পরিবার হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের মুল চাবিকাঠি।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২০ মার্চ, ২০১৩, ০২:১৭:৫০ দুপুর
ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীগন এমনকি অবিশ্বাসীগন ও সঠিক ও সুন্দর একটি পরিবার গঠন করে সমাজে বাস করার পক্ষ সমর্থন করেন। একজন মুসলিম বিশ্বাসি বিশ্বাস করেন তাঁর আদি পিতা মাতা আদম ও হাওয়া (আ), আর সেখান থেকেই প্রথম মুসলিম পরিবার গঠিত হয়ে এসেছে।এভাবে রোজ ক্কিয়ামত পর্যন্ত এ পারিবারিক জীবন অব্যাহত থাকবে।ইহা সমাজ ও রাষ্ট্রের মৌলিক স্তর।সমাজ পর্যালোচনা করলে আমরা দেখি কোন মানুষ একা বাস করতে চায় না।তাঁরা সঙি সাথির প্রয়োজন অনুভব করে।সাধারনত পিতা মাতা , ভাই বোন ,দাদা দাদি,চাচা চাচি প্রভৃতি নিয়ে বৃহৎ পরিবার বা পিতা মাতা , ভাই বোন প্রভৃতি নিয়ে একান্নবর্তি পরিবার গঠিত হয়।বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্গানী ম্যাকাইভার বলেছেন,'সন্তান সন্ততির জন্মদান ও লালন পালনের নিমিত্তে যৌন সম্পর্ক দ্বারা সংগঠিত ক্ষুদ্র বর্গকে পরিবার বলে।'
মানব জীবনের লক্ষ্য কি? মানব জীবনের লক্ষ্য হলো ইহকালীন কল্যান ও পরকালীন মুক্তি।যারা জ্গানী তারা দু'টো জীবনের জন্যই কাজ করেন তবে পরকালীন জীবনকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি হলো সে চায় সুখ শান্তি,পরিতৃপ্তি ,নিশ্চিন্ততা , সব সময় আনন্দ লাভ করা এবং উন্নতি ও সমৃদ্ধি লাভ করা।এ কাজ গুলো পেতে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত পরিশ্রম করতে থাকে।শারিরিক ,মানুষিক , জৈবিক সুখ লাভের সাথে সাথে সে মানবিক মুল্যবোধের বিকাশের মাধ্যমেও তৃপ্তি লাভ করতে চায়।আর এ
সবই অর্জিত হয় পারিবারিক জীবনের মাধ্যমে।একটি পরিবারকে যদি রাষ্ট্রের একক ধরা হয় তাহলে দেখবো রাষ্ট্র বৃহৎ আঙিকে যে কাজগুলো করে একটি পরিবার ও তার ক্ষুদ্র পরিমন্ডলে সে কাজগুলো ই করে থাকে।তার মধ্যে শিক্ষামুলক ,অর্থনৈতিক, সামাজিক,রাজনৈতিক,জৈবিক , মনস্তাত্তিক ও অবকাশমুলক কার্যক্রম রয়েছে।একটি মানব শিশুর প্রাথমিক চিন্তা চেতনা,দৃষ্টিভঙি মোটকথা ভবিষ্যতের রুপ রেখা তৈরি হয় পরিবার নামক বিদ্যালয় থেকে।প্রতিটি শিশুর শারিরিক ও মানুষিক বিকাশ ঘটে থাকে পরিবার থেকে।কারন একটি শিশু শুধু ভুমিষ্ট হোওয়ার পরেই নয় বরং মায়ের পেটে ১২০ দিন পর যখন রুহ ফুঁকে দেয়া হয় তখনি শুরু হয়ে যায় তার এ জীবনের প্রাপ্তি। অসংখ্য মা বাবা হয়তো জানেনই না এ ব্যপারগুলো।মা্য়ের প্রতিটি চিন্তাভাবনা প্রতিবিম্বিত হতে থাকে একটি শিশুর জীবনে।এ সময় মাকে সতর্ক হয়ে চলতে হয়।মা্য়ের আচরন,চলাফেরা,কথাবার্তা , চিন্তাভাবনা হতে হবে কল্যানমুখি।এ সময় মায়ের পুষ্টিকর খাবার , রেষ্ট ,পর্দা মেনে চলা,ধর্মিয় কাজগুলোর সঠিক হেফাজত করা জরুরি।শিশু ভুমিষ্ট হওয়ার পর নির্দিষ্ট কতগুলো বছর বাবা মাকে পরিশ্রম করে যেতে হয়।তাদের লালন পালনের সাথে সাথেই শিক্ষাকার্যক্রমগুলোর ছক এঁকে নিতে হয়।অক্ষর জ্গান থেকে শুরু করে ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের ছোট ছোট বিষয় গুলো কচি মনে প্রভাবিত করবে।ইতিবাচক কাজগুলোকে উৎসাহিত ও নেতিবাচক কাজগুলো থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিতে হবে।শুধু পরামর্শ নয় প্রতিটি কাজের রিজন তার মস্তিষ্কে ঢেলে দিতে হবে।এভাবে ধর্মিয় নৈতিক শিক্ষা নিয়ে যখন একটি শিশু বেড়ে উঠবে তখন তার দ্বারা কোন খারাপ কাজ সংগঠিত হবে না।পিতা মাতাকে অনুকরন করে সব শিশুরা।যেমন ধরুন- আপনি যদি ৫ ওয়াক্ত নামাজের তাবেদারি করেন হতেই পারে না আপনার সন্তান বেনামাজি হবে।এভাবে আপনার ভাল মন্দ কাজ,ন্যায় অন্যায়, আত্মীয় প্রতিবেশির সাথে উঠা বসা,ফকির মিসকিন এতিম ও অভাবগ্রস্তদের দেখাশুনা থেকে শিশু বাস্তবে শিখবে।অধিকাংশ বাবা মা'র কারনে সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পরিবর্তিত পৃথিবীতে আজ যে দিবসগুলো পালিত হছ্ছে যেমন- বাবা দিবস , বিশ্ব পরিবেশ দিবস , ভালবাসা দিবস এভাবে আরো অনেক। এগুলো মানুষের মস্তিস্ক প্রসূত জ্গান থেকে উৎসারিত যার চিরন্তন কোন প্রভাব নেই।বছরে একটি দিন কোন একটি বিষয়কে স্মরন করাই এ দিবসগুলোর উদ্দেশ্য।এর পর আর কেউ মনে রাখেনা।উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিল যে বছরের সব কটি দিনই এ কাজগুলো মনে প্রানে অনুসরন করব।আর যারা এ দিবসগুলো পালন করে তাদের জিবনে এগুলোর কোন আচর নেই।সে জন্য এগুলো তাদের এক ধরনের ফেশনই বলতে হবে। ইসলামে এগুলোর কোন ভিত্তি নেই।
পারিবারিক সম্পর্ক যত সুদৃড় হবে সমাজ ও রাষ্ট্র হবে তত মজবুত ও শক্ত।যৌথ পরিবারের শিশু সন্তান লালন পালনে দাদা দাদি , নানা নানি গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে।এতে একটি শিশু যেমন সঙ পায় তেমনি বয়স্করাও আনন্দ পায়।আর বৃদ্ধদের সময় কাটানোর একাটা সুন্দর হাতিয়ার এ শিশু।আজকের পৃথিবীতে বাবা মা যেমন একাকিত্বকে বেচে নিয়েছে তেমনি ছেলে মেয়ে ও বড় হয়ে বাবা মা কে ভুলে যাছ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে Old age home তৈরি হয়েছে এ সমস্ত বাবা মা'র কারনে।এখন বাবা মা বুড়ো হলেই তাদের সেখানে থাকার যায়গা।এমনকি কোন কোন বাবা মা'র সাথে ১০ বছর পর্যন্ত ছেলেময়ের দেখা হয় না।মুসলিম দেশ গুলোতেতো এগুলো আসার কথা ছিলনা।বাংলাদেশে এখন অনেক বৃদ্ধা আশ্রম তৈরি হয়েছে।তাদের করুন পরিনতি দেখলে অনেক সময় ঠিক থাকা যায় না।কিন্তু এ বাস্তবতা তো এক দিনে তৈরি হয় নি।অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাবা মা'র ব্যার্থতা রয়েছে সন্তান প্রতিপালনে।আপনারা যদি প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করেন দেখবেন বাবা মা ই প্রথমে দায়ি।কুরআন হাদিস আনুশীলনে পরিবার সুন্দর হয়ে যায়।রাসূল সা: বলেছেন ,'কারো যদি বাবা মা দু'জন বা একজন জীবিত থাকে আর সে যদি তাদের খেদমত করার মাধ্যমে জান্নাত লাভ না করতে পারে সে হতভাগ্য।' ওমর রা: এর সময়ে একজন পিতা সন্তানকে নিয়ে হাজির হয়েছিল যে সন্তান পিতার কথা শুনে না।যখন সন্তানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল সন্তান বললো , হে আমিরুল মুমিনিন এর আগে আমি জানতে চাই সন্তানের ব্যাপারে বাবা মা'র দায়িত্ব কি।তিনি ছেলেটির জবাব যখন দিলেন ছেলেটি বললো, আমার বাবা এর একটি কাজ ও আমার জন্য করেনি।তখন ওমর রা:বললেন তুমি তোমার সন্তানের দায়িত্ব পালন করনি কি করে তুমি আশা করে সে কথা শুনবে।সে জন্য আমাদের উচিত সন্তানদের লালন পালনে যত্নবান হওয়া। কারন তারাই ভবিষ্যতের কর্নধার।পরিবার নামক এই প্রাথমিক স্তর যদি সাজানো না হয় তা হলে সামাজ ও রাষ্ট্র হবে বিশৃংখল যা পৃথিবির প্রতিটি দেশের প্রতিছ্ছবি দেখলে বুঝা যায়।পারিবারিক নিবিড় সম্পর্ক না থাকার কারনে সামাজিক উছৃংখলতা , মানব হত্যা , রাহাজানি ,অপরকে ঠকানো ,ব্যাভিচার ও নগ্নতা সর্বগ্রাসি আকার ধারন করছে।রাসূল সা: বলেছেন সর্বোত্তম সদাকা হলো পরিবারের প্রতি খরচ করা।' আমাদের উচিত শিশুদের সুস্থ পরিবার পালনে ব্রত হওয়া যাতে করে একটা সুন্দর স্বাবলম্বি জাতি গঠিত হয়।
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন