সুদ মানুষকে গরিব থকে গরিবতর করে আর যাকাত ব্যবসাকে বৃদ্ধি করে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ৩০ মার্চ, ২০১৩, ০২:৩১:৩৪ দুপুর

সামাজিক লেনদেনের একটি মাধ্যম হলো সুদ যা ব্যবসার সাথে জড়িত।বর্তমান পৃথিবীতে অমুসলিম ও মুসলিম দেশ গুলোতে সুদের বানিজ্য চলছে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ব্যাপি।সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যাক্তিগত পর্যায়ে সব যায়গায়ই এটাকে হালাল করে নিয়েছে।আর এ কারনে পুঁজিপতিরা ধনী থেকে ধনী আর গরিবরা আরো গরিবের দিকে ধাবিত হছ্ছে।সুদটা ঋনের সাথে সম্পর্কিত।যখন কোন ব্যাক্তি অর্থনৈতিক দুরবস্হার সম্মুখিন হয় তখনই তার ঋনের প্রয়োজন হয়।সমাজে মহাজন নামে এ সব লোক থাকে যারা নির্দিষ্ট মেয়াদে বাড়তি টাকার বিনিময়ে টাকা ধার দেয় আর তাদের আসল ঠিক থাকে।ঋনের ক্ষেত্রে আসলের চেয়ে এই যে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয় এটাই সুদ।বর্তমান সমাজে প্রাচীন মহাজনি পদ্ধতি এখন অনেকটা লোপ পেয়ে মডারেট পুঁজিপতি তৈরি হয়েছে যারা NGO(Non Government Organization) নামে পৃথিবির বিভিন্ন দেশ গুলোতে গরিবদের সাহায্যের নামে আবির্ভুত হয়েছে।মুসলিম দেশগুলোতে এ প্রতিষ্ঠান গুলো প্রভাব বিস্তার করার কারনে একদিকে মুসলিম সংস্কৃতির বিলোপসাধন হছ্ছে আর এক দিকে তারা নিস্ব ও সর্বশ্বান্ত হছ্ছে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঋনের টাকা নিয়ে তারা লাভবান হতে পারে না আর লাভবান না হওয়ার পরবর্তি ফল হলো তাদের ভিটেমাটি ঋনদাতার আশ্রয়ে চলে যাওয়া।আধুনিক ঋনদাতাদের প্রধান টার্গেটই এটা, গরীবদের সহযোগিতা করা নয়।

ইসলামের একটি মুলনীতি হলো ,শ্রম ও চেষ্টা দ্বারা কিছু বিনিময় লাভ করা।বিনা শ্রম ও বিনা চেষ্টায় কোন বিনিময় পাওয়ার নিয়ম ইসলামে নেই।মূলধন নিজে কোন শ্রম নয়।এটা আপনি থেকে বৃদ্ধি পায় না।মূলধনকে কোন কাজে বিনিয়োগ করলে লাভ বা ক্ষতি দু'টোরই সম্ভাবনা থাকে।আধুনিক পুঁজিপতিরা ক্ষতির ঝুঁকি নিতে রাজি নয়।সে জন্য তারা সুদি কারবারে টাকা খাটায়।তারা যদিও গরীবদের উন্নয়নের কথা বলে , জনসেবার কথা বলে আসলে তাদের এ উদ্দেশ্য নয়।আসল উদ্দেশ্য হলো ঘরে বসে নিজের টাকাকে আরো বাড়তি টকায় রুপান্তরিত করা।এ জন্যই দেখা যায় যখন কোন গরিব ঋন নিয়ে টাকা পরিশোধ করতে পারে না তখন পুঁজিপতিদের আসল চেহারা উম্মোচিত হয়।আল্লাহপাক এ কারনেই গরিব মানুষের স্বার্থে সুদকে হারাম করেছেন আর ব্যবসাকে হালাল করেছেন।সূরা আল বাক্কারার ২৭৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,' তারা বলে ব্যবসাতো সুদের মতো।অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম।' বাহ্যিক দৃষ্টিতে শোষনটা বুঝা যায় না।মনে হয় ঋন নিয়ে গরিব মানুষতো উপকারই পাছ্ছে কারন ঋনদাতা দুর্দিনে সাহায্য করছে।কিন্তু বাস্তব তা নয়।যে ব্যাক্তি বা সংস্হা ঋন দিয়ে থাকে তারা ঋন গ্রহিতার লাভলোকসানের ধার ধারে না।ঋন গ্রহিতার সাথে তাদের চুক্তি লাভ লোকসান যা-ই হোক শতকরা এত হারে সুদ দিতে হবে।এভাবে ঋন নিয়ে যখন ঋন গ্রহিতা লোকসানে পড়ে যায় তখন তাকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ গুনতে হয়।আর এ ঋন পরিশোধ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। এর ফলেই দেখা যায় ঋনদাতা ঋন গ্রহিতার বাড়িঘর , আসবাবপত্র ক্রোক করতে এগিয়ে আসে আর ঋন গ্রহিতা এভাবে নি:শ্ব হয়ে যায়।

ইসলামে এই জাতীয় ঋনদাতাকে বলা হয় জালেম।

সুদি ব্যাবস্হা অকল্যানকর বলেই আল্লাহ এ ব্যাবস্হাকে নিষিদ্ধ করেছেন।আল্লাহ এ পৃথিবি ও তার মধ্যে যা আছে সৃষ্টি করেছেন, তিনি জানেন তাদের জন্য কোনটা ভাল ও কোনটা খারাপ।সুদ মানুষের ভিতর স্বার্থান্ধতা ,সংকীর্নমনতা ও অর্থপূজার মানুষিকতা সৃষ্টি করে সুদ,ঘুষ,যেনা,মদ,জুয়া,বেপর্দা,অপচয় এগুলোকে আল্লাহ হারাম করেছেন অথচ মানুষেরা এগুলোকে সমাজ থেকে উপড়ানোর কোন চিন্তা করে না বরং এর মধ্যেই জীবন যাপন করছে।এর অর্থ হলো তাদের কাছে ইসলামি জীবনের মুল্যবোধ নেই।আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজের নফসকে ইলাহা বানিয়ে নিয়েছে।আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত ভোগ করে মানুষের একটা শ্রেনি যে অকৃতজ্গ হবে তা আল্লাহর জানা রয়েছে।সূরা আল জাসিয়ার ২৩ আয়াতে সেজন্য আল্লাহ বলেছেন,সে তার মনকে ইলাহা বানিয়ে নিয়েছে।' আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এর পরও সে নিজেকে মুসলিম মনে করে।অথচ একজন মুসলিম হলো যে আল্লাহর বিধানের কাছে নিজেকে সমর্পিত করেছে।ইসলামের একটি বিধানও অমান্য করার এখতিয়ার কোন মুসলিমের নেই।সুদ সম্পর্কে সূরা আল বাক্কারার ২৭৮/৭৯ আয়াতে আল্লাহপাক কঠোর ভাষা প্রয়োগ করেছেন,' হে ঈমানদার গন আল্লাহকে ভয় কর।যাদের কাছে সুদের টাকা পাওনা আছে তা ছেড়ে দাও যদি তোমরা মু'মিন হয়ে থাক।আর যদি তা না কর , তাহলে আল্লাহ তার রাসূলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করা হলো।'

মানুষ সুদে টাকা খাটায় টাকা বাড়াতে ও ধন সম্পদ অর্জনের উদ্দেশ্যে।কিন্তু সূরা আর রোমের ৩৯ আয়াতে আল্লাহ বলছেন,'মানুষের মাল বাড়াতে এই যে তোমরা সুদ দিয়ে থাক আল্লাহর কাছে তা মোটেই বাড়ে না।তবে আল্লাহকে খুশি করতে তোমরা যে যাকাত দাও তা-ই মূলত বাড়তে থাকে।' পুঁজিপতিরা টাকার এত গোলাম হয়ে যায় যে তারা টাকা ছাড়া আর কিছুই বুঝে না।আজকের সমাজে গরিবের যে অবস্হা দেখছেন এটা তারই ফল।যাদের কাছে টাকা আছে তার সঠিক সন্চালন হছ্ছে না।টকার সন্চালনটাকে আমরা আমাদের শরিরে রক্ত প্রবাহের সাথে তুলনা করতে পারি।শরিরের কোথাও যদি রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে মানুষের নির্ঘাত মৃত্যু।সমাজে যদি টাকার সঠিক সন্চালন না হয়ে কোথাও জমা হয়ে যায় তাহলে সমাজে সৃষ্টি হয় বৈষম্য।আর এই বৈষম্য সৃষ্টি করে নীরিহ গরিবের।সূরা বাক্কারার ২৭৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'আল্লাহ সুদকে কমিয়ে দেন আর দানকে বাড়িয়ে দেন।' এই দান হলো যাকাত।যাকাত ধনী ও গরিবের বৈষম্য দূর করে।ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর রা: এর সময় যাকাত নেয়ার মত মানুষ সমাজে ছিল না।আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা: বলেন,নবী সা: সুদখোর,সুদদাতা,সুদের কারবারের সাক্ষী ও সুদের কারবারের লেখক এই চার শ্রেনীর উপর অভিসম্পাত করেছেন।মুসনাদে আহমাদে বর্নিত হয়েছে রাসূল সা: বলেছেন,'জেনে শুনে সুদের একটি টাকা খাওয়া মায়ের সাথে ছত্রিশ বার যেনা করার সমান।' সুনানে আবুদাউদে রাসূল সা।বলেন,'কেউ কারো জন্য সুফারিশ করলে ঐ ব্যাক্তি যদি কোন উপটৌকন পাঠায় আর যদি সুফারিশকারি তা গ্রহন করে সেটাও সুদ হিসেবে গন্য হবে।'

ইসলামের আসল উদ্দেশ্য হলো সমাজ থেকে পুঁজিবাদ উছ্ছেদ করা।পুঁজিবাদের উদ্দেশ্য হলো সুদ।সুদ নিষিদ্ধ হলে পুঁজিবাদের শিকড় কেটে যায়।পুঁজিবাদ উছ্ছেদ হলে সমাজে পরস্পর সহানুভূতির আবির্ভাব ঘটে।অভাবি মানুষগুলোকে যদি ধনিরা কর্জে হাসানা দেয় তাহলে তারা নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করতে পারে আর সে টাকায় তারা উন্নতি করতে পারে ও তাদের লাভের টাকা তাদের কাছে থাকার ফলে তারা সছ্ছল হয়ে উঠে ও সামাজিক বৈষম্য দূর হয়ে যায়।সূরা আয যারিয়াতের ১৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' তাদের(ধনীদের) সম্পদে অভাবি ও বন্চিতদের ভাগ রেয়েছে।' ইসলাম আমাদের সহানুভূতিশীল হওয়া শিখায় যা অন্য কোন ধর্মে দেখা যায় না।সূরা বাক্কারার ২৮০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তোমাদের ঋন গ্রহীতা যদি অভাবি হয় তবে তাকে সছ্ছল হওয়া পর্যন্ত সময় দাও,আর যদি ঋনের টকাটা দান করে দাও তা আরো ভাল যদি তোমরা বুঝ।' জাতিসংঘের আওতাধীন যে সমস্ত সংগঠন তৈরি হয়েছে তারা গরীব দেশগুলোকে উচ্চ সুদের হারে যে অর্থ প্রদান করে তা দিয়ে দেশের কোন উন্নতি হয় না কারন এ অর্থের একটা অংশ চলে যায় প্রশাসনের পেটে বাকি যা থাকে তা দিয়ে উন্নয়নের প্রহসন চলে।আর দেশকে টানতে হয় চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের বোঝা।জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্হা (FAO) এর রিপোর্ট থেকেজানা যায় বিশ্বে যত খাদ্য উৎপন্য হয় তার যদি সমতায়ন হতো তাহলে মানুষের খাবারের অভাব হতো না।উন্নত দেশগুলো যদি খাবারের অপব্যবহার না করতো তাহলে আফ্রিকা সহ অন্যান্য মহাদেশে যে ক্ষুধার্ত মানুষগুলো আছে তারা দিন দিন হাড্ডিসার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তো না।চতুর্থ শতাব্দি থেকে অষ্টম শতাব্দি পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি সুদ ছাড়াই পরিচালিত হয়েছিল।সে সময় মুসলিম বিশ্বই উন্নত ছিল,জ্গান বিজ্গান,অর্থনীতি ও শিল্পকলায়।ইউরোপীয় সভ্যতা আসে তার অনেক পরে।সুদ থেকে মুক্ত থেকে সমাজ গড়ার হাতিয়ার উদ্ভাবনের জন্য প্রতিটি মুসলিমকে মুক্ত চিন্তা বাড়াতে হবে কোরআন ও হাদিস অধ্যয়নের মাধ্যমে।এর বিকল্প চিন্তা করলে সমাজ আরো অস্হির থেকে অস্হিরতার দিকে ধাবিত হবে।

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পাটোয়ারি

সিনিয়র বিসাব রক্ষক

সৌদি বিনলাদিন গ্রুফ ,জেদ্দাহ।

বিষয়: বিবিধ

২০৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File