কেমন ছিল ইসলামের শাসকদের চরিত্র ও জীবন যাপন পদ্ধতি।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২১ মার্চ, ২০১৩, ০১:১৫:৩৩ দুপুর
রাসূল সা: তাঁর ৬৩ বছর হায়াতে জিণ্দিগীতে ও ২৩ বছরের নবুওয়াতি জিণ্দিগীতে পৃথিবীকে অন্ধকার থেকে আলোকে রুপায়িত করেছিলেন।শুধু মাত্র চরিত্র দিয়ে নয় কায়িক পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টা ও ছিল তার সঙি।তিনি একদল মানুষও তৈরি করেছিলেন যারা পদে পদে তাঁকে অনুসরন করতো।তাঁর অন্তর্ধানের পর ৩০ বছর পর্যন্ত ৪ জন অতি প্রিয়ভাজন সঙি তাঁকে অনুসরন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করছিলেন।যারা তাঁর সাথে জিহাদে অংশগ্রহন করেছিল।তাঁরা একদিকে ছিলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসায় অগ্রগামী অন্যদিকে একজন সফল গৃহ ও সমাজ কর্মি।চরিত্র ও মাধুর্যে ছিল জীবন ভরপুর ,পরোপকারি ও সাদাসিদে জীবন যাপনের অধিকারি।
এর মধ্যে প্রথম শাসক হলেন আবুবাকর আব্দুল্লাহ আছ্ছিদ্দিক রা: তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ি।ইসলাম গ্রহনের সময় তার সন্চয় ছিল মাত্র ৪০ হাজার দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) ইসলাম গ্রহন করার কারনে যে সব ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসী নির্যাতিত হছ্ছিলেন তনি তার অর্থে উচ্চ মুল্যে কিনে তাদের আজাদ করে দেন।হিজরত কালে তার কাছে ছিল মাত্র ৫ হাজার দিরহাম।মদিনায় গিয়েও তিনি ব্যবসা করতেন।তার আয়ের সিংহ ভাগ খরচ করতেন আল্লাহর রাস্তায়।রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে ব্যবসা পরিচালনা ছিল কঠিন।তাই ওমর ইবনুল খাত্তাব রা: বিশিষ্ট সাহাবিদের সাথে পরামর্শ করে তার জন্য বায়তুল মাল(রাজকোষ) থেকে বছরে ২৫০০ দিরহাম ভাতা নির্ধারন করেন।তিনি অত্যন্ত সাদাসিদে জীবন যাপন করতেন ও সাধারন খাবার খতেন।পরার জন্য বছরে বায়তুল মাল থেকে দুই সেট পোশাক পেতেন।এতেই তিনি পরিতৃপত ছিলেন।একবার তাঁর স্ত্রি প্রতিদিনের খাবার থেকে সন্চয় করে কিছু মিষ্টান্ন তৈরি করেছিলেন।যখন তাঁকে পরিবেশন করা হলো,তিনি জিজ্গেস করলেন কোথা থেকে এ খাবার এলো।পরের দিন বায়তুল মাল থেকে সে পরিমান অর্থ নিজের ভাতা থেকে কমিয়ে দিলেন।তাঁর এক খন্ড জমি ছিল।মৃত্যুর পুর্বে অছিয়ত করে গেলেন বায়তুল মাল থেকে যে পরিমান অর্থ তিনি নিয়েছিলেন তা যেন পরিশোধ করে দেয়া হয়।আরো অছিয়ত করলেন তাঁর পরার কাপড়টি ধুয়ে অন্য দু'টুকরো কাপড় মিলিয়ে যেন তাঁকে দাফন করা হয়।মৃত্যুকালে তিনি একজন দাসী ও দু'টি উটনী ছাড়া আর কিছুই রেখে যান নি।
তার অন্তর্ধানের পর হযরত ওমর , ওসমান ও আলি রা: ৩০ বছর পর্যন্ত শাসন করেছিলেন রাসূল সা: চরিত্র অবলম্বন করে। এই চারজন শাসকের শাসনকালকে খোলাফায়ে রাশেদিন বলা হয় এই কারনে যে ,তারা এক চুল পরিমানও এদিক সেদিক করেন নি রাসূল সা: শাসনপ্রনালী থেকে।আনেক মুহাদ্দিছিন গন এর পরে আর একজন শাসক ( ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে ও পন্চম খলিফা হিসেবে আখ্যায়িত করেন যিনি তার শাসন কাজ এ ভাবেই চালিয়েছিলেন।যারা ইসলামি শাসক তারা এই ইসলামি চরিত্রকেই অবলম্বন করবে।শুধু ইসলামের নাম ব্যবহার করার মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় না।চরিত্র ও কাজে প্রমান করতে হবে।রাসূল সা: বলেছেন,যদি আমার ওহুদ পাহাড় পরিমান মাল আসে আর আমি যেন তিন দিনের মধ্যে তা বন্টন করে দেই।ওমর রা: রাতে প্রজাদের অবস্হান দেখতে বের হতেন।তার সময়ে যাকাত দেয়ার মত লোক সমাজে খুঁজে পাওয়া যেতো না।আজকের নব্য শাসকরা যারা মানুষের সামনে আকাশচুম্বি খেয়ানত নিয়ে যখন কথা বলে এতটুকু লজ্জাবোধ হয় না যে জন গনতো আমাদের কথাগুলো গননা করছে।
ইসলামকে যদি বুঝতে হয় তাহলে রাসূল সা: ও তাঁর সাহাবাদের জীবন কর্ম অনুসরন করতে হবে।তারা সব সময় আখেরাতের চিন্তায় বিভোর থাকতেন।ওসমান রা: চুলোর কাছে গেলে প্রায়শই বেহুঁশ হয়ে পড়ে যেতেন।জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের ৭০ গুন।এই উত্তাপে জ্বালানো হবে।কুরআনে প্রতিটি সূরায় জাহান্নাম ও জান্নাতের আয়াতের অবতারনা করা হয়েছে।সূরা আদ্ দুখ্যানের ৪৩-৫০ আয়াতে কিছু শাস্তির কথা আল্লাহপাক বলেছেন,' নি:সন্দেহে যাক্কুম বৃক্ষ যা পাপিদের খাদ্য গলিত পিতলের মত ফেটের ভিতর ফুটন্ত পানির টগবগ করার মত।তাকে পাকড়ো,তার পর টেনে নিয়ে যাও ভয়ংকর আগুনের মাঝখানে।তার পর তার মাথার উপর
ঢেলে দাও ফুটন্ত পানির শাস্তি।আশ্বাদ কর,তুমিতো ছিলে মহা শক্তিশালী,পরম সম্মানিত।এ হছ্ছে সেই যা সম্বন্ধে তুমি সন্দেহ করতে।' কুরআনকে বলা হয়েছে আখেরাতের জানালা।অন্তর দিয়ে বুঝতে হবে যে একদিন আমার কাছে প্রতিটি বিষয় উপস্হিত হবে।এজন্যই রাসূল সা: এর কোন সাহাবিই দুনিয়া চান নি। সব সময় রাসূল সা: এর কাছে চাইতেন কিভাবে জান্নাতে যাওয়া যায়।জান্নাতে যাওয়ার রাস্তা হলো সরল রাস্তা ও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হালাল ও হারাম বেচে চলা।সূরা কাহফের ১১০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'কেউ যদি তার প্রভুর সঙে মোলাকাত করার কামনা করে তবে সে সৎ কর্ম করুক আর তার প্রভুর উপাসনায় কাউকে শরিক না করুক।' কিন্তু দুর্ভাগা আমরা এমন এক জাতি, নেই আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনে সততা ,নেই সমাজ ও জাতীয় জীবনে।শির্ক ও বিদা'আত ভরপুর আমাদের প্রতিটি এবাদতে।আমাদের মনে রাখতে হবে , দুনিয়ার সব মানুষ যদি আমাদের পক্ষে থাকে আর আল্লাহ ও তার রাসূল সা: যদি বিপক্ষে যায় তাহলে কারো পক্ষে রক্ষা করা সম্ভব নয়।দুনিয়ায় সারাটি জীবন আল্লাহর নাফরমানি করলেন আর মৃত্যু হয়ে গেলে 'বিসমিল্লাহি ওয়া আ'লা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ" এ দিয়ে পরকালীন কোন শান্তি বয়ে আনবেনা। পরকাল থেকে পরিত্রান পেতে হলে আমাদের এখনি কুরআন অনুশীলন, রাসূল সা: ও তার সাহাবাদের দ্বারস্হ হওয়া জরুরি বোধ করছি।
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন