মুসলিমদের সমুদ্র পাড়ে বনভোজন ও সমুদ্রপ্রিতি

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৯ মার্চ, ২০১৩, ০৯:০৬:৩৩ রাত

শ্রদ্ধেয় পাঠক,উপরের শিরোনামটিতে আসার আগে মুসলিম কাকে বলে বা কি করলে একজন মুসলিম হয় তা জানা বোধ করছি।মুসলিম একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ আত্মসমর্পনকারি।ইসলামের পরিভাষায় যে নিজেকে আল্লাহর কাছে সপে দিয়েছে আল্লাহ নির্দেশিত হালাল ও হারাম মেনে চলার মাধ্যমে।নিজেকে মুসলিম মনে করলেই মুসলিম হয় না বা মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেই মুসলিম হয় না।দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর কিছু বিধিনিষেধ আছে তা মেনে চলতে হয় একজন মুসলিমকে।আল্লাহ ও তার রাসূল সা: যে জিনিগুলো ফরয করেছেন সেগুলো পালন করা বাধ্যতামুলক আর বড় ও ছোট গুনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকতে হয় একজন মুসলিমকে।ঈমান আনার পর একজন মুসলিমকে দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে আদায় করতে হয়।মুসলিমদের সাথে এই নামাজ আদায় করা ও অন্যদের নামাজে ডাকা একজন মুসলিমের কাজ।এভাবেই নামাজ আদায় করাকে নামাজ কায়েম করা বলে।আর মুসলিম শাসক হলে শাসকের পক্ষ থেকে নামাজের সময় সব কাজ কর্ম বন্ধ থাকবে।যেমন সৌদি আরবে এভাবে পালন করে যা সূ্রা হজ্বে বর্নিত হয়েছে।যারা নামাজে অবহেলা করে ও লোক দেখানো নামাজ পড়ে তাদের ব্যাপারে সূরা মাউনের ৪-৬ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,'ঐ নামাজিদের জন্য ধ্বংস যারা তাদের নামাজের ব্যাপারে অবহেলা করে এবং লোক দেখানো কাজ করে।'

আমরা যদি আল্লাহর আদেশ নিষেধগুলো মেনে না চলি বা আংশিক মেনে চলি তাহলে আমরা কি করে মুসলিম হই? যে ব্যাক্তি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করে সে কি করে তার নির্দেশের বাইরে চলে? এই আংশিক ইসলমের আইনকানুন যারা মেনে চলে তাদের ব্যাপারে সূরা বাক্কারার ৮৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ মানবে আর কিছু অংশ মানবেনা! যারা এরুপ করবে দুনিয়ার জীবনে তারা অপমান ও লান্চনা ভোগ করবে আর আখেরাতে তাদের কঠিন আযাবের দিকে ফিরানো হবে।'সূরা আল বাক্কারার ২০৮ আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন,'হে ঈমানদারগন! তোমরা পরিপূর্নভাবে ইসলামে দাখিল হও এবং শয়তানের পদান্ক অনুসরন করোনা।এই আয়াত দু'টো থেকে নামধারি মুসলিমের দু'টো বৈশিষ্ট অনুমান করা যায়।১-আংশিক ইসলাম মেনে চলা।আংশিক ইসলাম মেনে চলা হলো সুবিধাজনক ইসলাম মেনে চলা।আর যেগুলো তার জন্য অসুবিধাজনক সেগুলো না মানা।যেমন-নামাজ না পড়া,সুদ খাওয়া ,ঘুষ খাওয়া,যেনা করা ,পরের হক্ক নষ্ট করা ,স্ত্রি পুরুষ মিলে একসাথে আড্ডা দেয়া,ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা সুবিধা জনক নয়।এই মুসলিম আল্লাহর নিকট পাছেক মুসলিম হিসেবে পরিচিত।আর পাছেকদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।২-শয়তানের অনুসরন।আল্লাহ ও তার রাসূল সা: যে সব কাজ করতে নিষেধ করছেন সেগুলো শয়তানের কাজ।সেটা যদি মোবাহ ও হয় তাও দূরে থাকতে হবে।প্রতিটি মানুষের মধ্যে একটা ভায়ের ব্যাপার রয়েছে।মানুষ ভয় পায় দু'ভাবে।চোখে দেখে ও বিশ্বাস করে।ধরুন একটি হিংস্র জন্তু যদি আপনার চোখের আড়ালে থাকে তাহোলে আপনি ভয় পাবেন না।কারন আপনি জানছেন জন্তুটি আছে তবে তা আপনার থেকে দূরে।এটা আপনার বিশ্বাসের ব্যাপার। আর যদি সত্যিই জন্তুটি আপনার সামনে এসে পড়ে তাহলে আপনি দেখেই পালাতে শুরু করবেন।আল্লাহর ভয়টিও বিশ্বাসের ভয়।কোরআন হাদিস বলছে দুনিয়ায় যা অশ্লিলতা ও ভাল কাজ করছেন তার বিচার হবে আর আপনাকে সে অনুযায়ি আপনার পাওনা হয় জান্নাত বা জাহান্নাম দেও্য়া হবে।আখেরাতের যে ব্যাপার সেটা না দেখে ভয়ের ই ব্যাপার।

গত কয়েক দশকে দেশে বিদেশে সমুদ্র দেখতে গিয়ে যে অভিজ্গতা হয়েছে তা এক বিচিত্র অভিজ্গতা।অমুসলিমদের ব্যাপারে আমার কোন অভিযোগ নেই।কারন তারা এ জীবনকে বেচে নিয়েছে।আমরা যারা মুসলিম বলে দাবি করি তারা তো তাদের মত চলতে পারিনা।আমরা এক সময় গুটি কয়েক পরিবার নিয়ে গেলেও ছিল শালিনতা।গত আট বছর থেকে এ কাজটি বন্ধ করেছি ইসলামি শরিয়তকে জানার পর।ইদানিং তথাকথিত কোন দাওয়াতে যাই না।আমাদের কমিউনিটিতে দাওয়াত মানে রাজনৈতিক আলোচনা আর গীবতের সমাহার।আর এর সাথে মহিলাদের সাজের বাহার।ইসলাম এত সুন্দর জীবন বিধান অথচ চর্চার কারনে এর সৌন্দর্য মোহিত করছে না কাউকে।একজন স্বামি যেমন স্ত্রির জন্য আবার স্ত্রি ও স্বামির জন্য।অধিকাংশ স্ত্রিরা ঘরে অগোছালো ও অপরিছ্ছন্ন থাকে। যে শাড়িটা বা সেলোয়ার কামিছটি পুরনো সেটা শোভা পাবে স্বামির অঙনে। আর ভাল যে পোষাকটি সেটা পরে যাবে পার্টিতে আর দেখবে হাজার লোক।প্রসাধনির ব্যাপারেও একই ব্যাপার।ইসলামে পর্দার বিধান করা হয়েছে যেন সামাজিক জীবনে মানুষ কল্যান প্রাপত হয়।সবচেয়ে যে বিষয়টি হৃদয় স্পর্শ করে সে হলো ছোট ছোট সোনামনিরা কি শিখছে।সূরা আলিমরানে ১৯০ আয়াতে আল্লাহ বলছেন,'আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং দিন ও রাত্রির আবর্তন, এর মধ্যে জ্গানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।' এই নিদর্শন দেখার পরেও একজন মুসলিম কি করে হাজার মানুষের ভিড়ে অশ্লিলতার মধ্যে প্রমোদ ভ্রমনে যায়।বেশ কয়েক বছর ধরে যে বিষয়টি লক্ষ্য করছি তা হলো সমুদ্র পা্ড়ে রাত যাপন।বছর খানেক আগে আমাকে এক বন্ধু রেড সি এর পাড়ে week end যাপন করার জন্য দাওয়াত করলো।আমি আমার অপারগতা প্রকাশ করলাম।অনেক অনুরোধে পিকনিক স্পটে গিয়ে আমি আর বসাটা পছন্দ করলাম না।আমি আমার আরো কিছু অভিজ্গতা সন্চয় করার জন্য গাড়ি চাপলাম।ধীরে ধীরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার গেলাম।এর মধ্যে যেখানে বেশি ভিড় ছিল সে যায়গাগুলো পর্যবেক্ষন করলাম।কেউ মুরগী পোড়াছ্ছে, কেউবা মাছ ধরছে, কেউ বসে আড্ডা দিছ্ছে,কেউ হাটছে।এক যায়গায় গিয়ে দেখলাম সমুদ্রের চরে যেখানে অল্প পানি সেখানে মুসলিম ও নন মুসলিম মেয়েছেলেরা পানিতে নামছে।পানি থেকে উঠে আসার সময় পানির আদ্রতায় টিন এজ মেয়েদের বিকিনির দৃশ্য অন্যরা লোলুপ দৃষ্টিতে দেখছে।আমার পক্ষে আর কিন্চিৎ দেরি করা সম্ভব হলো না।আমার বন্ধুটিকে মোবাইল করে বললাম আমি অনেক দূর চলে এসেছি এখনি বাসায় ফিরবো।পরে জানলাম আমার সে বন্ধুরা ৮ পরিবার সেখানে প্রায়ই যায়।এক পাশে থাকে মেয়েরা আর এক পাশে ছেলেরা।খাবার দাবার ওরা আগে থেকেই সবাই ব্যাবস্হা করে নেয়।রাতের কাজ হলো কবিতা গান নিয়ে আড্ডা জমানো।বিভিন্ন কমিুনিটির লোকজন এভাবে দীর্ঘ রাত যাপন করে ও ঠিক ফজরের নামাজের আগে বাসায় ফিরে।চাকুরিজিবি ব্যাসেলর মেয়েরাও এভাবে রাত যাপন করে কলিগদের সাথে আজকাল।অথচ তারা মুসলিম।আবার ইসলামের পক্ষের কিছু পরিবারও এ কাজটা করে থাকে।এ ব্যাপারটি মাঝে মাঝে আমাকে পিড়া দিত।আমরা যতই শালিনতা বজায় রাখি না কেন।আমার চোখ ও আমার অন্তরকে তো এত নিয়ন্ত্রন করতে পারিনা। শয়তান অংগিকার করে এসেছে আর আমাদের রক্তে সে প্রবাহিত হওয়ার স্বাধীনতা তার আছে।একজন প্রথিতজসা ঈমামকে জিজ্গেস করেছিলাম এ ব্যাপারটি। তিনি বলেছিলেন আপনার তাক্কওয়া অশ্লিলতা থেকে আপনাকে দূরে রাখতে সচেষ্ট করবে।যার ঈমান যত দৃড় হবে সে তত বেশী তাক্কওয়া অবলম্বন করবে।

জুন জুলাই আসলে একদল মুসলিম ছুটিতে ইউরোপে যায়।অনেক দেশে না গিয়ে যে সব দেশগোলো বেশি ওপেন সেখানে যায়।গত বছর দু'টো পরিবার গিয়েছিল মিশরে আলক্জান্দ্রিয়া ও পশ্চিম উপকূলীয় আর একটি স্বাস্থকর স্হান চার্ম আল শেখে।সেখানে নন মুসলিমদের চেয়ে মুসলিমরাই বেশি।এক পরিবার বললো অশ্লিল পরিবেশে আমাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে আর থাকা হয় নি কারন সি বিছ গুলোতে বিকিনির ছড়া ছড়ি।যেখানে ছোখ পেলবেন যেনা ব্যাভিচার আপনার চোখ ও অন্তরকে কলুষিত করবে।আপনি যাকে প্রমোদ মনে করছেন সেটা আপনার সন্তানের জন্য প্রমোদ নয়।তার প্রখর মস্তিষ্ক সেটা মনে রাখবে সারাটি জীবন।শিশুটি যখন বড় হবে তার মন তাকে সেদিকে যেতে আলোড়িত করবে। সে জন্য সুস্হ পরিবেশ না হলে ছোটদের এ সব যায়গায় নিয়ে যাওয়া মানে তাদের জীবনকে বিপন্ন করা।সূরা নিসার ৫৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'যে সব ঈমানদার লোকরা সৎ কাজ করছে ,তাদেরকে আমি এমন জান্নাতে প্রবেশ করাব যার নিছে ঝর্নাধারা বইতে থাকবে, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল।' ইবনে মাসুদ রা: থেকে বর্নিত রাসূল সা: বলেন,'মু'মিন ব্যাক্তি নিজের গুনাহ সম্পর্কে এত বেশি ভয়ে থাকে যেন সে পাহাড়ের নিছে বসে আছে আর পাহাড়টি সহসা তার উপর ভেংগে পড়ার ভয় রয়েছে।আর পাপি লোক গুনাহকে মনে করে একটি মাছির মত যা তার নাকের ডগার উপর দিয়ে উড়ে যায়।(ছহি বোখারি)

বিষয়: বিবিধ

১৬০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File