই ধারণা তৈরি হবে যে ওই আদালতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হচ্ছে? যখন কোনো আদালতের প্রসিকিউটর সেই আদালতের চেয়ারম্যানকে বলেন, ‘আমি দাঁড়াইয়া যামু, আপনি বসাইয়া দেবেন—লোকে দেখুক আমাদের মধ্যে খাতির নাই’ তখন কি বলা যাবে ওই আদালতে ন্যায়বিচার হচ্ছে? তখন তো মানুষের মনে এই ধারণা হওয়াটাই স্বাভাবিক যে, আঁতাতের বা সমঝোতার রায় হয়েছে। সেই রায় নিয়ে মানুষের রাস্তায় নামাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিচারের প্রতি আস্থা না থাকলে দেশে নৈরাজ্য নেমে আসে, মানুষ আইন হাতে তুলে নেয়—সেটা তো আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যেই স্পস্ট। সে অবস্থায় আমরা এখন উপনীত হয়েছি।

ধরে নেয়া যাক, কোনো দেশের উচ্চ আদালত বা হাইকোর্ট বিভাগে যদি সম্পদের হিসাব গোপন করে মিথ্যা তথ্য প্রদানকারী, বিদেশে টাকা পাচারকারী ব্যক্তি বিচারকের আসনে বসেন—সেই দেশে কি মানুষ ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করতে পারেন? টাকা পাচারকারী বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সম্পদের হিসাব গোপনকারী ব্যক্তি কি কখনো ন্যায়বিচার করতে পারে? কোনো দেশের আদালতে যদি এমন ব্যক্তিকেও বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়, যিনি চারটি বিয়ে করেছেন! চারটি বিয়ে কতগুলো শর্তসাপেক্ষে ইসলামে জায়েজ আছে; তবে অস্বাভাবিক কোনো কারণে বা নৈতিক স্খলনের কারণে চারটি বিয়ে ইসলাম অনুমোদন করে না। ঘটনাটি হচ্ছে এরকম, নিজের আপন সত্ বোনের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে নৈতিক স্খলনের অভিযোগে বাসর রাতেই প্রথম বিয়ে ভেঙে যায়। তারপর আরেকটি বিয়ে করেন, সেই বিয়েও একই অভিযোগে কয়েক মাসের মধ্যেই ভেঙে গেল। তৃতীয় বিয়েও একই অভিযোগে ভেঙে গেল এবং শেষ পর্যন্ত চতুর্থ বিয়েটাও টিকল না। কারণ একটাই, সত্ বোনের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক। চতুর্থ স্ত্রীর সঙ্গে একই অভিযোগে বনিবনা হলো না, দুটি শিশু কন্যাসন্তান নিয়ে সংসার ভেঙে গেল। ঘটনাটি যদি এমন হয়—চতুর্থ বিয়ে ভাঙার বিষয়টি ফয়সালা এমন দু’জন ব্যক্তি করে দেন যাদের একজন বিচারক অন্যজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, তাহলে কেমন হয়! এমন নৈতিক স্খলনের ঘটনা জানার পরও যদি কাউকে দেশের উচ্চ আদালতে বিচারকের আসনে বসানো হয়, তাহলে সেই দেশে কি ন্যায়বিচার আশা করা যায়! চতুর্থ স্ত্রী একটি সরকারি কলেজের অধ্যাপিকা। একজন সাংবাদিক ওই স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে ওই কলেজে গিয়েছিলেন। কলেজে তাঁর সহকর্মী অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা যখন সাংবাদিকের মুখ থেকে শুনলেন তাদের সহকর্মীর স্বামী বিচারপতি হয়েছেন, তখন শুধু ছিঃ ছিঃ করলেন। বললেন বিচারব্যবস্থার অধঃপতন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটা আর মানুষের সামনে বলা যাবে না। আমি এখানে যেটা বললাম, সেটা গল্প নয়—একেবারে ধ্রুব সত্য ঘটনা।

আমি জানি, আদালত মন্দ কিছু করলেও সেটা বলা যায় না। আদালতের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা রয়েছে। তারা যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন, বলতে পারেন। তাদের মন্দ কথা ও কাজ নিয়ে কারও কিছু বলার বা লেখার এখতিয়ার নেই। ডেকে নিয়ে ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স বলে জেলে পাঠিয়ে দেয়ার এখতিয়ার আদালতের রয়েছে। সেকথা বলে একবার আমাকে জেলে পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিমকোর্ট। তখন ভাবছিলাম, কখনও সত্য কথা আর বলব না। মিথ্যা বলে যাব বা সত্য গোপন করব। কিন্তু সেটা পারি না। কারণ পিতার নির্দেশ—কখনও মিথ্যা কথা বলবে না। অন্যায়-অবিচার দেখলে কলম না ধরে পারি না। সত্য প্রকাশে অদম্য সাহসী সম্পাদক আমাদের সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের ভাষায় ‘চান্স এডিটর’-এর সঙ্গে কাজ করছি। তাঁর একজন নগণ্য সহকর্মী হিসেবে সত্য লিখনে অনুপ্রেরণা পাচ্ছি।

সত্য লেখা ও সত্য প্রকাশের কারণে এখন আবার ফ্যাসিবাদী মনোভাবের মানুষগুলো দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ার হুঙ্কার দিচ্ছে। ভয় দেখাচ্ছে আড়াইহাত গজারি লাঠির। গজারি লাঠি এবং হুঙ্কারের সামনে কোনো যুক্তি টেকে না। তারা সন্ত্রাসের ভাষায় কথা বলেন। ন্যায়-অন্যায় বা আইন-ইনসাফের তারা ধার ধারেন না। নির্বাসিত জীবনে অনলাইনে পত্রিকার পাতায় সেই হুঙ্কার দেখতে পাচ্ছি। যারা সেই হুঙ্কার দিচ্ছেন, তাদের মরহুম নেতা শেখ মুজিবুর রহমান মানুষকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচারের কথা বলে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। সেই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে ৩০ লাখ লোক প্রাণ দেয়। ধর্ষিত হয় অসংখ্য মান-বোন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে প্রথমেই গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনকে নির্বাসনে পাঠান বাংলাদেশের স্থপতি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান। সঙ্গে সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেন। বিচার বিভাগের গলা টিপে ধরে নিজের ক্ষমতায় নেন সবকিছু। কলমের এক খোঁচায় চারজন স্থায়ী বিচারপতিকে অব্যাহতি দেন। এক কথায় বিচার বিভাগের সব ক্ষমতা ছিল তাঁর হাতে। তাঁর কলমের খোঁচায় অব্যাহতি পাওয়া চারজন বিচারপতির মধ্যে একজন হলেন টিএইচ খান। একমাত্র তিনি এখনও বেঁচে আছেন। সেই নেতার ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ অনুসারীরাও আজ সত্য কথা, বস্তুনিষ্ঠ উচ্চারণ সহ্য করতে পারছেন না। সত্য কথা শুনলেই তাদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। যারা দৈনিক আমার দেশ বন্ধ করে দেয়ার হুঙ্কার দিচ্ছেন, তাদের কথা হলো—তারা যা বলবে সঙ্গে সুর মেলাতে হবে। কোরাস ধরতে হবে তাদের সুরের তালে। নতুবা বেঁচে থাকতে পারবে না। পরমত এরা কখনোই সহ্য করতে পারে না। তাদের নেতা শেখ মুজিবও সেটা পারতেন না।

যেই বিচারের বিরুদ্ধে তারা স্লোগান দিচ্ছেন, অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন, সেই আদালত তাদের সরকারেরই সৃষ্টি। এখানে কারা বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, নিয়োগের সময় সরকার ও মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে তাদের কী বলে দেয়া হয়েছে, সেটার কিছুটা বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম অকপটে বলেছেন তাঁর বন্ধু ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কাছে। সেই সত্যকথন প্রকাশ নিষিদ্ধ করে দেয়ায় এখানে বিস্তারিত কিছু না-ইবা বললাম। যতটুকু প্রকাশ হয়েছে তা থেকেই অনুধাবন করা যায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ কতটা ছিল বা রয়েছে।

ন্যায়বিচার ও ইনসাফের দিক থেকে কেউ যদি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তির যোগ্য অপরাধ করে থাকেন, আমিও তাদের ফাঁসি চাই। তবে সেটা হতে হবে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর ভাষায় মানুষের মনে ন্যায়বিচার হয়েছে সেই ধারণার মাপকাঠি থেকে। বিচারের নামে জুডিশিয়াল কিলিং বা ফাঁসি কোনো সুস্থ ন্যায়বান মানুষের কাম্য হতে পারে না। সোজাসুজি এটা বলাই ভালো, বিচার নয়—ফাঁসি চাই।

১২.০২.২০১৩

লিখেছেন আমার দেশ পত্রিকার সংগ্রামী প্রতিবেদক অলিউল্লাহ নোমান, যুক্তরাজ্য থেকে।

বিষয়: রাজনীতি

১১৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File