মাযহাব ও আজকের মুসলিমদের বিভ্রান্তি।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৮ মার্চ, ২০১৩, ০৬:১৬:৫১ সন্ধ্যা
সমস্ত প্রশংশা আল্লাহর যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে এবং আরশে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।আমরা পানাহ চাই ইবলিশ শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে। আল্লাহ যাকে পথ দেখান তিনি বিপথে যান না আর আল্লাহ যাকে বিপথগামি করেন তিনি সরল পথ পান না।আমি সাক্ষ্য দিছ্ছি আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবুদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিছ্ছি হযরত মোহাম্মদ সা: আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল।সর্বোত্তম কিতাব আল্লাহর কিতাব এবংসর্বোত্তম পথ হযরত মোহাম্মদ সা: এর পথ।ইসলাম যে পথের নির্দেশনা দিয়েছে তা মানুষকে সরল পথে পরিচালিত করে অন্যান্য ধর্ম যে পথ দেখিয়েছে তা ভুল পথে পরিচালিত করে।আপনারা যারা দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের চর্চা করেন তারা দেখে থাকবেন বর্তমান বিশ্বে মুসলমানরা দ্বিধাবিভক্ত অর্থাৎ তাদের মধ্যে একতা নেই।বিষয়টি খুবই গুরুত্বপুর্ন।এমনকি আজকাল একজন প্রতিবেশি আর একজন প্রতিবেশিকে চিনে না। রাসূল সা: বলেছেন যে নিজে খেয়ে ঘুমায় ও তার প্রতিবেশি ক্ষুধার্ত থাকে সে মু'মিন নয়।আমি আপনি শুধু ভাল থাকলাম আর আমাদের পাশে মানুষ পন্কিলে ডুবে গেল কি মুল্য আছে আমাদের এই ইবাদাতের? সমাজ পরিবর্তনে আমাদের ভূমিকা কি তা জানতে হবে।শির্ক ও বিদাআতি কায়দায় সমাজ পরিবর্তন করা যায় না।আমাদের উদ্দেশ্য হলো ইসলাহ বা সংশোধন করা।সঠিক তথ্যগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।কারো উপর কোন জবরদস্তি নয় বরং সুন্দর আচরনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এক মু'মিন আর এক মু'মিনের জন্য আয়নার মত কাজ করা। সূরা হুদের ৮৮ আয়াতে হযরত শোয়াইব আ:বলেছিলেন,' আমি শুধু চাই সংস্কার করতে যতটা আমি সাধ্যমত করতে পারি।আমি আল্লাহর সাহায্য কামনা করি,আল্লাহর উপরই নির্ভর করি আর তার দিকেই আমি ফিরি।' ওহির জ্গান যার কাছেই এসেছে তার দায়িত্ব হলো মানুষকে উত্তম নসিহত করা।আমাদের দেশে অনেকে যারা দ্বিনি বক্তৃতা দেন তাদেরও দেখেছি অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের মত কথা বলতে।আপনি যদি ইসলাম প্রচারক হয়ে থাকেন আপনার কথায় সুগন্ধ বেরুবে।নাম ধরে সমালোচনা করা সমিচিন নয়।আপনাকে ভাবতে হবে তার কাছে দ্বীন নেই বলেই তো সে দূরে।আপনি কেন গাল মন্দ করে তাকে দূরে সরিয়ে দিছ্ছেন।আপনি ইসলাম প্রচার করছেন।আপনার কাজ হলো ইসলামের মধুর বানি নিয়ে তাদের কাছে যাওয়া।সুন্দর ভাষায় তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।তারা যা করে আপনি যদি তার প্রতিদ্বন্দি হন তাহলে সংঘর্ষই বাড়বে।তারা আপনার ফাছেক মুসলিম ভাই।ইসলামের ইতিহাস দেখুন।প্রথম দিকে ক'জন ইসলাম গ্রহন করেছে।আবুসূফিয়ান ২১ বছর পর ইসলাম গ্রহন করেছে।খালেদ বিন ওয়েলিদ যিনি ওহুদ যুদ্ধে ইসলামের বিরুদ্ধাচারন করছেন।ওমর রা: রাসূল সা:কে হত্বা করার জন্য গিয়ে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন।নবী সা: বলেছিলেন আামার পরে কোন নবী আসবে না যদি নবী আসতো ওমর নবী হয়ে যেত। এর পর অনেক সাহাবি ইসলামে দীক্ষিত হয়ে ইসলামের প্রভূত বিজয় এনে দিয়েছিলেন।রাসূল সা: পৃথিবীতে এসেছিলেন মানবতার কল্যানের জন্য। এমনকি সাহাবারা বলেছিলেন মুশরেকদের জন্য বদদোয়া করার জন্য। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন আমাকে বদদোয়া কারি হিসেবে পাঠানো হয় নি।আমাদের সহনশীল হতে হবে।আমাদের দেশে ইসলামি শাসন কায়েম নেই।আপনার আমার কাজ হলো যারা বিভক্ত আছে তাদের এক মুসলিম উম্মাহর দিকে ডাকা।গনতন্ত্রের পিছনে হেঁটে ইসলাম কায়েম নয় বরং এক মুসলিম উম্মাহ হিসেবে কুরআন ও ছহি সূন্নাহকে আঁকড়ে ধরে খোলাফায়ে রাশেদিনের পথ অবলম্বন করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
আল্লাহপাক তার বান্দার জন্য তার মনোনীত দ্বীন ইসলাম মনোনয়ন করেছেন যা সূরা মায়েদার ৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মব্যবস্হা পূর্নাঙ করলাম,তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পুর্ন করলাম আর তোমাদের জন্য ধর্মরুপে মনোনীত করলাম ইসলাম।' ইসলামের মাধ্যমে রোজ ক্কেয়ামত পর্যন্ত যা যা দরকার তা বর্ননা করেছেন।আর একজন রাসূল পাঠিয়েছেন যিনি এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি।যিনি সবচয়ে বেশী ভয় করেছেন আল্লাহকে,যিনি সবচেয়ে বেশি ছহি আমল ও ইবাদাত করেছেন। আল্লাহর দিনকে মানবজাতির কাছে সুন্দরভাবে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন।মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুসরনীয় হলো রাসূল সা: এর পর প্রথম শারির যারা ঈমান এনেছেন অর্থাৎ সাহাবাগন , তাবেঈগন , তাবে তাবেঈগন।এই যুগকে ইসলামের সোনালি যুগ বলা হয়।আমরা ইসলামের পাথেয় সংগ্রহ করার জন্য এদের চরিত্রকে পর্যালিচনা করেই দ্বীন গ্রহন করবো। আর রাসূল সা: বিদায় হজ্বে বলেছেন,' আমি তোমাদের জন্য দু'টো জিনিস রেখে যাছ্ছি যদি তোমরা তা আঁকড়ে ধর কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। এ দু'টি বিষয় হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার সূন্নাহ।' এই পরিষ্কার ভাষ্য থাকতে উম্মাহর আর কোন কিতাবের প্রয়োজন আছে কি? আপনি একজন মুসলিম।আপনাকে প্রশ্ন করুন।আপনার কাছে যে ইসলামের বারতা এসেছে তার উৎপত্তি কোথায়? ইসলামের উৎপত্তি হলো মক্কা ও মদিনায়।সেখানে কিভাবে ইবাদাত হছ্ছে তা দেখুন।তারা খুঁজে দেখছে না মক্কা ও মদিনায় কিভাবে ইসলামের কাজ চলছে।ইসলামের সরল রাস্তা জানা না থাকলে জানতে হবে ও জানার পর শির্ক ও বিদা'আতকে বর্জন করতে হবে।আর জানার পরও যারা ওগুলো আঁকড়ে থাকবে তারা স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে জীবনযাপন করবে ও তাদের পরিনাম হলো জাহান্নাম।ইসলামে ভাল মন্দ দু'টো কাজ একসাথে চলতে পারে না।আল্লাহপাক মানুষকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়েছেন যেন পরিক্ষা করতে পারেন।আল্লাপাক অতিত , বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জানেন। তিনি জানেন কে জান্নাতে যাবে ও কে জাহান্নামে যাবে।তিনি যদি জান্নাতিদের জান্নাতে রাখতেন তাহলে তারা কোন কথাই বলতো না কারন সেটা আরামের যায়গা।কিন্তু জাহান্নামিদের জাহান্নামে রাখলে তারা বলতো আমরা দূনিয়ায় কখনো খারাপ কাজ করতাম না।সে জন্য দুনিয়ার জীবনে এ ব্যবস্হা রাখা হয়েছে যেন তিনি ক্কেয়ামতের দিন বিচার করতে পারেন ও কেউ তখন আর অভিযোগ করার প্রয়াস পাবে না।
আমার জীবনের একটা দীর্ঘ সময় দেখে আসছি ভারতীয় উপমহাদেশে মাযহাব নিয়ে একটা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আছে।মাযহাব হলো পথ আর সূন্নাহও হলো পথ। ঈমাম আবুহানিফার জন্ম ৮০ হি:তে রাসূল সা: এর মৃত্যুর ৭০ বছর পর।১১০ হি:তে রাসূল সা: এর শেষ সাহাবির মৃত্যু হয়।সে হিসেবে ঈমাম আবু হানিফা একজন তাবেয়ি।ঈমাম আবু হানিফার পর তিনজন ঈমাম , ঈমাম মালেক , ঈমাম সাফেয়ি ও ঈমাম আহমেদ ইবন হাম্বল দ্বীনি খেদমত করেছিলেন।সূরা আল ইমরানের ৬৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'বলো হে গ্রন্হপ্রাপ্ত লোকেরা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে পরস্পর সমঝোতার মধ্যে এসো যেন আমরা আল্লাহ ছা্ড়া কারো এবাদত করবোনা,তার সাথে অন্য কিছুকে শরিক করবোনা,আর আমরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে মনিব বলে গ্রহন করবোনা কিন্তু তারা যদি ফিরে যায় তবে বল সাক্ষি থেকো আমরা কিন্তু মুসলমান।' এ আয়াত বলছে যাদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে তারা আলোচনার মাধ্যমে এক হয়ে যেতে পারে। যদিও এই আয়াতটি মুশরিক ও কাফেরদের উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে , এমনকি মুসলিমরা যারা ভিন্নমত পোষন করে তাদের জন্যও নির্দেশনা রয়েছে যাতে করে তারা সরল পথে আসতে পারে।আমাদের ইসলাম ধর্মের ভিত্তি হলো দু'টো জিনিস। আলকোরান ও রাসূল সা: এর সূন্নাহ। তাহলে বিভেদ আসে কোথা থেকে? আজকের একজন মুসলিমকে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি কোন মতবাদ মেনে চলেন বা আপনার মাযহাব কি? বেশির ভাগ মুসলিম বলবে হানাফি।কিছু সংখ্যক লোক বলবে মালিকি , শাফেয়ি বা হাম্বলি।যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি কেন হানাফি? কেন অন্য কোন মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত নন? তাহলে হয়ত বলবে একটা মাযহাবই মেনে চলা ভাল । যদি প্রশ্ন করা হয় অন্য মাযহাবগুলোর ক্রুটি কি যা আপনি মানছেন না? তাহলে কোন জাবাব মিলতে পারে বা নাও মিলতে পারে।আবার কেউ হয়ত বলবে আমি হানাফি কারন আমার পিতামাতা হানাফি মাযহাব অনুসরন করেন।আর আমরা ইতিহাস থেকে দেখেছি যিনি মুসলমানের ঘরে জন্মান তিনি মুসলিম,যিনি খৃষ্টানের ঘরে জন্মান তিনি খৃষ্টান।যিনি ইহুদির ঘরে জন্মান তিনি ইহুদি হন।আবার আল্লাহর ইছ্ছায় যিনি ধর্মান্তরিত হন তিনি ও মুসলিম হন।সূরা আনকাবুতের ৬৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' যারা আমাদের জন্য সংগ্রাম করে আমরা তাদের পরিচালিত করবো আমাদের পথ গুলোয়।আল্লাহ নিশ্চয়ই সৎ কর্মিদের সাথে রয়েছে.' আমাদের মনে রাখতে হবে সমস্ত সাহাবা ও পরবর্তিকালের মুহাদ্দিছিন গন অনুসরন করেছিলেন রাসূল সা: এর সূন্নাহ।আর পরবর্তিকালের যে চারজন ঈমাম তারাও অনুসরন করেছিলেন রাসূল সা: এর সূন্নাহ।তাহলে মুলকে ছেড়ে দিয়ে পরবর্তিকালের উম্মতগনের এই চারজন ঈমামকে অতিভক্তি করার কারন কি? আমাদের সবচয়ে বেশি ভালবাসা বেশি আল্লাহ ও তার রসূল সা: এর জন্য।তারপর পরের মু'মিন যারা রাসূল সা:কে অনুসরন করেছিল।আসুন চারজন ঈমাম থেকে জেনে নেই তারা কিভাবে ইসলামের পথকে চিন্তা করতেন।
১- ঈমাম আবুহানিফা (র) বলেছেন,' হাদিস বিশুদ্ধ হলে তাই আমার মাযহাব বা পথ।আমরা কোথা থেকে মাসআলা গ্রহন করেছি তা না জেনে আমাদের বক্তব্য গ্রহন করা যায়েয নয়।যে আমার কথার দলিল অবগত নয় তার জন্য আমার বক্তব্য উদ্ধৃত করে ফতোয়া দেয়া যায়েয নয়।তনি তার এক নাম্বার ছাত্র ঈমাম ইউছুফকে লক্ষ্য করে বলেন,'ওহে ইয়াকুব তোমার জন্য দু:খ হয় তুমি আমা থেকে যা শুন লিখ না কারন আমি আজ যে বিষয়ে অভিমত পোষন করি আগামিকাল তা পরিহার করি আর আগামিকাল যা পোষন করি তা পরের দিন পরিহার কর.'
২-ঈমাম মালেক বিন আনাস (র) বলেন,'আমি মানুষ ভুল শুদ্ধ দু'টো ই করি সুতরাং তোমরা আমার অভিমত সম্পর্কে মনোযোগ সহকারে ভেবে দেখ।তাতে যা কোরআন ও সূন্নাহর সাথে মিলে তা গ্রহন কর।আর আমার যে সব অভিমত কোরআন ও সূন্নাহর সাথে মিলবেনা তা প্রত্যাখ্যান কর।তিনি আরো বলেন রাসূলাল্লাহ সা: এর পর এমন কেউ নেই যার কথার সবটুকু গ্রহনীয়।একমাত্র রাসূল সা: ব্যাতিত আর সকলের কথাই গ্রহনীয় ও বর্জনীয়।
৩-ঈমাম শাফেয়ি (র) বলেন,'এমন কেউ নেই যার থেকে রাসূল সা: এর কিছু সূন্নত অপ্রকাশ্য থাকবেনা এবং তার থেকে যে সূন্নতের আমল ছুটে যাবে না।তাই আমি যা কিছু বলছি যা মুলনীতি উদ্ভাবন করছি তাতে রাসূল সা: থেকে বিশুদ্ধসূত্রে আমার বক্তব্যের বিপরিত বক্তব্য পাওয়া গেলে রাসূল সা: বক্তব্যই চূড়ান্ত।আর তার বক্তব্যই হলো আমার বক্তব্য।ছহি হাদিস সাব্যস্ত হলে সেটাই আমার মাযহাব বা পথ।'
৪-ঈমাম আহম্মদ বিন হাম্বল (র) বলেন,'তোমরা আমার,ঈমাম মালেক,ঈমাম শাফেয়ি ,ঈমাম আবু সুফিয়ান সাওরি এবং ঈমাম আওয়াযি তাকলিদ(শর্ত হীন আনুগত্য) করবে না।তারা যে উৎস থেকে সমাধান গ্রহন করেছেন তোমরাও সেখান থেকে গ্রহন কর।তিনি আরো বলেন,'যে রাসূলুল্লাহ সা: এর হাদিস প্রত্যাখ্যান করে সে ধংশের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
আমারা যদি এই চারজন ঈমামের কথা পর্যালোচনা করি দেখা যাবে প্রত্যেকের কথাই এক সূত্রে গাঁথা।তারা তাদের সমস্ত মতামত পেশ করেছেন রাসূল সা: এর ছহি হাদিসের ভিত্তিতে।অর্থাৎ কোরআন ও সূন্নাহ হলো মুল।পাঠকগন আমদের একটি কথা জানা দরকার তারা যে যুগে ইসলাম প্রচার করেছিলেন সে যুগে মুহাদ্দিছিন গন বিভিন্ন শহরে বিছ্ছিন্ন ছিল।এক শ্রেনীর মুহাদ্দিছিন গন হাদিস সংগ্রহ করতেন আর এক শ্রেনী ছহি হাদিসের ভিত্তিতে সমাজ সংস্কারের কাজ করতেন।এটাই ছিল সালাফে সালেহিনদের রীতি।ঈমাম আবু হানিফার ছাত্র ঈমাম ইউছুফ তার দুই তৃতিয়াংশ মতের বিরোধিতা করেছিলেন।তখন উমায়্যা শাসন ও আব্বাছিয় শাসনের যুগ যেখানে পরিপূর্ন ইসলাম ছিল না।কিভাবে তারা ইসলামের কাজ করেছিলেন পাঠককে ভেবে দেখতে হবে।আজকে যারা ইসলামকে খন্ড বিখন্ড করে ইসলাম প্রচার করছে ইসলামে সেকালে এটা ছিল না।এই বিভ্রান্তিগোলো এসেছে কোরআন ও ছহি সূন্নাহ ছেড়ে শির্ক ও বিদাআত আলিঙন করার কারনে।মানুষের জ্গানের পরিধি কমে যাওয়ার কারনে শয়তান তাদেরকে ঘেরাও করেছে চতুর্দিক থেকে।অথচ আল্লাহ বলেছেন তোমাদের যে দ্বীন তা সব ধর্মের উপর প্রভুত্ব করবে।এই চারজন ঈমামের জীবদ্দশায় তারা উম্মাহকে বিভক্ত করেননি। তাদের মৃত্যুর ৪/৫ শ বছর পর কিতাবগুলো লিখা হয়েছে।উম্মাহর অজ্গতা এ জন্য দায়ি।তারা রাসূল সা: কে অনুসরন বাদ দিয়ে ঈমামদের কথাগুলো অনুসরন করে বিভক্ত হয়েছে আর এই বিভক্তি আজ ভারত উপমহাদেশে ইসলামিক অঙনে কবর পূজারি ও বিদাআতিতে ভরে দিয়েছে যার মধ্যে আমরা মুসলমানরা খুব আরামে তাছবিহ হাতে মসজিদে আসা যাওয়া করছি এগুলো উপড়ানোর প্রয়োজন মনে করছিনা।
যদি একজন হানাফি মাযহাবি ওজু করে ও স্ত্রীকে স্পর্শ করে তাহলে তার ওজু ভাংবেনা।কিন্তু শাফেয়ি মাযহাবে ওজু ভেংগে যাবে।আমরা দেখছি ওজু করার কাজটি দু'মাজহাবে বিপরিত মুখি।তা হলে কি আমরা বলবো কোন একজন ঈমাম ভুল করেছেন? আল্লাহ তাদের দু'জনের প্রতি শান্তি বর্ষিত করুন।আমরা কিভাবে এর সমাধান পাব।আল্লাহ বলছেন তোমাদের মধ্যে যদি বিভেদ দেখা দেয় তাহলে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরে যাও অর্থাৎ কোরাআন ও সূন্নাহর স্মরনাপন্য হও।সূরা মায়েদার ৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'ওহে যারা ঈমান এনেছ যখন তোমরা নামাজে দাঁড় হও তখন তোমাদের মুখমন্ডল , কনুই পর্যন্ত দুই হাত ধৌত , মাথা মাসেহ ও দুই পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত কর।'আর যদি অসুস্হ হও ও সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে এসেছ অথবা স্ত্রিদের স্পর্শ করেছ আর যদি পানি না পাও তবে তৈয়ম্মুম কর খাটি মাটি নিয়ে।আর তা দিয়ে তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মুসেহ কর।' এ ব্যাপারে হাদিস কি বলে? আবুদাউদ প্রথম খন্ড ৭০ অধ্যায় হাদিস নং ১৭৯ আয়শা রা: বর্ননা করেন, রাসূল সা: তার একজন স্ত্রিকে চুমু দিয়ে ওজু না করে নামাজে চলে গেলেন।উরুয়া রা: বললেন সে স্ত্রী আপনি ছাড়া আর কেউ নন।আয়শা রা: হেসে দিলেন অর্থাৎ তিনিই ছিলেন সেই স্ত্রী।এখন কোরান ও হাদিসের আলোকে যদি আমরা ঈমামদের কথাকে বিচার করি তাহলে দেখবো তারা দু'জনে ঠিক।ঈমাম আবু হানিফা (র) এর কাছে হাদিসটি এসেছিল সেজন্য উনি মত দিয়েছিলেন কোন মহিলাকে স্পর্শ করলে ওজু ভাংবেনা।পক্ষান্তরে ঈমাম শাফেয়ির কাছে হাদিসটি পৌঁছে নি সেজন্য তিনি কোরানের আয়াত দিয়ে বিচার করেছেন।মাসেহ শব্দটি আরবিতে দু'টো অর্থ প্রকাশ করে।একটি শারিরিক স্পর্শ আর একটি সহবাস।ঈমাম শাফেয়ি অর্থ করেছেন সহবাস অর্থে।এ ক্ষেত্রে তার মতামত সঠিক।আমরা যদি সূরা মারিয়ামের ২০ আয়াত দেখি তাহলে আরো পরিষ্কার হবে বিষয়টি।'তিনি (মারিয়াম) বললেন,কেমন করে আমার ছেলে হবে যেহেতু আমাকে পুরুষ মানুষ স্পর্শ করেনি আর আমি অসতিও নই।' এখানে স্পর্শ করা অর্থ হলো সহবাস করা।কারন সহবাস ছাড়া মাতৃগর্ভে কোন সন্তান আসে না।আল্লাহর ক্ষমতা আলাদা কথা।নবী সা: বলেছেন যদি কোন গবেষক ছহি তথ্যের ভিত্তিতে গবেষনা করে সঠিক রায় দেয় তাহলে সে দু'টি পুরস্কার পাবে আর যদি ভুল করে তাহলে একটি পুরস্কার পাবে।
এভাবে তারা ছহি হাদিসের ভিত্তিতে সমাজে বিচার কাজ করতেন।আমি আগেই বলেছি প্রতিটি মু'মিনের জন্য আমাদের সমান ভালবাসা থাকবে।উম্মত যখনই রাসূল সা: কে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে অতিরিক্ত ভালবেসেছে তখনি ইসলামে ধস নেমে এসেছে।যার ফল দেখতে পাছ্ছেন পির ওলির মাজার।ঐ যুগে এ সমস্ত ছিলনা। রাসূল সা: মক্কা বিজয়ের পর আলি রা:কে এক মিশনে পাঠিয়েছেন, যেখানে কবর উঁচু দেখবে তা আধা হাত পরিমান করে দিবে।আজকে লোকালয়ে গিয়ে দেখেন সখের বশে কবরগুলোকে সুন্দর ডিজাইন করে কবর পাকা করছে।এই মাযহাবকে কেন্দ্র করে আজ দলে উপদলে উম্মাহ বিভক্ত হয়ে পড়েছে।ইসলামের বিভক্তি সম্পর্কে সূরা আন'আম ১৫৯,সূরা রুম ৩২,সূরা মু'মিনুন ৫৩/৫৪,সূরা শুরা ১৩/১৪ আয়াতে বর্নিত হয়েছে।আমাদের ভাবা উচিত নবী সা: কোন মাযহাব অনুসরন করেছিলেন। তিনি আল্লাহর আদেশ পালন করেছেন আর আমাদের নিজে শিক্ষক হিসেবে শিখিয়ে দিয়েছেন তাই আমরা অনুসরন করবো।নবী সা: আবুদাউদ হাদিস নং ৪৫১৯/৮০ এ বলেছেন,'ইহুদি বিভক্ত হবে ৭০/৭১ দলে,খৃষ্টান ৭০/৭১ দলে আর আমার উম্মত ৭৩ দলে।ইহুদি খৃষ্টান ও আমার উম্মতের ৭২ দল জাহান্নামে নিক্ষেপিত হবে আর এক দল জান্নাতে প্রবেশ করবে।এ সময়টি একটি বিপর্যয়ের সময়।ছহি বোখারি ৪র্থ খন্ড হাদিস নং ৩৬০৬ হোজাইফা রা: বর্ননা করেছেন।এ হাদিসটি পড়লেই পাঠক বুঝতে পারেন আপনার আর কিভাবে চলতে হবে যেখানে ইসলামি হুকুমা নেই।ঈমাম আবু হানিফা (র) কে দু'বার প্রধান বিচারপতির আসন নেয়ার জন্য বলা হয়েছিল।একবার উমায়্যা শাসনের শেষ ও আর একবার আব্বাছিয় শাসনের প্রথম দিকে। তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।প্রশাসন তাকে জেইল এ রেখেছিল আর সেখানেই মৃত্যু হয়েছিল।তারা আল্লাহর দ্বীনের যথাযথ খেদমত করেছিলেন কোরান ও সূন্নাহ অনুসরন করে।কোন দল উপদল তৈরি করেন নি।আমাদের ও তাদের পথ অনুসরন করেই ইসলামিক জীবন যাপন করতে হবে।এর কোন বিকল্প নেই।পাশ্চাত্বের সাথে পাল্লা দিয়ে আজ যে ইসলামের চিন্তা করা হয় তা মরিচিকা মাত্র।এই মরিচিকার পথ কোন ইসলামের পথ নয়।
বিষয়: বিবিধ
২২৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন